পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির মধ্যে ৬ জনের ১০ বছর, ৪ জনের ৫ বছর ও ১ জনের তিন বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। এ মামলায় ৩ জনকে খালাস প্রদান করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে জেলা শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ রায় দেন।
রায়ে ১০ বছরের কারাদন্ডাদেশ প্রাপ্তরা হলো- মো. রাশিদুল হাসান রিশান ফরাজী, মো. রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার, মো. আবু আব্দুল্লাহ রায়হান, মো. ওলিউল্লাহ অলি, মো. নাঈম এবং তানভীর হোসেন।
এছাড়া জয়চন্দ্র সরকার চন্দন, মো. নাজমুল হাসান, রাকিবুল হাসান নিয়ামত ও সাইয়েদ মারুফ বিল্লাহ ওরফে মহিব্বুলাহকে ৫ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। আর প্রিন্স মোল্লাকে দেয়া হয়েছে তিন বছরের কারাদন্ড। অপরদিকে মামলার অপর তিন আসামি মারুফ মল্লিক, রাতুল সিকদার জয় ও আরিয়ান হোসেন শ্রাবণকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়েছে।
এর আগে দুপুর ১টা ১০ মিনিটে জেলা শিশু আদালতে এ রায় পড়া শুরু করেন বিচারক মো. হাফিজুর রহমান। গত ১৪ অক্টোবর উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গতকাল এ মামলার রায়ের দিন ধার্য করেন বরগুনার শিশু আদালত। ২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত হত্যাকান্ড ঘটে। ওই বছর ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দু’ভাগে বিভক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনকে আসামি করা হয়।
গত ৮ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনার শিশু আদালত। এরপর ১৩ জানুয়ারি থেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন আদালত। মোট ৭৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয় এ মামলায়। এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর এ মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় ঘোষণা করেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান। রায়ে নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয়জনের ফাঁসির আদেশ দেন বিচারক। আর বাকি চারজনকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন।
এদিকে, অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির রায়ের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বরগুনা শিশু আদালতের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল। রায় ঘোষণার পর সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। এমন রায় প্রমাণ করে অপরাধী যেই হোক কোনো ছাড় নেই। মিডিয়ার মাধ্যমে পুরো দুনিয়া জানতে পেরেছে এ ঘটনা। আসামি যেই হোক কেউই যে অপরাধ করে পার পাবে না সেটা আবারও এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণ হলো।
তিনি আরও বলেন, মাত্র ৬৩ কার্য দিবসে এ মামলার বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। মূলত সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ন্যায় বিচারের একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে।
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তারা রায়ে সন্তুষ্ট নন। দ্রæত রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে যাবেন এবং আপিল আবেদন করবেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী গোলাম মোস্তফা কাদের বলেন, আমার মক্কেল ন্যায়বিচার পাননি। তাই সাত কার্যদিবসের মধ্যেই হাইকোর্টে আপিল করবো।
অপরদিকে, দেশে শিশু ও কিশোর আসামিদের অপরাধ নির্মূল করার জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের সাজা বৃদ্ধি করা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন বরগুনার শিশু আদালত। রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির রায়ের পর্যবেক্ষণে এ মন্তব্য করেছেন আদালত। এছাড়াও রায়ের পর্যবেক্ষণে নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি প্রসঙ্গেও মন্তব্য করেছেন আদালত।
এ প্রসঙ্গে রিফাত হত্যা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও বরগুনা শিশু আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন- ‘বাংলাদেশে কিশোর অপরাধীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরাধের তুলনায় কিশোরদের শাস্তির পরিমাণ কম হওয়ায় গডফাদাররা কিশোরদের ব্যবহার করছে। তাই কিশোর অপরাধ নির্মূলের জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের শাস্তির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, রায়ের পর্যবেক্ষণে কিশোর অপরাধ দমনে আদালত যে মন্তব্য করেছেন, তার সঙ্গে আমিও একমত পোষণ করছি। কারণ কিশোর অপরাধীদের শাস্তি বৃদ্ধি করা না হলে এদের অপরাধের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাবে।
এ প্রসঙ্গে আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. গোলাম মোস্তফা কাদের বলেন, শিশু আসামিদের সাজা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি প্রসঙ্গে বলেছেন- এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত মিন্নির অনৈতিক ও বেপরোয়া জীবনযাপনের কারণে রিফাত হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছে। এই কিশোর আসামিরা প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। পারিবারিক শিক্ষা, নৈতিক শিক্ষা ও মৌলিক শিক্ষার অভাবে এই কিশোররা বিপথগামী হয়েছে। তাই এই আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে দেশে কিশোর অপরাধ এবং কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।