পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : জাতীয় শোক দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের নিহত সদস্যদের স্মরণ করেছে জাতি। জাতির পিতার ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল সোমবার সমগ্র জাতি দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদার মধ্যদিয়ে পালন করে।
গতকাল সোমবার সকালে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডিতে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে রাষ্ট্রীয়ভাবে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটা চৌকস দল গার্ড অব অনার দেয়। সে সময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেখানে বিশেষ মোনাজাত ও পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা হয়।
গতকাল ভোর থেকেই সরকার, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন সমূহসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীগণ এবং সর্বস্তরের মানুষ ইতিহাসের নির্মম হত্যাযজ্ঞ ১৫ আগস্টের কাল রাতে শাহাদাত বরণকারী স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতে একদল বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। বিশ্বের ইতিহাসের এই জঘন্যতম হত্যাকা-ে সেদিন বঙ্গবন্ধু পতœী বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল, রোজি কামাল ও তাঁর আত্মীয়-স্বজন অন্যান্যরা শাহাদত বরণ করেন।
সেদিন দেশের বাইরে থাকায় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান।
গতকাল সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতভাবে এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।
সকালে শত-শত লোক কালো ব্যাজ ধারণ করে পায়ে হেঁটে এসে ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু জাদুঘর প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্যদিয়ে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালন শুরু করে।
সকাল সাড়ে ৬টায় প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথকভাবে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এই সময় তাঁরা এই মহান নেতার প্রতি সম্মান জানাতে দাঁড়িয়ে কিছু সময়ের জন্য নীরবতা পালন করেন। এরপর সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব অনার প্রদান শেষে শাহাদাত বরণকারীদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ মোনাজাত। এ সময় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তাঁর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, জাতীয় সংসদে উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মন্ত্রী সভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যগণসহ কেন্দ্রীয় ১৪ দলের অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে ১৪ দল, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পক্ষে এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে দলের সভাপতি হিসেবেও শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত বাড়ির ভেতরে যান। সেখানে ঘুরে ঘুরে তাঁর পিতার স্মৃতিচিহ্ন পরিদর্শন করেন।
১৪ দলের পক্ষে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও সাম্যবাদী দলের সভাপতি সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য স্থানটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
পরে প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর বনানী কবরস্থানে তাঁর মা ফজিলাতুননেছা মুজিব, ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, ভাইদের স্ত্রী সুলতানা কামাল, রোজি কামাল ও তাঁর আত্মীয়-স্বজনসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। এরপর পবিত্র ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে শেখ রেহানা, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ, মন্ত্রী সভার সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র উপস্থিত ছিলেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়া গিয়ে জাতির পিতার সমাধি কমপ্লেক্সে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং তিনি এই মহান নেতার প্রতি সম্মান জানাতে দাঁড়িয়ে কিছু সময়ের জন্য নীরবতা পালন করেন। এসময় শেখ রেহানাও সঙ্গে ছিলেন। তখন তিন বাহিনীর একটি চৌকষ দল বিউগল বাজিয়ে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। তিন বাহিনীর প্রধানগণও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে জাতির পিতা, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব ও তাঁর সঙ্গে ১৫ আগস্টে শাহাদাত বরণকারী সবার রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে অংশ নেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, পরিবারের সদস্যবৃন্দ, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যগণ ও দলীয় নেতাকর্মীরা।
রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দূতাবাস ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস ও কনস্যুলেট অফিসে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে নানান কর্মসূচি পালন করা হয়।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম নিয়ে দৈনিক সংবাদপত্রে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ সব বেসরকারি রেডিও এবং টিভি চ্যানেল থেকে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দেন।
প্রেসিডেন্ট তাঁর বাণীতে বলেছেন, আমাদের দায়িত্ব হবে বঙ্গবন্ধুর অসম্পূর্ণ কাজকে সম্পূর্ণ করে বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করে তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ করা।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে, জাতির পিতার ত্যাগ ও তিতিক্ষার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনাদর্শ ধারণ করে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান। অপরদিকে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সকাল ৬টার মধ্যেই অগণিত মানুষের পদচারণায় ভরে ওঠে ৩২ নম্বর সড়ক। হাতে কালো ব্যানার ও বুকে কালোব্যাজ পরিধান করে নারী-পুরুষ, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, শিশু-কিশোরসহ সর্বস্তরের মানুষ। সকলেই শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে জাতির জনককে স্মরণ করে। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানায়। শোকাবহ ভাবগাম্ভীর্যের মাঝেও জোরালো কন্ঠে উচ্চারিত হয় ‘বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হোক।’ একই সঙ্গে আগত জনতা সম্প্রতি সময়ে দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার শপথ গ্রহণ করেন।
মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ কৃষক লীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
এ ছাড়াও তথ্য মন্ত্রণালয়, পিআইবি, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবার, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, মহিলা শ্রমিক লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, তাঁতী লীগ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, যুব উন্নয়ন অধিদফতর, ঢাকা সিটি করপোরেশন শ্রমিক-কর্মচারী লীগ, গণপূর্ত শ্রমিক লীগ, জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরিষদ, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমী, গণগ্রন্থাগার অধিদফতর, জাতীয় জাদুঘর, শিশু একাডেমী, খেলাঘর, বাংলাদেশ বেতার, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট, বেতার কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতি, বিনিয়োগ বোর্ড, শিল্প গবেষণা পরিষদ, ঢাকা আইনজীবী সমিতি, তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, জাতীয় মহিলা সংস্থা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, ছাত্র ইউনিয়ন, মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকসহ এসব ব্যাংকের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন, পঙ্গু হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্যপরিষদ, ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি, বঙ্গবন্ধু ফেডারেশন, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ, সাধনা সংসদ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুক্তিযোদ্ধা সমাজকল্যাণ পরিষদ, আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু আইন পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা বিসিএস অফিসার্স কল্যাণ সমিতি, বঙ্গবন্ধু ললিতকলা একাডেমি, সোনার বাংলা যুব পরিষদসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন।
৩২ নম্বরের আশে পাশের রাস্তাসহ রাজধানী জুড়ে শোকের প্রতীক কালো পতাকার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন, প্লাকার্ড ও তোরণ তৈরি করা হয়। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশে মিলাদ মাহফিল, রক্তদান কর্মসূচি, কালোব্যাজ ধারণ ও কাঙালি ভোজের আয়োজনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও দেশাত্মবোধক গান বাজানো হয়।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল ছিল সরকারি ছুটির দিন। সমগ্র জাতি দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদার মধ্যদিয়ে পালন করে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে জাতীয় শোক দিবস পালন
স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভা হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল। এতে বিভিন্ন গ্রেডের ১৫জন কর্মচারী বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম এবং জাতি গঠনে তার ঐতিহাসিক ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনাসভা শেষে গণভবন মসজিদের খতিবের পরিচালনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল হয়। অনুষ্ঠানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সকল কর্মচারীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর দেয়া হয়।
এতিমদের নিয়ে এমপির কাঙ্গালী ভোজ
এদিকে, প্রায় একশত তিনটি স্থানে ঢাকা-৫ আসনে এমপি হাবিবুর মোল্লার নেতৃত্বে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কাঙ্গালী ভোজের আয়োজন করা হয়। এসব স্থানে এতিম-মাদ্রাসার ছাত্র এবং সমাজের দুস্থ শিশুদের মাঝে উন্নতমানের খাবার বিতরণ করা হয়। এ সময় ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান মোল্লা, যাত্রাবাড়ি থানা যুবলীগের সভাপতি নীরু আমিন নরুলসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উত্তর যাত্রাবাড়ীর মালঞ্চ কমিউনিটি সেন্টারে যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগ ও ৪৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আয়োজনে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা, মিলাদ মাহফিল ও তবারক বিতরণ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহে আলম মুরাদ, যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশিদ মুন্নাসহ আরও অনেকে।
এদিকে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী ওলামালীগের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা দেলোয়ার হোসেন রাজধানীর শ্যামপুর-জুরাইনের বিভিন্ন সমজিদ মাদ্রাসায় কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া মাহফিলে আয়োজন করেন।
বিকেটিটিসিতে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে সেমিনার ও দোয়া মাহফিল
ঢাকার দারুস সালাম বাংলাদেশ-কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে (বিকেটিটিসি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ৪১তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সেমিনার ও দোয়া মাহফিল হয়। এতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারণেই আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ও সার্বভৌমত্ব পেয়েছি। তাঁর কারণেই আমরা একটি পাসপোর্ট পেয়েছি, যার মাধ্যমে আমরা আজ সারা পৃথিবীতে যেতে পারি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে আমাদেরকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে এবং এর মাধ্যমেই দেশকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিতে হবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব বেগম শামছুন নাহারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিকেটিটিসি’র অধ্যক্ষ ড. প্রকৌশলী মো. সাকাওয়াৎ আলী। অনুষ্ঠানে “বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন ভাবনায় শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক যোগাযোগ” বিষয়ক পেপার উপস্থাপন করেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান কেএম আলী রেজা এবং আলোচনা করেন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো(বিএমইটি)-র মহাপরিচালক মো. সেলিম রেজা, অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ ও ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাস।
এর সহযোগী সংগঠন সমূহসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীগণ এবং সর্বস্তরের মানুষ ইতিহাসের নির্মম হত্যাযজ্ঞ ১৫ আগস্টের কাল রাতে শাহাদাত বরণকারী স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতে একদল বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। বিশ্বের ইতিহাসের এই জঘন্যতম হত্যাকা-ে সেদিন বঙ্গবন্ধু পতœী বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল, রোজি কামাল ও তাঁর আত্মীয়-স্বজন অন্যান্যরা শাহাদত বরণ করেন।
সেদিন দেশের বাইরে থাকায় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান।
গতকাল সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতভাবে এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।
সকালে শত-শত লোক কালো ব্যাজ ধারণ করে পায়ে হেঁটে এসে ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু জাদুঘর প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্যদিয়ে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালন শুরু করে।
সকাল সাড়ে ৬টায় প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথকভাবে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এই সময় তাঁরা এই মহান নেতার প্রতি সম্মান জানাতে দাঁড়িয়ে কিছু সময়ের জন্য নীরবতা পালন করেন। এরপর সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব অনার প্রদান শেষে শাহাদাত বরণকারীদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ মোনাজাত। এ সময় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তাঁর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, জাতীয় সংসদে উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মন্ত্রী সভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যগণসহ কেন্দ্রীয় ১৪ দলের অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে ১৪ দল, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পক্ষে এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে দলের সভাপতি হিসেবেও শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত বাড়ির ভেতরে যান। সেখানে ঘুরে ঘুরে তাঁর পিতার স্মৃতিচিহ্ন পরিদর্শন করেন।
১৪ দলের পক্ষে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও সাম্যবাদী দলের সভাপতি সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য স্থানটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
পরে প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর বনানী কবরস্থানে তাঁর মা ফজিলাতুননেছা মুজিব, ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, ভাইদের স্ত্রী সুলতানা কামাল, রোজি কামাল ও তাঁর আত্মীয়-স্বজনসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। এরপর পবিত্র ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে শেখ রেহানা, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ, মন্ত্রী সভার সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র উপস্থিত ছিলেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়া গিয়ে জাতির পিতার সমাধি কমপ্লেক্সে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং তিনি এই মহান নেতার প্রতি সম্মান জানাতে দাঁড়িয়ে কিছু সময়ের জন্য নীরবতা পালন করেন। এসময় শেখ রেহানাও সঙ্গে ছিলেন। তখন তিন বাহিনীর একটি চৌকষ দল বিউগল বাজিয়ে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। তিন বাহিনীর প্রধানগণও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে জাতির পিতা, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব ও তাঁর সঙ্গে ১৫ আগস্টে শাহাদাত বরণকারী সবার রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে অংশ নেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, পরিবারের সদস্যবৃন্দ, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যগণ ও দলীয় নেতাকর্মীরা।
রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দূতাবাস ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস ও কনস্যুলেট অফিসে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে নানান কর্মসূচি পালন করা হয়।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম নিয়ে দৈনিক সংবাদপত্রে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ সব বেসরকারি রেডিও এবং টিভি চ্যানেল থেকে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দেন।
প্রেসিডেন্ট তাঁর বাণীতে বলেছেন, আমাদের দায়িত্ব হবে বঙ্গবন্ধুর অসম্পূর্ণ কাজকে সম্পূর্ণ করে বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করে তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ করা।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে, জাতির পিতার ত্যাগ ও তিতিক্ষার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনাদর্শ ধারণ করে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান। অপরদিকে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সকাল ৬টার মধ্যেই অগণিত মানুষের পদচারণায় ভরে ওঠে ৩২ নম্বর সড়ক। হাতে কালো ব্যানার ও বুকে কালোব্যাজ পরিধান করে নারী-পুরুষ, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, শিশু-কিশোরসহ সর্বস্তরের মানুষ। সকলেই শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে জাতির জনককে স্মরণ করে। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানায়। শোকাবহ ভাবগাম্ভীর্যের মাঝেও জোরালো কন্ঠে উচ্চারিত হয় ‘বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হোক।’ একই সঙ্গে আগত জনতা সম্প্রতি সময়ে দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার শপথ গ্রহণ করেন।
মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ কৃষক লীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
এ ছাড়াও তথ্য মন্ত্রণালয়, পিআইবি, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবার, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, মহিলা শ্রমিক লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, তাঁতী লীগ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, যুব উন্নয়ন অধিদফতর, ঢাকা সিটি করপোরেশন শ্রমিক-কর্মচারী লীগ, গণপূর্ত শ্রমিক লীগ, জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরিষদ, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমী, গণগ্রন্থাগার অধিদফতর, জাতীয় জাদুঘর, শিশু একাডেমী, খেলাঘর, বাংলাদেশ বেতার, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট, বেতার কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতি, বিনিয়োগ বোর্ড, শিল্প গবেষণা পরিষদ, ঢাকা আইনজীবী সমিতি, তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, জাতীয় মহিলা সংস্থা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, ছাত্র ইউনিয়ন, মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকসহ এসব ব্যাংকের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন, পঙ্গু হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্যপরিষদ, ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি, বঙ্গবন্ধু ফেডারেশন, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ, সাধনা সংসদ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুক্তিযোদ্ধা সমাজকল্যাণ পরিষদ, আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু আইন পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা বিসিএস অফিসার্স কল্যাণ সমিতি, বঙ্গবন্ধু ললিতকলা একাডেমি, সোনার বাংলা যুব পরিষদসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন।
৩২ নম্বরের আশে পাশের রাস্তাসহ রাজধানী জুড়ে শোকের প্রতীক কালো পতাকার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন, প্লাকার্ড ও তোরণ তৈরি করা হয়। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশে মিলাদ মাহফিল, রক্তদান কর্মসূচি, কালোব্যাজ ধারণ ও কাঙালি ভোজের আয়োজনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও দেশাত্মবোধক গান বাজানো হয়।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল ছিল সরকারি ছুটির দিন। সমগ্র জাতি দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদার মধ্যদিয়ে পালন করে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে জাতীয় শোক দিবস পালন
স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভা হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল। এতে বিভিন্ন গ্রেডের ১৫জন কর্মচারী বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম এবং জাতি গঠনে তার ঐতিহাসিক ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনাসভা শেষে গণভবন মসজিদের খতিবের পরিচালনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল হয়। অনুষ্ঠানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সকল কর্মচারীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর দেয়া হয়।
এতিমদের নিয়ে এমপির কাঙ্গালী ভোজ
এদিকে, প্রায় একশত তিনটি স্থানে ঢাকা-৫ আসনে এমপি হাবিবুর মোল্লার নেতৃত্বে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কাঙ্গালী ভোজের আয়োজন করা হয়। এসব স্থানে এতিম-মাদ্রাসার ছাত্র এবং সমাজের দুস্থ শিশুদের মাঝে উন্নতমানের খাবার বিতরণ করা হয়। এ সময় ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান মোল্লা, যাত্রাবাড়ি থানা যুবলীগের সভাপতি নীরু আমিন নরুলসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উত্তর যাত্রাবাড়ীর মালঞ্চ কমিউনিটি সেন্টারে যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগ ও ৪৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আয়োজনে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা, মিলাদ মাহফিল ও তবারক বিতরণ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহে আলম মুরাদ, যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশিদ মুন্নাসহ আরও অনেকে।
এদিকে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী ওলামালীগের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা দেলোয়ার হোসেন রাজধানীর শ্যামপুর-জুরাইনের বিভিন্ন সমজিদ মাদ্রাসায় কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া মাহফিলে আয়োজন করেন।
বিকেটিটিসিতে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে সেমিনার ও দোয়া মাহফিল
ঢাকার দারুস সালাম বাংলাদেশ-কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে (বিকেটিটিসি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ৪১তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সেমিনার ও দোয়া মাহফিল হয়। এতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারণেই আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ও সার্বভৌমত্ব পেয়েছি। তাঁর কারণেই আমরা একটি পাসপোর্ট পেয়েছি, যার মাধ্যমে আমরা আজ সারা পৃথিবীতে যেতে পারি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে আমাদেরকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে এবং এর মাধ্যমেই দেশকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিতে হবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব বেগম শামছুন নাহারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিকেটিটিসি’র অধ্যক্ষ ড. প্রকৌশলী মো. সাকাওয়াৎ আলী। অনুষ্ঠানে “বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন ভাবনায় শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক যোগাযোগ” বিষয়ক পেপার উপস্থাপন করেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান কেএম আলী রেজা এবং আলোচনা করেন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো(বিএমইটি)-র মহাপরিচালক মো. সেলিম রেজা, অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ ও ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাস।
খুলনায় শোক-শক্তিতে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ
খুলনা ব্যুরো : জাতীয় শোক দিবস খুলনা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে পালিত হয় শোক দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচি। তার মধ্যে ছিল জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা, শোকর্যালি, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা, শিক্ষার্থীদের কবিতাপাঠ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ফ্রি-মেডিকেল ক্যাম্প, বিশেষ দোয়া-মোনাজাত ও কাঙ্গাল ভোজ বিতরণসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান।
শোক দিবসে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে অফিসার্স ক্লাব মিলনায়তনে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। অনুষ্ঠান শেষে যুবকদের মাঝে যুবঋণ এবং শিশুদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সেরাদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
এর আগে সকাল সাড়ে ৮টায় নিউমার্কেট চত্বর থেকে দিবসটি পালন উপলক্ষে শোকর্যালি বের করা হয়। র্যালিতে খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ মিজানুর রহমান মিজান, বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য তালুকদার আবদুল খালেক, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, মুক্তিযোদ্ধা, সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তাসহ সর্বস্তরের জনগণ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। র্যালিটি বাংলাদেশ বেতার খুলনায় গিয়ে শেষ হয়। পরে খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য এসএম মোস্তফা রশিদী সুজাসহ সকলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন।
যশোর ব্যুরো জানায়, জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সোমবার সকাল থেকে যশোর শহরের বকুলতলা মোড় এলাকায় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের ঢল নামে। ভোর থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ফুল নিয়ে সমাবেত হন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবীসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী ও
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।