পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশে ফেরত আনার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ টাকা ফিরিয়ে আনতে আগামী ১৬ থেকে ৩০ আগস্টের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে এফিডেভিটের মাধ্যমে ফিলিপাইনের আদালতে আবেদন করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে পাঠানো মিউচ্যুয়াল লিগাল এসিস্ট্যান্ট (এমএলএ) রিকয়েস্টের আওতায় ফিলিপাইনের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে আদালতে অর্থ ফেরতের আবেদন করবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এফিডেভিট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দলিলাদি পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক সবসময় ফিলিপাইনের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস এবং এন্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। বাংলাদেশ দূতাবাসকেও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি ডিপ্লোমেটিক চ্যানেলে পাঠানোর জন্য সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্মপরিচালক মহুয়া মহসীন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে তিনি জানান, ফিলিপিনো-চাইনিজ ব্যবসায়ী কিম অং-এর ফেরত দেয়া ১৫ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দিতে এন্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল ও কিম অং আদালতে একটি যৌথ প্রস্তাব (জয়েন্ট মিশন) দাখিল করে এবং আদালত থেকে গত ১ জুলাই আংশিক বাজেয়াপ্তকরণ আদেশ (পার্শিয়াল ফরফেইটার অর্ডার) জারি করা হয়। এতে ১৫ মিলিয়ন ডলার ফেরত প্রদান প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত ধাপ অর্জিত হয়। এখন ফিলিপাইনের স্থানীয় আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংককে এফিডেভিটের মাধ্যমে আদালতে এ অর্থ ফেরত প্রদানের জন্য আবেদন করতে হবে।
মহুয়া মহসীন জানান, চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি হ্যাকিং-এর মাধ্যমে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক, নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ লেনদেনকারী হিসাব হতে মোট ৭০টি ভুয়া পেমেন্ট ইনস্ট্রাকশন (পিআই)-এর মাধ্যমে ১ হাজার ৯২৬ মিলিয়ন ডলার অবৈধভাবে স্থানান্তরের চেষ্টা করা হয়।
এর মধ্যে ১টি পিআই এর বিপরীতে শ্রীলঙ্কায় ২০ মিলিয়ন ডলার এবং ৪টি পিআই’র বিপরীতে মোট ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের একটি ব্যাংকের চারজন গ্রাহকের হিসাবে পাঠানো হয়। শ্রীলঙ্কার ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুরোধে সম্পূর্ণ অর্থ ইতোমধ্যে ফেরত পাঠিয়েছে।
ফিলিপাইনে পাঠানো ৮১ মিলিয়ন ডলার রিজেল কমার্শিয়াল ব্যাংক কর্পোরেশন (আরসিবিসি)-এর ৪টি হিসেবে জমা হয় এবং সমপরিমাণ অর্থ ব্যাংকের একই শাখায় পরিচালিত অপর একজন গ্রাহকের হিসাবে জমা হয়। যা পরবর্তীতে একটি মানি রেমিটেন্স কোম্পানি হয়ে ফিলিপাইনে পরিচালিত ক্যাসিনোতে চলে যায় এবং পরবর্তীতে তা একজন ফিলিপিনো-চাইনিজ ব্যবসায়ী তুলে নেয়।
মোট ৮১ মিলিয়ন ডলার আরসিবিসির জুপিটার স্ট্রিট, মাকাতি সিটি শাখায় পরিচালিত ভুয়া সুবিধাভোগীদের হিসাবে স্থানান্তর হয়। এ পর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতা চাওয়া হয়। ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতা ত্বরান্বিতকরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দুই সদস্যের একটি দল ফিলিপাইন যায়। ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বাণিজ্যিক ব্যাংক আরসিবিসির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের ভার তাদের এন্টি মানিলন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি)-এর ওপর অর্পণ করে।
এএমএলসি আনুষ্ঠানিক তদন্তের জন্য গত ২৯ ফেব্রুয়ারি আদালতে আবেদন করে এবং ফিলিপাইনের আদালত থেকে ১ মার্চ ওই বার্তাগুলোর মাধ্যমে পাঠানো অর্থের চূড়ান্ত সুবিধাভোগীদের হিসাবগুলো আরসিবিসি’র সংশ্লিষ্ট শাখাসহ তিনটি ব্যাংকের সম্পৃক্ত হিসাবগুলো স্থগিত করাসহ (ফ্রিজ) আনুষ্ঠানিক তদন্তের নির্দেশ জারি করে। সে মোতাবেক এএমসিএল আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ফিলিপিনের সিনেটের ব্লু-রিবন কমিটিতে মোট ৭টি শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে অর্থ চুরির বিষয়ে ফিলিপিনো-চাইনিজ ব্যবসায়ী কিম অং আরসিবিসি’র বিভিন্ন কর্মকর্তা, মানি রেমিটেন্স কোম্পানি ফিলরেম সার্ভিস কর্পোরেশন (ফিলরেম)-সহ সংশ্লিষ্ট অন্যদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়গুলো উন্মোচিত হয় এবং এর ভিত্তিতে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য ব্যবহার করে ফিলিপাইনের আইনি প্রক্রিয়া গতিশীল হয়। এসব তথ্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ উদ্ধারেও বিশেষভাবে সহায়ক হয়।
অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা মোট চারবার ফিলিপাইন গেছেন। এ সময় ফিলিপাইনের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস, এন্টি মানিলন্ডারিং কাউন্সিল, ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সঙ্গে সভা করেন এবং সকল কর্তৃপক্ষের সহায়তা চান।
সর্বশেষ গত ১ থেকে ৫ আগস্ট ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ এবং যুগ্মপরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রব ফিলিপাইন যান। এ টিমকে আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়োজিত বিশেষজ্ঞ আইনজ্ঞ আজমালুল হোসেন কিউসি ও এ টিমের সঙ্গে ফিলিপাইন যান।
এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান, ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস-এর সেক্রেটারি (আইনমন্ত্রী), সলিসিটর জেনারেল, চিফ স্টেট কাউন্সেল, ক্যাসিনো সেক্টরের রেগুলেটরের প্রেসিডেন্ট ও চিফ অপারেটিং অফিসার, এন্টি মানিলন্ডারিং কাউন্সিল-এর প্রধান কর্মকর্তা, ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় বিভিন্ন আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সভা করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।