পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : নিজের দুই শিশু সন্তান হত্যা মামলায় মা তানজিনা আক্তারকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে দিয়েছে আদালত। পুলিশের আবেদনের পর এই আদেশ দেন ঢাকার মহানগর হাকিম গোলাম নবী। এর আগে এ ঘটনায় দুই শিশুর বাবা মাহবুবুর রহমান মা’কে আসামি করে সবুজবাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে এ হত্যার সঙ্গে আর কেউ জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে ১০টার দিকে রাজধানীর উত্তর বাসাবোর ১৫৭/২ নম্বর ‘ষড়ঋতু’ নামের একটি ছয়তলা ভবনের চিলেকোঠায় খুন হয় দুই শিশু মাশরাফি ইবনে মাহবুব আবরার (৭) ও হুমায়রা বিনতে মাহবুব তাকিয়া (৬)। এই ঘটনায় ভোর চারটার দিকে তাদের মা তানজিনা আক্তারকে রাজধানীর সবুজবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সবুজবাগ থানার ওসি আবদুল কুদ্দুস ফকির গণমাধ্যমকর্মীদেরকে জানান, সন্তান হত্যার কথা তাদের কাছে স্বীকার করেছে তানজিনা। আর একই থানার এসআই নওশের আলী জানান, শিশু দু’টির মা মাসনিক রোগী। তানজিনাকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ।
এর আগে গতকাল দুপুরে দুই ভাই-বোনের ময়না তদন্ত হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ জানান, ধারালো অস্ত্রের আঘাতেই শিশু দুটির মৃত্যু হয়েছে। এই চিকিৎসক জানান, অস্ত্রের কোপে মাহবুব তাকিয়ার গলা শরীর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আর মাশরাফি ইবনে মাহবুব আবরারের ঘাড়ের ডানপাশে দুইটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এতে তার স্পাইনাল কর্ডসহ ঘাড়ের বেশ কিছু অংশ কেটে যায়। ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।
এই ঘটনায় শিশু দুটির বাবা মাহবুবুর রহমান তার স্ত্রী তানজিনা আক্তারকে একমাত্র আসামি করে সবুজবাগ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এতে তিনি বলেন, গত শুক্রবার দুপুরে তার শ্যালক বাসায় আসার পর উন্নতমানের রান্না হয়। সন্ধ্যার দিকে শ্যালককে মগবাজারে তার আবাসিক স্কুলে পৌঁছে দিয়ে বাসাবোর ঝিলপাড়ে একটি মসজিদে এশার নামাজ পড়তে যান তিনি। রাত সোয়া নয়টার দিকে তার ভাই মোস্তাফিজুর রহমান মোবাইল ফোনে তাকে জানান, বাড়ির মালিক ফোন করে জানিয়েছে, বাসার সামনে রক্ত দেখা যাচ্ছে। দ্রুত বাসায় গিয়ে দরজায় তালা দেয়া দেখতে পান বলে জানান মাহবুব।
এরপর দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে মেয়ে তাকিয়ার গলাটাকা রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান মাহবুব। অন্য একটি কক্ষে ছেলে আবরারের গলাকাটা লাশ দেখতে পান তিনি। কিন্তু স্ত্রী তখন ঘরে ছিল না। পরে বাড়ির মালিক থানায় ফোন করে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ দুটি নিয়ে যায়।
মাহবুবের অভিযোগ, তার স্ত্রী তানজিনাই দুই সন্তানকে হত্যা করেছে। তবে কেন এই কাজ করেছে সেটা তিনি মামলার এজাহারে উল্লেখ করেননি। এখন পর্যন্ত তদন্তে কী জানা গেছে, জানতে চাইলে সবুজবাগ থানার ওসি আবদুল কুদ্দুস ফকির বিস্তারিত বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, তদন্তাধীন বিষয়ে কথা বলা ঠিক না।
মাশরাফি বিন মাহবুব ওরফে আবরার খিলগাঁও বাগিচা হাফেজিয়া মাদ্রাসার নূরানী শাখায় এবং হুমায়রা বিনতে মাহবুব ওরফে তাকিয়া দিপশিখা কিন্ডার গার্টেন স্কুলের কেজি শ্রেণিতে পড়তো। কিছুদিন আগে তাকেও একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়।
পুলিশ জানায়, নিহত শিশুদের পিতা মাহবুবুর রহমান ওয়াসায় কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি করেন। জানা যায়, গত আট মাস ধরে পরিবারটি ওই বাড়িতে ভাড়া থাকে। বাড়িটি একবছর আগে তৈরি হয়েছে। নিহত শিশুদের ফুফু লাইলা নূর বলেন, ২০০৮ সালে তাদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পরপরই আমরা তার (শিশুদের মা) মানসিক সমস্যা বুঝতে পারি। এর পর ফার্মগেটের গ্রিন রোডের ডক্টরস চেম্বারে ড. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আমরা তাকে দেখাই। ডাক্তার তার চিকিৎসা করে সব সময় ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন। শিশুদের মা সবসময় নামাজ রোজা করতেন, কোরআন তেলাওয়াত করতেন।
শিশুদের মা কী ধরনের সমস্যায় ভুগছিলেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে লাইলা নূর বলেন, তিনি সাধারণত চুপচাপ থাকতেন, কারও সঙ্গে কোনও কথা বলতেন না। সন্তান বা স্বামীর প্রতি কোনও খেয়াল রাখতেন না। তবে যখন ওষুধ দেয়া হতো তখন তিনি ভাল থাকতেন। আর যখন ভাল থাকতেন তখন সমস্যা জানতে চাইলে বলতেন, তিনি (শিশুদের মা) স্বপ্নে তার দুই সন্তানকে মেরে ফেলেছেন বা তার বাবা-মা (শিশুদের নানা-নানী) তাকে মেরে ফেলেছে। অথবা তিনি তার স্বামীকে মেরে ফেলেছেন। এসব স্বপ্ন দেখে তিনি দুশ্চিন্তা করতেন।
তিনি আরও বলেন, গত ৩ জুন তারা সপরিবারে নারায়ণগঞ্জের আমাদের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। তখন তিনি সুস্থ ছিলেন। আমাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে। গত ঈদে তারা সেখানে গিয়েছিল।
লাইলা নূর বলেন, নিহত শিশুদের বাবা মাহবুব রহমান দুপুরে কোরবানির বিষয়ে কথা বলার জন্য আমাকে ফোন দিয়েছিল। আমরা তিন ভাই-বোন সবসময় এক সঙ্গে কোরবানি দিয়ে থাকি। তখন সে বলেছিল তারা সবাই ভাল আছে। এরপর রাত সাড়ে নয়টার দিকে আমার ছোট ভাই মোস্তাফিজুর রহমান ফোনে জানায়, তাকিয়া ও আবরার আর বেঁচে নেই। তারপর আমি নারায়ণগঞ্জ থেকে এখানে ছুটে আসি।
তিনি আরও বলেন, খিলগাঁওয়ের বাগিচা এলাকায় নিহত শিশুদের নানার বাড়ি। তাদের নানা বেঁচে নেই। নানি, মামা ও খালারা সেখানে থাকেন। তাদের বাড়িও কুমিল্লার দেবিদ্বারে।
তিনি বলেন, আবরার গত এক বছর ধরে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়াশুনা করতো। মেয়েটাও কিছুদিন আগে মাদ্রাসায় ভর্তি হয়।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় মায়ের হাতে হত্যার শিকার হয় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ইশরাত জাহান অরণী (১৪) এবং তার ছোট ভাই হলি (ইন্টারন্যাশনাল) ক্রিসেন্ট স্কুলের নার্সারির ছাত্র আলভী আমান (৬)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।