পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ৭মাস ধরে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এর ফলে রাজধানীতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ঘিরে যে সব লাইব্রেরী ও স্টেশনারি পণ্যের দোকান গড়ে উঠেছে সেগুলো এখন প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। এসব লাইব্রেরী বা বই-খাতার দোকান ব্যবসায়িকভাবে ভয়াবহ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। অনেক লাইব্রেরীর মালিক ইতোমধ্যে কর্মচারী ছাটাই করেছেন। এতে অনেকে বেকার হয়ে পড়েছেন। বইখাতা ছাড়া অন্যান্য স্টেশনারি পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত অনেকেই এখন বেকার হয়ে পড়েছেন।
রাজধানী জুড়ে শতাধিক স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে রয়েছে বই-খাতা, কলম-পেন্সিল, ফাইল ইত্যাদির দোকান। এসব অনেক দোকানে আবার ফটোকপির মেশিনও আছে। রাজধানীতে নামকরা যে ক’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের মধ্যে ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, মতিঝিল সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট গার্লস হাই স্কুল, গভমেন্ট বয়েজ হাইস্কুল, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ হাইস্কুল, হলিক্রস, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, শামসুল হক খান স্কুল এন্ড কলেজ, এ কে স্কুল এন্ড কলেজ, সেন্ট জুবলী হাইস্কুল, মুসলিম হাইস্কুল, ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, নটরডেম কলেজ, তেজগাঁও সরকারি কলেজ, সরকারী তিতুমীর কলেজ উল্লেখযোগ্য।
ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ ছাড়াও বেইলী রোড ও সিদ্ধেশরী এলাকায় আরও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। এগুলো হলো সিদ্ধেশরী মহিলা কলেজ, সিদ্ধেশরী ডিগ্রী কলেজ, হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ, মগবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, সিদ্ধেশরী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ইত্যাদি। এসব প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে শান্তিনগর, বেইলী রোড ও সিদ্ধেশরী এলাকায় বেশ কয়েকটি লাইব্রেরী বা বইয়ের দোকান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে সবুজ লাইব্রেরী, বিদ্যা প্রকাশ, সাগর পাবলিশ্বার্স, থিয়েটার কর্ণার উল্লেখযোগ্য। করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এসব লাইব্রেরী বা বইয়ের দোকানের বেচা বিক্রি একদম কমে গেছে। আগে যেখানে এসব দোকানে প্রতিদিন গড়ে পনের-বিশ হাজার টাকা বিক্রি হতো সেখানে এখন দিনে হাজার টাকাও বিক্রি হয় না। ক্রেতার অপেক্ষায় সারাদিন বসে থাকতে হয়। শান্তি নগর মোড়ে সবুজ লাইব্ররীতে সারা বছরই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ভিড় লেগে থাকতো। এ লাইব্রেরীতে সব ধরনের বই খাতা পাওয়া যেত বলে আশপাশের স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা এখান থেকেই তাদের প্রয়োজনীয় বই খাতা, কলমসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী এখান থেকে কেনা কাটা করতো। ফলে এ দোকানে সারা বছরই ক্রেতার ভীড় লেগে থাকতো। করোনার কারণে স্কুল-কলেজ সব বন্ধ থাকায় এখন এ লাইব্রেরীতে বেচা কেনা একদম নেই বললেই চলে।
ভিকারুন নিসা স্কুলের গেটের পাশেই থিয়েটার কর্ণার নামের বইয়ের দোকান। এ দোকানেও সব সময় শিক্ষার্থীদের ভিড় লেগে থাকতো। দোকানের তিন চার জন কর্মচারী সব সময় ব্যস্ত থাকতো এখন সারাদিনই তাদের অলস সময় কাটে। এর মধ্যে দোকানের কর্মচারীর সংখ্যাও কমে গেছে। এখন মাত্র একজন কর্মচারী দিয়ে চলছে দোকানের বেচা কেনা।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ রাজধানীর অন্যতম নাম করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর কাছাকাছি রয়েছে, মতিঝিল মডেল হাই স্কুল, সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট গার্লস হাই স্কুল ও গভর্নমেন্ট বয়েজ হাইস্কুল। আইডিয়ালের পাশে রয়েছে, রাব্বি বুক হাউজ, বিদ্যা প্রকাশনী, আইডিয়াল লাইব্রেরী ইত্যাদি। স্কুল-কলেজ খোলা থাকলে এসব বইয়ের দোকানে সব সময় ভিড় লেগে লাগতো কিন্তু এখন ক্রেতার অপেক্ষায় বসে থাকতে হয়।
আইডিয়াল স্কুলের মোড়েই রয়েছে রাব্বি বুক হাউজ। এ দোকানের বিক্রয়কর্মী রানা বলে, স্কুল বন্ধ থাকায় আমাদের ব্যবসা এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম। স্কুল খোলা থাকলে প্রতিদিন বেচা-বিক্রি হতো কম পক্ষে দশ বার হাজার টাকা। আর করোনার কারণে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় এখন দিনে একহাজারটাকাও বিক্রি হয়না। দোকান ভাড়া ও আমাদের বেতন দিতে পারছে না।
শুধু বেইলী রোড, শান্তিনগর বা মতিঝিলে নয়, রাজধানী জুড়ে এরকম শত শত বইয়ের দোকান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
শুধু বই খাতার দোকানই নয়, ফাইল, পিন, কলমসহ অন্যান্য অফিস স্টেশনারী সামগ্রী বিক্রেতাদেরও এখন করুন অবস্থা। নীলক্ষেত ও পুরান ঢাকার বাবু বাজারের সৈয়দ হাসান আলী লেনে স্টেশনারি পন্যের পাইকারি প্রতিষ্ঠান ও কারখানা রয়েছে। এগুলোতেও এখন খুব একটা ব্যস্ততা নেই। মাঝে মধ্যে দু-এক জন ক্রেতা আসছেন আবার কখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকছেন দোকান মালিক ও কর্মচারীরা। কারখানাগুলোও কমিয়েছে লোকবল।
দোকান মালিকদের তথ্য মতে, এই স্টেশনারি ব্যবসায়ে পাইকারি দোকানগুলোতে দিনে এক থেকে দেড় লাখ টাকা বিক্রি হতো। আর খুচরো প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিক্রি হতো ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। কিন্তু করোনার কারণে এখন বিক্রি নেই। বর্তমানে অনেকেই চলছেন ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে। আবার অনেকে দোকান ভাড়াই দিতে পারছেন না। যার ফলে ব্যবসায়ীরা অনেকটাই হতাশা আছেন।
নীলক্ষেতের স্টেশনারি ব্যবসায়ী শফিক বলেন, আমরা খুব করুণ অবস্থায় আছি। বর্তমানে প্রতিদিন হাজার বারশ’ টাকা বিক্রি হয়। করোনার আগে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বিক্রি হতো। এই হাজার বারশ’ টাকা বিক্রি করে আমাদের তেমন কিছুই হয় না। দোকান ভাড়া আছে, আমাদের থাকা-খাওয়ার খরচ আছে, বাসা ভাড়া আছে। এমন একটা অবস্থা খাওয়ার পয়সাই উঠে না, ঘর ভাড়া কোথা থেকে দেবো। বর্তমানে আমাদের ঋণ করে চলতে হচ্ছে। আমরা এখন ঋণগ্রস্ত।
পুরান ঢাকার বাবু বাজারের সৈয়দ হাসান আলী লেনের পাইকারি ব্যবসায়ী ইসলাম উদ্দিন বলেন, করোনা পরবর্তী সময়টায় আমাদের খুব খারাপ অবস্থা হয়েছে। এখন শুধু অফিস-আদালতে মালামাল সাপ্লাই করি। অন্যদিকে স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে ব্যাপক মালামাল লাগতো সারা বছর, সেই অংশটা এখনও বন্ধ আছে। করোনার আগে আমাদের প্রতিদিন এক থেকে দেড় লাখ টাকা বিক্রি ছিল। এখন আমাদের বিক্রি হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। আমাদের এখন চলাটাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
উৎপাদনকারী হারুন বলেন, এই এলাকায় সব মিলিয়ে প্রায় লাখ খানেক কর্মী স্টেশনারি পণ্য উৎপাদনে কাজ করে। কিন্তু সেই কর্মী সংখ্যা এখন প্রায় ৬০ হাজার। বাকিদের বাধ্য হয়ে কাজ থেকে অব্যাহতি দিতে হয়েছে। কারণ নিয়মিত ইনকাম ছাড়া তাদের বেতন দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না।
বইয়ের দোকান ও স্টেশনারি ব্যবসায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অপেক্ষায়। তাদের আশা স্কুল-কলেজ খুললেই ব্যবসা আবার ঘুরে দাঁড়াবে। মেশিনের শব্দে কারখানা হবে মুখর, আর পাইকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আবার জমজমাট হয়ে উঠবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।