পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সারাদেশে সরকারি হাঁস-মুরগীর প্রজনন খামারের বেহাল দশা। সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো সুবিধা থাকার পরও এসব খামার থেকে কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। অব্যবস্থাপনা ও অযত্মে যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে অনেক খামারের কার্যক্রমই প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। জনবলের অভাবে প্রতিটি খামারে সামর্থের চেয়ে উৎপাদন হচ্ছে অর্ধেকেরও কম। এতে প্রতি বছর সরকারের ক্ষতি হচ্ছে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া হাঁস মুরগীর খামারের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জন্য ইনসিনাবেটর মেশিন না থাকায় দূষিত হচ্ছে আশপাশের পরিবেশ।
দেশের সাধারণ মানুষের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মেটাতে ও বেকারদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে সরকার সারাদেশে হাঁস-মুরগীর প্রজনন খামার নির্মাণ করেন। সারাদেশের ৪০টি খামার ২০০০সালে সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো সুবিধা নিয়ে নির্মাণ করা হয়। এসব খামার থেকে প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার বাচ্চা উৎপাদন ও বিপননের সামর্থ রয়েছে। তবে বাস্তবে উৎপাদন হচ্ছে অর্ধেকেরও কম। সামর্থ অনুযায়ী উৎপাদন ও বিপনন হলে প্রতিটি খামার থেকে সরকারের প্রতি মাসে কোটি টাকা আয় হতো। সে হিসাবে দেশের ৪০টি খামার থেকে সরকারের বছরের আয় হতো প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু তা তো হচ্ছেই না বরং এ সব খামারের রক্ষণাবেক্ষন ও উন্নয়নের জন্য সরকারকে উল্টো বরাদ্দ দিতে হচ্ছে। দেশের ৩৩টি হাঁস-মুরগীর প্রজনন খামারের উন্নয়নের জন্য সরকার চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরে ১৩ কোটি ৪২ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
প্রজনন কাজের প্রসারের জন্য সরকারি খামারে কৃত্রিমভাবে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য অত্যাধুনিক ইনকিউবেটর যন্ত্র রয়েছে। এ ছাড়া বেশি পরিমাণে ডিম পেতে বিদেশ থেকে আনা হয় জিনডিং, খাগি ক্যাম্পবেল, বেইজিং, নাগেশ্বরী, ইন্ডিয়ান রানারসহ বেশ কয়েকটি উন্নত প্রজাতির হাঁস। এগুলো দেশীয় জাতের হাঁসের তুলনায় দ্রুত বর্ধনশীল এবং বেশি পরিমাণে ডিম দেয়। এছাড়া সরকারি খামারে একদিন বয়সের হাঁসের বাচ্চা বিক্রি হয় ২০ টাকায়। একই হাঁসের বাচ্চা বাজারে বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। খামারে উৎপাদিত হাঁস অন্য হাঁসের তুলনায় আলাদা। দৈহিক গঠন অন্য হাঁসের চেয়ে বেশ বড় হয়। বছরের ১০ মাস ডিম দেয়। তাই বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে লাভবান হওয়ার আশায় এই সব প্রজাতির হাঁসের প্রতি স্থানীয় খামারিরাও আগ্রহি হয়। এ জন্য তারা সব সময়ই এখান থেকে বাচ্চা কেনার চেষ্টা করেন। কিন্তু সরকারি খামারগুলোতে সামর্থের চেয়ে বাচ্চা উৎপাদন অনেক কম হওয়ায় স্থানীয় খামারীরা চাহিদা মতো বাচ্চা না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং খামার করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
নেত্রকোনা জেলা সংবাদদাতা এ কে এম আব্দুল্লাহ জানান, প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবলের অভাবে নেত্রকোনা আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারে উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। হাঁসের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বাচ্চা ফোটানোর লক্ষ্যে ২০০৭ সালে নেত্রকোনার রাজুর বাজার এলাকায় আড়াই একর জমির উপর এই খামার গড়ে তোলা হয়। সেখানে বর্তমানে ৯টি শেড রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি লেয়ার শেড, ১টি গ্রোয়ার শেড ও ১টি ব্রুডার শেড রয়েছে। খামার এলাকায় শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ইনকিউবিটর মেশিন চালুসহ একটি ভবন, অফিস ভবন ও স্টাফ ডরমেটরী এবং ৮ টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি গো-ডাউন রয়েছে। খামারে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ২টি পানির পাম্প রয়েছে। খামারে পানির ওভারহেড ট্র্যাংকি না থাকায় মেশিন চালুর পর পানি ওভার ফ্লু হয়ে ভবনের দেয়াল নষ্ট হচ্ছে।
আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারের পোল্টি ডেভেলপমেন্ট অফিসার ডা: শিশির স্বপন চাকমা জানান, লোকবল সঙ্কটের কারণে খামারে স্বাভাবিক উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। ৯ জন শেড এটেন্ডেন্সের মধ্যে বর্তমানে মাত্র ৪ জন কর্মরত আছে। খামারে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে হলে আরো ৫ জন এটেন্ডেন্সের প্রয়োজন। এছাড়াও ১জন পোল্টি টেকনিশিয়ান, ১জন হ্যাচারী টেকনিশিয়ানের এবং ১জন নাইট গার্ড প্রয়োজন। তিনি বলেন, খামারে উৎপাদিত বর্জ্যরে সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় আশপাশের আবাসিক এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সরকার সুদৃষ্টি দিলে বর্জ্য গুড়িয়ে ফেলার ইনসিনাবেটর মেশিন স্থাপনের মাধ্যমে পরিবেশ দূষনমুক্ত রাখা সম্ভব হবে।
খুলনা সংবাদদাতা আবু হেনা মুক্তি জানান, দৌলতপুরে আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার প্রকল্পের মাধ্যমে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের উদ্যোগী তরুণদের বেকারত্ব কিছুটা দূর হচ্ছে। বর্তমানে এ খামার থেকে সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটসহ বেশ কয়েকটি জেলায় জেন্ডিং জাতের হাঁসের বাচ্চা ফোটানো ও সরবরাহ করা হয়। এ জাতের হাঁস বছরে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ ডিম দেয়। স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই মুনাফা পাচ্ছেন হাঁস-পালনকারীরা। তবে খামার কর্তৃপক্ষ জানায়, হাঁসের খামার থেকে খামারিরা অনেক লাভবান হলেও ভালো অবস্থায় নেই খামারটি। অনেক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে এটি। বর্তমানে খামারের ১১টি ব্রিডার সেট ৪ হাজার হাঁসের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। খামারের সেটের নেট অনেক স্থানেই ছিঁড়ে গেছে। এ ব্যাপারে আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারের সহকারী পরিচালক মোহা: মোশিউর রহমান বলেন, জনবল সঙ্কটসহ খামারটি বর্তমানে নানা সমস্যায় জর্জরিত। খামারের সব কিছু নতুনভাবে সংস্কার করা প্রয়োজন।
মাগুরার আঞ্চলিক সরকারি হাঁস প্রজনন কেন্দ্রের আধুনিক ইনকিউবেটর যন্ত্র দীর্ঘদিন যাবত নষ্ট। শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ প্রজনন কেন্দ্রে এখন কোন বাচ্চ উৎপাদন হচ্ছে না। এ কেন্দ্রের ১১টি ছোট বড় ভবনের অধিকাংশই পরিত্যক্ত। ইনকিউবেটর কক্ষটি অন্ধকার পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। মনির নামে একজন কর্মচারী বলেন, মেশিন নষ্ট আছে বলে হাঁসের বাচ্চা ফোটানো সম্ভব হচ্ছে না।
ময়মনসিংহের আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারে পর্যাপ্ত আধুনিক অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি থাকার পরও লোকবল সংকটের সামর্থ অনুযায়ী উৎপাদন সম্ভব হচ্ছেনা। এ কারণে খামারিদের পর্যাপ্ত পরিমাণে বাচ্চা সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ খামারে তিন হাজার হাঁস পালনের অবকাঠামো আছে। কিন্তু হাঁস আছে মাত্র দেড় হাজার। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য যে আধুনিক ও উন্নত মানের যন্ত্র আছে, তাতে একসঙ্গে প্রায় ৪৫ হাজার বাচ্চা ফোটানোর ব্যবস্থা আছে। কিন্তু এখানে মাসে মাত্র ১৫ হাজার বাচ্চা উৎপাদন করা হচ্ছে। যে অবকাঠামো আছে, তাতে ১৭ জন লোক থাকার কথা। কিন্তু একজন ব্যবস্থাপক ও মাত্র পাঁচজন কর্মচারী দিয়ে চলছে খামার। এ কারণে খামারিদের যে পরিমাণ হাঁসের বাচ্চার চাহিদা রয়েছে, তা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
ফেনীর আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারটি আয়তন ও পরিধির দিক দিয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম। এখান থেকে বাচ্চা কিনে ফেনী জেলা, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ভোলাসহ আশপাশের উপক‚লীয় অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালন করছেন। কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনা ও তদারকি না থাকায় এটি এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, অপ্রতুল শেড, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে সম্ভাবনাময় খামারটি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এতে ব্যাহত হচ্ছে হাঁসের বাচ্চা ও ডিম উৎপাদন। খামারটিতে একজন খামার ব্যবস্থাপক পদ থাকলেও তা দীর্ঘদিন শূন্য। জনবল সংকটে খামারে ডিম স্থানান্তর, সংরক্ষণ, বাচ্চা পরিচর্যা, সরবরাহসহ আনুষাঙ্গিক কাজকর্ম চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এডভোকেট শ.ম. রেজাউল করিম জনবল সঙ্কটের সত্যতা স্বীকার করে ইনকিলাব’কে বলেন, এ অভিযোগ সঠিক। সারাদেশে জনবল সঙ্কট রয়েছে। ইতিমধ্যেই সাড়ে ৩ হাজার জনবল নিয়োগের বিষয়টি কেবিনেটে অনুমোদন হয়েছে। আশা করছি অচিরেই জনবল সংক্রান্ত সমস্যা সামাধান হযে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।