পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সবার আগে নিরাপত্তা-‘সেফটি ফাস্ট’। বিশেষ করে নির্মাণ কাজের বেলায় এ কথাটির যথার্থতা বেশি। অথচ ভবন নির্মাণের বেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা একেবারেই উপেক্ষিত থাকছে। যার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে শ্রমিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। অন্যদিকে ‘নিধিরাম সর্দারের’ ভূমিকায় তদারকি সংস্থা। গত দশ বছরে রাজধানীতে কর্মক্ষেত্রে দুঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৪হাজার ৩শ’ ৬জন শ্রমিক। এ সময় আহত হন ৭শ’৯৩জন। এদের মধ্যে অনেকেই পঙ্গু জীবন-যাপন করছেন। সর্বশেষ গত ২৮ সেপ্টেম্বর সোমবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর এলাকায় ঝুলন্ত মাচায় দাঁড়িয়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন ওই বহুতল ভবনের ১০ তলার নির্মাণ কাজ করছিলেন ৩ শ্রমিক। এ সময় মাচাটি ভেঙে গেলে তারা ৩ জনই নিচে পড়ে যান। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় শরিফুল (২৫) নামে এক শ্রমিকের। বাকি দু’জনকে উদ্ধার করে স্কয়ার হাসপাতালে নেয়ার পর তাদেরও মৃত্যু হয়। এ সময় আহত হয়েছেন এক পথচারী।
ধানমন্ডি থানার (ওসি) মো. ইকরাম আলী জানান, মূলত বিল্ডিং কোড না মেনে নির্মাণ কাজ ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তিন শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিস সূত্রে জানা গেছে, ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন প্রায় ৩৭ লক্ষ নির্মাণ শ্রমিক।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র মতে, জরুরি বিভাগে প্রতিনিয়তই হতাহত নির্মাণ শ্রমিকদের আনা হয়। মৃত্যুর চেয়ে এসব ঘটনায় পঙ্গুত্ববরণ করার ঘটনা বেশি। উঁচু ভবন থেকে পড়া, মাথায় ইট পড়া, রড়সহ ভারিবস্তু পড়া, ভবনের পাশে হেঁটে যাওয়ার সময় কোন কিছু পড়ার ঘটনা বেশি। এরমধ্যে মাথায় আঘাত প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীতে বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অধিকাংশ ভবনে কোন ধরনের জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে না। নির্মাণ শ্রমিকরা অরক্ষিত অবস্থায় কাজ করেন ভবনে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় আশপাশের মানুষও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেন। প্রায়ই দেখা যায়, ভবন নির্মাণের কাজ করার সময় পড়ে গিয়ে নিহত হন শ্রমিক। হতদরিদ্র এসব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা দেয়ারও কেউ নেই। নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকার কারণে কোন শ্রমিকের মৃত্যু হলে তার দায় নেয়ার কথা ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের। অথচ ডেভেলপার বা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো এ ক্ষেত্রে কোন দায় নেয় না। আবার জাতীয় বিল্ডিং কোডে কর্মকালীন একজন শ্রমিকের কী কী নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, সেটার বিস্তারিত উল্লেখ থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিষয়গুলো উপেক্ষিত থাকছে। বিষয়টি তদারক করার দায়িত্ব যাদের, তারাও এ ব্যাপারে উদাসীন। ফলে উপেক্ষিত থাকছে নিরাপত্তা, বাড়ছে প্রাণহানি।
২০১৪ সালের জাতীয় বিল্ডিং কোড অনুযায়ী, কাজের সময় শ্রমিকের মাথায় হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক। যারা কংক্রিটের কাজে যুক্ত, তাদের হাতে গøাভসও পরতে হবে। চোখের জন্য ক্ষতিকর কাজ যেমন ড্রিলিং, ওয়েল্ডিং, ঢালাইয়ের সময় শ্রমিকদের চশমা ব্যবহার বাধ্যতামূলক। ওয়েল্ডার ও গ্যাস কাটার ব্যবহারের সময় রক্ষামূলক সরঞ্জাম যেমন গøাভস, নিরাপত্তা বুট, এপ্রন ব্যবহার করতে হবে। ভবনের উপরে কাজ করার সময় শ্রমিকের নিরাপত্তায় বেল্ট ব্যবহারও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডে। কিন্তু এর কোনটিই বাস্তবে দেখা যায় না।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিস-এর কনসালসেন্ট খন্দকার আ. সালাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানীসহ সারাদেশের ভবন নির্মানের ক্ষেত্রে যে আইন রয়েছে তার প্রয়োগ ও তদারকি নেই। সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রমিকদের নিরাপত্তায় নির্মানাধীণ ভবন মালিক বা শ্রমিকদের সাথে কোন ধরনের সমন্বয় করে না। ভবন মালিক বা ভবন নির্মাণের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা শ্রমিকদের কাজ করার সময় নিরাপত্তা সামগ্রী দেয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা পালন করা হয় না। এছাড়া নির্মাণ শ্রমিকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণেরও যথেষ্ট অভাবও রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গত ১১ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর ভাটারায় নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে আসাদুল ইসলাম (২৪) ও খায়রুল ইসলাম (২৬) নামে দুই শ্রমিক নিহত হয়েছেন। তাদের সহকর্মী শরিফুল ইসলাম নামে এক শ্রমিক জানান, আসাদুল ও খায়রুল দু’জনে সম্পর্কে চাচাতো ভাই। তারা ১৪ তলা নির্মাণাধীন ভবনের ৯ তালার বাইরের অংশে মাচাংয়ে দাঁড়িয়ে পলেস্তারের কাজ করছিলেন। হঠাৎ মাচাং ছিড়ে দুজন নিচে পড়ে যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় দু’জনকে উদ্ধার করে বেলা সোয়া ১১ টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
গত ২৩ জুন ক্যান্টনমেন্ট পশ্চিম মানিকদি এলাকায় নির্মাণাধীন একটি ভবনের নয় তলা থেকে নিচে পড়ে বাবুল মিয়া (২৫) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। নিহতের সহকর্মী রেজাউল জানান, পশ্চিম মানিকদি নির্মাণাধীন ভবনের নয় তলায় রডের কাজ করার সময় অসাবধানতাবশত ওপর থেকে নিচে পড়ে যান বাবুল। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ভর্তি করেন। সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে, নির্মাণকাজ করতে গিয়ে একের পর এক দুর্ঘটনায় শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এছাড়াও নির্মাণ কাজে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য দাবি জানিয়েছেন শ্রমিকরা।
রাজধানীর পশ্চিম তেজতুরী বাজার এলাকায় একটি নির্মানাধীন ভবনে কাজ করছিলেন মনির মিয়া। গতকাল তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি বরিশাল। তবে দীর্ঘ দিন থেকে ঢাকা শহরের ভবন নির্মাণের কাজে যুক্ত আছি। কিন্তু ভবন নির্মাণকাজে নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। ভবনের মালিক পক্ষ বা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকেও কোনো নিরাপত্তা দেয় না। তাই নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পরিবারের জন্য নির্মাণ কাজ করতে হয় আমাদের।
শাহজাহান মিয়া নামের আরেক নির্মাণ শ্রমিক দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, তিনি দীর্ঘ ১০ বছর থেকে রাজধানীতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজে যুক্ত আছেন। যে ভবনে কাজ করেন, সেই ভবনেই তিনি বসবাস করেন। তাই নির্ধারিত কোনো বাসস্থানও নেই তার। তিনি আরো জানান, ভবন নির্মাণের কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এতে করে মালিকপক্ষ বা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো দায়িত্ব নেয়া হয় না। এমনকি দুর্ঘটনায় কোনো শ্রমিক মারা গেলে বা আহত হলেও কেউ দায় নিতে চায় না। তাই নির্মাণ শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।