পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অনলাইনে বিদেশ থেকে পণ্য ও সেবার বৈধ কেনাকাটার বিপরীতে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড (আইসিসি) ব্যবহারে জুরি নেই। চলমান করোনা মহামারিতে এর ব্যবহার আরও বেড়েছে। দ্রুত লেনদেন করা যায়, নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি থেকে মুক্তি এবং অধিকতর নিরাপদ হওয়ায় প্রতিদিনই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ক্রেডিট কার্ড। তবে বিশ্বব্যাপি আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডধারীরা লেনদেনের অবারিত সুযোগ ভোগ করলেও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীদের বিড়ম্বনা লেগেই আছে। যদিও শুধু দেশি গ্রাহকরা বিপদে পড়ছেন তা নয়।
বাংলাদেশে যেসব বিদেশি অবস্থান করছেন তারাও পড়ছেন নানা বিড়ম্বনায়। কারণ আইফোন, দামি ব্রান্ডের ঘড়িসহ একটু দামি পণ্য ক্রয় করতে গেলেও বারবার অনুমতি নিতে হয় ব্যাংকের। আর এক্ষেত্রে পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। অথচ সরকার উদার বিনিয়োগ নীতিকে উৎসাহিত করছে। সূত্র মতে, প্রয়োজন হলেও নির্দিষ্ট সীমা ৩শ’ ডলারের বাইরে বিদেশি উৎস থেকে অনলাইনে পণ্য ও সেবা ক্রয়ের সুযোগ থাকছেনা। আর এ নিয়েও একেক সময় একেকভাবে সার্কুলার দিচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও সম্প্রতি এই ৩০০ ডলার খরচের ৬টি খাত নির্দিষ্ট করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এখনও ৩শ’ ডলারের মধ্যেও প্রতিটি লেনদেনে নিতে হচ্ছে ব্যাংকের অনুমতি। এমনকি বিদেশে অবস্থান করে গ্রাহক যদি একাধিকবার লেনদেন করেন যেমন- ১৭০ ডলার দিয়ে কিছু ক্রয়ের পর আবার ১৫০ ডলারের লেনদেন করতে চান তাহলেও তাকে অনুমতি নিতে হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতিটি লেনদেনের জন্যই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অনুমতি নিতে হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে বিড়ম্বনায় পড়ছেন গ্রাহক।
ধরা যাক, যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে কোনো বাংলাদেশীর জরুরি ভিত্তিতে ওষুধ কেনার প্রয়োজন পড়ল। এজন্য তিনি ফার্মেসিতে গেলেন। পকেটে নগদ অর্থ নেই; ভরসা ক্রেডিট কার্ডে। বিপদের মুহ‚র্তে এ ক্রেডিট কার্ডও কোনো কাজে আসছে না। এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে বারবার অনুমতি নেয়ার বিষয়টি। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে যে সময়ে দিন বাংলাদেশে সেই সময়ে রাত। বাংলাদেশে ব্যাংকের সব কার্যক্রম বন্ধ। আর তাই গ্রাহককে এই সুবিধা দেয়ার ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব হচ্ছে না। আর তাই বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে গ্রাহককে। একাধিক গ্রাহক জানান, বাংলাদেশে থেকে ক্রয় করলে অনুমতি নেয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার আগে ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন ওপেন করে নিলেও বিদেশে বসে বার বার অনুমতি নেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে দুই দেশের সময়ের ব্যবধানের কারণে। তাই অন্তত গ্রাহককে যাতে বিদেশে অবস্থান করে লেনদেনে বার বার অনুমতি নিতে না হয় সে ব্যবস্থা রাখার দাবি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে।
তবে গ্রাহককে এ ধরণের বিড়ম্বনায় ফেলতে চান না অধিকাংশ ব্যাংক কর্মকর্তারাই। তাদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী আমাদের চলতে হয়। আর নীতিমালা মেনেই প্রতিটি লেনদেনে অবশ্যই অনুমতি নিতে হবে। না হলে তাদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, বিদেশ থেকে পণ্য বা সেবা গ্রহণের জন্য ইন্টারন্যাশনাল কার্ড গ্রাহককে অনলাইন ট্রানজেকশন অথরাইজেশন ফরম বা ওটিএএফ পূরণ করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে জমা দিতে হবে। ব্যাংক সেটি যাচাই করে কোনো অসংগতি না পেলে তবেই গ্রাহক ক্রেডিট কার্ডে ডলার ব্যবহারের অনুমতি পাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ শর্ত নিয়ে বিপদে পড়েছে আন্তর্জাতিক কার্ড বিপণনকারী ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানগুলো। যা বিদেশে অবস্থান করে প্রয়োজনের সময় অনেক ক্ষেত্রেই গ্রাহকদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে। কার্ড ব্যবহারে এ ধরনের শর্ত পুরো বিশ্বেই বিরল বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেডের কার্ড ডিভিশনের কর্মকর্তা মাসুদ ইকবাল ইনকিলাবকে বলেন, ৩শ’ ডলারের মধ্যে লেনদেনের সুযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতমালা অনুযায়ী প্রতিটি লেনদেনে অনুমতি নিতে হবে। তাই এর বাইরে যেতে পারবেন না তারা। তিনি বলেন, ৩শ’ ডলারের মধ্যে কেউ যদি চায় ১০টি লেনদেনও করবেন, সেটি তারা নির্ধারণ করে দিতে পারবেন। তবে তা কোনভাবেই ৩শ’ ডলারের বেশি হবে না।
কার্ড শাখায় কাজ করা একাধিক ব্যাংকার বলছেন, নির্দেশনায় কোন কিছুই স্পষ্ট করা হয়নি। নির্দেশনায় অসঙ্গতি থাকায় গ্রাহকরা প্রয়োজন হলেও ৩শ’ ডলারের বেশি একাকালীন লেনদেন করতে পারছেন না। ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে অনুমোদন দিলেও পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জেরা ও হয়রানিতে পড়তে হচ্ছে। আর তাই উপায় না পেয়ে ব্যাংকাররা গ্রাহকদের সাহায্য করছেন না। কারণ তাহলেই হয়তো তাকে বিপাকে পড়তে হবে। একাধিক ব্যাংকার বলেন, তাদের হাত বাঁধা। নির্দেশনার বাইরে গিয়ে কিছু করার সুযোগ নেই। তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা বিড়ম্বনার স্বীকার হতে হয় তাদের। তাই এ ধরণের নীতিমালা থাকা উচিত নয় বলে মনে করছেন গ্রাহকসহ সেবা প্রদানকারী ব্যাংকগুলো।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ডের ওপর নানা শর্ত সামগ্রিক ডিজিটাল লেনদেনকেই বাধাগ্রস্ত করবে বলে মনে করেন মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল।
সূত্র মতে, ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড লেনদেনে অস্পষ্টতাসহ নানা সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে দৈনিক ইনকিলাবে একাধিক প্রতিবেদনের পর টনক নড়ে। সম্প্রতি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক ৩০০ ডলার খরচের খাতগুলো নির্দিষ্ট করে দেয়। একই সপ্তাহে অপর এক প্রজ্ঞাপনে আন্তর্জাতিক কার্ডের মাধ্যমে ঘরে বসে বিদেশি এয়ারলাইন্সের টিকিট কেনার ব্যবস্থা করার সার্কুলার দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অনলাইনে পণ্য ও সেবামূল্য পরিশোধে এবং ৩শ’ ডলারের অতিরিক্ত খরচ রোধে ‘সতর্ক’ থাকার নির্দেশ দিয়ে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগেও ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড লেনদেনে কড়াকড়ি আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু সার্কলারে সঠিক কোন নির্দেশনা দেয়া হয় না। এভাবে অসঙ্গতিপূর্ণ ও অস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েই দায় শেষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ডিভিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, ক্রেডিট কার্ড লেনদেন সীমা বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যয় উন্মুক্ত করে দেয়া উচিত। কারণ যারা অর্থ পাচার করবে তারা এই সীমার মধ্যেও করবে। তাই উন্মুক্ত করে নজরদারি বাড়াতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বৈদেশিক লেনদেন ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত সময়োপযোগী করা হচ্ছে। তাই মাঝে মাঝে সার্কুলার পরিবর্তন করা হয়। তাদের মতে, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক কার্ডের মাধ্যমে বিদেশের টিকিট এবং হোটেল বুকিং স্থানীয়ভাবে পরিশোধের সুযোগ দেয়ার ফলে বিদেশগামী যাত্রীরা ভ্রমণ স্বস্তির সঙ্গে করতে পারবেন। তবে ৩শ’ ডলারের মধ্যে লেনদেনে বারবার অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।