Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

শত বিঘা জমির মালিক

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০২ এএম

প্রথম ২০০৬ সালে মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপার কাজ চলাকালে প্রশ্ন বের করে আনেন মেশিনম্যান আবদুস সালাম। এর পর একটি চক্র গড়ে তোলে প্রতি বছর মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে অসদুপায়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যান। সেই টাকা দিয়ে গড়ে অঢেল সম্পত্তি। প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মাস্টারমাইন্ড আব্দুস সালামকে গ্রেফতার ও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে সিআইডির কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তের সিআইডির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মেশিনম্যান আবদুস সালামের ঢাকা, সাভার ও মানিকগঞ্জে বিপুল পরিমাণ ভূ-সম্পত্তি রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমরা প্রায় ১০০ বিঘা জমির বিষয়ে তথ্য পেয়েছি। তার আরও জমির সন্ধান পাওয়া গেছে। সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলোতে কাগজ পাঠানো হয়েছে। গত সোমবার ৫ অক্টোবর রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রশ্ন ফাঁস চক্রের এই মাস্টারমাইন্ড আব্দুস সালামকে গ্রেফতার করে সিআইডি সাইবার বিভাগ। শুধু প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতোই অপরাধ না, ২০১৪ সালে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানায় দায়ের করা হত্যা মামলার অভিযুক্ত পলাতক আসামি স্বাস্থ্যশিক্ষা ব্যুরোর এই মেশিনম্যান।
সিআইডির সিনিয়র এএসপি (মিডিয়া) জিসানুল হক জিসান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সালামকে ৫ দিনের রিমান্ডে পেয়েছি। জিজ্ঞাসাবাদে তার জমি ও অন্য সম্পত্তি সম্পর্কে আরও জানতে পারবো।
সিআইডি সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে প্রশ্ন ফাঁসের পর বিষয়টি জানাজানি হয়েছিল। সে সময় প্রথম দফায় ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করে রাখা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৫ সদস্যের একটি কমিটিও করা হয়েছিল। প্রশ্ন ফাঁসে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় সালামকে তৎকালীন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. সেফাত উল্লাহ প্রশ্ন ছাপার মেশিন থেকে সরিয়ে দেন। এ কারণে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে সালাম প্রশ্ন ফাঁস করতে পারেনি। কিন্তু ২০০৯ সালে এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর তদবিরে আবারও ছাপাখানার মেশিনম্যান পদে ফিরে আসে সে। এরপর থেকে প্রতি বছরই মেডিক্যালের প্রশ্ন ফাঁস করতো সে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রত্যেক বছরই সালাম মেশিনম্যান হিসেবে কাজ করেছে। এই সুযোগে সালাম প্রশ্ন ফাঁস করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে তার খালাতো ভাই জসিমের কাছে দিত।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, আবদুস সালাম তার খালাতো ভাই জসিমউদ্দিন তা সারাদেশে প্রশ্ন ছড়িয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতো। জসিমের কাছ থেকে ৮০ শিক্ষার্থীর চেক জব্দ করা হয়েছে। ওই ৮০ জন শিক্ষার্থীর তথ্য খোঁজা হচ্ছে। তারা কে কোথায় ভর্তি হয়েছে তা জানার চেষ্টা চলছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। প্রশ্নপত্র জালিয়াতি চক্রের সদস্য জসিম, পারভেজ খান, জাকির হোসেন ও আব্দুস সালামের মাধ্যমে জানা যায়, ফাঁস করা প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অসংখ্য শিক্ষার্থী বিভিন্ন মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হয়েছে। সালামের মামাতো ভাই, খালাতো ভাই, ভায়রা ভাই, চাচাতো ভাই সবাই প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সক্রিয় সদস্য। সালামের খালাতো ভাই জসিমেরই ৩৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পাওয়া গেছে। সেখানে গচ্ছিত আছে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা। জসিমের স্ত্রী শিল্পীরও ১৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। তার ব্যাংকেও ১০ কোটি টাকা আছে। সম্পত্তির অনুসন্ধান শেষে এই চক্রের সবার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শত-বিঘা-জমির-মালিক

৮ অক্টোবর, ২০২০
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ