পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বসবাসের জন্য ১৯৭৫ সালের ৩০ জুলাই জার্মানি চলে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনাকে বিদায় দিয়ে বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধু সেদিন শিশুর মতো কেঁদেছিলেন। খুব কাছে থেকে সে কান্না যারা শুনেছেন, জাতির পিতাকে সন্তানের জন্য কান্নায় ব্যাকুল হতে দেখেছেন যারা, তাদের চোখের অশ্রুও সেদিন বাঁধ মানেনি। শুধু বঙ্গমাতার দু’চোখ ছিল অশ্রুহীন। সীমাহীন বেদনা হৃদয়ের গভীরে চেপে রাখাই ছিল তার সহজাত। সেদিন তার মুখও ছিল বড় কিছু হারানোর বেদনায় বিমূঢ়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরর একান্ত সচিব ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনও সেই দিনের কথা মনে করে এখনও অশ্রুসজল হয়ে ওঠেন, যেন ফিরে যান সেই পঁচাত্তরে।
ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, সেদিন ছিল ৩০ জুলাই ১৯৭৫। বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার দুই শিশুসন্তান পুতুল ও সজীব এবং ছোট মেয়ে শেখ রেহানাকে কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে বিদায় দিলেন বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গমাতা। সেদিন আমিও তাদের সঙ্গে ছিলাম। বঙ্গবন্ধু সেদিন শিশুর মতো কেঁদেছিলেন! আর বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অব্যক্ত বেদনায় বিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলেন!
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া সে সময় পশ্চিম জার্মানির কার্লসরুয়ে শহরের আণবিক গবেষণা কেন্দ্রে আণবিক রিঅ্যাক্টর বিজ্ঞানে গবেষণায় ব্যস্ত ছিলেন। সেদিন শেখ হাসিনা দুই শিশুসন্তান এবং ছোট বোন রেহানাকে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে বসবাসের জন্য জার্মানি চলে যান।
কন্যাদের বিদায় দিয়ে যে বেদনা ফুটে উঠেছিল বঙ্গবন্ধুর চোখে-মুখে, সেসময় তাকে সান্ত¦না দেয়ার ভাষা ছিল না ফরাসউদ্দিনের। তিনি বলেছিলেন, এ তো খুশির খবর। মেয়ে স্বামীর কাছে যাচ্ছে। সন্তানেরা যাচ্ছে তাদের বাবার কাছে। তবু কেন আপনারা এতটা ভেঙে পড়ছেন?
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বাবারে, তুমি বুঝবা না, আমার ভেতরটা বেদনায় নীল হয়ে গেছে!’
পিতৃসম বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ের সেই আকুল কান্নাকে ফরাসউদ্দিন সিলেটের প্রচলিত প্রবাদের সঙ্গে তুলনা করেন, ‘বিদেশে বিপাকে যদি ব্যাটা মারা যায়, পাড়া-পড়শি জানার আগে আগে জানে মায়।’ তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ব্যাপারটা হয়েছে উল্টো। তাই বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা দু’জনই বিষণœ হয়ে পড়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ বইয়ে লিখেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য সে সময়কার উপাচার্য ড. আবদুল মতিন চৌধুরীর অনুরোধ এবং ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের অসুস্থতার কারণে আরো কয়েকটি দিন ঢাকায় থেকে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু জার্মানি থেকে স্বামী ড. ওয়াজেদের ফোনে যাওয়ার সিদ্ধান্তই ঠিক থাকে।
বঙ্গবন্ধুকে খুব কাছে থেকে দেখা বঙ্গমাতার কাছে পুত্রসম ফরাসউদ্দিন দুই বোনের এই চলে যাওয়াকে ‘দৈব সৌভাগ্য’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, সেদিন বাংলাদেশ থেকে চলে না গেলে তারাও হয়তো এই নির্মমতার শিকার হতেন! আমরাও আজকের এই বাংলাদেশ পেতাম না!
জাতির জনকের কাছ থেকে যে পিতৃস্নেহ তিনি পেয়েছেন সেই স্নেহের স্পর্শ আজও তাকে আবেগাপ্লুত করে। অশ্রুসিক্ত করে। বঙ্গমাতার ¯েœহের কথা উল্লেখ করে ফরাসউদ্দিন কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, তার স্নেহ কোনোদিন ভোলার নয়। তাদের হারানোর শোকাবহ সেই দিনগুলোর স্মৃতি এতটা বছর বয়ে বেড়াচ্ছি! এ যে কী কষ্টের বলে বোঝাতে পারব না!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।