Inqilab Logo

শুক্রবার, ২১ জুন ২০২৪, ০৭ আষাঢ় ১৪৩১, ১৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা তদন্তে গতি নেই

প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুনের দুই মাস পার হলেও রহস্য উদঘাটন হয়নি। ধরা পড়েনি খুনের মূলহোতা। পুলিশের দৃষ্টিতে এই হত্যাকা-ের মূলহোতা পুলিশেরই দীর্ঘদিনের সোর্স আবু মুছা। তাকে পাওয়া গেলেই খুনের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো: ইকবাল বাহার। তার দাবি মিতুর খুনিরা ছিল ভাড়াটে, টাকার বিনিময়ে তাদের ভাড়া করে মুছা। তবে কার নির্দেশে সে একাজ করেছে তাকে ধরার আগে তা বলা যাবে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবু মুছাতেই আটকে আছে চাঞ্চল্যকর এই খুনের মামলার রহস্য।
মিতু হত্যার মতো নগরীতে সংঘটিত বেশিরভাগ হত্যা মামলার তদন্তে কোন গতি নেই। খুনিরা ধরা পড়ছে না, উদঘাটন হচ্ছে না খুনের রহস্য। চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে মহানগরীতে পুলিশের হিসাবে ৪৩টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব খুনের বেশির ভাগ মামলা এখনও তদন্তাধীন। একই সময়ে চট্টগ্রাম জেলাসহ রেঞ্জের ১১ জেলায় ৩৫৭টি খুনের ঘটনা রেকর্ড রয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগরীতে গত বছর ১০৫ জন খুন হয়েছে। এসব খুনের বেশির ভাগ মামলারও তদন্ত চলছে। পুলিশ বলছে, কিছু মামলার রহস্য সহজে উদঘাটন করা গেলেও বেশির ভাগ মামলার রহস্য উদঘাটনে সময় লাগছে। পারিবারিক কলহসহ কিছু কারণে হত্যার ঘটনায় দ্রুত আসামীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে। খুনের রহস্যও দ্রুত উদঘাটন করা যাচ্ছে। তবে পরিকল্পিত খুন কিংবা খুনসহ ডাকাতির মতো অপরাধের ঘটনা তদন্তে সময় লাগছে বেশি। জঙ্গি বিরোধী বিশেষ অভিযান, নিরাপত্তা জোরদারসহ নানামুখী ব্যস্ততার কারণে পুলিশ কর্মকর্তারাও মামলা তদন্তে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারছেন না।
নগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রাম মহানগরীতে সম্প্রতি পারিবারিক কলহ, টাকা পয়সা নিয়ে বিরোধসহ তুচ্ছ কিছু ঘটনায়ও বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এধরনের প্রায় সবক’টি হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন সম্ভব হয়েছে। খুনের ঘটনায় জড়িতদেরও গ্রেফতার করা গেছে। তবে পরিকল্পিত কয়েকটি খুনের ঘটনায় আসামীদের গ্রেফতার কিংবা খুনের রহস্য উদঘাটনে পুলিশকে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে।
আলোচিত হত্যা মামলার মধ্যে মিতু হত্যা মামলাটি অন্যতম। এই খুনের সাথে জড়িত ৬ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। দুই জন পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। তবে মূলহোতা আবু মুছা গ্রেফতার না হওয়ায় তদন্ত শেষ করা যাচ্ছে না বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি’র সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো: কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, যে কয়জন ধরা পড়েছে তারা ভাড়াটে খুনি। টাকার বিনিময়ে তারা খুনে অংশ নিয়েছে। তাদের ভাড়া করেছে আবু মুছা।
এই হত্যাকা-ে ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহ দিয়েছিল ভোলা। সেই অস্ত্রসহ ভোলাকে আটক করা হয়। পরে সিআইডির পরীক্ষায় নিশ্চিত হয় উদ্ধারকৃত অস্ত্র দিয়ে মিতুকে হত্যা করা হয়। পুলিশ বলছে, খুনের আগের রাতে আবু মুছাকে এসব অস্ত্র সরবরাহ দেয় ভোলা। তবে মুছাকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত মামলা তদন্ত শেষ করা যাবে না। তবে মুছার পরিবারের দাবি তাকে ২২ জুন রাতেই পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। সে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। যদিও পুলিশ এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
নগরীর কোতোয়ালী থানার জলসা মার্কেটে নিজ দোকানে খুন হয়েছেন মো. ফরহাদ (২২) নামে এক ব্যবসায়ী। রোববার জলসা মার্কেটে তৃতীয় তলা থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, তাকে খুন করে লাশ বস্তায় ভরে রাখা হয়েছে। হত্যাকা-ের পর থেকে পলাতক তার এক ব্যবসায়িক পার্টনার। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই খুনের রহস্য উদঘাটন করা যায়নি। নির্মম হত্যাকা-ের শিকার ফরহাদ ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার সালেহ আহমদ পাটোয়ারীর ছেলে। জলসা মার্কেটের তৃতীয় তলায় একটি দোকানে বছরখানেক আগে কুলিং কর্নারের ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
নগরীর খুলশী থানার আমবাগান এলাকায় যুবদল নেতা আশরাফ খুনেরও কোন কিনারা হয়নি। ৫ আগস্ট প্রধান আসামীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। নগরীর জিইসি মোড় এলাকা থেকে মো. রনি (২৬) নামে ওই আসামীকে গ্রেফতার করা হয়। রনি ঝাউতলা সরদার বাহাদুর নগর এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। গত ১০ জুন রাতে নগরীর পশ্চিম মাদারবাড়ি এলাকার একটি চা দোকান থেকে আশরাফকে তুলে নিয়ে যায় কয়েকজন যুবক। পরদিন সকালে নগরীর আমবাগান কেন্টিন গেট এলাকায় পাহাড়ের ঢাল সংলগ্ন কালভার্টের নিচে আধা পোড়া অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়।
এর আগে ২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আমবাগান এলাকায় সেলিম নামের এক যুবক খুন হন। চলতি বছরের জুনে খুনে হওয়া আশরাফ ছিলেন ওই হত্যা মামলার প্রধান আসামি। গ্রেফতার হওয়া রনি ২০১৪ সালে খুন হওয়া সেলিমের ভাই। সেলিম খুনের জেরেই আশরাফকে হত্যা করা হয়েছে বলে সন্দেহ খুলশী থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের। আশরাফের পরিবারের করা মামলায় সেলিমের ভাই রনি ও জনিকে আসামি করা হয়। দুটি হত্যা মামলার তদন্ত এখনও চলছে।
৭ আগস্ট চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্যান্টিনের এক কর্মচারী ফরহাদুল ইসলাম খুন হন। কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার মাতার বাড়ি এলাকার বাসিন্দা নুরুল আলমের ছেলে ফরহাদ। মাসুদ নামে অপর এক যুবক এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। পুলিশ বলছে মোবাইল ফোন বিক্রির টাকা নিয়ে বিরোধের জের ধরে ক্যান্টিনের সাবেক ওই কর্মী তাকে হত্যা করে। পুলিশ খুনিকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে।
এধরনের খুনের ঘটনায় খুনিরা সহজে ধরা পড়ছে। তবে পরিকল্পিত হত্যাকা- কিংবা যেসব খুনের সাথে পেশাদার অপরাধীরা জড়িত সে সব হত্যা মামলার তদন্তে দ্রুত সাফল্য আসছে না। নগরীর সদরঘাট এলাকায় আধিপত্য ও মাদক ব্যবসা নিয়ে সম্প্রতি দুইটি খুনের ঘটনা ঘটে। এই দুটি হত্যা মলার তদন্তেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। চট্টগ্রাম জেলাসহ রেঞ্জের ১১ জেলায় চলিত বছরের প্রথম ৭ মাসে ৩৫৭ জন খুন হয়েছে। গেল বছরে খুনের ঘটনা রেকর্ড হয় ৬৮৮টি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা তদন্তে গতি নেই
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ