পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশের মানুষের প্রতি অত্যন্ত সহমর্মী ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটল। তার ইন্তেকালে দেশ একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক রাজনীতিককে হারাল, যার অভাব সহজে পূরণ হওয়ার নয়।
গতকাল শুক্রবার এক শোকবার্তায় বিএনপির চেয়ারপার্সন তার উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ফজলুর রহমান পটলের ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করে এ মন্তব্য করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে কলকাতার রবীন্দ্র হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফজলুর রহমান পটল (৬৫) ইন্তেকাল করেন।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ফজলুর রহমান পটল ছিলেন জাতীয় রাজনীতির একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। তিনি তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে একজন সুদক্ষ সংগঠক এবং প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দর্শনে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিএনপিতে যোগদান করার পর থেকে আমৃত্যু দলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। তার জীবদ্দশায় দেশ ও দলের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল অকৃত্রিম। বিএনপির বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্রকে দৃঢ়চিত্তে মোকাবিলা করতে তিনি যে ভূমিকা পালন করেছেন, তা দলের সব নেতাকর্মীর জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতি তার অঙ্গীকার ছিল অতুলনীয়। মানুষের নাগরিক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন। এ জন্য স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল অনবদ্য। স্বাধীনতাযুদ্ধে দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য তিনি যে অবদান রেখেছেন তা চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
অপর এক শোকবার্তায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফজলুর রহমান পটলকে দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের একজন অনন্য সংগঠক ও দেশের কীর্তিমান রাজনীতিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দর্শন ও আদর্শের প্রতি অবিচল আস্থাশীল এই মানুষটি তাঁর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে গেছেন। দলের নানামুখী সংকট এবং দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও দুঃসময়ে একজন নিবেদিতপ্রাণ যোদ্ধা হিসেবে বিএনপির চেয়ারপার্সনের পাশে থেকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। দলের প্রতি আনুগত্যবোধ এবং প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে ক্রীড়ার মানোন্নয়নে তার অবদানের জন্য তিনি দেশবাসীর কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, বিএনপির জন্মলগ্ন থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দলকে সুসংগঠিত করতে তার ভূমিকার কথা দলের নেতাকর্মীরা কোনোদিন বিস্মৃত হবে না। দেশের বর্তমান দুঃসময়ে তার না ফেরার দেশে চলে যাওয়া রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হলো। দেশের মানুষকে অকৃত্রিম ভালোবাসায় কাছে টেনে নেয়ার এক সহানুভূতিসম্পন্ন মানুষ মরহুম ফজলুর রহমান পটলের ইন্তেকালে আমরা গভীরভাবে ব্যথিত হয়েছি। তার মতো একজন অকপট, সরল, আত্মবিশ্বাসী ও হৃদয়বান মানুষের মৃত্যুতে দেশবাসী ও দলীয় নেতাকর্মীরা আজ গভীর শোকে মুহ্যমান।
অনুরূপ এক শোকবার্তায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও রাকসুর সাবেক ভিপি রুহুল কবির রিজভী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও রাকসুর সাবেক ভিপি ফজলুর রহমান পটলকে স্বাধীনতাত্তোরকালের একজন তুখোড় ছাত্রনেতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, অনন্য বাগ্মী, দেশের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ফজলুর রহমান পটলের ইন্তেকালে দেশবাসী, এলাকার জনগণ ও দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মন্ত্রী হিসেবে তার উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের পাশাপাশি একজন জাতীয় রাজনীতিবিদ হিসেবে সবার প্রতি তার বন্ধত্বসুলভ আচরণের জন্য তিনি সব মহলে ছিলেন সমাদৃত। ফজলুর রহমান পটল স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের সঙ্গে জড়িত একটি নাম। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দেশ ও মানুষের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করায় তিনি মানুষের মনে চিরজাগরুক হয়ে থাকবেন।
বিকেলে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে জানাযা
আগামীকাল আজ তার লাশ দেশে আনা হবে। বিকেল ৩টায় বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এবং বেলা ৪টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী মরহুম ফজলুর রহমান পটল-এর নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে যথাসময়ে নামাজে জানাযায় শরীক হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
ফজলুর রহমানের লাশ আসছে আজ এলাকায় তিন দিনের শোক পালন ঘোষণা
নাটোর জেলা সংবাদদাতা : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অন্যতম উপদেষ্টা ও নাটোরের লালপুর-বাগাতিপাড়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটলের (৬৭) ইন্তেকালে বিএনপি নেতারা শোক প্রকাশ করেছেন। জেলার সর্বত্র বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে। লালপুর-বাগাতিপাড়াসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদে জুম্মার নামাজের পর তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়েছে।
বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ফজলুর রহমান পটলের ইন্তেকালে বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক, সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ, সহ-সভাপতি এড. রুহুল আমিন তালুকদার টগর ও রহিম নেওয়াচ, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোজাম্মেল হক, জেলা জামায়াত আমীর অধ্যাপক ইউনুস আলী, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক বেলালুজ্জামান, লালপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ পাপ্পু, বাগাতিপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও পৌর মেয়র মোশাররফ হোসেন, গুরুদাসপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল আজিজ, বড়াইগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অ্যাডভোকেট আব্দুল কাদের মিয়া পৃথক পৃথক বিবৃতিতে নিহতের আত্মার শান্তি কামনা ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।
বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে কলকাতার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিডনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল। ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন। এদিকে বাগাতিপাড়া উপজেলা বিএনপি তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছে। শুক্রবার সকালে উপজেলার দলীয় কার্যালয়ে বিএনপি সভাপতি মেয়র মোশাররফ হোসেনের সভাপতিতে¦ অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। আগামী রোববার পর্যন্ত তিন দিন দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন ও নেতা-কর্মীরা কালো ব্যাজ ধারন করবে। সভায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
তাঁর ছোট মেয়ে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ফারজানা শারমিন পুতুল জানান, বিএনপির এ নেতা দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ও ডায়াবেটিসসহ নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন। গত ১৬ এপ্রিল তিনি চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যান। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই পুত্র ও দুই কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার লাশ কলকাতা থেকে শনিবার বিমানে দেশে আনা হবে। ঢাকায় পৌঁছার পর বাদ জোহর ঢাকার বনশ্রীর বাসভবনে, পরে পল্টন বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে এবং বিকেল চারটায় জাতীয় সংসদ ভবনে জানাজা শেষে লালপুরে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হবে। পার্শ্ববর্তী গৌরীপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে।
রাজনৈতিক অঙ্গন : ফজলুর রহমান পটল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিষয়ে পড়ালেখাকালে ১৯৭৩ সালে ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে আওয়ামী ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন। ১৯৭৮ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন। ফজলুর রহমান পটল নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসন থেকে চারবার সাংসদ নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯১-১৯৯৩ পর্যন্ত যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী, ১৯৯৩-১৯৯৬ পর্যন্ত সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১-০৬ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফজলুর রহমান পটলের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।