Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অনিশ্চিত ১শ’ কোটি টাকার বিনিয়োগ

বগুড়ায় বেকারি মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্বে হঠাৎ কর্মহীন ১০ হাজার মানুষ

প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : শ্রমিক ও মালিকদের মুখোমুখি অবস্থান এবং ধর্মঘট ও লক আপের বগুড়ায় বেকারি শিল্পে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে বগুড়ার ছোট-বড় শতাধিক বেকারি কারখানা এবং ২ হাজারের বেশি বেকারি দোকানে কর্মরত হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারি ও শ্রমিক  কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এই খাতে আটা, ময়দা, ঘি, চিনি ও সয়াবিন কেনা-বেচাকে ঘিরে প্রতিদিনের শত কোটি টাকার বাণিজ্য হঠাৎ করেই বন্ধ হওয়ায় স্থবির হয়ে গেছে অর্থনীতি।
জানা গেছে বগুড়ায় আকবরিয়া, শ্যামলী, ঢাকা বেকারি, শিমু বেকারিসহ অন্তত ১শ’ বেকারি কারখানায় প্রতিদিন ১০ হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকের মিলিত শ্রম ও ঘামে ১শ’ কোটি টাকা মূল্যের পাউরুটি, বিস্কিট, কেক, পেটিসসহ বিভিন্ন আইটেম উৎপাদন ও বাজারজাত হয়ে থাকে। এই ১শ’ কোটি টাকার বেকারি আইটেম উৎপাদনের জন্য মালিক পক্ষকে বাজার থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকার, আটা, ময়দা, চিনি, ঘি, দুধ, বাদাম ও ডালের গুঁড়া (বেসন) কিনতে হয়। সব মিলিয়ে সচল থাকে বগুড়ার অর্থনীতির চাকা। বগুড়ায় উৎপাদিত বেকারি পণ্যের চাহিদা পার্শ্ববর্তী নওগাঁ, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ জেলা ছাড়াও দক্ষিণবঙ্গের অনেক জেলাতেও রয়েছে। বেকারি শিল্পের চাকা সচল রাখতে বহু ব্যাংকও এই খাতে বিনিয়োগ করেছে কোটি কোটি টাকা।
এদিকে এই খাতে কর্মরত শ্রমিকরা দাবি করেছে, তাদের শ্রমে-ঘামে উৎপাদিত বেকারি পণ্য মালিকরা উৎপাদন মূল্যের দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে নিজেরা বিলাসি জীবনযাপন করলেও তারা গরীব মেহনতি শ্রমিক ও কর্মচারীদের বেতন ভাতা ও অন্যান্য প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা দিতে একেবারেই নারাজ। শ্রমিকদের অভিযাগ বগুড়ায় বেকারি সেক্টরে কর্মরত ১০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের একজনের নেই বৈধ নিয়োগপত্র। ৮ ঘণ্টার বদলে বেশির কারখানাতেই ১৫/২০ ঘণ্টা ডিউটি করানো হয়। এই খাতে শিশু ও নারী শ্রমিকদের সাথে অমানবিক আচরণ করা হয়। শ্রম দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও কোন লাভ হয় না। মালিক পক্ষের টাকা খেয়ে শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা উল্টো শ্রমিকদেরই হয়রানি করে থাকে। মালিক পক্ষ প্রায়ই থানায় মিথ্যা অভিযোগে মামলা করলে পুলিশ কোন সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়াই শ্রমিকদের অভিযুক্ত প্রমাণের জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালায়।
দীর্ঘ দিনেও উল্লেখিত সমস্যাগুলো সমাধান না হওয়ায় সম্প্রতি কোন কোন বেকারিতে কর্মরত কিছু শ্রমিক অঘোষিতভাবে ধর্মঘট পালন করলে এবং ওই ধর্মঘটি শ্রমিকদের পক্ষ নিয়ে রেজিস্ট্রার্ড বেকারি শ্রমিক সংগঠন সম্প্রতি বগুড়া প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করে এবং মালিক পক্ষের অমানবিক নির্যাতনের প্রতিবাদ করে ভবিষ্যতে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দিলে টনক নড়ে মালিক পক্ষের।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুপরে বগুড়া বেকারি মালিকদের সংগঠনের পক্ষে তাদের অফিসে একটি সংবাদ সম্মেলনে ধর্মঘটি শ্রমিকদের দায়িত্বহীন আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানান। মালিক সমিতির সভাপতি হাসান আলী আলাল ও সেক্রেটারি ইমদাদুল হক ইমদাদ বেকারি শ্রমিক নেতাদের উচ্ছৃঙ্খল, বেপরোয়া, দায়িত্ব জ্ঞানহীন বলে দাবি করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথাও ঘোষণা করেন এই সংবাদ সম্মেলনে পাশাপাশি তারা বগুড়ার সব বেকারিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘লক আপ’ তথা কারখানা বন্ধের কথা ঘোষণা করেন। মালিক সমিতি তাদের মালিকানাধীন বেকারি আইটেমের দোকানগুলোও বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শ্রমিক নেতারা বগুড়ার বাইরের বৃহৎ শিল্প গ্রুপের টাকা খেয়ে বগুড়ার বেকারি খাতকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে বলেও দাবি করেন মালিক পক্ষ।
এদিকে শ্রমিক-মালিক দ্বন্দ্বের জের ধরে বগুড়ার বেকারি খাতে দ্রুততার সাথে যে বিনিয়োগ বাড়ছিল হঠাৎ এই অনভিপ্রেত পরিস্থিতিতে তা’ ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হল বলে অভিমত পর্যবেক্ষকদের। বেকারি খাতে ইতোমধ্যে বগুড়ার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক অন্তত ১শ’ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এই খাতে তাই শৃঙ্খলা না ফিরলে ব্যাংকে শত কোটি টাকা আদায় করা দুরূহ হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন সিনিয়র ব্যাংক কর্মকর্তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অনিশ্চিত ১শ’ কোটি টাকার বিনিয়োগ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ