Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তিন বছর পর গ্রেফতার ঘাতক কবির

নাম পরিবর্তন করে আত্মগোপনে ছিলেন

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০২০, ১২:১০ এএম

চাঞ্চল্যকর সোহরাব হোসেন ওরফে মুসা হত্যা
চাঞ্চল্যকর সোহরাব হোসেন ওরফে মুসা হত্যাকান্ডের ঘটনার তিন বছর পর মূল আসামি কবির মিয়াকে (৪০) গ্রেফতার করেছে সিআইডি। ২০১৭ সালের পারিবারিক ও সামাজিক বিরোধের জেরে সোহরাবকে নরসিংদীর বাসা থেকে ডেকে নিয়ে এলাকার কুকুরমারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে পেঁপে বাগানে নিয়ে তাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। নিহত সোহরাব নরসিংদীর বেলাবো থানার ইউপি সদস্য রিনা বেগমের ছেলে। গতকাল শনিবার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির ঢাকা বিভাগের ডিআইজি মো. মাঈনুল হাসান এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, হত্যাকান্ডের ঘটনার পর আসামি কবির মিয়া পালিয়ে যান। নিজের নাম-পরিচয় বদলে গাজীপুরে ট্রাক চালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। শ্যামল নামে তিন বছর আত্মগোপনে থাকা হত্যাকারী কবির সিআইডির হাতে ধরা পড়েন। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের বিষয়টি স্বীকার করেন এই ঘাতক। হত্যাকান্ডে অংশ নেয় কবির, শফিক, মিলন, তুহিন, শিপন ও মুসাসহ কয়েকজন। এই ঘটনার পর নিহতের মা রিনা বেগম বাদী হয়ে নরসিংদীর বেলাব থানায় ১১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
ডিআইজি মাঈনুল হাসান বলেন, হত্যাকান্ডের পর থানা পুলিশ এবং পরবর্তী সময়ে পুলিশ পিবিআই নরসিংদী জেলা টিম তদন্ত শুরু করে। পিবিআই পলাতক আসামি কবিরসহ ৩ জন এবং এজাহারের বাইরে ২ জনসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত মোট ৫ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে একটি অভিযোগপত্র জমা দেয়। তবে ওই অভিযোগপত্রে হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও আসামি কবির মিয়ার নাম থাকলেও তিনি পলাতক ছিলেন। এতে মামলার বাদী রিনা বেগম আদালতে নারাজি দিলে এ বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি মামলাটির তদন্তভার সিআইডিকে ন্যাস্ত করেন আদালত। তদন্তের এক পর্যায়ে গত শুক্রবার ২ অক্টোবর গাজীপুরের শ্রীপুর থানাধীন মাওনা বহেরারচালা এলাকা থেকে ওই হত্যাকান্ডের মূল আসামি কবির মিয়াকে গ্রেফতার করে সিআইডির ঢাকা মেট্রোর একটি টিম। আসামির আসল নাম কবির মিয়া হলেও গাজীপুরে তিনি শ্যামল নামে ট্রাক চালকের কাজ শুরু করেন। তিন বছর যাবত তিনি শ্যামল নাম ব্যবহার করে আত্মগোপন করে ছিলেন।
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, আসামি কবির মিয়ার সাথে নরসিংদীর বেলাবো থানার ৪, ৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ড নারায়ণপুর ইউপি সদস্য রিনা বেগমের দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক ও সামাজিক বিরোধ চলে আসছিল। কবির ওই বিরোধে রিনা বেগমের ছেলে ফরিদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে রিনা বেগম তার ছেলে ফরিদকে কক্সবাজারে পাঠিয়ে দেন। ঘটনার দিন রাতে কবির তার সহযোগী শিপন ও বাচ্চু মিয়াকে বলেন, ফরিদকে বাসা থেকে ডেকে আনার জন্য। পরে বাচ্চু মিয়া কবিরকে জানান, ফরিদ কক্সবাজারে চলে গেছে। এরপর কবিরর নির্দেশে ফরিদের ভাই সোহরাবকে ডেকে আনতে বলা হয়। বাচ্চু মিয়া যেতে না চাইলে তাকে ভয় দেখান কবির ও শিপন। বাধ্য হয়ে সোহরাবকে বাসা থেকে ডেকে আনেন বাচ্চু মিয়া।
সোহরাবকে নিয়ে আসা মাত্রই শিপন ও কবির তাকে জাপটে ধরে মুখে গামছা বেঁধে কুকুরমারা স্কুলের পিছনে নিয়ে যান। পেঁপে বাগানের ভেতরে নিয়ে শফিক ও মিলন সোহরাবের দুই পা চেপে ধরেন, তুহিন মাথা ধরে রাখেন এবং শিপন ডানহাত ধরেন। এরপর প্রথমে শিপন এবং পরে কবির ধারালো ছুরি চালিয়ে দেন সোহরাবের গলায়। সোহরাবের মৃত্যু নিশ্চিত হলে কবিরসহ সবাই পালিয়ে যান। গ্রেফতারকৃত আসামি কবির মিয়া নরসিংদী এলাকার দুর্ধষ সন্ত্রাসী। তিনি ওই এলাকায় সব ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।
নিহত সোহরাবের মা রিনা সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৩ সালের একটি মেয়ে শিশুকে আমি আদালতের মাধ্যমে দত্তক নেই। রাস্তায় ওই শিশুটির মা মৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। পুলিশ ওই ঘটনায় কবির ও শিপনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এর পর থেকে ওরা আমার পরিবারের ক্ষতি করার চেষ্টায় ছিল। এই ক্ষোভেই কবিরসহ ওরা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঘাতক-কবির
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ