Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাপেক্স থেকে গেলেই যেন বাঘের বাচ্চা

এমডি প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০২০, ১২:১২ এএম

বাপেক্সে থাকার সময় এমডিরা কথা বলেন না, বাইরে গেলে বাঘের বাচ্চা হয়ে যান। অবসরে গেলে মানুষের স্মৃতিশক্তি লোপ পায় কিন্তু এখানে দেখছি স্মৃতিশক্তি বেড়ে যায় বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

গতকাল শনিবার বিকালে এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার আয়োজিত ভার্চুয়াল সেমিনারে বাপেক্সের সাবেক কর্মকর্তাদের হতাশাজনক বক্তব্যের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালে বাপেক্সের মিটিংয়ে বলেছিলাম, অর্গানোগ্রাম রিভিউ করেন। প্রয়োজনে কনসালটেন্ট নিয়োগ দেন। ৫ বছর শেষ এখন এমডি বলছেন ৬ মাস সময় দেন। যারা সাবেক এমডি রয়েছেন আপনারা যদি ক্ষেত্র তৈরি করতে না পারেন, যদি ভ্যালু তৈরি করতে না পারেন বা টিম তৈরি করতে না পারলে আপনাকে কখনোই সফল বলব না। আপনাদের সময়ও আপনারা কিছু করেননি। আপনারা যাদের রেখে গেছেন তারাই এখন রয়েছে। তারা যদি না সফল হয়ে থাকে তাহলে দায় আপনারও। এই মন্ত্রণালয়ে আসার পর একমাত্র সংস্থা দেখলাম, নিজেদের লোকদের নিজেরা দোষারোপ করেন। যারা আছেন তারাও, যারা চলে গেছেন তারাও।

বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে জ্বালানি বিভাগ তাল মেলাতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের কোম্পানিগুলো কথা শোনে। তারা নিজেদের মতো কাজ করে বোর্ডে সিদ্ধান্ত নেন। তাদের বেতন কাঠামো নিজেরা ঠিক করেছে। আমি উপদেষ্টা হিসেবে পরামর্শ প্রদান করি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাপেক্স এতোদিনে কেনো আন্তর্জাতিক মানের হলো না। এখন আর ওই চিন্তা করে লাভ নেই। ১০৮টি ড্রিলিং করার প্রস্তাব করেছে। এটি ঠিক করেছে বাপেক্স। কূপের লোকেশন ঠিক করতে পারে না। পরে বলেছে সিসমিক সার্ভে ঠিক করা হয়নি। সরকার চায় গ্যাস ক্ষেত্রের কাজ বাপেক্স করুক, যদি না পারে তাহলে বিকল্প কী। যারা বিদেশে চলে গেছেন তারা কি ফিরে আসতে চাইবেন! মনে হয় না। আমরা বছরে তিন-চার হাজার লোকদের ইন্টার্ন করাচ্ছি। উদ্দেশ্য তারা দেখুক এখানে কত বড় ক্ষেত্র। তারপরও বেশিরভাগ প্রকৌশলী বিদেশ চলে যাচ্ছেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এতো হতাশার কিছু নেই, জ্বালানি বিভাগ পরপর তিনবারের মধ্যে ২ বার তৃতীয় হয়েছে ৫৫ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে। আগে জানতে হবে তারা কী করতে চায়। নতুন এমডি এসেছে তাকে সময় দেয়া হয়েছে। সরকার চায় বাপেক্স কাজ করুক। বাপেক্সকে অনুদান দেয়ার প্রস্তাবের বিরোধীতা করে বলেন, যাকে ঋণ দেবেন সেই কোম্পানি কোনো দিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। সরকার ধীরে ধীরে ভর্তুকি থেকে বের হয়ে আসতে চায়। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, গ্যাজ প্রমকে কেনো কাজ দেয়া হচ্ছে তারা বিশ্বের নামকরা কোম্পানি। রাশিয়ানরা সরাসরি ডিল করতে পারে না তাই তারা অন্য কোম্পানির মাধ্যমে কাজ করে। বাপেক্সকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিতে হলে লোকের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।

মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া হয় না। যদি প্রকল্পে রাষ্ট্র টাকা দেন তাহলে মন্ত্রণালয় দেখে। না হলে বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয়। পিপিআর মেনে বাপেক্সের কাজ করা সম্ভব না এমন আলোচনার জবাবে তিনি বলেন, না মানলেও চলে, নিজস্ব কোম্পানি তারা সেভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। চাইলে বিশেষ ক্ষমতা আইনের সুযোগ নিতে পারে। বেসরকারি কোম্পানি কাজ দেয়ার সমালোচনার জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) একার পক্ষে এতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা কি সম্ভব ছিল। প্রধানমন্ত্রী যখন বেসরকারি খাতকে আমন্ত্রণ করলেন, তখন ভেতরে-বাইরে থেকে সমালোচনা করা হলো। তাহলে কি আজকের এই উন্নয়ন সম্ভব হতো। হাইপ্রেসার জোনে কাজ করতে যাচ্ছি, কারো কি এই অভিজ্ঞতা রয়েছে!

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমিও খুবই হতাশ আমাদের বিশেষজ্ঞদের ওপর। একেকজন একেক কথা বলেন। আপনাদের নিজেদের ঐক্যমত হতে হবে। আমরা জিওলজিস্ট না তাই আপনাদের কথায় কনফিউজড হয়ে যাই। বাপেক্সকে তাদের মতো চলতে দেন। ভালো চাইলে বাইরে থেকে পরামর্শ দেন। বিদায়ী এমডিদের উদ্দেশ্যে বলেন, বাপেক্সে থেকে যারা কথা বলেননি, তাদের দরকার নেই। আমি আশাবাদী বাপেক্সের বিষয়ে। যদি শতকরা হারের কথা বলি তাদের সাফল্য রয়েছে। ভুল অনেক ধরা যায়। কিন্তু আপনারা সত্যিকারে পরামর্শক হিসেবে কাজ করতে পারেন।
এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার’র এডিটর মোল্লাহ আমজাদ হোসেন’র সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপেক্সের সাবেক এমডি মর্তুজা আহমেদ ফারুক। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক এমডি মোক্তাদির আলী, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম. তামিম, বদরুল ইমাম, সালেক সূফী প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ