পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এম এ করিম কমলগঞ্জ উপজেলার সবার কাছে ‘আদর্শ’ হয়ে উঠেছেন। তিনি সবাইকে সামনের দিকে কিভাবে এগিয়ে যেতে হয় সে পথ দেখাচ্ছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনের কাজের জন্য পদক লাভ করেন। অবসরে যাওয়ার পর মাটিকে সম্পদ হিসাবে ধরে নিয়ে কাজ শুরু করেন। সেই মাটিই তাকে সামনের দিকে টেনে নিয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার জালালপুর গ্রামে তিনি গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটোর চারা উৎপাদন শুরু করেছিলেন। প্রায় ৫ বিঘা জমিতে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটোর চারা উৎপাদন ও বিক্রি করে বছরে আয় করছেন কমপক্ষে কোটি টাকা। নিজে যেমন স্বাবলম্বী হয়েছেন, তেমনি দুই শতাধিক লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।
গ্রাফটিং পদ্ধতি সম্পর্কে এম এ করিম বলেন, বন বেগুন টমেটো একটি জংলি জাত। গ্রাম-গঞ্জে এ বেগুনের রয়েছে বিভিন্ন নাম। জংলি বেগুন চারার গোড়ার দিকের অংশের সঙ্গে টমেটোর চারার ওপরের দিকের অংশ জোড়া দিয়ে করা হয় গ্র্রাফটিং। এভাবে লাগানো টমেটোর চারা বড় হলেও ঢলে পড়ে না। রোগবালাইও তেমন হয় না। ফলন ভাল হয়। যেখানে সাধারণ একটি গাছে পাঁচ-দশ কেজি টমেটো মিলে, সেখানে গ্রাফটিং করা প্রতি গাছে বিশ থেকে পঁচিশ কেজি পাওয়া যায়।
তিনি জানান, গ্রাফটিং করা টমেটো গাছ পানি সহনীয়। বৃষ্টিপাতেও এই টমেটো গাছ নষ্ট হয় না। গ্রাফটিং চারার চাহিদা অনেক। নিজের জেলা মৌলভীবাজারের চাহিদা মিটিয়ে দশটি জেলায় সরবরাহ করছেন। অনেকে মৌসুমের আগেই চারার সংখ্যা জানিয়ে অর্ডার দেন। সময়মতো সরবরাহ করতে হিমশিম খাই। তিনি জানান, অনেকে আষাঢ়-শ্রাবন থেকে চারা রোপণ শুরু করেন। আগাম টমেটো বের করতে পারলে লাভ বেশি। তখন কেজিপ্রতি টমেটো ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়।
উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামে ৫০ থেকে ৬০ জন কৃষক এম এ করিমের গ্রাফটিং করা চারা ব্যবহার করে টমেটোর চাষ করছেন। আর তিনি নিজেও চলতি বছর ধলই সীমান্ত এলাকায় প্রায় ২১ বিঘা জমিতে গ্রাফটিং পদ্ধতির চারা দিয়ে টমেটোর চাষ করেছেন। ফলন ভাল হয়েছে এবং ইতোমধ্যেই টমেটো পাকতে শুরু করেছে।
সরেজমিনে গতকাল বৃহস্পতিবার জালালপুর গ্রামে বিভিন্ন জাতের সবজি ও টমেটো চাষের নমুনা দেখা গেছে । গ্রামের বাড়ির উঠান, বাড়ির পাশে খালি জমিতে বাঁশ ও পলিথিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি তাঁবু। এগুলো গ্রাফটিং চারা তৈরির অস্থায়ী ঘর। রোদ-বৃষ্টি থেকে চারা বাঁচাতে এ ব্যবস্থা। এম এ করিমের নিজ জমিতেও কয়েকটি তাঁবু দেখা গেলেও বেশির ভাগই চারাশূন্য। জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন চারা রোপণের শেষ সময় বলে অধিকাংশ চারাই বিক্রি হয়ে গেছে। এরপরও একটি তাঁবুতে চারা গ্রাফটিংয়ের কাজ করছিলেন পাঁচজন শ্রমিক।
করিম জানান, তিনি চলতি বছর ২০ লাখ চারার গ্রাফটিং করেছেন। বারি-৮ (বাংলাদেশি), মঙ্গল রাজা (ফ্রান্স) নামে টমেটোর বীজ এবং বন বেগুনের বীজ বুনেছিলেন। বন বেগুনের দুই মাস বয়সী চারার সঙ্গে টমেটোর এক মাস বয়সী চারার গ্রাফটিং করেছেন। গ্রাফটিং করা চারা ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে রোপণ করতে হয়। প্রতিটি চারা ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করেছেন। গ্রাফটিংয়ের কাজে নিজে সার্বক্ষণিক শ্রম দিয়েছেন। তার সঙ্গে নিয়মিত প্রায় ১৫০ জন দক্ষ শ্রমিক কাজ করেন। তাদের মাসে আয় হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।
চলতি বছর প্রায় ২০ লাখ চারা বিক্রি করেছেন। বাজার মূল্য দেড় থেকে দুই কোটি টাকা। ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষকরা চারা নিয়েছেন। এছাড়া কৃষকরা তার কাছ থেকে চারা সংগ্রহের পাশাপাশি নিয়মিত পরামর্শও নিচ্ছেন। ‘অসময়ের টমেটো চাষি’ বলে পরিচিত করিম সম্পর্কে জালালপুর গ্রামের টমেটো চাষি মোতালেব বক্ত বলেন, এম এ করিম সেনা সদস্য ছিলেন। তিনি একজন উদ্ভাবনী কৃষক। নানা ফসল নিয়ে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। টমেটোর এই গ্রাফটিং প্রযুক্তি তার কারণে সহজেই এলাকার সাধারণ কৃষকরা পেয়েছেন। নিজে লাভবান হয়ে এলাকার কৃষকদের বিরতিহীনভাবে পরামর্শ দিয়ে চলছেন।
করিম ২০০২ সালে অবসরে এসে টমেটো চাষ শুরু করলে উৎপাদনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন। টমেটো চাষে সফল চাষি হিসেবে তিনি ২০০৫ সালে পেয়েছেন জাতীয় কৃষি পুরষ্কার। পুরষ্কারটি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে তখন তার হাতে তোলে দেন। এরপর থেকে এই উৎসাহকে কাজে লাগিয়ে হয়েছেন তিনি সফল কৃষক।
আলাপকালে সফল টমেটো চাষি করিম অভিযোগ করেই বলেন, সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগ যদি আরো আন্তরিক হলে মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা কৃষিতে আরো বিপ্লব ঘটাতে পারতেন। শতকরা ৮০ ভাগ কৃষি নির্ভর দেশে কৃষিতে সরকার কৃষকদের যথাযথ মূল্যায়ন করে না। অন্যান্য বিভাগে জাতীয় পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় লাখ লাখ টাকা। আর কৃষিতে দেওয়া হয় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার পুরস্কার। এজন্যেই কৃষকেরা কৃষিতে উৎসাহ পায় না। সরকার যদি কৃষিকে আরো গুরুত্ব দেয়, তবে দেশ কৃষিতে আরো এগিয়ে যাবে এমনটাই মনে করেন কৃষক এম এ করিম ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।