Inqilab Logo

রোববার, ২৩ জুন ২০২৪, ০৯ আষাঢ় ১৪৩১, ১৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

প্রধানমন্ত্রীর ডাকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ দেশবাসী

জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নির্ঘুম রাত কাটে র‌্যাব-পুলিশের : জঙ্গি, সন্ত্রাস ও অপরাধ দমনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাফল্য

প্রকাশের সময় : ১২ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

উমর ফারুক আলহাদী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা দক্ষতা মেধা এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণেই জঙ্গিবিরোধী অভিযানে সফলতা আসছে। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রীর ডাকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দেশবাসী আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। তিনি জঙ্গিবাদ ও সকল প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দিয়ে উন্নয়নের ধারাকেও অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছেন, এমনটি মনে করছেন দেশপ্রেমিক সচেতন মানুষ। তারা বলছেন, বঙ্গবন্ধুর মতো সাহসী ও দৃঢ়চিত্তের অধিকারী শেখ হাসিনা এখন শুধু দেশের রাজনীতিতেই নয়, তিনি এখন বিশ্ব রাজনীতির সফল আলোচিত নেতা। দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা মনে করেন, বহুমুখী ষড়যন্ত্র ও দেশবিরোধী অপশক্তির কর্মকা- মোকাবেলায় নজিরবিহীন সফলতা অর্জন করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা ব্যবসায়ীসহ সবাইকে এক সাঁরিতে এনে দেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।
এদিকে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশের উন্নয়নের ধারাকে ব্যাহত করতে জঙ্গিদের উসকে দিচ্ছে একটি বিশেষ মহল। এদের মোকাবেলা করে সরকার দেশের উন্ন্য়নের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন, এ দেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়। যারা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে দেশে ধর্মের নামে অরাজকতা করতে চাচ্ছে তাদের এ দেশের মানুষ রুখে দিয়েছে। জঙ্গিদের আস্তানা এ দেশে হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। শান্তি ও উন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আমরা দেশ থেকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ উৎখাত করব।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গি হামলা, নাশকতা, আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়া হত্যা এবং অরাজকতা সৃষ্টি করে দেশবিরোধী একটি গোষ্টী দেশে জঙ্গিবাদ কায়েম করতে চেয়েছিল। কিন্তু সরকার তা ব্যর্থ করে দিয়েছে। সরকারের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতেই প্রধানমন্ত্রীর ডাকে দেশবাসী সাড়া দিয়েছে দেশের সকল পেশা ও শ্রেণীর মানুষ। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দেশ জাতি ও দেশের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই র‌্যাব-পুলিশসহ সকল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য জীবন বাজি রেখে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে অত্যন্ত আন্তরিকতার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে স্বরাষ্টমন্ত্রী সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে জঙ্গিবিরোধী অভিযান সফল করতে নির্ঘুম রাত কাটছে র‌্যাব পুলিশের।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত ও দিক-নির্দেশনার কারণেই আমরা দ্রুত জঙ্গি দমনে সফল হয়েছি। জঙ্গিরা দেশে বড় ধরনের হামলা ও নাশকতার যে পরিকল্পনা করছে তাও একে একে নস্যাৎ করে দিয়েছে র‌্যাব-পুলিশ। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে দেশপ্রেম, দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব দেখিয়েছে তা শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসিত হয়েছে। গুলশান, শোলাকিয়া ও কল্যাণপুরে জঙ্গি দমনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে সক্ষমতা দেখিয়েছে তা জনমনে আস্থা বেড়েছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ থেকে মুক্ত রাখতে হবে। জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা জঙ্গিবাদ রুখবো। এ দেশে জঙ্গিদের ঠাঁই হতে পারে না।
২৬ জুলাই সোমবার রাত ১টা ২০ মিনিটের দিকে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের এক ভবনে অভিযান চালায়। কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ওই ভবনে ‘অপারেশন স্টর্ম ২৬’ নামের এই যৌথ অভিযানে গোলাগুলিতে নয় ‘জঙ্গি’ নিহত হয়।
পুলিশের সঙ্গে এ অভিযানে অংশ নেয় স্পেশাল উইপনস অ্যান্ড ট্যাকটিকস (সোয়াট), র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল অভিযান চালিয়ে জঙ্গিদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। দেশকে বড় ধরনের হামলা থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছেন র‌্যাব পুলিশ। এছাড়া গত বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে জেএমবির ৬ জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে র‌্যাব জানতে পেরেছে, আরো একটি বড় ধরনের হামলার মিশন নিয়ে ওই জঙ্গিরা রাজধানীতে প্রবেশ করেছিল। কিন্তু র‌্যাবের অভিযানে তা নস্যাৎ করে দেয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র মতে, গত দুই মাসে রাজধানীসহ সারা দেশ থেকে জেএমবিসহ ১২৩ জঙ্গি গ্রেফতার করেছে। এছাড়া ডিএমপির অভিযানে জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাসহ ১৭৮ জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ওই সময়ে ডিবির অপর একটি সূত্র জানায়, গত এক মাসে ১৯৪ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়াও গত তিন মাস আগে পুলিশের বিশেষ অভিযানে অন্যান্য মামলার আসামি ধরা হয়েছে ১২ হাজারেরও বেশি।
এর আগে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তিন মাস আগে সাত দিনের জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার হওয়া ১৯৪ জঙ্গির মধ্যে ১৫১ জন জেএমবি, ৭ জন জেএমজেবি, ২১ জন হিজবুত তাহরীর, ৬ জন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, ৩ জন আনসার আল ইসলাম, ৪ জন আল্লার দল, ১ জন হরকাতুল জিহাদ এবং ১ জন আফগান ফেরত জঙ্গি সংগঠনের সদস্য রয়েছে।
র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, এই এলিট ফোর্স জন্মলগ্ন থেকে চলতি বছর পর্যন্ত এক লাখ ৬৭ হাজার ৪৯৯ অপরাধী ও সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় এনেছে। এ ছাড়াও এক হাজার ১৮২ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যকে আইনের আওতায় এনেছে র‌্যাব। এদের মধ্যে শুধুমাত্র জেএমবির সদস্য ৬১৭। বিভিন্ন অভিযানে জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের কাছ থেকে ৩৪৯টি গ্রেনেড বা ককটেল বিভিন্ন প্রকার আগ্নেয়াস্ত্র ৯৬টি, বিভিন্ন প্রকার গোলাবারুদ ৪ হাজার ৯২৮ রাউন্ড, বিভিন্ন প্রকার এক হাজার ৯৮৩ কেজি বিস্ফোরক, ৬২৪ টি গ্রেনেড বডি, বিভিন্ন প্রকার ৯ হাজার ১২৩টি ডেটোনেটর এবং বিপুলসংখ্যক সাংগঠনিক বই, সিডি, লিফলেট ও পোস্টার উদ্ধার করা হয়েছে।
তাছাড়া চরমপন্থী, নৌদস্যু ও বনদস্যুদের দমনে র‌্যাবের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। র‌্যাব চরমপন্থী দমনে ১৮৪টি সফল অভিযান পরিচালনা করে। যেখানে গ্রেফতারের সংখ্যা ৪২৬ জন। গ্রেফতারদের কাছ থেকে ১৪৭ অস্ত্র, এক হাজার ৮৭৬ রাউন্ড গোলাবারুদ, ৩০ বোমা ও ৫৫ অন্যান্য অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে।
নৌদস্যু দমনে ৮৩টি সফল অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সেখানে গ্রেফতার হয়েছে ১১২ জন। তাদের কাছ থেকে ২৪৯টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৩ হাজার ১৯৯ রাউন্ড গোলাবারুদ, ৬২ অন্যান্য অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বনদস্যু দমনে র‌্যাব ৬৫টি সফল অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানগুলোতে গ্রেফতার হয় ৫৩। গ্রেফতারদের কাছ থেকে ২১৯ আগ্নেয়াস্ত্র, ৪ হাজার ৮৭৪ রাউন্ড গোলাবারুদ ও ১১ অন্যান্য অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
চলতি বছরেই র‌্যাবের কাছে বড় দুটি নৌদস্যু অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে। গত ২৯ মে সুন্দরবনের নৌদস্যু মাস্টার বাহিনী প্রধান ও তার সহযোগীরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে সুন্দরবনের কুখ্যাত নৌদস্যু মাস্টার বাহিনী প্রধানের আত্মসমর্পণ গ্রহণ করেন। এ সময় মাস্টার বাহিনী তাদের অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে জমা দেন। এ জন্য পুলিশও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। পরে বাগেরহাটের মংলায় বিএফডিসি জেটিতে ১৫ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে সুন্দরবনের বনদস্যু ‘মজনু বাহিনী’ ও ‘ইলিয়াস বাহিনী’র প্রধানসহ ১১ সদস্য। তারা ২৫টি দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র ও এক হাজার ২০ রাউন্ড গুলি জমা দেন। এ সময় র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি এসএম মনির-উজ-জামানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে গুলশান এবং কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর দেশকে আরো কয়েকটি হামলা থেকে রক্ষা করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। র‌্যাব পুলিশের অভিযানের কারণে দেশ একটি বড় ধরনের হামলা থেকে রক্ষা পেয়েছে বলে দাবি করছে সরকার। ২৬ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি ভবনে অবস্থান নেয়া জঙ্গিদের আস্তানা উচ্ছেদে পরিচালনা করা হয় ‘অপারেশন স্টর্ম-২৬’। ভোর ৫টা ৫১ মিনিট থেকে ৬টা ৫১ মিনিট পর্যন্ত এক ঘণ্টার এ অভিযানে আস্তানায় থাকায় ৯ জঙ্গি নিহত হয়। আটক হয় একজন। কিন্তু এ ঘটনার সবচেয়ে সফল দিক হল অভিযানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য অথবা কোনো সাধারণ মানুষ হতাহত হননি।
পুলিশ জানায়, ২৫ জুলাই সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মিরপুর থানা পুলিশ স্থানীয়দের সহযোগিতায় কল্যাণপুরের মেসে জঙ্গিবিরোধী তল্লাশি শুরু করে। কয়েকটি মেসে অভিযান শেষে ৫ নম্বর রোডের ‘জাহাজ বাড়ি’ খ্যাত ৫৩ নম্বর বাসায় অভিযান শুরু করলে জঙ্গিরা পুলিশের উপর হামলা করে। তখন পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে এক জঙ্গি পালিয়ে যায় এবং এক জঙ্গিকে আটক করা হয়। এরপর ভবন ও তার আশপাশের এলাকা ঘিরে রাখে পুলিশ। ঘটনাস্থলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পৌঁছে অভিযানের কৌশল নির্ধারণ করেন এবং ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সকালে সূর্য ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়। ভোর ৫টা ৫১ মিনিটে শুরু হয় ‘অপারেশন স্ট্রর্ম-২৬’। অভিযানের শুরুতে স্নাইপার রাইফেল নিয়ে আশপাশের ভবনে অবস্থান নেন বেশ কয়েকজন সদস্য। পুলিশের বিশেষায়িত উইং সোয়াটের পাশাপাশি অভিযানে অংশ নেয় ডিএমপির সিটি, ডিবি ইউনিট, র‌্যাব, থানা পুলিশের সদস্যরা। কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই এক ঘণ্টা পরিচালিত এ অভিযান শেষ হয় ৬টা ৫১ মিনিটে। সোয়াটের চৌকস সদস্যদের অভিযানে ঘটনাস্থলে নিহত হয় ৯ জঙ্গি।
বিজিবির সাফল্য
গত বছর ২০১৫ সালজুড়ে ৭৮৬ কোটি ৭২ লাখ টাকার চোরাচালানি পণ্য ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করে বিজিবি। একই সময় ৬৭টি পিস্তল, ৪০টি বন্দুক, ৫৪টি বিভিন্ন প্রকার বোমা ও ককটেল, ২৯টি ইপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) ও ৪৪ কেজি ৯০০ গ্রাম গান পাউডার উদ্ধার করে। এই এক বছরে বিজিবির অভিযানে মাদকপাচারসহ অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ২ হাজার ২১৬ জন এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের অভিযোগে এক হাজার ৪৯২ জন বাংলাদেশী নাগরিককে আটক করা হয়। সীমান্ত পথে ৬ হাজার ৫৯২ জন মিয়ানমার নাগরিকের অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিহত করা হয়।
বিজিবি সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১২-১৫ এই চার বছরে বিজিবির অভিযানে শুধুমাত্র ইয়াবাই এক কোটি ৭৫ লাখ ৭৪৫ পিস উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ২০১৫ সালে সবচেয়ে বেশি ৫২ লাখ ১৯ হাজার ৮৫ পিস, ২০১৪ সালে ২৫ লাখ ৩৫ হাজার ৭১৮ পিস, ২০১৩ সালে ১০ লাখ ৮২ হাজার ৫৪৮ পিস এবং ২০১২ সালে ৮ লাখ ৪০৩ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এভাবে ধীরে ধীরে বাড়ছে বাহিনীটির সাফল্য।
২০১৪ সালে ৬২৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা মূল্যের চোরাচালান ও মাদক দ্রব্য জব্দ করে বিজিবি। এর মধ্যে অন্তর্মুখী জব্দ করা চোরাচালান দ্রব্যের আনুমানিক মূল্য ৫৮২ কোটি ৫০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা এবং বহির্মুখী জব্দ করা চোরাচালানের আনুমানিক মূল্য ৪১ কোটি ৮৯ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। ওই সময়ে বিজিবির অভিযানে উদ্ধার অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ৬৫টি পিস্তল, ৮টি রিভলভার, ৪৫টি বিভিন্ন ধরনের বন্দুক, ২৫টি বিভিন্ন প্রকার বোমা, ৩৩৬ রাউন্ড বিভিন্ন প্রকার গুলি ও ৩ বোতল গান পাউডার। চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে এক হাজার ২২ জনকে আটক করে নিকটস্থ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের সময় ৭ হাজার ৩০ জনকে আটক করা হয়। সীমান্তপথে অবৈধ পাচারের সময় ৭৬৪ জন নারী-শিশুকে উদ্ধার এবং ১৩ জন মানবপাচারকারীকে আটক করা হয়।
২০১৩ সালে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে আনা-নেয়ার সময় ৫৬৭ কোটি টাকা মূল্যের চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য জব্দ করে বাহিনীটি। এর মধ্যে দেশের ভেতরে ঢোকার সময় ৫১৮ কোটি ৪৮ লাখ ২৮ হাজার ৮০৫ টাকার ও দেশ থেকে পাচার হওয়ার সময় ৪৮ কোটি ২৭ লাখ ৮৮ হাজার ১৯৬ টাকার চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়। ওই বছর সীমান্তে অবৈধভাবে পারাপার ও চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ১১ হাজার ৯৬৬ জনকে আটক এবং এ সব ঘটনায় নিকটস্থ থানায় ২৬ হাজার ৩২৩টি মামলা দায়ের হয়। সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় ৬ হাজার ৩৮৬ জন মিয়ানমার নাগরিককে পুশব্যাক ও ৩৬ জনকে নিকটস্থ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। একই অভিযোগে ১৫৭ জন ভারতীয় নাগরিককে পুশব্যাক ও ৯৩ জনকে থানায় সোপর্দ করা হয়। সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পাচারের সময় ৭৩৬ জন নারী ও ১৮৬ জন শিশুকে উদ্ধারসহ ১৬ জন পাচারকারীকে আটক করেছে বিজিবি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রীর ডাকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ দেশবাসী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ