পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শামসুল ইসলাম : দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সউদী আরবের শ্রমবাজার উন্মুক্ত হয়েছে। সউদী আরবে সকল খাতে বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সউদী শ্রম ও সমাজ উন্নয়ন মন্ত্রণালয় বুধবার বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে। সউদী নিয়োগকারীরা এখন থেকে বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগের আবেদন করতে পারবেন। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হওয়ায় রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ সউদী বাদশা সালমনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেছেন। শ্রমিক নিয়োগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের খবর ছড়িয়ে পড়ায় সউদীতে প্রবাসী শ্রমিকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। সউদী থেকে একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। দেশটিতে প্রায় তের লক্ষাধিক বাংলাদেশী শ্রমিক কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিটেন্স আয় করছেন। ২০১৫ সালে সউদী প্রবাসী শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছে। ঐ বছর সউদী প্রবাসী শ্রমিকরা ৩২১৭ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছে। একই বছর সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রবাসী শ্রমিকরা ২৭৬১ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছে। ভ্রাতৃ-প্রতীম সউদী আরবের সাথে বাংলাদেশের উত্তরোত্তর সম্পর্কের উন্নয়ন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সউদী আরব সফরের সুফলের অংশ হিসেবেই সউদীর শ্রমবাজারের দ্বার খুলছে। এছাড়া জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে সউদী আরবের সাথে এক সাথে কাজ করার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতিতে সউদী সরকার বাংলাদেশের প্রতি অত্যন্ত সহানুভূতির দৃষ্টি দিয়েছে। বিগত সাড়ে ৭ বছর ধরে অঘোষিতভাবে সউদীতে বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা বহাল ছিল। তবে প্রতি মাসে হাতে গোনা কিছু শ্রমিক যাচ্ছে সউদী আরবে। মহিলা গৃহকর্মীরা এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে ছিলেন। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ফলে এখন সব ধরনের কাজে বাংলাদেশী দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকরা সউদী আরবে যেতে পারবে।
গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে সউদী বাদশা সালমানের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সউদী আরব সফরের দুই মাসের মাথায় এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলো সউদী আরব। সফরে প্রধানমন্ত্রী সব ধরনের কাজে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা পুনরায় চালুর আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সউদী শ্রমবাজার নিয়ে দীর্ঘদিন যে শঙ্কা ছিল তা কেটে গেছে। জনশক্তি রফতানির সবচেয়ে বৃহৎ শ্রমবাজার সউদী আরব শিগগিরই পুরোপুরি চালু হচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব জাভেদ আহমদ গতকাল তার দপ্তরে ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে সউদীতে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, সউদী সরকার গত বুধবার রিয়াদস্থ বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহকে বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি অবহিত করেছে। এখন থেকে সউদীতে নির্মাণ, কৃষি, নার্স, সার্ভিসসহ বিভিন্ন সেক্টরে শ্রমিক নিয়োগের সুযোগ হবে। সউদী-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের চেয়ারম্যান বজলুল হক হারুন এমপি শ্রমিক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হওয়ায় সউদী বাদশা সালমানকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্র পরিচালনায় অত্যন্ত বিচক্ষণতার পরিচয় দেয়ায় সউদী সরকারের সাথে দিন দিন সুসম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করতে প্রধানমন্ত্রীর অব্যাহত প্রচেষ্টায় সউদী বাদশা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সউদীর সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাওয়ায় সউদী বড় বড় বিনিয়োগকারীরা বর্তমানে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। রাজধানী ঢাকার ফ্লাইওভারে সউদী আর্থিক সহায়তাই তা প্রমাণ করে।
আরব নিউজের খবরে বলা হয়েছে, সউদী আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টিকে বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য একটি সুখবর বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় দুই পবিত্র মসজিদের দায়িত্বে থাকা বাদশাহ সালমানের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। গোলাম মসিহ জানান, নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে সব ধরনের কাজে বাংলাদেশী দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকরা কাজ করতে পারবেন সউদী আরবে। চিকিৎসক, সেবিকা, শিক্ষক, কৃষি ও নির্মাণ খাতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই। বাদশাহ সালমান বাংলাদেশের সুদিন ও দুর্দিনে সব সময় পাশে থেকেছেন বলে আরব নিউজকে জানান গোলাম মসিহ। বর্তমানে সউদী আরবে ১৩ লাখ বাংলাদেশী শ্রমিক কাজ করছেন। এদের মধ্যে ৬০ হাজার নারী গৃহকর্মী রয়েছেন। গোলাম মসিহ জানান, জুন থেকে পুরুষ গৃহকর্মীদের ভিসা দেয়া শুরু হয়েছে। এরপর থেকে নিয়মিতই সউদী আরবে বাংলাদেশীরা যাচ্ছেন। প্রতি মাসে অন্তত ৬ হাজার বাংলাদেশী নারী গৃহকর্মী সউদী আরবে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, সউদী আরবে কাজ করার জন্য শ্রমিকদের আমরা ৪৮টি শ্রেণিতে ভাগ করেছি।
এর আগে গত ২৩ জুলাই সউদী শ্রম ও সমাজ উন্নয়ন মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গেল পুরুষ গৃহকর্মী নেয়ার প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করেছিল। সিঙ্গেল বলতে অবিবাহিত ও ব্যাচেলরদের বোঝানো হয়েছে। সউদী মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, গৃহকর্মী প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ বাদে অন্য কোনো দেশ থেকে চাহিদা মিটিয়ে নিতে। তবে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে কোনো গৃহকর্মী নেয়া যাবে না। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশ থেকে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনটি শর্ত বেঁধে দেয়া সউদী শ্রম ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়। শর্তে বলা হয়েছিল ড্রাইভার, গৃহস্থলির কাজ ও নার্সÑএ তিনটি ক্যাটাগরিতে অন্য দেশ থেকে লোক নিয়োগ দেয়া যাবে।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খালিদ আবা আল-খাইল জানিয়েছিলেন, অন্য গ্রুপের শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য সউদী আরবের বাংলাদেশী সিঙ্গেল পুরুষ গৃহকর্মীদের নিয়োগ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
বিএমইটি’র সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে সউদী আরবে ১ লাখ ৯ হাজার ৫শ’ ১৩ জন, ২০০৭ সালে সউদীতে ২ লাখ ৪ হাজার ১শ’ ১২ জন, ২০০৮ সালে সউদীতে ১ লাখ ৩২ হাজার ১শ’ ২৪ জন কর্মী চাকুরি লাভ করে। অঘোষিত নিষেধাজ্ঞার দরুন ২০০৯ সালে সউদীতে জনশক্তি রফতানি মাত্র ১৪ হাজার ৬শ’ ৬৬ জনে নেমে আসে। ২০১০ সালে সউদী আরবে মাত্র ৭ হাজার ৬৯ জন কর্মী চাকুরি লাভ করে। ২০১৪ সালে সউদীতে ১০ হাজার ৬শ’ ৫৭ জন চাকুরি লাভ করে। ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতার পর ২০১৫ সালে সউদীতে মহিলা গৃহকর্মী যাওয়া শুরু হলে দেশটিতে সর্বমোট ৫৮ হাজার ২শ’ ৭০ কর্মী চাকুরি লাভ করে। গত জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত সউদীতে ৬১ হাজার ৯শ’ ৪৮ জন কর্মী চাকুরি লাভ করে। এর মধ্যে মহিলা গৃহকর্মীই বেশি। সউদী সরকারও ওই দেশে কর্মরত বাংলাদেশী কর্মীদের ভাগ্যোন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। বিগত ক’বছর আগে সউদী বাদশা’র মহানুভবতায় সউদী শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব (সেবা ও সম্পর্ক)- যিয়াদ বিন ইব্রাহিম আল দায়ে’র স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সউদীতে প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীদের নিয়োগকর্তা ও পেশা’র পরিবর্তন কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। এতে সউদী আরবে কর্মরত লাখ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীদের দীর্ঘদিনে দাবি পূরণ হয়েছে। ২০১৩ সালে সউদী বাদশা’র মহানুভবতায় মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অবৈধ লাখ লাখ বাংলাদেশী বৈধতা লাভের সুযোগ পেয়েছে। সাধারণ ক্ষমার আওতায় প্রায় ৬ লাখ অবৈধ বাংলাদেশী কর্মী বৈধতা লাভ করেছে। সউদী কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করায় তাদের মধ্যে ব্যাপক আশার আলো জেগেছিল। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান ও শ্রম অভিবাসন বিশ্লেষক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় সউদী বাদশাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, সউদী শ্রমবাজারে পুনঃপ্রবেশ ঘটলেও আমাদের সব সময় নিশ্চিত হতে হবে সেখানে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা কত হবে। প্রবাসী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা, থাকা-খাওয়া শ্রমিকের সুরক্ষাসহ সব বিষয়গুলো নিয়ে নিয়োগদাতা কোম্পানিগুলোর সাথে টেকসই আলোচনা করে শ্রমিক প্রেরণ করতে হবে। কিরণ বলেন, শ্রীলংকা, ভারত ও নেপালের শ্রমিকদের মতো আমাদের দেশের শ্রমিকরা যাতে স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে সউদী গিয়ে ন্যায্য বেতন ও সুযোগ-সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। হাসান আহমদ কিরণ বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় সউদীতে যাচাই-বাছাই করা ছাড়া স্বল্প পুঁজির কোম্পানিতে শ্রমিক পাঠাতে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে সউদীর শ্রমবাজারকে ধরে রাখতে সকল জনশক্তি রফতানিকারকদের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিবেন বলে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, সউদীর শ্রমবাজার ধরে রাখতে পারলে রেমিটেন্স প্রবাহে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হবে। রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের লেবার কনসলার সরোয়ার আলম গতকাল টেলিফোনে ইনকিলাবকে বলেন, শ্রমিক নিয়োগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তিনি বলেন, সউদী আরবে প্রচুর বাংলাদেশী শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশীরা কঠোর পরিশ্রমী হওয়ায় সউদী নিয়োগকারীরা আমাদের শ্রমিকদের নিয়োগ দিতে বেশি আগ্রহী।
বায়রার মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন সউদীর শ্রমবাজারের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হওয়ায় সউদী সরকারকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আমরা সউদী আরবের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার নিয়ে আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সউদী আরব সফরকালে তাঁর সর্বোচ্চ কূটনৈতিক প্রচেষ্টার কারণেই আজ সউদীর শ্রমবাজার উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে। সউদী আরবে ব্যাপক হারে শ্রমিক যাওয়া শুরু হলে অভিবাসন ব্যয়েও কমে যাবে বলে বায়রার মহাসচিব স্বপন আশাবাদ ব্যক্ত করেন। শ্রমবাজার সম্প্রসারণে বায়রা কর্তৃপক্ষ অভিবাসন ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে বলে বায়রা মহাসচিব উল্লেখ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।