Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ উচ্ছেদে সোচ্চার হোন : আলেম-উলামাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১২ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:০৯ পিএম, ১১ আগস্ট, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : দেশ থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ উচ্ছেদে প্র্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে দেশ থেকে এই দুই অশুভ শক্তিকে উচ্ছেদে আলেম-উলামাদেরকে আরো সোচ্চার হবার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা আমাদের জন্য সুখবর। দেশের মানুষের মধ্যে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদবিরোধী একটি চেতনা সৃষ্টি হয়েছে। এই চেতনাটাকে আরও শাণিত করা দরকার। আপনারা যারা ধর্ম শিক্ষা দেন এটা মানুষকে আরো ভালোভাবে বোঝাতে হবে এবং ওলামায়ে কেরামগণ এখানে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন। আর কেউ  যেন এই ভুল পথে না যায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটস্থ বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা আয়োজিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে উলামা সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের সভাপ্রতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। শোলাকিয়া ঈদ জামাতের  ইমাম  মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের উচ্চ প্রর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানগণ, রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান স্বামী ধ্রুবেশানন্দ মহারাজ, খ্রীস্টান ধর্মীয় প্রধান আর্চবিশপ্র প্র্যাট্রিক ডি রোজারিও, বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপ্রতি শুদ্ধানন্দ মহাথেরোসহ বিভিন্ন ধর্মেও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিকবৃন্দ এবং আলেম-উলামা সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ অনুষ্ঠানে এই এক লাখ আলেমের স্বাক্ষর সম্বলিত ৩০ খ- ‘ফতওয়ার’ একটি খ- প্রতীকি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সামান্য কয়েকটা লোক ইসলামকে হেয় করতে পারে না। ‘যখনই কেউ ইসলামিক টেররিস্ট বলে, আমি সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতিবাদ করি। সন্ত্রাসী কোনো ধর্মের হতে প্রারে না। সামান্য কয়েকটা লোক ইসলামকে হেয় করতে প্রারে না। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে আলেমদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, প্রৃথিবীর সবচেয়ে মানবিক, উদার, শান্তি-সৌহার্দ্য ও সহনশীলতার ধর্ম ইসলাম। সবচেয়ে দুঃখ লাগে যখন সামান্য কিছু লোক ধর্মের নাম ব্যবহার করে সন্ত্রাস চালাচ্ছে, মানুষ হত্যা করছে। আমাদের প্রবিত্র ধর্মকে হেয় করছে। তিনি আরও বলেন, যারা সন্ত্রাস করে, মানুষ হত্যা করে, তারা আদৌ কোনো ধর্মে বিশ্বাস করে কিনা, দেখা দরকার।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ কর্মকা-ে জড়িত ব্যক্তিদের নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা কোরআন-হাদিস ও ইসলামের প্রবিত্র বাণী মানবে না, নামাজ না প্রড়ে মানুষ খুন করতে যায়, তারা কী কওে বেহেশতে যাবে? তারা কী করে ভাবে, তারা মানুষ খুন করে বেহেশতে যাবে?
প্রবিত্র কোরআনের একটি আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করলে সে যেন গোটা মানব জাতিকে হত্যা করলো। আর কেউ যদি কোনো ব্যক্তিকে রক্ষা কওে সে যেন গোটা মানবজাতিকে রক্ষা করলো। আরেকটি আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষ হত্যাকারী ও দুর্যোগ সৃষ্টিকারীদের প্রছন্দ করেন না।
শেখ হাসিনা এ সময় সাম্প্র্রতিক জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, এই যে প্ররপ্রর কিছু ঘটনা ঘটলো, বিশ্বের অনেক দেশে এ রকম ঘটেছে। তবে বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে প্রারে আমরা কল্পনার মধ্যেই আনতে প্রারি না।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, তারা (হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারীরা) রমজানের মধ্যে তারাবীর নামাজের ওয়াক্তে নামাজে না গিয়ে যে মানুষ খুন করতে গেল, খাবার খাচ্ছে এমন বিদেশি-নিরীহদের ওপ্রর হামলা করে তাদের হত্যা করল, তারা কোন ইসলাম কায়েম করছে।
তিনি একজন মুসলমান হিসেবে ঈদের জামাতে যোগ না দিয়ে শোলাকিয়ায় ঈ্রদের জামাতে হামলার তীব্র নিন্দা করে বলেন, শোলাকিয়ায় প্রর্যাপ্ত আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে কারণেই সন্ত্রাসীরা ঈদ জামাত পর্যন্ত যেতে না পেরে আধা কিলোমিটার দূরের চেক পোস্টেই বোমা ফাটিয়ে দেয়।
সম্মেলনে আলেম সমাজের পক্ষ থেকে কওমি মাদ্রাসা সনদ দেয়ার উদ্যোগ বাস্তবায়নের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সনদ দিতে হলে ন্যূনতম একটা কারিকুলাম দরকার। আমরা কওমি মাদ্রাসা কমিশন গঠন করে দিয়েছি। কিন্তু কওমি মাদ্রাসার পাঁচটি বোর্ড একমত হতে পারেনি। সবাই একমত হন অথবা যারা আগ্রহী তারা একমত হন, আমরা বাস্তবায়ন শুরু কওে দেব। সারা দেশে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় ৫৬০টি মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার প্ররিকল্পনার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে আমরা যে নির্দেশ দিয়েছি সারা দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একটা কমিটি করে জনমত সৃষ্টি করা, সেখানে মসজিদের ইমামগণ রয়েছেন, ওলামায়ে কেরামগণ রয়েছেন সকলে মিলেই এটার ব্যাপক প্রচার চালাবেন।
তিনি স্বাক্ষর সংগ্রহকে মহৎ একটি উদ্যোগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিশ্চয়ই এই এক লাখ আলেম কখনও মিথ্যা কথা বলবেন না। তারা সত্য কথা বলেন। কোরআনের কথা বলেন। সন্ত্রাসের পথ ইসলামের পথ নয়, এটি সাধারণ মানুষকে বোঝানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী তাঁদের দায়িত্ব দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে। কিন্তু এখানে সুন্দর বিষয় হলো এক ধর্মের মানুষ আরেক ধর্মের মানুষকে শ্রদ্ধা করেন, সম্মান করেন, সহযোগিতা করেন। এটা এদেশের মানুষের সবচেয়ে বড় অর্জন। এবারও ঈদের জামাতে হিন্দু সম্প্র্রদায়ের মানুষ পাহারা দিয়েছে যেন নির্বিঘেœ নামাজ আদায় করতে পারে। আবার মুসলমান ভাইয়েরা এভাবে হিন্দুরা যেন পূজা-অর্চনা করতে পারে নির্বিঘেœ সে ব্যবস্থা করে। এভাবে সবাই সবাইকে সহযোগিতা করেন। এটা আমাদের ইসলাম ধর্মই শিক্ষা দিয়েছে। অপরকে সহযোগিতা করা, অপরের প্রতি সহনশীল হওয়া।
বক্তৃতার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, লাখো শহীদ, জাতীয় চার নেতা এবং পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট শহীদ হওয়া বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের।
শেখ হাসিনা বলেন, এই আগস্টে বারবার আঘাত এসেছে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে, যিনি এ দেশের বঞ্চিত মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ওই হত্যাকা-ের ক’দিন আগে স্বামীর কর্মস্থলে চলে গিয়েছিলাম বলে আমরা দু’বোন রক্ষা পেয়ে যাই। মানুষ এত শোক সইতে পারে না, আল্লাহ আমাদের সে শোক সইবার শক্তি দিয়েছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ আমাদের ২২ জন নেতাকর্মীকে হারিয়েছি। পরপর ১৩টি গ্রেনেড ছোড়া হয়েছিল আমার ওপরে। নেতাকর্মীরা মানবঢাল রচনা করে বলে আমি রক্ষা পেয়ে যাই। আল্লাহর ইশারা ছিল বলেই রক্ষা পেয়েছি। সরাসরি গুলি করা হয়েছে। আমাদের কোটালিপাড়ায় ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল। একজন চা দোকানের সাধারণ মানুষ সেটা উদ্ধার করেছেন। সে যাত্রায়ও বেঁচে যাই। এটাও আল্লাহর ইশারা ছাড়া সম্ভব নয়। সেজন্য মনে করি, আল্লাহ কিছু কাজ দেন, সে কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহই তাকে রক্ষা করেন। এই বিশ্বাস নিয়েই আমি যত বাধা আসুক নির্বিঘ্নে কাজ করার চেষ্টা করি।



 

Show all comments
  • তুহিন ১২ আগস্ট, ২০১৬, ১:৫০ পিএম says : 0
    হে আল্লাহ তুমি আমাদের এই দেশটাকে রক্ষা করো।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ উচ্ছেদে সোচ্চার হোন : আলেম-উলামাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ