পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ডাক মহাপরিচালকের বায়োমেট্টিক ডেডবোল্ট ডোরটি দু’জনের আঙ্গুলের স্পর্শে খোলে। সুধাংশু শেখর ভদ্র (এসএস ভদ্র),অন্যজন রাবেয়া বেগম। দ্বিতীয়োক্ত ব্যক্তি তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি। অধিদফতরের মহাপরিচালক এসএস ভদ্রের সঙ্গে সংযুক্ত। পদবি যা ই হোক এই নারী কর্মচারি হালে ডাক অধিদফতরের ডিজির এক নির্ভরতার নাম। বলা হয়ে থাকে, ডাক অধিদফতর চালাচ্ছেন এসএস ভদ্র। আর ভদ্রকে পরিচালনা করেন রাবেয়া। অন্যদিকে রাবেয়ারও সার্বিক আশ্রয় ডাকের ডিজি। পারষ্পরিক এই নির্ভরতার মাত্রা এতোটাই যে,একজন যেন অন্যকে ছাড়া অচল। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ডাক বিভাগের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার পাসওয়ার্ড এই রাবেয়ার হাতে। সেই সঙ্গে প্রকল্পের নামে ভদ্রের শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ,বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আত্মঘাতি রহস্যময় সমঝোতা চুক্তি সম্পাদন, বিনিময়ে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়া এবং অবৈধ সম্পদের গোপন পাসওয়ার্ডও রাবেয়ার হাতেই। এটি রাবেয়া ভদ্রের কাছ থেকে আদায় করেছেন অফিসিয়াল সম্পর্কের বাইরে-সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ‘বিশেষ যোগ্যতা’ দিয়ে। ডাকের অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের মতে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ভদ্রের দুর্নীতির বিষয়ে যে অনুসন্ধান চালাচ্ছে-তাতে ভদ্রের নিজ নামীয় অবৈধ সম্পদ বলতে এদেশে তেমন কিছুই পাবে না। তবে বেনামে রাখা সম্পদের বড় একটি অংশের সন্ধান মিলবে রাবেয়া বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই। রাবেয়ার হাতেই এসএস ভদ্রের গোপন পাসওয়ার্ড।
কে এই রাবেয়া ?
পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত তৃতীয় শ্রেণীর নারী কর্মচারি রাবেয়া বেগম। ডাকের ডিজির সঙ্গে সাক্ষাতে গেলে আগে প্রয়োজন রাবেয়ার পূর্বানুমোদন।রাবেয়া যখন লিফটে ওঠেন অন্য কর্মকর্তাদের তখন ওঠা বারণ।‘ম্যাডাম আসছেন’এই খবর পৌঁছার মিনিট পাঁচেক আগেই খুলে যায় ডাক অধিদফতরের সদর দরজা। ভদ্রের জন্য বরাদ্দ লাল টকটকে পাজেরোর ডোরঠেলে নামেন রাবেয়া। কেপিআই ঘোষিত ডাক ভবনের নিরাপত্তারক্ষীরা নড়েচড়ে ওঠেন। অন্যরকম ব্যস্ততায় ‘গার্ড অব অনার’র মতো স্যালুট ঠুকতে থাকেন রাবেয়াকে। লিফটম্যান মহিউদ্দিন মুচকি হেসে একাকী ‘ম্যাডাম’কে তুলে নেন তিন তলায়। হাইহিলের টকটক শব্দ তুলে সোজা ঢুকে যান ডাকের ডিজির কক্ষে। ভেতরে ভদ্র-রাবেয়ার সহাবস্থান পুুরো অফিস আওয়ারের সময় জুড়ে।যেদিন ‘জরুরি কাজ’ থাকে সেদিন ডিজির কক্ষের আলো জ্বলতে দেখা যায় রাত অবধি। কিন্তু কি সেই ‘জরুরি কাজ’ এটি কেউ জানে না। তবে এ সময় ওই কক্ষের কড়া নাড়া বারণ। এটি ডিজি এসএস ভদ্রের কঠোর নির্দেশ।
সংশ্লিষ্টদের মতে,ডাক বিভাগে দুর্নীতি আর নৈরাজ্যের যদি ‘শুরু’টা খোাঁজা হয়-সেটি এখান থেকেই। কার্যত: তৃতীয় শ্রেণীর একজন নারী কর্মচারির নির্দেশনায় চলছে ডাক বিভাগ। কথিত আছে, মহাপরিচালক এসএস ভদ্র চালাচ্ছেন ডাক বিভাগ। আর ভদ্রকে পরিচালনা করেন পরিদর্শক রাবেয়া। তাদের সম্পর্কটি যেন ডাক বিভাগের গন্ডি পেরিয়ে আরও বেশি কিছু। ভদ্র এবং রাবেয়ার ঘিরে তাই গুঞ্জনের শেষ নেই। এ গুঞ্জন মুখরোচক রসমালাইয়ের মতোই কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মুখে স্বাদ-সঞ্চার করছে। কিন্তু যে বিষয়টি কারও চোখ এড়ায় না তাহলো,ডাক বিভাগের সর্বত্র রাবেয়া বেগমের দোর্দন্ড প্রতাপ। মহাপরিচালকের নিচের কোনো কর্মকর্তাদের যেন রাবেয়ার কাছে পাত্তাই নেই। থাকার কথাও নয়। পরিদর্শক পদমর্যাদার একজন নারী কর্মচারি কি পদবি নিয়ে ডিজি এসএব ভদ্রের সঙ্গে ‘সংযুক্ত’ রয়েছেন তা কেউ জানে না। শিরোনামহীন এই পদায়ন প্রতিষ্ঠানটির ২শ’বছরের ইতিহাসে নজিরবিহীন। প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি,ডিজির ফাইল ওয়ার্ক,চিঠি ড্রাফট,জবাব প্রদান,অফিস আদেশ-নির্দেশ,প্রজ্ঞাপন তৈরি করছেন রাবেয়া।দফতরের মেইলের পাসওয়ার্ডটি রাবেয়ারই জানা। সুরক্ষিত সর্ম্পকাতর পোস্টাল সার্ভারে প্রবেশ করেন রাবেয়াই। প্রেজেন্টেশনের কন্টেন্টস রেডি করেন তিনি।কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিয়োগ.বদলি-পদোন্নতি,পদায়নে প্রভাব থাকে রাবেয়ার। কর্মকর্তাদের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকগুলোতেও রাবেয়ার উৎকট উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ঢাকার বাইরে কোনো ট্যুরে গেলে ডিজির সাথে থাকেন রাবেয়া। প্রয়োজন- অপ্রয়োজনে প্রাসঙ্গিক করা হয় রাবেয়াকে। রাবেয়াই যেন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত এসএস ভদ্র’র ‘সবকিছুই’। তবে দুর্নীতির অভিযোগে ভদ্রকে দুদক জিজ্ঞাসাবাদের পর থেকে রাবেয়াকে আর ডাক অধিদফতরে দেখা যায় নি।
পোস্টাল অপারেটর থেকে কোটিপতি
জানাগেছে, এসএস ভদ্র দেশে যে সম্পদ করেছেন তার বেশিরভাগই বেনামে। ভদ্রের এসব সম্পদের অলিখিত ট্রাস্টি হিসেবে কাজ করেন রাবেয়া। এক সময় ডিপিএমজি জাকির হাসান নূরেরও ট্রাস্টি ছিলেন। উচ্চাভিলাষী রাবেয়া মূলত: নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে। অবসরপ্রাপ্ত পিতা আবু তাহের ডাক বিভাগের পাম্প অপারেটর। দুই পরিবারের ৬ সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কেটেছে তার। ২০০৪ সালের ৩০ অক্টোবর রাবেয়া চাকরি নেন পোস্টাল অপারেটর হিসেবে। বেতন স্কেল ১৯৭৫ টাকা। পরবর্তীতে বেড়ে হয় ৪৯ শ’ ২০ টাকা। এ অর্থে তার চলে না। জাকির হাসান নূর ‘পোস্টাল ক্যাশকার্ড’ প্রকল্পে নিয়ে আসেন তাকে। নূরের সংস্পর্শে এসে রাবেয়া বদলে যান। অর্থের প্রতি তার জন্ম নেয় দুর্নিবার লোভ। পরিবর্তন আসে তার লাইফ স্টাইলে। পরে ভদ্রের হাতে পড়ে রাবেয়া বনে যান কোটি কোটি টাকার মালিক। ডিজির দেয়া ডাক বিভাগের পাজেরোতেই চড়েন তিনি। পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করেন প্রাইভেট কার। এটি ভদ্রের কেনা। মেন্টেনেন্স খরচও তার। মোহাম্মদপুর নিউমার্কেটের ৫১ নম্বর দোকানটি রাবেয়ার। কোটি টাকার উপরে মালামাল রয়েছে দোকানটিতে। সিদ্ধেশ্বরীতে থাকেন ভাড়া বাসায়। ফ্ল্যাটটির ভাড়া প্রায় ৪০ হাজার টাকা। একটি মোবাইল ব্যাংকিং অপারেটর কোম্পানি এটির ভাড়া পরিশোধ করছে। এসএস ভদ্রই ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এক ছেলে এক মেয়ে রাবেয়ার। পড়াশুনা করাচ্ছেন নামী স্কুলে। স্বল্প আয়ে অসন্তুষ্ট উচ্চভিলাষী রাবেয়া ১১ বছর সংসার করেন। স্বামীকে ডিভোর্স দেন ২০১৫ সালে। ডাক বিভাগেরই তৎকালিন ডিপিএমজি জাকির হাসান নূরের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের জের ধরে। নূর বিশ্বব্যাংকে ডেপুটেশনে চলে গেলে হাত বদল হন রাবেয়া। চলে আসেন ভদ্রের কব্জায়। রাবেয়াও শতভাগ ভদ্রের হয়ে যান। এ ইস্যুতে রাবেয়া ও নূরের মাঝে ব্যাপক ঝগড়া হয়। পক্ষান্তরে ভদ্র রাবেয়াকে দেন আশ্রয়-প্রশ্রয়,অর্থ,পদোন্নতি, ঠিকানা আর চাকরির নিরাপত্তা। ফলে রাবেয়াকে নিয়ে ডাকের আর কোনো কর্মকর্তা টানাটানি করার সাহস পাননি। রাবেয়ার জন্য কি না করেছেন ডাকের ডিজি ?
তাকে পোস্টাল অপারেটর থেকে পরিদর্শক পদে পদোন্নতি দিতে ২০১৮ সালে একটি পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। নামমাত্র একটি কমিটি থাকলেও এটির প্রশ্নপত্র ঠিক করেন ডিজি। বিতর্কিত ওই পরীক্ষায় রাবেয়াকে ‘ফার্স্ট’ দেখানো হয়। পদোন্নতির ২ বছর হয়ে গেলেও পদোন্নতির মেধাতালিকা হয়নি। তৈরি করা হয়নি গ্রেডেশন লিস্ট। এতে সংশ্লিষ্টদের পরবর্তী পদোন্নতিতে অন্তরায় সৃষ্টি হয়। এভাবে রাবেয়ার জন্য প্রকাশ্য-গোপনে অনেক কিছু করেন। জানা গেছে, ঢাকার ৫৭৯,দক্ষিণ শাজাহানপুরে রাবেয়াকে প্রায় ২ কোটি টাকায় ফ্ল্যাট কিনে দেন রাবেয়াকে। এছাড়া রাবেয়ার নিজের এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামের ব্যাংক একাউন্টে রয়েছে ভদ্রের বিপুল অর্থ। দুদক অনুসন্ধানের আওতায় এনে রাবেয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বহু অজানা তথ্য উদঘাটিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রথমে এসএস ভদ্রকে ফোন করা হয়।তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে পরিদর্শক রাবেয়া বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। মোবাইলে ফোন দিলে তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে ব্যস্ত আছি। কথা বলতে পারবো না।’ পরে অবশ্য ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া দেননি রাবেয়া। জাকির হাসান নূরকেও একাধিকবার কল করা হয়। তবে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
বিভিন্ন নামে ভদ্রের সম্পদ-ভান্ডার
রাবেয়া ছাড়াও ভদ্রের অবৈধ অর্থ রয়েছে জনৈক পরিবহন ব্যবসায়ী আলম এবং নিজ জামাতার জিম্মায়। এর মধ্যে আলমের নামে রাজধানীর জয়কালি মন্দিরে কেনা হয়েছে ২ কোটি টাকা মূল্যে। ‘লিটন হোমিও হল’ নামের এই দোকানে ভাড়া চলছে। ধানমন্ডিতে রয়েছে দু’টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। এসব ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। ট্রান্সপোর্ট ব্যবসাও রয়েছে। ৭/৮টি কাভার্ড ভ্যান রয়েছে ভদ্রের। মংলা এবং বেনাপোল এলাকায় পণ্য পরিবহন করে এসব। দেখাশুনা করেন আলমই। খুলনায় বড় একটি মাছের ঘের রয়েছে। বেনামে গড়া এই প্রতিষ্ঠানের ৭৫ শতাংশ শেয়ার ভদ্রের। ভদ্রের মেয়ে ‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন’। তাকে বিয়ে দেয়া হয় এক কাপড়ের দোকানির সঙ্গে। এই জামাতাকে ভদ্র চাকরি দেন ব্যাংক এশিয়ায়। বড় ধরণের ফান্ড দীর্ঘদিন ডিপোজিট রাখার বিনিময়ে মেয়ে জামাইকে চাকরি দেন বলে জানা গেছে। ডাক বিভাগের কয়েক শ’ কোটি টাকা তিনি ডিপোজিট হিসেবে ব্যাংক এশিয়ায় ফেলে রাখেন । ব্যাংকটির জুরাইন শাখায় পোস্টিং তার জামাতার। তিনি অফিসে যাওয়া-আসা করেন ডাক বিভাগের গাড়িতে। ব্যক্তিগত জীবনে ভদ্র এক ছেলে এক মেয়ের জনক। ছেলে অনিন্দ্য গৌরব উপল সদ্য পাস করা আর্কিটেক্ট। তিনি ‘কুশলী নির্মাতা’ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। আর ডাক বিভাগের বৃহৎ নির্মাণের প্রায় সবগুলোরই কার্যাদেশ পায় ‘কুশলী নির্মাতা’। আগার গাঁওয়ে স্থাপিত শত কোটি টাকা ‘ডাক ভবন’,শাহজাহান পুরে নির্মিত ৮টি ২০ তলা ভবন করে কুশলী নির্মাতা। এছাড়া জরাজীর্ণ ডাকঘর প্রকল্পের আওতায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে বনানী পোস্ট অফিস ভবন,মতিঝিলে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ডাক ঘর নির্মাণের কার্যাদেশও ‘কুশলী নির্মাতা’কে দেয়ার প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত।
উল্লেখ্য, প্রকল্পের নামে শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ডাক অধিদফতরের মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্রের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুদক। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি তাকে অপসারণের সুপারিশ করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।