পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : সাগরপথে ইয়াবার জোয়ার ঠেকানো যাচ্ছে না। মিয়ানমার থেকে সরাসরি এই মাদকের চালান আসছে। মাছ ধরার ট্রলারসহ নৌযানে লুকিয়ে পাচারকারি চক্র ইয়াবার চালান নিয়ে আসছে। শক্তিশালী সিন্ডিকেটের হাত হয়ে তা ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানী ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারা দেশে। মাঝে মধ্যে দুই-একটি চালান ধরা পড়লেও বেশিরভাগ চালান নিরাপদ গন্তব্যে চলে যাচ্ছে। দেশের সর্বত্রই মিলছে নেশার রাজা ইয়াবা বড়ি। মাদকের নীল ছোবলে ধ্বংসের পথে যুবসমাজ।
সাগরপথে ট্রলারে লুকিয়ে পাচার করা হচ্ছে ইয়াবা। সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া এসব চালান ধরা অসম্ভব। কারণ গভীর সমুদ্রে চলাচলরত শত শত নৌযানে তল্লাশি করে মাদকদ্রব্য উদ্ধার কোনভাবেই সম্ভব নয়। এ পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে ট্রলার থেকে যতটি চালান ধরা পড়ে তার সবকটির সুস্পষ্ট আগাম তথ্য ছিল। সংশ্লিষ্টদের মতে যে পরিমাণ ইয়াবার চালান উদ্ধার হচ্ছে তার অন্তত দশগুণ নিরাপদে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এলিট বাহিনী র্যাব-৭ চট্টগ্রামের অভিযানেই গত এক বছরে ৭০ লাখ ইয়াবা ট্যাবলেট ধরা পড়েছে। চলতি বছরের গতকাল পর্যন্ত ধরা পড়েছে প্রায় ৪৬ লাখ পিস ইয়াবা বড়ি।
এক সময় সীমান্ত হয়ে সড়ক ও পাহাড়ি পথে ইয়াবার চালান আসতো। এসব পথে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জোরদার তৎপরতার কারণে রুট বদল করে পাচারকারিরা। তারা সাগরপথে ইয়াবা পাচারকে নিরাপদ মনে করে। পাচারকারিরা মাছ ধরার অজুহাতে গভীর সমুদ্রে মিয়ানমার সীমান্তে চলে যায়। সেখানে বোঝাই করা হয় ইয়াবার চালান। এরপর উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন ঘাটে এনে এসব ইয়াবা খালাস করা হয়। কিছু কিছু চালান নৌপথে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরাসরি চলে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে গভীর সমুদ্রে ‘এমভি মায়ের দোয়া’ নামে একটি মাছ ধরার ট্রলারে অভিযান চালিয়ে ৭ লাখ ইয়াবার চালান উদ্ধার করে র্যাব-৭ চট্টগ্রামের একটি চৌকস টিম। র্যাব কর্মকর্তারা জানান, একটি সংঘবদ্ধ মাদক ব্যবসায়ী চক্র দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার বড় বড় চালান মাছ ধরার ট্রলারযোগে কক্সাবাজার এবং চট্টগ্রাম নিয়ে আসে এমন খবর তাদের কাছে ছিল। এই খবরের প্রেক্ষিতে নিবিড় গোয়েন্দা পর্যবেক্ষণের ফলশ্রুতিতে জানা যায়, ‘এফভি মায়ের দোয়া’ নামক একটি মাছ ধরার ট্রলারযোগে বিপুল পরিমাণ ইয়াবার চালান মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারের দিকে আসছে।
উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭ চট্টগ্রামের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে র্যাব-৭-এর একটি আভিযানিক দল কক্সবাজার এলাকার গভীর সমুদ্রে তাড়া করে ট্রলারটি আটক করে। পরে ট্রলারের হিমাগার থেকে ৭ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। র্যাব-৭ চলতি বছরের ১ জানুয়ারী থেকে এ পর্যন্ত ৪৫ লক্ষ ৭১ হাজার ৯৯৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে। আর গত ১৮ জানুয়ারী পর্যন্ত একছরের অভিযানে উদ্ধার হয় ৭০ লাখ ইয়াবা ট্যাবলেট। এর আগে ১৮ জানুয়ারী চট্টগ্রাম ও ঢাকায় অভিযান চালিয়ে ২৮ লাখ পিস ইয়াবা বড়িসহ তিনজনকে আটক করেছে র্যাব-৭। এ সময় একটি মাছ ধরার কাঠের ট্রলারও জব্দ করা হয়। র্যাবের দাবি অনুযায়ী এটিই ছিল বংলাদেশে এ পর্যন্ত আটক ইয়াবার সবচেয়ে বড়ো চালান।
গোয়েন্দা তথ্য পেয়ে সাগরে দুটি ট্রলারের অবস্থান শনাক্তের পর একটি নৌযান নিয়ে ধাওয়া শুরু করে র্যাব। এক পর্যায়ে দুটি ট্রলার দুই দিকে গেলে শেষ পর্যন্ত একটি ট্রলারের পেছনে ছুটে সেটি আটক করে র্যাব, পালিয়ে যায় অন্যটি। আটক ট্রলার থেকে উদ্ধার করা হয় সাড়ে ২৭ লাখ ইয়াবা। এ ঘটনায় আটক করা হয় একজনকে। পরদিন ঢাকার বিমানবন্দর রেল স্টেশন এলাকায় আরেক অভিযানে আটক করা হয় ৫০ হাজার ইয়াবা। এই দুই অভিযানে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের মধ্যে একজন এ মাদক চক্রের হোতা বলে র্যাবের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন।
র্যাবের অভিযানে আগেও চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার এলাকায় গভীর সাগরে বেশ কয়েটি ইয়াবার চালান ধরা পড়ে। দুই বছর আগে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে একটি ট্রলার থেকে ১৫ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করে নৌবাহিনী। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে গত বছরে ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে একটি মাছ ধরার ট্রলার থেকে প্রায় ৭ লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটের বিশাল চালান আটক করা হয়। কোস্টগার্ডের সহযোগিতায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্তৃক উদ্ধারকৃত এসব ইয়াবার মূল্য ২০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। চালানটি সরাসরি মিয়ানমার থেকে সাগর পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রাম শহরে আসছিল। ‘এফভি মালেক শাহ’ নামে ট্রলারটি বহির্নোঙর অতিক্রম করার সময় ধাওয়া করে আটক করা হয়। এ সময় ট্রলারটি তল্লাশি করে একটি বস্তার ভেতর ছোট ছোট প্যাকেটে রাখা ইয়াবাগুলো উদ্ধার করা হয়। প্রতিটি প্যাকেটে ১০ হাজার পিস করে মোট ছয় লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানান, কক্সবাজারের দক্ষিণে নামা নামে একটি জায়গায় গভীর সমুদ্রে অন্য একটি ট্রলার থেকে এই ট্রলারে ইয়াবাগুলো তুলে দেয়া হয়। ওই ট্রলারটি ইয়াবার চালান নিয়ে মিয়ানমার থেকে কুতুবদিয়ার অদূরে গভীর সাগরে আসে।
বাংলাদেশকে টার্গেট করে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় গড়ে উঠেছে ছোট বড় অসংখ্য কারখানা। এসব কারখানায় তৈরি ইয়াবার চালান ঠেলে দেয়া হচ্ছে এদেশে। শক্তিশালী মাদক পাচারকারি সিন্ডিকেটের হাত হয়ে এসব নেশাদ্রব্য চলে যাচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। দেশের প্রায় প্রতিটি এলাকায় এখন ইয়াবা মিলছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সড়ক পথে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সতর্ক নজরদারির কারণে সাগর পথকে নিরাপদ মনে করছে পাচারকারিরা। তাছাড়া সাগরও এখন অন্য সময়ের তুলনায় কিছুটা শান্ত। আর এই সুযোগে সমুদ্রপথেই ইয়াবা পাচার বেড়ে গেছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, সড়কপথের মতো সাগরপথেও নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, এলিট বাহিনী র্যাব, আধা-সামরিক বাহিনী বিজিবি, পুলিশ এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরও সড়ক এবং পাহাড়িপথের পাশাপাশি সাগরপথে ইয়াবার চালান ঠেকাতে নানা কৌশল গ্রহণ করেছে।
ইয়াবা চোরাচালানের বিরুদ্ধে জোরদার অভিযান শুরু হলেও তা এখন অনেকটা থেমে গেছে। চট্টগ্রামে র্যাবের ক্রসফায়ারে দুই ইয়াবা পাচারকারী মারা যায়। কক্সবাজারেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী মারা যায়। গ্রেফতার হয় বেশ কয়েকজন। কিন্তু অভিযান ঝিমিয়ে পড়ায় পাচারকারীরা ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।