পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রবাহমান নদীকে বলা হয়ে থাকে নগর-মহানগরের প্রাণ। সে কারণে পৃথিবীর বড় বড় শহরগুলো গড়ে উঠেছে নদীপাড়ে। অথচ নানা ধরনের বর্জ্য দূষণের কারণে মরছে প্রায় দুই কোটি মানুষের শহর ঢাকার চারপাশের নদী। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কঠিন বর্জ্য এবং পয়োবর্জ্যে ঢাকার চারপাশের নদীগুলো পড়েছে অস্তিত্ব সঙ্কটে। প্রায় ৪০০টি পয়েন্ট দিয়ে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদীর পানিতে পড়ছে কলকারখানার কঠিন বর্জ্য। এ ছাড়া ৩৬০টি পয়েন্ট দিয়ে পয়োবর্জ্য মিশছে এই তিন নদীর পানিতে। সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা ওয়াসা কঠিন বর্জ্য ও পয়োনিষ্কাশনের দায়িত্বে থাকলেও নদী দূষণের কোনো দায় তারা নিতে চায় না। নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করে এর দখল-দূষণ রোধে দেশের সর্বোচ্চ আদালত ১৭ দফা নির্দেশনা প্রদান করেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশনা ‘জীবন্ত সত্তা’ কার্যকর হচ্ছে না।
বিশিষ্ট নদী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেন, নদীকে জীবন্ত সত্তা আখ্যায়িত করে আদালতের দেয়া রায় ও নির্দেশনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে নদী দখল ও দূষণের সঙ্গে জড়িত সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আদালতের রায় বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার যদি সরকারের সঙ্গে যুদ্ধ করে, তাহলে নদী দখলমুক্ত, দূষণমুক্ত হবে কীভাবে?
তবে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর দাবি নদী দখল ও দূষণমুক্ত করতে তারা জোরালো অভিযান পরিচালনা করছেন। তিনি বলেন, পাওয়ার প্ল্যান্ট, ইকোনমিক জোন বা অন্য কোনো উন্নয়নের কথা বলে নদী দখল করা যাবে না। আমরা নদীর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করছি। এ ছাড়া নদী তীরবর্তী এলাকায় যেসব শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে তাদেরকেও আধুনিক বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ করতে হচ্ছে। যে সব কলকারখানার আধুনিক বর্জ্য শোধনাগার থাকবে না তাদের বন্ধ করে দেয়া হবে। নদীকে দূষণ করে কাউকে ব্যবসা করতে দেয়া হবে না।
পরিবেশ অধিদফতরের জরিপ অনুযায়ী নদী দূষণের শতকরা ৮৮ ভাগ কারণ বর্জ্য। ট্যানারি স্থানান্তরিত হওয়ার পর এখনো প্রতিদিন শিল্প কারখানার ৩৫০০ ঘনমিটার এবং অন্যান্য থেকে ২৭০০ ঘনমিটার দূষিত তরল বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় মেশে। তবে এবার করোনা মহামারির কারণে সবকিছু বন্ধ থাকার পর নদীর দূষণ কিছুটা কমেছিল। তবে কলকারখানা আবার চালু হওয়ার পর অবারও বর্জ্য মিশে নদীর পানি প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে। ঢাকা ওয়াসা মহানগরীতে প্রতিদিন ২৫০ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করে। আন্তর্জাতিক হিসাব অনুযায়ী সরবরাহকৃত পানির শতকরা ৭০ ভাগ পয়ঃবর্জ্য তৈরি হয়। এ হিসাবে ঢাকায় প্রতিদিন ১৭৫ কোটি লিটার পয়ঃবর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা ওয়াসার দাবি অনুযায়ী শতকরা মাত্র ২০ ভাগ অর্থাৎ ৩৫ কোটি লিটার পয়ঃবর্জ্য শোধন করা হচ্ছে। বাকি ১২০ কোটি লিটার পয়ঃবর্জ্য সরাসরি ঢাকা ও চারপাশের নদী, খাল ও জলাশয়ে গিয়ে মিশছে।
নদী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের স¤প্রতি এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুড়িগঙ্গা নদীর ২৩৭টি পয়েন্ট দিয়ে গৃহস্থালি ও শিল্প বর্জ্য এবং ২৫১টি পয়েন্ট দিয়ে পয়োবর্জ্য সরাসরি পানিতে পড়ছে। এ ছাড়া তুরাগের ৮৪টি পয়েন্ট দিয়ে কঠিন বর্জ্য এবং ৪৮টি পয়েন্ট দিয়ে পয়োবর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে। আর বালু নদীতে ৩২টি পয়েন্ট দিয়ে কঠিন বর্জ্য এবং ১০টি পয়েন্ট দিয়ে পয়োবর্জ্য পড়ছে ।
পুরান ঢাকা থেকে লোহার ব্রিজ পর্যন্ত জায়গায় বহু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়া বহু আগে থেকে ওই এলাকায় নদীতীরে গড়ে উঠেছে বাজার। এসব প্রতিষ্ঠান ও বাজারে উৎপন্ন বর্জ্যরে বড় একটা অংশ এখনো সিটি করপোরেশনের সংগ্রহের বাইরে থেকে যায়। এসব বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হয়। এ ছাড়া হাজারীবাগ থেকে বাবুবাজার এলাকার লোকজন রাতে বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়। বুড়িগঙ্গার দুই পাড়ে তৈরি পোশাক কারখানা এবং নানা ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাপড়ের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হয়। এ ছাড়া করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে জমা হচ্ছে প্রচুর মেডিক্যাল বর্জ্য। এসব বর্জ্যও সরাসরি বুড়িগঙ্গায় ফেলা হয়।
এদিকে গাবতলী ব্রিজ থেকে খোলামোড়া ঘাট হয়ে বছিলা হাউজিং পর্যন্ত এবং ঢাকা উদ্যান থেকে আমিন বাজার ব্রিজ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্যুয়ারেজ লাইন সরাসরি তুরাগ নদীর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। পালপাড়া ঘাট, বড়বাজার এবং দিয়াবাড়ী এবং সিন্নিরটেক থেকে আশুলিয়া ল্যান্ডিং স্টেশন পর্যন্ত বহু পয়োবর্জ্যরে লাইন যুক্ত করা হয়েছে তুরাগে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে থাকে সিটি করপোরেশন। এ ছাড়া পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ওয়াসা। সিটি করপোরেশনের অব্যবস্থাপনা এবং জনগণের সচেতনতার অভাবে কঠিন বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে। নদীতে ফেলা বেশির ভাগ স্যুয়ারেজ লাইন ঢাকা ওয়াসার। তবে নদীতীরে গড়ে ওঠা বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের স্যুয়ারেজ লাইনও নদীর সঙ্গে যুক্ত আছে। স্যুয়ারেজ লাইন নিয়ে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনের জন্য গত বছরের ৩ ডিসেম্বর ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের ওপর উষ্মা প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। তবুও সংস্থাটি স্যুয়ারেজ লাইনের দায় নিতে চায় না।
বাপা’র নির্বাহী সহসভাপতি ডা. মো. আব্দুল মতিন ইনকিলাবকে বলেন, নদীকে দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে না পারলে নদীর মতো এই রাজধানী ঢাকাও এক সময় মৃত নগরীতে পরিণত হবে। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য দেদারসে নদীতে ফেলা হচ্ছে, কিন্তু দেখার কেউ নেই। ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশন কেউ এর দায়িত্ব নিতে চায় না। দেশের সর্বোচ্চ আদালত নদী কমিশনকে নদীর মালিক করে এর রক্ষার এক দায়িত্ব দিয়েছে। সেই নদী কমিশনও কতটুকু দায়িত্ব পালন করছে সেটাও এখন অনেকের মনে প্রশ্ন। তবে ঢাকাকে বাঁচাতে হলে, নিজেদের বাঁচাতে হলে নদীকে অবশ্যই বাঁচাতে হবে। নদী দখল ও দূষণের সাথে দেশের কিছু রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। যত আন্দোলন চলবে ততই দখলদাররা দুর্বল হয়ে পড়বে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।