Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুলিশ আমার বাপটাকে মারল, আমাদের এখন কী হবে : প্রশ্ন ছেলের

চা-দোকানি বাবুলের মৃত্যু চার পুলিশ প্রত্যাহার

প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : পুলিশের নিষ্ঠুরতার শিকার চা-বিক্রেতা বাবুল মাতুব্বরের (৪৫) মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীর শাহআলী থানার চার পুলিশ সদস্যকে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন উপ-পরিদর্শক (এসআই), একজন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) এবং একজন কনস্টেবল। এ ঘটনা তদন্তে পুলিশের দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাবুলের মৃত্যুর পর হাসপাতালে স্বজনেরা আহাজারি করছেন। এ সময় বাবুল মাতুব্বরের ছেলে রাজু বলেন, পুলিশ আমার বাপটাকে মারল। আমাদের এখন কী হবে?
এদিকে বাবুলকে নির্যাতনের অভিযোগে সাতজনকে আসামি করে শাহআলী থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। সেই মামলায় একজনকে এরই মধ্যে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তবে মামলার আসামিদের মধ্যে কোনো পুলিশ সদস্য নেই।
বাবুলের পরিবারের অভিযোগ, বুধবার রাত ৯টায় মিরপুর ১ নম্বর গুদারাঘাটে চাঁদা না পেয়ে পুলিশ চা-বিক্রেতা বাবুলের কেরোসিনের চুলায় বাড়ি মারে। এতে কেরোসিন ছিটকে বাবুলের গায়ে লাগে এবং আগুন ধরে যায়। তারা বলছেন, চাঁদা না দেয়ায় পুলিশ বাবুলের ওপর চড়াও হয়েছিল। আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয়রা বাবুলকে বুধবার রাত ১১টার সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে যান। বার্ন ইউনিটের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, বাবুলের শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।
অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে থানা থেকে বলা হয়েছে, পুলিশ নয়, সোর্স দেখে পালাতে গিয়ে বাবুল দগ্ধ হন। বাবুল নিজেও মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন বলে পুলিশের অভিযোগ।
তবে চা-দোকানি বাবুল মাতুব্বরের মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীর শাহআলী থানার চার পুলিশ সদস্যকে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন উপপরিদর্শক (এসআই), একজন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) এবং একজন কনস্টেবল। ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার জানান, এসআই মমিনুর রহমান খান, নিয়াজউদ্দিন মোল্লা, এএসআই দেবেন্দ্রনাথ ও কনস্টেবল জসিম উদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনা তদন্তে পুলিশের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মারুফ হোসেন সরদার। তিনি বলেন, মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মাসুদ আহমেদ (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এবং সহকারী কমিশনার মাহবুব হোসেনকে নিয়ে একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া মহানগর পুলিশের সদর দপ্তর থেকে উপ-কমিশনার (ডিসিপ্লিন) টুটুল চক্রবর্তীকে ঘটনাটি আলাদাভাবে তদন্ত করে দেখতে বলা হয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার প্রসঙ্গে মারুফ হোসেন বলেন, ঘটনার সময় তারা এলাকায় দায়িত্বরত ছিলেন। প্রত্যাহার করে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে তাদের কোনো গাফলতি আছে কিনা।
জানা গেছে, দগ্ধ বাবুল মাতুব্বরকে নিয়ে যখন স্বজনরা হাসপাতালে উদ্বিগ্ন সময় কাটাচ্ছিলেন, সে সময় মামলা করা নিয়ে ব্যস্ত ছিল পুলিশ। ঘটনা ঘটার চার ঘণ্টার মধ্যে বুধবার মধ্যরাতে অনেকটা তড়িঘড়ি করেই একটি মামলা নেয় থানা, যেখানে পুলিশের কোনো সদস্যকে আসামি করা হয়নি। বুধবার রাত দেড়টার দিকে দগ্ধ বাবুল মাতুব্বরের মেয়ে রোকসানা আকতারের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে স্থানীয় কয়েকজন ‘মাদক ব্যবসায়ীকে’।
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন পারুল, দেলোয়ার, রবিন, শংকর, দুলাল হাওলাদার এবং পারভীন। তাদের মধ্যে পুলিশ পারুলকে গ্রেপ্তার করেছে।
বাবুলের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ঘটনার সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতা আড়াল করতেই পুলিশ বাবুলের পরিবারকে দিয়ে মামলা করিয়েছে।  
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শাহআলী থানার ওসি একেএম শাহীন ম-ল বলেছেন, মামলা যথানিয়মেই হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাবুলের পরিবারের একজন সাংবাদিকদের বলেন, চিকিৎসা নিয়ে যখন পরিবারের সদস্যরা ব্যস্ত ছিল, তখন পুলিশ ব্যস্ত হয়ে ওঠে মামলা করা নিয়ে। রাত ৯টায় ঘটনার পর প্রায় ৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ মামলটি নথিভুক্ত করে বলে জানান তিনি, যেখানে অনেক সময় হত্যার ঘটনায়ও মামলা নথিভুক্ত করতে পুলিশকে অনেক দেরি করতে দেখা যায়।
শাহআলী থানার এসআই মোরশেদ আলম জানান, রাত দেড়টার দিকে মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়।
বাবুলের মেয়ে লাবণী আক্তার বলেন, ঘটনার পর আমরা থানায় গিয়েছিলাম পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে, কিন্তু মামলা নেয়নি। পুলিশের নাম বাদ দিয়ে তড়িঘড়ি করে মামলা রেকর্ড করে।
ঘটনার পর পুলিশ অগ্নিদগ্ধ বাবুলকে হাসপাতালের বদলে থানায় নিয়েছিল বলে জানান তার এই মেয়ে।
তিনি আরো বলেন, পুলিশ আমার বাবাকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যাপারে কোনো সহযোগিতা করেনি। আমরাই পরে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তারা পুলিশের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করবেন বলে জানান লাবণী।
তবে ওসি শাহীন সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যথানিয়মেই মামলা হয়েছে। কাউকে কোনো চাপ দিয়ে মামলা হয়নি। আর মামলা না করলে আসামি ধরব কেমন করে? তদন্তে পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
শুরু থেকে পুলিশের দাবি ছিল, পুলিশ নয়, সোর্স দেখে পালাতে গিয়ে বাবুল দগ্ধ হন। বাবুল নিজেও মাদক বিক্রেতা ছিলেন বলে পুলিশের বক্তব্য। মামলায় যাদের নাম এসেছে, তারাও সবাই মাদক বিক্রিতে জড়িত বলে দাবি করেছেন থানার এসআই মোরশেদ।
তিনি বলেন, বাবুলের বিরুদ্ধেও মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে একটা অভ্যন্তরীণ বিরোধ ছিল দীর্ঘদিন ধরে। এই বিরোধকে কেন্দ্র করেই পারভীনের ইন্ধনে দেলোয়ার এবং তার সহযোগীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত রোববার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগ ওঠে আদাবর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রতন কুমারের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে করা মামলার বিচারবিভাগীয় তদন্তেরও আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া গত জানুয়ারিতে দুই এসআইয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বী এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিদর্শক বিকাশ চন্দ্র দাসকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুলিশ আমার বাপটাকে মারল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ