Inqilab Logo

বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পানি বৃদ্ধিতে চরম দুর্ভোগ

ভারতে অতিবৃষ্টিতে ঢল অব্যাহত পাঁচ নদ-নদী বিপদসীমার উপরে গঙ্গা-পদ্মা নদীসহ ৬০ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি : একযোগে অনেক বাঁধ-ব্যারেজ খুলে দিয়েছে ভারত

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

উত্তর-পূর্ব ভারতে অতি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। তিব্বতসহ চীন, নেপাল ও ভারতের বিহার রাজ্যেও হচ্ছে অতিবৃষ্টি। উজানে ভারত নিজেদের বন্যামুক্ত রাখতে অতীতের ‘প্র্যাকটিস’ মতোই পদ্মার উজানে গঙ্গায় ফারাক্কা, তিস্তায় গজলডোবা বাঁধসহ অনেকগুলো বাঁধ-ব্যারেজ একযোগে খুলে পানি ছেড়ে দিয়েছে। এরফলে বাংলাদেশের ভাটির দিকেই হু হু করে নামছে উজানের ঢল।

দেশের উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিভিন্ন এলাকা পঞ্চম ও চতুর্থ দফায় বন্যা কবলিত হয়েছে। আশি^নের এই অকাল বান-বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে আরও নতুন নতুন এলাকা। গতকাল শনিবার উজানের ঢলে প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। যমুনা, ধরলা, গুড়, আত্রাই ও সারিগাঁওসহ ৫টি নদ-নদী বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে ৬০টি পয়েন্টে। গঙ্গা-পদ্মায় আবারও বাড়ছে পানি।
দেশের উক্ত তিনটি অঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলগুলো এবার দফায় দফায় বন্যা কবলিত হয়েছে। এতে করে বানভাসি লাখো মানুষের দুর্ভোগ অবর্ণনীয় ও চরম আকার ধারণ করেছে। সেই সঙ্গে নতুন করে নদীভাঙন হচ্ছে সর্বত্র তীব্রতর। ভিটেমাটি ছাড়ছে অনেকেই। নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে হাটবাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা, সড়ক রাস্তাঘাট, ফসলি জমি।

অগনিত বন্যার্ত মানুষ ঠাঁই নিচ্ছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ উঁচু এলাকায়। করোনা মহামারীকালে বন্যার্তরা খাদ্য, বসতঘর, চিকিৎসা সঙ্কটে দুঃখ-দুর্দশায় দিন গুজরান করছে। ঘর-দোর বানের পানিতে ডুবে থাকায় চুলা জ্বালানোর উপায়টুকু অনেকেরই নেই। বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট প্রকট। ফল-ফসলি জমি একের পর এক তলিয়ে যাচ্ছে। অথচ এ মুহূর্তে মানবিক ত্রাণ সাহায্য তারা পাচ্ছে না।

পঞ্জিকার হিসাবে বর্ষা ঋতুর শেষ হওয়ার অনেক পরে এসেও মৌসুমী সক্রিয় রয়েছে। এর প্রভাবে তিব্বতসহ চীন, নেপাল, ভারতের বিহার, উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম, অরুণাচল, সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন হিমালয় পাদদেশীয় অঞ্চলসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। অতিবৃষ্টিতে প্রধান নদ-নদীসমূহের উজানে অবিরাম পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর উজানের পানি প্রবল বেগে নামছে ভাটিতে।

পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভ‚ঁইয়া গতকাল জানান, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং পদ্মা নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল রয়েছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আগামী ২৪ ঘণ্টায় তা অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীসমূহের পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তা অব্যাহত থাকতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, দেশের নদ-নদীর ১০১টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৬০টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৩৬টি পয়েন্টে হ্রাস পায়। ৫টি স্থানে অপরিবর্তিত থাকে। ৫টি নদ-নদী ৫টি স্থানে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার ৬৬টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৩২টিতে হ্রাস পায়। বৃহস্পতিবার নদ-নদীসমূহের ৫৫টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৪৪টি পয়েন্টে হ্রাস পায়।

গতকাল বিকেল পর্যন্ত যমুনা নদের পানি প্রায় অপরিবর্তিত থাকে। বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। কুড়িগ্রাম জেলায় ধরলা নদীর পানি কিছুটা কমে বিপদসীমার ২৮ সে.মি. ঊর্ধ্বে, সিংড়ায় গুড় নদীর পানি বেড়ে গিয়ে ৬২ সে.মি উপরে, নওগাঁয় আত্রাই পয়েন্টে আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১০ সে.মি. উপরে, সিলেট জেলার সারিঘাটে সারিগাঁও নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিদসীমার ৫ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি গতকাল বিপদসীমার মাত্র ২ সে.মি নিচে এবং লরেলগড়ে যাদুকাটা নদীর পানি ৩২ সে.মি. নিচে নেমেছে।

অন্যদিকে বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থানে থাকা নদ-নদীসমূহের মধ্যে গতকাল উত্তরাঞ্চলে তিস্তা নদীর পানি ফের বেড়ে গিয়ে ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১০ সে.মি. নিচে রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া ও চিলমারী পয়েন্টে কিছুটা হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার যথাক্রমে ৮৫ ও ৩৬ সে.মি. নিচ দিয়ে বইছে। যমুনা নদের পানি অপরিবর্তিত থাকায় সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে বিপদসীমার মাত্র ৩ সে.মি. এবং সিরাজগঞ্জে ১১ সে.মি. নিচে রয়েছে।

মধ্যাঞ্চলে ধলেশ^রী নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে এলাসিন ঘাটে বিপদসীমার মাত্র ৩ সে.মি. নিচে রয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আপার মেঘনা অববাহিকায় সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কানাইঘাটে বিপদসীমার ৩০ সে.মি. নিচে এবং সিলেটে ৭৯ সেমি নিচে, কলমাকান্দায় সোমেশ^রী নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার মাত্র ৮ সে.মি. নিচে রয়েছে।

নেপাল ও বিহারে অতিবৃষ্টি এবং সেই সাথে ফারাক্কা বাঁধের গেট খুলে পানি ছেড়ে দেয়ার ফলে গঙ্গা-পদ্মা নদীতে পানি আরও কিছুটা বেড়ে গেছে। গোয়ালন্দে পদ্মা বিপদসীমার ১৫ সে.মি. নিচে অবস্থান করছে।
উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল, ত্রিপুরা, সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ ও হিমালয় পাদদেশীয় এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী ও অতি ভারীবৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায়ও সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় চেরাপুঞ্জিতে ২০২ মিলিমিটার। এছাড়া পাসিঘাটে ৯৯, জলপাইগুড়িতে ৮৪, ধুবরিতে ৫৯, আগরতলায় ৫৪ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে।
বাংলাদেশের উপর মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকার ফলে অনেক এলাকায় হচ্ছে মাঝারি থেকে ভারী ও অতি ভারী বর্ষণ। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় জাফলংয়ে ১৩০, ঠাকুরগাঁওয়ে ১১০, পঞ্চগড়ে ১০৯, ডালিয়ায় ৯৬, লালাখালে ৮০, দিনাজপুরে ৭১, ভৈরববাজারে ৭০, নরসিংদীতে ৬৩ মিলিমিটারসহ বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পানি বৃদ্ধি

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ