Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুলিশ নিয়ে চিন্তিত সকলেই

প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫০ পিএম, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

উমর ফারুক আলহাদী: বেপরোয়া হয়ে ওঠছে পুলিশের এক শ্রেণীর সদস্য। রাষ্ট্রের এ বাহিনীর কিছু সদস্যদের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ হচ্ছে পুলিশের ভাবমর্যাদা। তাদের বেপরোয়া কর্মকা-ে সর্বত্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। এখন পুলিশ নিয়ে সকল মহলই চিন্তিত। সাধারণ মানুষ পুশিলের সেবা নেয়ার পরিবর্তে তাদের থেকে দূরে থাকচ্ছে। এ নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠাও বাড়ছে। বিশিষ্টজনেরা বলছেন, পুলিশের বাড়াবাড়ি সীমা ছাড়িয়ে গেছে। অকারণে পুলিশি হয়রানি, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেয়া, মামলা ও নির্যাতনের ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ এখন নিত্যদিনের ঘটনা।
শুধু তাই নয়, খুন, গুম, ধর্ষণ, অপহরণ, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ঘুষ, দুর্নীতি, ধরে নিয়ে গুলি করে পঙ্গু করাসহ গুরুত্বর অপরাধের অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। হেন কোন অপরাধ নেই যার সাথে পুলিশ জড়িত নয়। তাদের অপরাধের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাদের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের ব্যাপক অভিযোগ থাকার পরেও এসব হত্যাকা-ের অবিযোগে বিচার হচ্ছে না। ফলে তাদের অপরাধপ্রবণতা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। পুলিশের অপরাধের অভিযোগে তদন্ত কমিটি হয়, সাময়িক বরখাস্ত হয় কিন্তু দৃষ্টান্ত শুরু শাস্তি হয় না। এ অভিযোগ দেশের বিশিষ্ট আইনজীবীসহ বিভিন্ন সচেতন মানুষের। তারা বলছেন, অবস্থা দেখে মনে হয়, পুলিশ যেন আইনের ঊর্ধ্বে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে নিকট ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করার আশঙ্কা রয়েছে। চাঁদা না দেয়ার কারণে খোদ রাজধানীর মিরপুরে পুলিশের আগুনে পুড়ে এক চায়ের দোকানদার নিহত হওয়ার ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় চলছে। তবে গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, পুলিশের ইমেজ বেড়েছে। তিনি গতকাল তেজগাঁও একটি অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। তবে বাস্তবতা হলো পুরানো অভিযোগ ছাড়াই নতুন বছরের শুরুতেই পুলিশের কর্মকা- নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
পুলিশের আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, অপরাধ করলে কোন ছাড় নেই। কোন ব্যক্তির দায় পুরো বাহিনী নিবে না। তিনি বলেন, এত বড় বাহিনীতে দুই চারজন খারাপ লোক থাকতেই পারে। কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত কমিটি করা হচ্ছে। আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
পুলিশের অপরাধ সংক্রান্ত ব্যাপারে জানতে চাইলে সাবেক আইন মন্ত্রী ও বিশিষ্ট আইনজীবী শফিক আহমদ ইনকিলাবকে বলেন, পুলিশের বাড়াবাড়ি কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। তবে তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ওঠেছে সেগুলোর তদন্ত হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি বলেছেন, পুলিশের কেউ অপরাধ করলে তার দায় পুরো বাহিনী নেবে না। এখন এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে, দেখতে হবে অপরাধী পুলিশের বিরুদ্ধে কি ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। সাবেক ওই আইন মন্ত্রী বলেন, শহরে এখন লোক সংখ্য বাড়ছে, সেই অনুপাতে পুলিশ বাড়েনি। তবে যেসব পুলিশ অপরাধ করছে তাদের শাস্তিও হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নানা কারণে এখন একটা অস্থির সময় পার করছি আমরা। সমাজে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এজন্যও পুলিশের এক শ্রেণীর সুবিধাবাদি সদস্য সুযোগ নিচ্ছে। তবে তাদের বিচার হবে বলে আমি আশাবাদী।    
বিশিষ্টা আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, ফৌজদারী অপরাধে পুলিশের বিরুদ্ধে শুধু প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়। বিচারিক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় না। সাময়িক চাকরিচ্যুতি, সাময়িক বরখাস্ত, বদলি এ ধরনের ব্যবস্থার মধ্যে সীমাবদ্ধ। শাহদীন মালিক বলেন, গত প্রায় ১০/১২ বছর ধরে পুলিশ জবাবদিহিতার ঊর্ধেŸ রয়েছে। তারা গুরুতর অপরাধ করলেও বিচার হয় না। উদাহরণ হিসাবে তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের হাতে প্রায় ১০ হাজার বিচারবহির্ভূত হত্যকা- ঘটেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত একটি হত্যাকা-েরও বিচার হয়নি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের বিচার না হওয়াতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। তাদের কেউ কেউ মনে করেন, তারা আইনের ঊর্ধ্বে। তিনি বলেন, এখন গুম, খুন যেন তাদের কাছে স্বাভাবিক ঘটনা। তিনি বলেন, পুলিশ গত কয়েক বছর ধরে আইনের ঊর্ধ্বে থাকায় এখন পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারন করছে। সাধারণ মানুষের কাছে আতঙ্কের আর এক নাম পুলিশ। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসা সহজ নয়। তাদের প্রতি জণগণের আস্তা কমে গেছে।
জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্বে যে পুলিশ বাহিনী নিয়োজিত তাদের কিছু সদস্যের আচার-আচারণ শুধু পুলিশের ভাবমর্যাদাই নষ্ট করেনিই পারত পক্ষে তাদের ধারে কাছেও ভিড়তে চায় না সাধারণ মানুষ। এ বক্তব্য সমাজের সচেতন মানুষের। একাধিক আইনজীবী গতকাল বলেছেন, পুলিশের যেসব সদস্য অপরাধে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না। শাস্তি না হওয়ার কারণে পুলিশ আরো বেপরোয়া হচ্ছে। গতকাল চাঁদার টাকা না দেয়ায় একজন দরিদ্র চা বিক্রেতাকে আগুনে পুড়িয়ে মারার অভিযোগে আবার নতুন করে পুলিশের অপরাধমূলক কর্মকা- নিয়ে সারা দেশে আলোচনার ঝড় ওঠেছে। গাজীপুরে ব্যবসায়ীর ক্যাশবক্স থেকে ৩ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা, উত্তরা, গাজীপুর, টঙ্গী, কেরানীগঞ্জ, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিরীহ মানুষকে ধরে নিয়ে নির্যাতন ও অর্থ আদায়ের অভিযোগে তদন্ত হলেও এখন পর্যন্ত তেমন শাস্তি হয়নি।    
মিরপুরে চাঁদার টাকা না দেয়ায় পুলিশের আগুনে দগ্ধ  চা দোকানি বাবুল মাতুব্বরের (৪৫) মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর শাহআলী থানাধীন গুদারাঘাটে চাঁদার টাকা না পেয়ে চা দোকানির গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয় পুলিশ, এমন অভিযোগ করেছেন দগ্ধ ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদস্যরা। শাহআলী থানা পুলিশের দাবি, পুলিশ নয় পুলিশের সোর্সের সঙ্গে ধস্তাাধস্তির একপর্যায়ে স্টোভের চুলা পড়ে গিয়ে আগুন ধরে যায়। এতে বাবুল মাতুব্বর দগ্ধ হন।
এদিকে পুলিশের হামলায় দগ্ধ চা দোকানি বাবুল মাতুব্বরের (৪৫) মৃত্যুতে মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, পুলিশের বাড়াবাড়ি সীমা ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত বাবুল মাতুব্বরকে দেখতে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক হাফিজুর রহমান কার্জন পুলিশের বিভিন্ন অপরাধ কর্মকা-ের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, চাঁদাবাজি, হত্যা, ধর্ষণ হেন কোন কাজ নেই যার সাথে পুলিশ জড়িত নয়। এ বাহিনীকে একটা সুশৃঙ্খল বাহিনী বলে মনে হয়, নাকি পোশাকদারী একটি ডাকাত দল! তিনি বলেন, আমরা পুলিশি রাষ্ট্র চাই না, জনগণের রাষ্ট্র চাই।  
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত এক বছরে মানবপাচার, ধর্ষণ, মাদক চোরাচালান ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে পুলিশের কিছু সদস্যকে গ্রেফতারের পর অপরাধী কর্মকা-ে পুলিশের সংশ্লিষ্টতা বৃদ্ধির বিষয়টি আলোচনায় আসে। গত ১৬ জানুয়ারি পদোন্নতির নাম করে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে বরিশাল মহানগর পুলিশের ১০ সদস্যকে শাস্তি দেয়া হয়। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম শহরের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১ দশমিক ৬ কেজি ওজনের স্বর্ণ ছিনতায়ের অভিযোগে দুই পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত দুই পুলিশ সদস্য হলেন সহকারি উপ-পরিদর্শক মিজানুর রহমান ও কনস্টেবল খানে আলম। গ্রেফতারের পর তাদের ক্লোজ করা হয়।
গত বছরের ৬ ডিসেম্বর সিলেট শহরের জিন্দাবাজারে প্রকাশ্য দিবালোকে এক মহিলার কাছ থেকে অর্থ ছিনতাইয়ের সময় এক পুলিশ কনস্টেবলকে হাতেনাতে আটক করা হয়। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য শরিফ রানাকে পরে সিলেটের জেলা পরিবহন বিভাগে বদলি করা হয়।
গত বছরের ৬ ডিসেম্বর বগুড়ার গাবতলীর পুরান বাজার এলাকা থেকে ৯৭৫ পিস ইয়াবাসহ দুই পুলিশ সদস্যকে আটক করে র‌্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। আটককৃত দুই পুলিশ সদস্য হলেন এনামুল হক ও মেহেদি হাসান। তারা দু’জনই চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলওয়ে পুলিশের কনস্টেবল।
গত বছরের ১৪ মার্চ সিলেট শহরের এক পুলিশ কনস্টেবলের বাড়ি থেকে মুক্তিপণের জন্য অপহরণের তিন দিন পর ৯ বছর বয়সী এক স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়।
একই বছরের ২১ জুন ফেনী সদরে ২৭ কোটি টাকা মূল্যের ৬ লাখ ৮০ হাজার ইয়াবাসহ পুলিশের বিশেষ শাখার সহকারি উপ-পরিদর্শক মাহফুজুর রহমানকে আটক করে র‌্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে মাহফুজ এই ঘটনায় আরো কিছু পুলিশ সদস্য জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এই স্বীকারোক্তির উপর ভিত্তি করে ইয়াবা চোরাচালান ও মানবপাচারের অভিযোগে কক্সবাজারের গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ডিআইজি অফিসে প্রত্যাহার ও আরো ১০ সদস্যকে বিভিন্ন জেলায় বদলি করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, উচ্চ পর্যায়ের তদারকিতে অমনোযোগিতা ও চেইন অব কমান্ড প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতার কারণেই পুলিশ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ছে।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক হাদিস উদ্দিন বলেন, দোষী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নিম্নমানের শাস্তি হওয়ায় তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা চলমান রয়েছে। তাই পুলিশ আইন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।
শাহআলী থানার ওসি একেএম শাহীন মন্ডল বলেন, রাতে থানার সোর্স দেলোয়ার ওই দোকানে যায়। তার সঙ্গে দেলোয়ারের ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে স্টোভের চুলা পড়ে গিয়ে আগুন ধরে যায়। এ সময় দেলোয়ার পালিয়ে যায়। আগুনের খবর পেয়ে পরে পুলিশ সেখানে যায়। এর আগে পুলিশ সেখানে চাঁদার টাকা নিতে যায়নি বলে দাবি করেন ওসি।
এদিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্যাশ বাক্স থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তিনি কালিয়কৈর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই)। তার মো. হাসান আলী। এ ঘটনায় বুধবার দুপুর ১২টার দিকে এক ব্যবসায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।ওই ব্যবসায়ীর নাম সফিকুল ইসলাম। তার বাড়ি উপজেলার সাদুল্লাহপুর গ্রামে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সফিকুল তার চার বন্ধুকে নিয়ে উপজেলার ডুবাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ব্যবসায়িক কার্যালয় স্থাপন করে মাটি সরবরাহের ব্যবসা করেন। গত সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ওই কার্যালয়ে তিনি ও তার ব্যবসায়িক অংশীদারেরা বসে হিসাব-নিকাশ করে সাড়ে তিন লাখ টাকা ক্যাশ বাক্সে রাখেন। পরে সময় কাটানোর জন্য তারা তাস খেলছিলেন। এক পর্যায়ে তিনজন কনস্টেবল নিয়ে এসআই হাসান ওই কার্যালয়ে তল্লাশি চালান। কিছু না পেয়ে ক্যাশ বাক্স ভেঙে সাড়ে তিন লাখ টাকা ছিনিয়ে নেন। আর তাদের পাঁচজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। পরদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের ১০০ টাকা করে জরিমানা করে ছেড়ে দেন। কিন্তু ক্যাশ বক্স থেকে ছিনিয়ে নেয়া টাকা তারা ফেরত পাননি। ওই টাকা চাইতে গেলে তাকে বিভিন্ন মামলায় আসামি করার হুমকি দেন এসআই হাসান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টাকা ছিনতাই ও মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই হাসান বলেন, ওই পাঁচজন জুয়া খেলছিলেন। এ জন্য তাদের আটক করা হয়। পরদিন মঙ্গলবার কালিয়াকৈর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী হাকিম সাইফুল কবির ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাদের প্রত্যেককে ১০০ টাকা করে জরিমানা করে ছেড়ে দেন।
এদিকে ব্যবসায়ী সফিকুল বলেন, পুলিশের হয়রানির ভয়ে আছি। আমাদের বড় ভাইয়েরা কইতাছেন আগুন নিয়া খেলার দরকার নেই। তাই আমি কালকে ইউএনও সাহেবের কাছ থেকে অভিযোগ উঠিয়ে ফালামু।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মুঠোফোনে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউএনও মো. ছানোয়ার হোসেন বলেন, আমি অফিসের কাজে একটু বাইরে আছি। তবে ব্যবসায়ীর অভিযোগের বিষয়টি শুনেছি। অভিযোগটি পড়ে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হবে।
অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি বলেছে, যেসব পুলিশ সদস্য অপরাধে জাড়িয়ে পড়ছে, তাদের আইন অনুযায়ী কঠোর শান্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব বাড়াতে কাউন্সিলিং করারও সুপারিশ করা হয়েছে। পুলিশের ব্যক্তিগত অপরাধের দায় নেবে না সংসদীয় কমিটি।
গত বুধবার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব সুপারিশ করা হয়। সংসদীয় কমিটির সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, পুলিশ বাহিনী অনেক ভালো কাজ করছে। তবে দুই-চারজন সদস্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের শান্তি নিশ্চিত ও দৃশ্যমান করার সুপারিশ করা হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর ভাবমর্যাদা (ইমেজ) নষ্ট করার একটা প্রচেষ্টা চলছে। এজন্য পুলিশ বাহিনীকে আরো বেশি সতর্ক হওয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মোহাম্মাদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ শিকদার জেনেভা ক্যাম্পের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীকে আটকে মাদকসেবী বানানোর ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে।
সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা এবং অতিসম্প্রতি একছাত্রী হয়রানির বিষয়টি সামনে এনে কমিটিতে আলোচনা হয়। এ ধরনের ঘটনা পুলিশ বাহিনীর ইমেজকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এই দুই-একজনের দায় পুরো পুলিশ বাহিনী নিতে পারে না বলে কমিটিকে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক হিসাব অনুযায়ী, রাজধানীসহ সারা দেশে প্রতিমাসে গড়ে ১২ শতাধিক ছোট-বড় অপরাধ কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ছেন পুলিশ সদস্যরা। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, গত তিন বছরে অর্ধলক্ষাধিক অভিযোগ জমা পড়ছে পুলিশ সদর দপ্তরের সিকিউরিটি সেল এবং ডিসিপ্লিন বিভাগে। গত বছরেই প্রায় ১৫ হাজার অভিযোগ জমা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১২ সাল থেকে ২০১৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত দুর্নীতি ও শৃঙ্খলাভঙ্গসহ নানা অপরাধে পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার ৩৪ হাজার ১২৯ জন পুলিশ সদস্য শাস্তি পেয়েছেন। এর মধ্যে বড় ধরনের অপরাধে গুরুদ- হয়েছে ২ হাজার ৪শ’ পুলিশ সদস্যের। লঘুদ- পেয়েছে ৩১ হাজার ৭২৯ পুলিশ সদস্য। কিন্তু এত কিছুর পরেও পুলিশের অপরাধ বেড়েই চলেছে। তাদের ভয়ে সাধারণ মানুষ নিজেদের প্রয়োজনেও এখন থানা পুলিশের কাছে যাচ্ছেন না।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৮৬১ সালে পুলিশ অ্যাক্টের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ও সুসংগঠিত পুলিশ বাহিনীর প্রতিষ্ঠার পর থেকে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষায় নিজস্ব বিধি বিধানের আলোকে অভিযোগ উত্থাপিত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে পুলিশ অ্যাক্ট, শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা, পুলিশ রেগুলেশন বেঙ্গল, পুলিশ অফিসার্স (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ, ডিএমপি অধ্যাদেশ ও বিধিমালা, সশস্ত্র ব্যাটালিয়ন অধ্যাদেশ ও বিধিমালা, র‌্যাব বিধিমালা, চট্টগ্রাম-খুলনা-রাজশাহী ও মহানগর অধ্যাদেশ ব্যবহার করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুলিশ নিয়ে চিন্তিত সকলেই

৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ