Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এবার ভাঙনে দিশেহারা

প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৯ পিএম, ১০ আগস্ট, ২০১৬

ইনকিলাব রিপোর্ট : প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ভুগিয়ে বানের পানি নামতে শুরু করলেও এবার তীব্র ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষজন। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, স্কুল-মসজিদ ইত্যাদি কিছুই বাদ পড়ছে না রাক্ষুসে নদীর ভাঙন থেকে। গত ক’দিন ধরেই তিস্তা, যমুনা, ধলেশ্বরী, ধরলা, সুগন্ধা, বিষখালী, ঘাঘট, পদ্মা, ইছামতি, কালিগঙ্গা, ছোট যমুনা, যমুনেশ্বরী, সুমেস্বরী, সুরমা, কুশিয়ারা, দুধকুমার, মুহুরি, মাতামুহুরি, ফেনীসহ দেশের নদ-নদীগুলোর পানি কমছে। পানির উচ্চতা নেমে এসেছে বিপদ সীমার নিচে। এখন এলাকা জুড়ে একদিকে ভাঙন আতঙ্ক, আরেকদিকে ত্রাণের জন্য হাহাকার।
দুর্গত এলাকায় খাদ্যের অভাব, কাজের অভাব, বিশুদ্ধ পানি ও জ্বালানি সঙ্কট, চোরের উপদ্রব, ভাঙ্গাবাঁধ, রাস্তা-ঘাট, বাড়ী-ঘরে এখনও পানি রয়েছে। পানি কমতে থাকায় অনেকেই ঘরে ফেরা শুরু করলেও দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হচ্ছে- আবাদযোগ্য জমি, খেতের ফসল, বসত বাড়ী, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সরকারী ও বেসরকারী অফিস, ব্রিজ-কালভার্ট। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোতে ডায়রিয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ, বজ্রপাত, সাপের কামড়, চর্মরোগ, চোখের প্রদাহ, আঘাত এবং জ্বরে আক্রান্ত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো রোগীদের চাপ সামাল দিতে পারছে না। দরিদ্র মানুষ খাবর স্যালাইন ওষুধ সরবরাহ পাচ্ছে না হাসপাতালগুলো থেকে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদ-নদী সংলগ্ন গাইবান্ধা, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া এবং ধরলা নদী সংলগ্ন কুড়িগ্রামে নদী ভাঙন তীব্র হয়েছে। যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর ভাঙনে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। পদ্মা নদীর ভাঙনে রাজবাড়ি, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও শরিয়তপুর জেলাসমূহে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারি, লালমনিরহাট ও রংপুরের নদী ভাঙন তীব্র হয়েছে।
পদ্মার ভাঙনে ঘাট ও সংলগ্ন রাস্তা নদীতে বিলীন হওয়ায় সেখানকার চারটি ঘাটের তিনটি পুরোপুরি বন্ধ আছে গত চারদিনন ধরে। তীব্র স্রোতে ঘাট ভেঙে যাওয়ার কারণে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সংযোগস্থল পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। গত কয়েক দিনেও স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি সার্ভিস। দৌলতদিয়া ঘাটের ৩ নম্বর ঘাট বিশেষ মেরামতের মধ্য দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে সীমিত আকারে ছোট ফেরি দিয়ে অত্যাবশ্যকীয় অ্যাম্বুলেন্সসহ ব্যক্তিগত কিছু গাড়ি পারাপার করা হচ্ছে।
পদ্মার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ফরিদপুরে অন্যতম প্রধান সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। তাড়াইল সড়কের একশ’ মিটার অংশ, ৮১ একর ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও হাট-বাজার, দোকানপাট আড়িয়াল খাঁ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পদ্মা ও মধুমতির বিস্তীর্ণ এলাকাও ভাঙনের মুখে পড়েছে। মুন্সীগঞ্জের চরাঞ্চলে বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও তীব্র স্রোতের কারণে জেলার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে নদী ভাঙনের পরিমাণ বেড়েছে।
বন্যার পানি ও প্রবল জোয়ারের কারণে দক্ষিণের জেলাগুলোতেও শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। কীর্তনখোলা, আড়িয়াল খাঁ, মেঘনা, কালাবদর, কারখানা, সন্ধ্যা, সুগন্ধাসহ দক্ষিণের বেশকিছু নদীর তীরবর্তী গ্রামের মানুষজন ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছেন বলে জানা গেছে। ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দারা প্রতিনিয়ত সরিয়ে নিচ্ছেন একের পর এক বসতঘর, কেটে নিয়ে যাচ্ছেন গাছপালা।
এভাবে নদী ভাঙনের কবলে পরে বিভিন্ন জেলার সড়ক অবকাঠামো নষ্ট হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন হুমকির মুখে পড়েছে। জানা গেছে, নতুন করে এসব সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার সংস্কার না করা হলে চলাচল ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। আবার বন্যায় নদী ভাঙনের পাশাপাশি অনেকস্থানেই ধানের বীজতলাও নষ্ট হয়ে গেছে। এবারের বানের পানিতে দেশের বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার একর খেতের ফসল, সবজি তলা পানিতে ডুবে যাওয়ায় কৃষি নির্ভর অর্থনীতিতে-এর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। কৃষকের পড়েছে মাথায় হাত। আর সবজি সঙ্কট দেখা দেয়ায় বাজারে সকল কাঁচা তরি-তরকারির দাম বেড়ে গেছে।
নদী ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ বাঁধ সংস্কার, রাস্তা মেরামত, ব্রিজ-কালভার্ট মেরামত ও পুনঃনির্মাণ এবং নদী তীর সংরক্ষণের দাবিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোতে জোরালো দাবি জানালেও কোন সুফল পাচ্ছে না। সাতক্ষীরাতে সমাবেশ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। সেখানে স্থানীয় জনতা বলেছে, যে পানি উন্নয়ন বোর্ড জনগণের কাজে আসে না, নদী ভাঙন ঠেকাতে কোন কাজ করে না- সেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন প্রয়োজন আমাদের নেই।
এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে পাউবো মহাপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে জানতে চাইলে বলেন, সরকার অর্থ না দিলে এই দুর্যোগ মোকাবেলা করা পাউবোর পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি বলেন, এমনিতেই পাউবো জরুরি কাজের জন্য বছরে বরাদ্দ পায় মাত্র সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকা। অথচ প্রয়োজন যেখানে কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকা। সেখানে এখন সারা দেশে নদী ভাঙনকবলিত এলাকার যে অবস্থা, তাতে জরুরিভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দ না করলে এই ক্ষয়ক্ষতি সামাল দেয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, এবারের বন্যায় প্রাথমিকভাবে এ পর্যন্ত ৪২৯টি অবকাঠামো এবং ১০৭ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাউবো মাঠ প্রশাসন থেকে এসব বাঁধ ও স্থাপনা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জরুরিভিত্তিতে ৩৩৮ কোটি টাকা চেয়েছে।
সিরাজগঞ্জে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী জানান, বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও অব্যাহত রয়েছে নদী ভাঙন। পানির উচ্চতা বিপদসীমার নিচে নেমে এলেও এলাকাবাসীর মনে নতুন করে ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
বন্যাকবলিত এলাকাবাসী জানায়, বন্যায় আমাদের এলাকার মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় নতুন এলাকা ভাঙতে শুরু করেছে। পানি কমে নদীর সীমায় চলে আসায় অনেক এলাকায় ভাঙনের আকার ভয়াবহ রূপ ধারন করছে। প্রতিদিন নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।
জেলার বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ এলাকায় পানি কমেছে। তবে ভাঙতে শুরু করেছে নদীপাড়ের অনেক এলাকাই। একমাত্র আয়ের উৎস হারিয়ে নদী পাড়ের মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

মেঘনার ভাঙনে ৫শ’ পরিবার গৃহহীন
নরসিংদী থেকে সরকার আদম আলী জানান, অর্ধ শতাব্দীকালের ধারাবাহিকতায় নরসিংদীর রায়পুরার দুর্গম চরাঞ্চলের মেঘনার তীরবর্তী চরমধুয়া ও বীর চরমধুয়া গ্রামে আবারো ভাঙন শুরু হয়েছে। বিগত একপক্ষকালের ভয়াবহ ভাঙনে চরমধুয়া ইউনিয়নের দড়িহাটি শিকদারবাড়ী, জান্নার বাড়ী, চরমধুয়া কবরস্থান, নয়াহাটি, বীরচরমধুয়া, গাজীপুরা এলাকায় বাড়ীঘর ফসলি জমি, মসজিদ, ঈদগাহ এবং কবরস্থানসহ বিশাল জনপদ ভেঙ্গে মেঘনার অতল গহব্বরে তলিয়ে গেছে। ভাঙনের শিকার হয়ে এলাকার ৪/৫শ’ পরিবার এখন গৃহহীন ও আশ্রয়হীন হয়ে পরেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড নরসিংদী আঞ্চলিক অফিসের উদাসীনতার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শিকদারবাড়ী ঈদগাহ শতভাগ ভেঙ্গে গেছে। বীর চরমধুয়া গ্রামের কবরস্থান ভেঙ্গে লাশ বেরিয়ে নদীতে ভেসে যাচ্ছে। দড়িহাটি পাড়া এখন মেঘনার করাল গ্রাসের সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। যে কোন সময়ই পাড়াটি নদী গর্ভে তলিয়ে যাবার আশংকা দেখা দিয়েছে।
মাদারীপুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ হ৬শ’ ঘরবাড়ি ভাঙনের শিকার
মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, অব্যাহত হারে পানি কমে শিবচরে পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদ ভয়ংকর আগ্রাসী রুপ ধারন করেছে। শিবচরে পদ্মা নদীর পানি ২০ সে.মি. কমে এখনো বিপদসীমার ৪ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদী ভাঙন রাক্ষুসী রুপ নিয়েছে। এরই মধ্যে পদ্মা নদীর চরাঞ্চল চরজানাজাত ইউনিয়নের ৩০ নং পূর্ব খাসচর বন্দরখোলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন ও কাঠালবাড়ির কাউলিপাড়া মাদ্রাসা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদী ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে এ পর্যন্ত ৫টি ইউনিয়নের প্রায় ৬ শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাজবাড়ীতে পদ্মার ভাঙন
রাজবাড়ী থেকে নজরুল ইসলাম : পদ্মা ও গড়াই নদী আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। জেলার চারটি উপজেলার বেশ কয়েকটি স্পটে দীর্ঘ চার কিলোমিটার এলাকায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে এসে দাঁড়িয়েছে জেলা সদরের বরাট ইউনিয়নের লালগোলা ও উড়াকান্দা এলাকা। সেখানে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ থেকে পদ্মা নদীর দূরত্ব রয়েছে মাত্র দুই শত মিটার।
পদ্মা নদীর রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার হাবাসপুর, সেনগ্রাম বকশীপুর, জেলা সদরের মহাদেবপুর, লালগোলা, উড়াকান্দা, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাট সংলগ্ন এলাকা এবং জেলা বালিয়াকান্দিতে নারুয়া ও জঙ্গল ইউনিয়নে গড়াই নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে।
’৬০ দশকের বাঁধগুলোর নিয়মিত সংস্কার হয় না
খুলনা থেকে বিশেষ সংবাদদাতা জানান, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলবাসী প্রবল ভাঙন আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন। খুলনা অঞ্চলের বেড়িবাঁধের অন্তত দুই শতাধিক পয়েন্ট ঝুঁকি। ষাটের দশকে তৈরি বাঁধগুলোর নিয়মিত সংস্কার না করায় এমন অবস্থার সৃষ্টি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ভরা জোয়ার ও নিম্নচাপের কারণে নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে কোন কোন পয়েন্ট দিয়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। ফলে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্য পড়েছে এই অঞ্চলের মানুষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রবল জোয়ারের তোড়ে খুলনার দাকোপের আইলা দুর্গত সুতারখালী ইউনিয়নের কালাবগী বাজারের চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পাউবো’র ৩২নং পোল্ডারের সুতারখালী ইউনিয়নের কালাবগী বাজারের সামনে পাউবো’র বেড়িবাঁধটিতে গত ৮-১০ দিন পূর্বে বড় ভাঙন ও ফাটল দেখা দিয়েছিল। খুলনার কয়রা ও দাকোপ, বাগেরহাটের শরণখোলা এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই খারাপ। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় বাঁধের মাটি সরে গেছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, উপকূল রক্ষায় ষাটের দশকে বাঁধগুলো তৈরি হয়। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ায় এসব বাঁধ দুর্বল হয়ে গেছে। এখন আর পানির চাপ সহ্য করতে পারছে না। ফলে অনেকগুলো পয়েন্টে ভাঙন শুরু হয়েছে। যে কোনো সময় এই বাঁধ ভেঙে লোকালয় ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়তে পারে। জোয়ারের পানি বাঁধ উপচে বটিয়াঘাটা উপজেলা সদরে প্রবেশ করেছে। এছাড়াও খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ভেঙে পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে।
খুলনা পাউবো-২’এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী সালামত ফকির জানান, ওই এলাকায় বাঁধের কিছু পয়েন্ট দুর্বল থাকায় ভেঙে পানি ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে।
জানতে চাইলে পাউবো খুলনা-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী পিযুষ কৃষ্ণ কুন্ডু জানান, ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে অন্তত ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। কিছু স্থান নাজুক অবস্থায় রয়েছে। তবে আমরা নিয়মিত নজরদারী করছি।
গাইবান্ধায় ৫ শতাধিক পরিবার গৃহহারা : ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়ে গেছে হাজারো পরিবার
গাইবান্ধা জেলা সংবাদদাতা জানান, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার অন্তত ১২টি পয়েন্টে ব্যাপক নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিনে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার ভাঙনে ৫ শতাধিক পরিবার গৃহহারা হয়েছে। অন্তত ১ হাজার ২শ’ পরিবার নদী ভাঙনের মুখে তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গেছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে বাঁধসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় গ্রহণকারী বন্যার্ত মানুষ তাদের ঘরে ফিরতে না ফিরতেই নদী ভাঙনের মুখে পড়েছে।
ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বলেন, তার ইউনিয়নে কুচখালি, চন্দনস্বর, পশ্চিম খাটিয়ামারি, উত্তর খাটিয়ামারি গ্রামের প্রায় ৩শ’ পরিবার গত তিনদিনে নদী ভাঙনে বসতবাড়ি হারিয়েছে। তারা এখন বিভিন্ন উঁচু এলাকায় আশ্রয় নিয়ে খোলা আকাশের নিচে অসহায়ভাবে দিন কাটাচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
এদিকে সুন্দরগঞ্জের বেলকা ইউনিয়নের নবাবগঞ্জ, হরিপুরের পারাসাদুয়া এবং সদর উপজেলার কামারজানির গো-ঘাট, সাঘাটা উপজেলার বরমতাইড়, গোবিন্দী, হলদিয়া, ফুলছড়ির দেলুয়াবাড়ি, কালাসোনা, রতনপুর, এরেন্ডাবাড়ির জিগাবাড়িতে ব্যাপকভাবে ভাঙছে বলে সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন জানিয়েছেন। সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নে বন্যার ধকল সয়ে ওঠার আগেই যমুনার ভাঙনে শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে দফায় দফায় ভাঙনের কবলে পড়ে সঙ্কোচিত হয়েছে মানুষের আবাসন এলাকা। তারপরও নদী ভাঙন ঠেকানোর ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। এলাকার অপর এক বাসিন্দা আব্দুস ছাত্তার জানান, বার বার কর্তৃপক্ষ ভাঙন দেকি যায়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ চন্দ্র সরকার জানান, ভাঙন ঠেকাতে বাঁশের পাইলিংয়ে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কাউখালীতে বেড়িবাঁধে ভাঙন
কাউখালী (পিরোজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কাউখালীতে উজানের পানির ঢলে কচা নদীর করালগ্রাসে শিয়ালকাঠী ইউনিয়ন ও আমরাজুড়ী ইউনিয়নের রক্ষাবাঁধ ভেঙে ফসলি জমি, বাড়িঘর, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। ওই সকল ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় হাজার হাজার হেক্টর আমন বীজতলা পানির নীচে সপ্তাহব্যাপী ডুবে থাকায় বীজতলা সম্পূর্ণ পচে গেছে। কৃষকরা আমন বীজের জন্য নতুন করে বীজতলা তৈরি করতে হাজার হাজার টাকা খরচ হবে বলে কৃষক আ: মন্নান জানান। এদিকে পানি প্রবেশ করায় উপজেলার অর্ধশত ঘেরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। বেড়িবাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় বাড়ি-ঘর পানিবন্দী হয়ে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। ফলে ওইসব এলাকার রবিশস্য এবং স্থায়ী গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে কৃষকরা আশঙ্কা করছেন। বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ ধসে যাওয়ায় দিন-রাত আতঙ্কের মধ্যে থাকে এলাকাবাসী।
মির্জাপুরে দেড়শ’ পরিবার আশ্রয়হীন
মির্জাপুর থেকে জানান জাহাঙ্গীর হোসেন, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বন্যার পানি কমার সাথে সাথে বংশাই নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে পানি কমতে থাকা, অব্যাহত বৃষ্টির কারণে ঝড়ো বাতাসে দেড় শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে ওই আশ্রয়হীন পরিবারগুলো গৃহহীন হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, গেল মাসের শুরুর থেকে বন্যার পানির বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বংশাই নদী তীরবর্তী উপজেলার ফতেপুর, থলপাড়া, চাকলেশ্বর এবং গোড়াইল গ্রামের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হয়। কিন্ত গত এক সপ্তাহ ধরে বন্যার পানি কমতে থাকায় ওই এলাকায় আাবার ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে ওই ৪টি গ্রামের ১৫৩টি পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে বলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্র জানিয়েছে।
থলপাড়া গ্রামের জাকির হোসেন, ফতেপুর গ্রামের ইব্রাহিম সিকদারসহ ভাঙন কবলিতরা জানান নদী ভাঙনে ঘর-বাড়ি হারিয়ে আমরা এখন দিশেহারা। পরিবার-পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। সরকারি সহযোগিতা ছাড়া গৃহ নির্মাণ আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় বলে তারা উল্লেখ করেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

Show all comments
  • তানিয়া ১১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:২৬ পিএম says : 0
    সরকারি ও বেসরকারিভাবে এদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • আজিজ ১১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:২৮ পিএম says : 0
    ভাঙন প্রতিরোধে যুগোপযোগী ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • মোর্শেদ ১১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:২৯ পিএম says : 0
    আসলেই, এমন পাউবো থেকে কী লাভ ?
    Total Reply(0) Reply
  • রাসেল ১১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:৩০ পিএম says : 0
    এদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Munna ১১ আগস্ট, ২০১৬, ১:০২ পিএম says : 0
    ader pase dharano amader duty
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এবার ভাঙনে দিশেহারা

১১ আগস্ট, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ