Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

স্কুল শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে এগিয়ে আসুন : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫৪ পিএম, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : স্কুলের শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া রোধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নিজ দায়িত্বে নিজ নিজ এলাকার শিক্ষা কার্যক্রম উন্নত করার জন্য শিশুদের মিড ডে মিল কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। এজন্য সমাজের সামর্থ্যবান বিদ্যানুরাগী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, শিক্ষক-অভিভাবকরা এগিয়ে এলে আর কারও মুখাপেক্ষী হতে হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৬ উদ্বোধন ও প্রাথমিক শিক্ষা পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কারো মুখাপেক্ষী হতে চাই না। সকলে মিলে কাজ করলে আর কারো মুখাপেক্ষী হতে হবে না। নিজেদের উদ্যোগেই বাচ্চাদের টিফিন তৈরী করে খাওয়ানো যায়। অতীতে এভাবেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলত। তিনি সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ এবং মাদকের সঙ্গে যেন কোনভাবেই আমাদের শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ না ঘটে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্যও শিক্ষক অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মাদরাসা, মসজিদ ও সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এ বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করতে হবে। তিনি বলেন, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম। কেউ যেন ইসলামের নামে সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবনের লালিত স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা-দারিদ্র্য মুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তোলা। সেই লক্ষ্যে তিনি যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু ‘প্রাইমারী এডুকেশন অর্ডন্যান্স-১৯৭৩’ এবং ‘প্রাইমারী স্কুল (টেকিং ওভার) অ্যাক্ট ১৯৭৪’ এর আওতায় ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ এবং ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭২৪ জন শিক্ষকের পদ সরকারিকরণ করেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ’৭৫ সালের আগস্ট ট্রাজেডির পর বাকি সুপারিশসমূহ ২১ বছর আলোর মুখ দেখেনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একদিকে তিনি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন করেন, অন্যদিকে একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধান রচনা করে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করে নারীদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করেন। বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করার ৪০ বছর পর আমি ২০১৩ সালে দেশের ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছি। সেদিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ লাখ ৩ হাজার ৮৪৫ জন শিক্ষকের চাকরি সরকারিকরণের ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমরা ঘোষিত পদের চেয়ে ৫ হাজার বাড়িয়ে ১ লাখ ৮ হাজার ২০০ শিক্ষকের চাকরি সরকারি করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানের ব্যবস্থাসহ জাতীয় উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব কিছুই আওয়ামী লীগ সরকার করছে। দীর্ঘ ২১ বছর পর ’৯৬ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর আমাদের পদক্ষেপের ফলে মাত্র দু’বছরে স্বাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়ায়। এ অর্জনের স্বীকৃতি হিসাবে বাংলাদেশ ‘ইউনেস্কো স্বাক্ষরতা পুরস্কার ১৯৯৮’ লাভ করে। কিন্তু বিএনপি-জামাত ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে সেটাতো বাড়াইনি বরং আমাদের রেখে যাওয়া হারের চেয়ে ২০ শতাংশ কমিয়ে ৪৪ শতাংশে নামিয়ে আনে। প্রধানমন্ত্রী বিগত ৭ বছরে শিক্ষা-স্বাস্থ্য উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, আমরা গত ৭ বছরে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত বিনামূল্যে ১৯৩ কোটি বই বিতরণ করেছি। পৃথিবীতে বিনামূল্যে এত বিপুল পরিমাণ বই সরবরাহের আর কোন নজীর আছে কি না আমার জানা নেই। এবারও পহেলা জানুয়ারী দেশব্যাপী ‘বই উৎসব’ হয়েছে এবং মাধ্যমিক পর্যন্ত ৪ কোটি ৪৪ লাখ ১৬ হাজার ৭২৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৭২টি নতুন পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়েছে। এ বছর শুধু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে ১০ কোটি ৮৭ লাখ ১৯ হাজার ৯৯৭টি বই বিতরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ২০১০ সালে আধুনিক-বিজ্ঞানসম্মত জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছি। এতে প্রাথমিক শিক্ষা-শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ, আচরণ ও ভাষা শিখানোর বিষয়টি মৌলিক স্তর হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব বর্ণমালায় পাঠ্যপুস্তক তৈরীর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট এবং নিজস্ব সামান্য সম্পত্তি রাষ্টীয় কোষাগারে দান করে তা দিয়ে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট গঠন করে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি-উপবৃত্তি এবং দরিদ্রদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের উল্লেখ করেন।  তিনি বলেন, ‘এখন দেশে উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ। ২০০৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪৮ লাখ ১৫ হাজার ৬৩৬ জন। ২০১০ সালে প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে ৭৮ লাখ ১৭ হাজার ৯৭৭ জনে উন্নীত করেছিলাম। আমরা এবছর উপবৃত্তির অর্থের পরিমাণও বাড়িয়েছি।’ ৪৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ স্বাক্ষরতা কর্মসূচি’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ ২০১৪ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করি। সহকারি শিক্ষকের বেতন একধাপ বাড়ানোর প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ২০১৫ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ছিল ৯৭ দশমিক ৯৪ শতাশ। এ হার শতভাগে উন্নীত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। জোট সরকারের সময়ের ঝড়ে পড়ার হার ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বর্তমানে আমরা তা ২০ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। দেশে এখন স্বাক্ষরতার হার ৭১ শতাংশ। অচিরেই আমরা নিরক্ষরতা মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব।  প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, শিক্ষকতা মহান পেশা। তাদের সম্মান অনেক উপরে। এখনও আমি আমার শিক্ষকদের যেখানে পাই সম্মান জানাই। আপনারা হচ্ছেন সোনার বাংলার জন্য সোনার মানুষ গড়ার কারিগর। আপনারা পারেন-নীতি ও মূল্যবোধের চর্চা শিখিয়ে দেশের প্রতিটি শিশুকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে। ভালো-মন্দ কিংবা ন্যায়-অন্যায় বিবেচনার জ্ঞান এবং দেশাত্মবোধের শিক্ষা দেয়া আপনাদের দায়িত্ব। তাদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুন। দরিদ্র প্রতিবন্ধীদের আপন করে নেয়ার শিক্ষাও আমি আশাকরি শিক্ষকেরা তাদের শিক্ষার্থীদের দেবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন, আমরা সবাই মিলে দেশের শিক্ষাখাতের উন্নয়নে এগিয়ে এসে দেশ থেকে নিরক্ষরতাকে চিরতরে দূর করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন এমপি। স্বাগত বক্তৃতা করেন মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন খালেদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলমগীর। প্রধানমন্ত্রী ১০৬ জন প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০১৬ বিজয়ী শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং বিদ্যানুরাগীদের পুরস্কৃত করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্কুল শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে এগিয়ে আসুন : প্রধানমন্ত্রী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ