Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘পুলিশ তুমি সহায় হও’

প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৯ পিএম, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

স্টালিন সরকার : পুলিশ বাহিনী রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য। দেশে মানবাধিকার ও আইনের শাসনের পারদ ‘ওপরে’ না ‘নিচে’ তা নির্ভর করে রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনীর আচরণের ওপর। নাগরিকরা সুখ-শান্তি আর নিশ্চিন্তে বসবাস করবেন, না অশান্তিতে দিনযাপন করবেন, তা নির্ভর করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আচরণের ওপর। পুলিশ নেই, পৃথিবীকে এমন দেশ খুঁজে পাওয়া যাবে না। মানুষ বিপদে পড়লে পুলিশের সাহায্য নেবে, সেটাই স্বাভাবিক। পুলিশের দায়িত্ব বিপদে পড়া নাগরিকের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়া। কিন্তু মানুষ পুলিশকে দেখে ভয় পায় কেন? পুলিশের হাতে নিরপরাধ নাগরিক আক্রান্ত হয় কেন? ‘দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন’ যাদের দায়িত্ব, তাদের কেউ কেউ উল্টো পথে হাঁটছে কেন? পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে যখন চুরি-ডাকাতি, গ্রেফতার বাণিজ্য, ব্লাকমেইলিং, নারীর প্রতি অপ্রীতিকর আচরণ এবং তল্লাশির নামে ‘ইয়াবা অস্ত্র’ ব্যবহার করে পথচারীদের অর্থ লুটের অভিযোগ ওঠে, তা নাগরিকের জন্য দুর্ভাগ্যজনক, সরকারের জন্য বিব্রতকর। আবার পুলিশ কর্মকর্তা ও দু-চারজন পুলিশ সদস্যের অপকর্মের দায় গোটা বাহিনীর ওপর চাপিয়ে দেয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর ওপর অবিচারের নামান্তর।   
সেই ’৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাত থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আমাদের পুলিশ বাহিনীর অনেক সাফল্য রয়েছে। পথেঘাটে কেউ মরে পড়ে থাকলে পুলিশকে যেমন লাশ নিয়ে যেতে হয়, তেমনি কেউ বিপদে পড়লে পুলিশকেই এগিয়ে আসতে হয়। পুলিশ বাহিনীর এ কর্ম ও সাফল্য গর্ব করার মতোই। পুলিশে যারা চাকরি করেন তারা এদেশেরই সন্তান। চলমান অস্থির রাজনীতি ও বিভাজনের সমাজ ব্যবস্থা থেকে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা বিচ্ছিন্ন নন। তারপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকায় পুলিশের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা অনেক। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই বাহিনীর কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অতি বাড়াবাড়ি যেমন লক্ষণীয়, তেমনি তাদের একের পর এক অনৈতিক ও অপ্রীতিকর কর্মকা-ে গোটা বাহিনীকে বিতর্কের মুখে পড়তে হয়। ধানের মধ্যে চিটে যেমন থাকে, তেমনি পুলিশ বাহিনীর অনেক চৌকস ও প্রতিশ্রুতিশীল কর্মকর্তা থাকলেও কিছু অদক্ষ-অসাধু কর্মকর্তার অবাঞ্ছিত কর্মকা- থাকবেই। সেটার মাত্রা-সীমানা থাকে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা ব্যক্তি হিসেবে কয়েকজন পুলিশ সদস্য করলেও ওই অপকর্মের দায় গোটা পুলিশ বাহিনীর ওপর কাদা লেপ্টে দিচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এমন হচ্ছে? ‘মাছের রাজা ইলিশ, দেশের রাজা পুলিশ’ উক্তি কি ওই বাহিনীর সেবার সঙ্গে যায়? এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ উক্তি করা হচ্ছে কেন? বছর দেড়েক আগেও নারায়ণগঞ্জের একটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে সরকারদলীয় এমপি শামীম ওসমানের প্রতি চ্যলেঞ্জ ছুঁড়ে এসআই বসিরউদ্দিন ‘দায়িত্ব পালনে’ যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন তা গোটা বাহিনীর জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। ঢাকার যানজটে স্কুলের শিশুদের ট্রাফিক পুলিশের হাত ধরে রাস্তা পাড় হওয়ার দৃশ্য অহরহ দেখা যায়। পুলিশ বাহিনীতে বসিরউদ্দিনের মতো কর্মকর্তা আর স্কুলগামী শিশুদের রাস্তা পাড় করে দেয়া ট্রাফিক সদস্যদের সংখ্যা বাড়ছে না কেন? পুলিশ বাহিনীর সব সদস্যের তো বসিরউদ্দিন হওয়ার কথা। স্কুলগামী শিশুদের মতো সব নাগরিকের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়ার কথা।
কয়েকদিন আগে ইনকিলাবসহ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে পুলিশ সদর দফতরের দেয়া একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। রিপোর্টে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অপরাধ সংক্রান্ত বিষয়ে বলা হয়, এক বছরে অপরাধের কারণে ৯ হাজার ৯৫৮ জন পুলিশ সদস্যের শাস্তি হয়েছে। আর ৭৬ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে ফৌজদারি মামলা। গত কয়েক বছরে পুলিশ বাহিনীর সদস্যের হাতে অসংখ্য অঘটন ঘটেছে। রাজনৈতিক আন্দোলন দমনের নামে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর গুলিবর্ষণ হয়েছে। এতে অনেকেই প্রাণ হারিয়েছে। আসামি ধরার নামে পুলিশের গ্রেফতার বাণিজ্য সর্বত্র উচ্চারিত হয়। আবার অনেক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন। পুলিশ সব সময় কাজের মধ্যে থাকে। কাজ করলে ভুল-শুদ্ধ যাই হোক সমালোচনা হবে, পর্যালোচনা হবে। তারপরও পুলিশ বাহিনীর প্রয়োজন অপরিহার্য।  
সম্প্রতি পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের হাতে কয়েকটি ‘অপরাধজনিত’ ঘটনা ঘটেছে। ৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীর ওপর পুলিশি নির্যাতনের বর্বর কাহিনী মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে। এ ঘটনায় দায়ে অভিযুক্ত এসআই মাসুদ শিকদারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনাটি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। ওই ঘটনার কয়েকদিন পর রাজধানীর মীর হাজীরবাগে ঘটে একই ঘটনা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র দাসকে পুলিশ বেধড়ক পেটায়। এ সময় পুলিশের এসআই মাসুদ শিকদার দম্ভোক্তি করে বলেন, ‘মাছের রাজা ইলিশ, দেশের রাজা পুলিশ।’ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। অতঃপর শ্যামলী আশা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ফারহানা আক্তারকে মোহাম্মদপুরে তল্লাশির নামে ইয়াবা ব্যবসায়ী বানানোর চেষ্টা ও অনৈতিক প্রস্তাব দেয়ার অভিযোগে আদাবর থানা-পুলিশের এসআই রতন কুমারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পুলিশ ফারহানার ব্যাগ তল্লাশির নামে ব্যাগে ইয়াবা দিয়ে তাকে হেনস্তা করে। যে পুলিশ বাহিনীর দায়িত্ব ইয়াবা উদ্ধার করা, সেই পুলিশ নাগরিককে ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায়ের জন্য ‘ইয়াবা টোপ’ ব্যবহার করে! এটা ভয়ঙ্কর অপরাধ। শুধু তাই নয়, পুলিশের নির্যাতনের শিকার রাব্বী থানাহাজতে বন্দি থাকার দু’ঘণ্টার বর্ণনা দিয়েছেন মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের কাছে। সংগঠনের অন্যতম কর্মকর্তা নূর খান লিটন টিভির টকশোতে জানান, বাপ্পী তাদের জানান, তার সামনে রাস্তায় রিকশাযাত্রী এক মহিলাকে পুলিশ সদস্যরা আটক করে তার হাতব্যাগে কনডম দেয়। অতঃপর তাকে ‘বেশ্যা’ হিসেবে গালি দিয়ে তার স্বামীকে ফোন করার ভয় দেখানো হয়। তাকে প্রস্তাব দেয়া হয়, কাছে থাকা সব টাকা-স্বর্ণালঙ্কার পুলিশকে দিতে হবে, নাহলে তার স্বামীকে ফোন করে জানানো হবে এই নারী পরপুরুষের সঙ্গে থাকে এবং ব্যাগে কনডম পাওয়া গেছে। সম্ভ্রমের ভয়ে ওই নারী সবকিছু পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে নিস্তার পায়। থানায়ও এক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে তার ব্যাগে ইয়াবা পাওয়া গেছে, এমন অভিযোগ তুলে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করা হয়। রাব্বীর চোখের সামনে এ দুটি ঘটনা ঘটে। একটি জাতীয় দৈনিকের একজন সম্পাদক জানালেন, তারও পরিচিত এক ব্যক্তির আত্মীয়ার ব্যাগ তল্লাশির নামে ভ্যানিটি ব্যাগে ইয়াবা রেখে পুলিশ ভয় দেখিয়ে সবকিছু হাতিয়ে নেয়। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মীরপুরের বাবুল মাতবর নামের এক চা বিক্রেতা। তার শরীরের ৯০ ভাগ পুড়ে যায়। তার পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, চাঁদা না পেয়ে পুলিশ সদস্যরা এ ঘটনা ঘটায়। অবশ্য বাবুল মাতবরকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে শাহ আলী থানার এসআই মমিনুর রহমান, নিয়াজউদ্দিন মোল্লা, এএসআই জগিন্দ্রনাথ ও কনস্টেবল জসিমকে ইতোমধ্যেই ক্লোজড করা হয়েছে। খবরে প্রকাশ বুধবার রাত ৯টায় মিরপুর ১ নম্বর গুদারাঘাটে চাঁদা না পেয়ে পুলিশ ফুটপাতের চা বিক্রেতা বাবুল মাতব্বরের কেরোসিনের চুলায় লাথি মারে। এতে কেরোসিন ছিটকে বাবুলের গায়ে লেগে আগুন ধরে যায়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ওঠায় দেশ-বিদেশের মিডিয়াগুলোয় ব্যাপক প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। এসব ঘটনা পুলিশ বাহিনীর ইমেজ ক্ষুণœ করছে, যা মোটেও কাম্য নয়। পুলিশ বাহিনীর কাজ হলো দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন। কিন্তু ঘটছে উল্টো ঘটনা! মানুষ বিপদে পড়লে পুলিশের কাছে যাবে, অথচ এখন পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে মানুষ পুলিশকেই ‘বিপদ’ মনে করে থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পথে পথে তল্লাশি পুলিশের দায়িত্ব এবং কাজের অংশ। কিন্তু প্রায়ই অভিযোগ ওঠে যে তল্লাশির নামে পুলিশ পথচারী ও নাগরিককে হয়রানি করে। শুধু তাই নয়, কোথাও কোথাও পথচারীর ব্যাগে কৌশলে ইয়াবা ঢুকিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করা হয়। দীর্ঘ সময় আটকিয়ে রেখে অর্থ আদায় করা হয়। পথচারী নারীদের ব্যাগে কনডম দিয়ে তাদের চরিত্র হরণের ভয় দেখিয়ে অর্থ-গয়না নেয়া হয়। ভুক্তভোগীরা লাজ-লজ্জা, আত্ম-সম্মানবোধ ও সামাজিক অবস্থানের কারণে পরিস্থিতির শিকার হয়ে সবকিছু পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে বাসায় ফিরতে বাধ্য হন। সামাজিক অবস্থান ও লোকলজ্জার ভয়ে অধিকাংশ ঘটনা অপ্রকাশ্যই থেকে যায়। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেছেন, ‘পুলিশের বাড়াবাড়ি সীমানা ছাড়িয়ে গেছে।’ সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, ‘পুলিশের অপরাধের বিচার হয় না বলে এমন ঘটনা ঘটছে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানসহ আরো কয়েকজন সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞ প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন সম্প্রতি পুলিশের কয়েকজন সদস্যের অপরাধ নিয়ে। তবে পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে নির্দয় বক্তব্য দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অপরাধ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর হাফিজুর রহমান কার্জন। তিনি বলেছেন, ‘পুলিশের আচরণ দেখে মনে হয় ওরা ইউনিফর্ম-পরিচিত ডাকাত।’ এটা পুলিশ বাহিনীর ওপর চরম নির্দয় বক্তব্য। কারণ হাতেগোনা কয়েকজন পুলিশ সদস্যের অপরাধের জন্য গোটা বাহিনী সম্পর্কে এমন মন্তব্য করা উচিত নয়। তবে এটা তো ঠিক যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্যের মধ্যে বেপরোয়া ভাব দেখা যাচ্ছে। তাদের কথাবার্তা ও আচরণে তা প্রকাশ পাচ্ছে। বিশ্লেষকরা অভিযোগ করেন, ওই প্রার্থী ভোটারবিহীন এবং ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় বসানোর সাফল্য দাবি করে পুলিশ বাহিনী। আন্দোলন ঠেকিয়ে দেয়ায় ওই নির্বাচন হয়েছে। সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক মন্ত্রী, ক্ষমতাসীন দলের সিনিয়র নেতাদের অনেকেই বিভিন্ন বক্তৃতায় স্বীকারও করেছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে পুলিশের দায়িত্বশীল ভূমিকার জন্য তারা ক্ষমতায় এসেছেন এবং সরকার পরিচালনা করছেন। বিএনপিসহ মাঠের রাজনীতিতে রয়েছেন এমন দলের নেতারা হরহামেশাই অভিযোগ করেন যে ‘দেশ কার্যত পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে গেছে।’
ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র রুবেল হোসেনের কথা মনে আছে? ১৯৯৮ সালে সিদ্ধেশ্বরী থেকে ৫৪ ধারায় রুবেলকে আটক করে পুলিশ রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ডের ভয়াবহ নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়। রুবেল হত্যার ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা দেশ। গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত এসি আকরামকে। এ ঘটনার পর সারা দেশে পুলিশি রিমান্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় বিভিন্ন সংগঠন এবং মানবাধিকার কর্মীরা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যায় যে জনরোষের ভয়ে পুলিশ সদস্যরা আতঙ্কিত হন। ওই ঘটনায় বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা ব্লাস্ট হাইকোর্টে রিট করলে হাইকোর্ট সরকারের প্রতি কারণ দর্শানোর রুল জারি করেন। অতঃপর ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে বলা হয়, কোনো ব্যক্তিকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতারের পর তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতারের কারণ লিপিবদ্ধ করতে হবে। অবিলম্বে ওই ব্যক্তির আত্মীয়কে গ্রেফতারের বিষয়টি অবহিত করতে হবে। হাইকোর্টের সে নির্দেশনা কি পুলিশ বাহিনী পালন করছে? গত বছরের ১০ ডিসেম্বরও আসামিদের গ্রেফতারের পর আদালতে তোলার আগে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা যাবে না এমন নির্দেশনা দেয়া হয়। তারপরও ঘটে সে ঘটনা। পুলিশ সদস্যদের হাতে ঘটা অপরাধের ঘটনাগুলো বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এ অবস্থায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি পুলিশ বাহিনীর যেসব সদস্য অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত তাদের দৃশ্যমান শাস্তির দাবি জানিয়েছে। মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত ওই সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের মহাপরিদর্শকও উপস্থিত ছিলেন। গতকালও জাতীয় সংসদে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নানা অপরাধের কারণ এবং তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দাবি করা হয়। জাতীয় পার্টির এমপি পীর ফজলুর রহমান জানতে চান, ‘পুলিশ বাহিনীর ভেতরে থেকে এসব ঘটনা কারা ঘটাচ্ছে? পুলিশ বাহিনীর ওপর যতই অভিযোগ উঠুক রাষ্ট্রের জন্য পুলিশ অপরিহার্য। কিছুদিন আগেও পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক ইসলামবিদ্বেষী ব্লগারদের সতর্ক করে যে বক্তব্য রেখেছেন তা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। কাজেই পুলিশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যে শব্দ ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’ উচ্চারণ করা হয়, তাই বাস্তবায়িত হোক। সে প্রত্যাশা পূরণ না হলেও অন্তত পুলিশ বাহিনীর প্রতি যাতে নাগরিকের আস্থার সৃষ্টি হয় সে উদ্যোগ নেয়া জরুরি। পুলিশ তো আমাদেরই কারো ভাই, কারো বন্ধু, কারো আত্মীয়-স্বজন। পুলিশ নাগরিকের প্রতি সহায় (সহানুভূতিশীল) না হলে রাষ্ট্রে বসবাস করা দুরূহ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ‘পুলিশ তুমি সহায় হও’

৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ