পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
১০টি কোম্পানির ওষুধ বিক্রির সত্যতা পেয়েছে ওষুধ প্রশাসন : সাত দিনে প্রত্যাহার না হলে কঠোর ব্যবস্থা -মহাপরিচালক
হাসান সোহেল : মোবারক হোসেন রাজধানীর মতিঝিলের একটি প্রতিষ্ঠানে অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করেন। গত মঙ্গলবার পেটের পীড়ায় ভোগায় টিকাতুলী মোড়ের চাঁদপুর মেডিসিন পয়েন্ট ফার্মেসি থেকে পেটের পীড়ার ওষুধ চান তিনি। ফার্মেসি থেকে মোবারককে ফার্মিক ল্যাবরেটরিজ লি.-এর ট্রেট্রাসাইক্লিন ২৫০ এমজি ওষুধ ধরিয়ে দেয়া হয়। তিনি জানতেন না এই ওষুধটি ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ হয়েছে। অফিসে আসার পর অন্যান্য সহকর্মীর মাধ্যমে জানতে পারেন এই ওষুধ নিষিদ্ধ। পত্রিকা দেখে বিষয়টি আরও নিশ্চিত হন। পরে তিনি ফার্মেসিতে গিয়ে অভিযোগ দিলে ফার্মেসি থেকে মোবারককে ওষুধের টাকা ফেরত দেয়া হয়। মোবারক কিছুটা সচেতন বা সহকর্মীদের মাধ্যমে মানহীন ওষুধ সেবন থেকে বেঁচে গেলেও মফস্বল এলাকার অনেকেই এখনও নিষিদ্ধ ঘোষিত এই ওষুধ ক্রয় করছেন এবং ব্যবহার করছেন। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা নিষিদ্ধ কোম্পানির মধ্যে ১০টি কোম্পানির ওষুধ এখনও বিক্রি হচ্ছে বলে প্রমাণ পেয়েছেন।
দেশব্যাপীই ফার্মিকসহ অন্যান্য নিষিদ্ধ ঘোষিত ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির ওষুধ এখনও অবাধে বিক্রি হচ্ছে। অথচ সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন দেশের ২০টি প্রতিষ্ঠানের সকল প্রকার ওষুধ উৎপাদন বন্ধ এবং ১৪টি প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ নিষিদ্ধ করেছে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান নিষিদ্ধ কোম্পানির ওষুধ বাজারে বিক্রির বিষয়টি সত্য বলে উল্লেখ করেন। শিগগিরই এ বিষয়ে নিষিদ্ধ এসব ওষুধ ক্রয় বা বিক্রয় না করার জন্য ফার্মেসি এবং কোম্পানিকে নির্দেশনা পাঠানো হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে এসব কোম্পানিকে শোকজ করা হয়েছে। ৫টি কোম্পানি কারণ দর্শাও নোটিশের জবাব প্রদান করেছে। তারা বলছে, বর্তমানে বাজারে যেসব ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞা আসার আগে উৎপাদন করা এবং বাজারজাত করা হয়েছিল। এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের করণীয় সম্বন্ধে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো ওষুধ কবে (আগে নাকি পরে) উৎপাদন করল, তার চেয়ে আদালতের নির্দেশ পালন করা অধিক বিবেচ্য। তিনি জানান, খুব শিগগিরই তারা কোম্পানিগুলোকে সাত দিন সময় দিয়ে বাজার থেকে সব ধরনের ওষুধ প্রত্যাহারের চিঠি দিবেন। বেঁধে দেয়া এক সপ্তাহের মধ্যে ওষুধ প্রত্যাহার না করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সূত্রমতে, বন্ধ ঘোষণার পরও এখনও বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ৩৪টি প্রতিষ্ঠানের ওষুধ। রাজধানীসহ সারদেশের ফার্মেসিগুলোতেই এসব ওষুধ বিক্রি করছেন ফার্মেসির বিক্রেতারা। দোকানদারদের লভ্যাংশের লোভ দেখিয়ে এই নিষিদ্ধ কোম্পানিগুলো ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অবাধে মানহীন এসব ওষুধ বিক্রি হওয়ায় রোগীদের মধ্যেও একধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব ওষুধ কোম্পানি এখনও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক ছোটখাটো দোকানদাররা এই কোম্পানির ওষুধ কিনছে। অতি মুনাফার আশায় ভালো-মন্দের বিচার না করেই ওষুধ দোকানদাররাও রেখে দিচ্ছে।
এদিকে ওষুধ বিক্রেতারাও এখনো এই ওষুধগুলো নিষিদ্ধের খবর সঠিকভাবে জানেন না বলে জানা গেছে। ঢাকা মেডিকেলের সামনে কামরুজ্জামান নামের এক রোগীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, ওষুধ নিষিদ্ধের খবর এখনও তিনি জানেন না। একই সঙ্গে তার মতো অনেকের কাছেই এই খবর নেই বলে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, যারা বেশি সচেতন তার হয়তো এসব খবর রাখে। কিন্তু যারা ছোটখাটো দোকানদার বা গ্রামে থাকে তারা ব্যাপারটা জানেই না।
ফার্মেসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুমন নামের একজন ওষুধ বিক্রেতা জানান, মানহীন ওষুধ উৎপাদন করায় সরকার লাইসেন্স বাতিল করছে বা ওষুধ নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু পরে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে যেসব পদক্ষেপ নেয়া দরকার সরকার সেটা এখনো নেয়নি। তাই এখনও ওইসব নিষিদ্ধ ওষুধ বিক্রি করছেন ফার্মেসিগুলো। একই সঙ্গে আমাদের দেশের রোগীরা বা ওষুধের ক্রেতারা এখনও এতোটা সচেতন নয় যে তারা যাচাই-বাছাই করে ওষুধ ক্রয় করবে। সুমন জানান, কোম্পানির ওষুধ যদি বাজারে পাওয়া না যায় তাহলে ফার্মেসিগুলো ওষুধ কিনতেও পারবে না, বিক্রিও করতে পারবে না।
এদিকে একাধিক ফার্মেসি সূত্রে জানা গেছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত ওই সব ওষুধ অনেকেই বিক্রি করছেন না। তবে যে সব ফার্মেসির কাছে এসব নিষিদ্ধ ওষুধ রয়েছে তারা বিপাকে রয়েছেন। অভিযানে পেলে নিশ্চিত জরিমানা গুনতে হবে। কিন্তু কোম্পানিগুলো এসব ওষুধ এখন আর ফেরত নিচ্ছে না। তারা ফেরত না নিলে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হবে দোকানিদের। উৎপাদনকারী কোম্পানিকে ফেরত নিতে বলা হলেও তারা এ বিষয়ে কোনো সাড়া দিচ্ছে না। তাই বড় ধরনের ক্ষতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে দোকানিদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানি জানান, নিষিদ্ধ হওয়ার ওষুধগুলো বিক্রি করা হচ্ছে না। কিন্তু কোম্পানিগুলোও ফেরত নিচ্ছে না। আমার কি করব ভেবে পাচ্ছি না।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক রূহুল আমিন জানান, হাইকোর্টের নির্দেশের পর তাদের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বাজার ঘুরে ১০টি কোম্পানির ওষুধ এখনও বিক্রি হচ্ছে বলে প্রমাণ পেয়েছেন। কোম্পানিগুলো হলো হলোÑমিল্লাত ফার্মাসিউটিক্যালস্ লি., ফার্মিক ল্যাবরেটরিজ লি., এভার্ট ফার্মা লি., ইন্দো বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস, স্পার্ক ফার্মাসিউটিক্যালস্ লি., আদ্ব-দ্বীন ফার্মাসিউটিক্যালস্ লি., ক্যাফমা ফার্মাসিউটিক্যালস্ লি., নর্থ বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যালস্ লি., ন্যাশনাল ড্রাগ কোম্পানি লি. ও টুডে ফার্মা। তিনি আরো জানান, ইতোমধ্যেই এসব কোম্পানিকে কারণ দর্শাও নোটিশ দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। এরমধ্যে পাঁচটি কোম্পানি নোটিশের জবাবও দিয়েছে।
সম্প্রতি মানহীন ওষুধ বাজারজাত করায় উচ্চ আদালত থেকে দেশের ৩৪টি ওষুধ কোম্পানির উৎপাদন বন্ধের নির্দেশনা আসে। নির্দেশনা অনুযায়ী এসব কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছে বলে জানান, অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মুস্তাফিজুর রহমান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।