পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রতিটি দেশের বিমানবন্দরগুলো সে দেশের দর্পণের মতো। বিমানবন্দরের পরিবেশেই প্রকাশ পায় সে দেশের উন্নতি-অবনতির চালচিত্র। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিমানবন্দরে পা রেখেই বুঝতে পারেন দেশটিতে বিনিয়োগের পরিবেশ কেমন হবে। পর্যকটরা বুঝতে পারেন শিল্প-সংস্কৃতি, সৃজনশীলতা, নিজস্ব স্বকীয়তা, স্থাপত্যকলায় ওই জাতি কত সমৃদ্ধ। বিমানবন্দরে কর্মীদের সেবাপরায়ণতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা, কেনাকাটার সুবিধা, ব্যাগেজ ডেলিভারি, আইনশৃঙ্খলা বাাহিনীর আচরণ, ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় দেশের শাসনব্যবস্থার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ পায়। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিমানবন্দরে নেমেই মনোরম পরিবেশের মুগ্ধতা এবং ভ্রমণকারীরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে মুখিয়ে পড়েন।
বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ভ্রমণকারীদের আকৃষ্ট এবং যাত্রীদের সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশের কয়েকটি বিমানবন্দরকে আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালসহ দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। কয়েক বছরের মধ্যে এসব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বদলে যাবে দেশের বিমানবন্দরগুলোর চেহারা। বর্তমানে চলমান এমন উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প। ২ হাজার কোটি টাকার কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্প (প্রথম ধাপ)। বাগেরহাটে খানজাহান আলী বিমানবন্দর তৈরির লক্ষ্যে শুরু হয়েছে জমি অধিগ্রহণের কাজ।
২৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবন নির্মাণ কাজের পত্র যাচাই, ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ে ওভারলেকরণ প্রকল্প, ২১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একই বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক টার্মিনাল বিল্ডিং নির্মাণ, ৫৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ে ওভারলেকরণ, ৩২২ কোটি টাকা ব্যয়ে যশোর বিমানবন্দরের টার্মিনালের আধুনিকায়ন এবং ৩২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের উন্নয়ন ও পার্কিং নির্মাণ প্রকল্প। শুধু তাই নয়, ১৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ, বরিশাল বিমানবন্দর এবং রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ ও নবরূপায়ণের পরিকল্পনা চলছে।
জানতে চাইলে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, যশোর, সৈয়দপুর, রাজশাহী ও খানজাহান আলীসহ প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্পগুলো অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি আধুনিক নির্মাণশৈলিও বিমানবন্দরে দেখা যাবে।
বিমানবন্দর সম্প্রসারণ ও সকল সুযোগ সুবিধাসহ অত্যাধুনিক বিমানবন্দরে রুপান্তরের কাজের পাশাপাশি কয়েকটি বিমান বন্দর সম্প্রসারণ, উন্নয়নের কাজ দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলছে। বিমানে নিরাপদ ওঠা নামা ও যাত্রী সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়েই চলছে এসব উন্নয়ন কাজ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দক্ষতা ও নৈপূণ্যের সঙ্গে এসব কাজ বাস্তবায়িত হলে দেশের বিমান বন্দরগুলোর চেহারা পাল্টে যাবে। দেশে বিদেশে উন্নত মানসম্পন্ন বিমান পরিবহন ব্যবস্থার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আধুনিক নির্মাণ স্থাপত্য শৈলী আর প্রযুক্তি বৈচিত্রের সমন্বয়ে নির্মিত হচ্ছে সিলেট, কক্সবাজার, যশোর, সৈয়দপুর ও রাজশাহী বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবন। নির্মাণ শৈলীর কারণেই দৃষ্টিনন্দন আর নয়নাভিরাম এ টার্মিনাল ভবনগুলো হবে মনোমুগ্ধকর। উন্নত বিশ্বের বিমানবন্দরের আধুনিক অনেক সুযোগ-সুবিধাই থাকছে এসব টার্মিনালে। পর্যায়ক্রমে প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি পিএন্ডডি/কিউএস সার্কেলের প্রকৌশলীরা কাজ করছেন। বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে স্বল্প সময়ের জন্য টার্মিনাল নির্মাণ কাজ সাময়িক স্থবির হলেও এখন তা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। বিমানবন্দরের আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধাই থাকছে নতুন এই টার্মিনালগুলোয়। নানাবিধ অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত টার্মিনাল এমন নিপুণভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে দেশি-বিদেশি যাত্রীরা মুগ্ধ হবেন।
সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানায়, আগামী ৪ অক্টোবর সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি লন্ডন ফ্লাইট যাত্রা শুরু করবে। সেখানে লন্ডন ফ্লাইটের যাত্রীদের জন্য মনোমুগ্ধকর হোল্ডিং লাউঞ্জ নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। রানওয়ের প্রকল্পের কাজ ও কার্গো সেড নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের পথে। সিলেট বিমানবন্দরে একটি নতুন আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ভবনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। চট্টগ্রাম শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে এবং বিমানবন্দর বর্ধিতকরণের জন্য কনসালটেন্ট নিয়োগ করা হয়েছে।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল ভবনের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। হোল্ডিং লাউঞ্জের এক্সটেনশনের কাজ ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে মহেশখালী বাকে রানওয়ে বর্ধিতকরণ কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। যশোর বিমানবন্দর একটি ছোট বিমানবন্দর অথচ সেখানে প্রতিদিন ১২-১৩টি অভ্যন্তরীণ বিমান ওঠানামা করে। টার্মিনাল ভবনে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ ঠেকাতে নতুন টার্মিনাল ভবনের নির্মাণ কাজ ডিসেম্বরে সম্পন্ন হবে। পর্যাপ্ত বিমান পার্কিংয়ের জন্য অ্যাপ্রোন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। আরো অধিক অ্যাপ্রোনের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
করোনার পর বিমান চলাচল শুরু হওয়ায় সৈয়দপুর বিমানবন্দরেও প্রতিদিন ১০-১২টি অভ্যন্তরীণ বিমান ওঠা নামা করছে। এখানে টার্মিনালের নির্মাণ বর্ধিতকরণ কাজ চলছে। অ্যাপ্রোনের কাজও সমাপ্ত হয়েছে। খানজাহান আলী বিমানবন্দরের ভূমি উন্নয়ন ও দেয়াল নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাহজালালের মেগা প্রকল্প থার্ড টার্মিনালের জন্য জেনারেল হ্যাঙ্গার নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে গেছে। প্রস্তাবিত এ টার্মিনালের জন্য যে জমি নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানে বর্তমানে ভিভিআইপি লাউঞ্জ ও জেনারেল এভিয়েশনের হ্যাঙ্গার রয়েছে। এগুলো হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উত্তর সীমান্তে নিয়ে যাওয়ার জন্য ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি স্থানান্তর প্রকল্প হাতে নেয়া হয়।
কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করার প্রথম পর্যায়ের কাজ প্রায় শেষের দিকে। প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের পত্র-প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের রানওয়ে ওভারলেকরণের কাজ শেষ হবে দুই এক মাসের মধ্যেই। বিদ্যমান রানওয়েকে শক্তিশালী ও প্রশস্তকরণের পাশাপাশি নির্ভরযোগ্য লাইটিং সিস্টেমে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। রানওয়ের কাজ শেষ হলে এবং জ্বালানি ডিপো চালু হলে সিলেট থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অপারেট করা যাবে।
সৈয়পুর বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল ভবনের নির্মাণ কাজ চলতি বছরের শেষ হওয়ার কথা। টার্মিনালে আন্তর্জাতিক মানের সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে এবং এসব টার্মিনাল পরিচালনা শুরু হলে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের যাত্রী ধারণক্ষমতা দ্বিগুণ হবে। কর্মকর্তারা জানান, সৈয়দপুর বিমানবন্দর আধুনিকায়নে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। যশোর বিমানবন্দরে ৩২০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি অত্যাধুনিক টার্মিনাল ভবন ও পার্কিং জোন নির্মাণের কাজ চলছে। যেখানে থাকবে নতুন কনভেয়ার বেল্ট, অ্যারাইভ্যাল ও ভিআইপি লাউঞ্জ। চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে শক্তিশালী ও আধুনিকায়ন করার জন্য ৫৪০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলতি বছরেই শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহিবুল হক বলেন, রাজধানীর বাইরে বিমানবন্দরে বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশের বিমান বন্দরগুলোর চেহারাই পাল্টে যাবে। পাশাপাশি দেশের জনগণ আরামদায়ক ভ্রমণ করতে পাবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।