পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশেই মিলবে উন্নত চিকিৎসা
ঢাকা শিশু হাসপাতালে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিসম্পন্ন একটি স্টেম সেল থেরাপি ইউনিট তৈরি করা হয়েছে। এখন থেকে স্টেম সেল থেরাপির মাধ্যমে সার্জারির বিভিন্ন রোগের চিকিৎসাসহ অটিজম এবং সেরিব্রাল পালসির মত অনেক জটিল রোগের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে। এসব রোগে আক্রান্ত শিশুদের সময়মত চিকিৎসা দেয়া হলে তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে সক্ষম হবে। ফলে ওইসব শিশুরা দেশের বোঝা না হয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে।
প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে সমাজসেবা অধিদফতর ও ঢাকা শিশু হাসপাতাল। এমনকি প্রতিবন্ধী রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা সম্ভব এমন মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। তারা বলেন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে এতোদিন এসব আধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধা না থাকায় দেশে এ ধরনের জটিল রোগের চিকিৎসা হতো না। ফলে অনেক শিশু অকালে মৃত্যুবরণ করতো অথবা উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে চলে যেত। তবে এখন থেকে এসব রোগের চিকিৎসা দেশেই করা সম্ভব হবে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, গত ১৫ বছর ধরে স্টেমসেল থেরাপি বিশ্বব্যাপী ফোকাসে পরিণত হয়েছে। স্টেমসেল থেরাপিটি লিউক্যামিয়া এবং লিস্ফোমাসহ অন্যান্য মারাত্মক রোগ যেমন এসএলই, হেলারসিনড্রোম, অস্টিওপোরোসিস ইত্যাদির মতো বহুমুখী ব্যাধিসহ রক্তসংবহন রোগের চিকিৎসায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেলুলার প্রতিস্থাপন থেরাপি সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী শিশু স্নায়বিক স্পেকট্রাম ডিসর্ডারের চিকিৎসায় থেরাপি ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। বোনম্যারো, সংক্রমিত পেরিফারাল রক্ত প্রণালী থেকে প্রাপ্ত স্টেমসেলের পদার্থে সেলুলার থেরাপি এখন রুটিন ক্লিনিক্যাল অনুশীলন অনেক ব্যবহার করা হচ্ছে। সেলুলার থেরাপি ব্যবহার করে শিশু মৃত্যুর হার এবং অসুস্থতা হ্রাস করা সম্ভব।
স্পাই ইন্ট্রা-অপারেটিভ ইমেজিং সিস্টেম (ফ্লারেসন্ট ইমেজিং সিস্টেম) ইউথ ইন্টগ্রেটিড সফটওয়ার অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে মিনিমাল ইনভেসিভ সার্জারির সময় রিয়েল টাইম মাইক্রোভাসকুলার সার্কুলেশন দেখা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে খুব সুক্ষ্ণভাবে সার্জিক্যাল এনাসস্টোমোসিস, টিস্যু রিসেকশান, টিউমার রিসেকশন করে সার্জিক্যাল আউটকাম অনেকাংশে বাড়ানো সম্ভব হবে। স্পাই ইমেজিংয়ের মাধ্যমে রিয়েল টাইম টিস্যু পারফেকশান অ্যান্ড টিস্যু সার্কুলেশন দেখাসহ মাল্টিস্লাইস ইমেজ নিয়ে সুক্ষভাবে অপারেশন করা সম্ভব।
সরেজমিনে ঢাকা শিশু হাসপাতাল পরিদর্শন করে দেখা যায়, প্রকল্পের আওতায় আধুনিক মডিউলার অপারেশন থিয়েটার তৈরি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এখানটায় অপারেশেন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে সার্জিক্যাল আইসিইউ ওয়ার্ড, সার্জিক্যাল এইচডিইউ ওয়ার্ড, পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড এবং বিশেযায়িত ৩২ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের কাজ। যা জনস্বার্থে এরই মধ্যে শিশুদের চিকিৎসায় অবমুক্ত করা হয়েছে।
যদিও করোনার কারণে এখনও চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়নি। তাই ক্ষুদ্র পরিসরে চলছে কার্যক্রম। একাধিক চিকিৎসক জানিয়েছেন, স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হলে শিশু হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় আসবে ব্যাপক পরিবর্তন। জটিল শিশু রোগীদের আর দেশের বাইরে যেতে হবে না। দেশেই চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে।
জানা গেছে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুযায়ী সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘ঢাকা শিশু হাসপাতালের অ্যাডভান্সড শিশু সার্জারি অ্যান্ড স্টেম সেল থেরাপি ইউনিট স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি শুরু হয় ২০১৮ সালের জুলাই মাসে। ২৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সমাজসেবা অধিদফতর ও ঢাকা শিশু হাসপাতাল।
প্রকল্প পরিচালক ও সমাজসেবা অধিদফতরের উপরিচালক হেলাল উদ্দিন ভূইয়া ইনকিলাবকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিশু হাসপাতালের যৌথ অর্থায়নে। প্রকল্পের মেয়াদকাল জুলাই ২০১৮ থেকে ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত। প্রকল্পের বাজেট ২৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। যার মধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এরমধ্যে যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ১৩ কোটি ২০ লাখ ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া ঢাকা শিশু হাসপাতালের ৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, সরকারি নিয়মানুযায়ী দরপত্র আহবান করে ১২ কোটি ৩২ লাখ ৯৬ হাজার টাকার যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের ক্রয় কাজ সম্পন্ন করা হয়। অবশিষ্ট অর্থ ফেরত দেয়া হয়েছে। কেনাকাটার ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল-২০০৬ ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা-২০০৮ অনুসরণ করা হয়েছে। বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাবদ জিওবি খাতে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু করোনার কারণে সেই টাকা ব্যয় করা সম্ভব হয়নি।
হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ঢাকা শিশু হাসপাতালের ৮০ জন চিকিৎসক বৈদেশিক প্রশিক্ষণে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারতসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশে করোনার কারণে প্রশিক্ষণের বিষয়ে কোন সাড়া না পাওয়ায় এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তবে যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঢাকা শিশু হাসপাতালের ৩ জন চিকিৎসককে বিদেশে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের ৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকার মধ্যে কোন টাকা এখনো ব্যয় হয়নি। প্রকল্পের আওতায় আধুনিক মডিউলার অপারেশন থিয়েটার, সার্জিক্যাল আইসিইউ ওয়ার্ড, সার্জিক্যাল এইচডিইউ ওয়ার্ড, পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড এবং বিশেযায়িত ৩২ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়েছে। যা জনস্বার্থে এরই মধ্যে শিশুদের চিকিৎসায় অবমুক্ত করা হয়েছে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. শফি আহমেদ মুয়াজ বলেন, প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে করোনার কারণে এখানো সবকিছু বুঝে নেয়া সম্ভব হয়নি। খুব শিগগিরই এগুলো বুঝে নিয়ে কাজ শুরু করতে পারবো। তবে চিকিৎসা শুরু করতে আরও কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। কারণ করোনা মহামারীতে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ বন্ধ ছিল। তাই যেসব চিকিৎসকের স্টেমসেল বিষয়ে প্রশিক্ষণ দরকার সেটি করা সম্ভব হয়নি। এখন সেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে, এজন্য যোগাযোগ করা হচ্ছে। এসব কাজ সম্পন্নের পাশাপাশি ধীরে ধীরে শিশুদের জন্য এই অত্যাধুনিক চিকিৎসা শুরু করবো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।