পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘মানহানি’ হচ্ছে একজনের। মামলা ঠুকে দিচ্ছেন অন্যজন। ‘গুজব রটছে’ হয়তো একজনের নামে, মামলার বাদী হচ্ছেন আরেকজন। ‘অতি উৎসাহীদের হাতে এভাবেই হয়রানির হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-২০১৮’ নামক আইনটি। এ কারণে হালের সবচেয়ে নিবর্তনমূলক আইন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এটি।
আইনজ্ঞদের মনে করেন, আইনটি উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ হয়েছে। এটি যদি সংবিধান পরিপন্থি ঘোষিত হয়, তাহলে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে যেসব মামলা দায়ের হচ্ছে- সব বাতিল (কোয়াশ) হয়ে যাবে। তাদের মতে, আইন সব সময়ই প্রণীত হয় মানুষকে সুরক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু সব আইনেরই দুটি দিক রয়েছে। আইনটিকে কি কাজে ব্যবহার করা হবে তা নির্ভর করে ব্যবহারকারী এবং বাস্তবায়নের ওপর।
‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-২০১৮’ মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রণীত হলেও এটির অপপ্রয়োগের বিষয়টিই খবরে আসছে বেশি। যদিও আইনটি প্রণয়নকালে সরকারের পক্ষ থেকে বরাবর বলা হচ্ছিল আইনটির অপপ্রয়োগ হবে না। আইনটি নিয়ে রিট হয়েছে। রুলও জারি হয়েছে। রুলের শুনানিতে যদি এটি প্রমাণিত হয় যে, আইনটির অপপ্রয়োগ হচ্ছে তাহলে কিন্তু অতিউৎসাহী মামলাকারীদের জন্য ভিন্ন ফলাফল বয়ে আনতে পারে।
বেসরকারি সংস্থা এবং প্রকাশিত সংবাদের তথ্য অনুযায়ী, আইন প্রণয়নকালীন প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে দায়ের হচ্ছে মামলা। বিশেষ করে করোনা সংক্রমণকালে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে এ আইনে মামলা দায়েরের প্রবণতা। চলতিবছর মার্চ থেকে মে পর্যন্ত তিন মাসে ডিজিটাল সিকিউরিটে অ্যাক্টে মামলা হয় ৬৪টি।
এর আগের বছর ২০১৯ সালে পুরো বছরজুড়ে মামলা হয়েছে ৬৩টি। মামলাগুলো বেশি দায়ের হচ্ছে গণমাধ্যমকর্মী, সম্পাদক, প্রকাশক, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধেই। মামলা দায়েরের পর গ্রেফতারও হচ্ছেন তারা। মামলাগুলোর অধিকাংশই দায়ের করছে যিনি কথিত ওই ঘটনায় কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হননি তিনি। কোনো কোনো মামলার বাদী হচ্ছে পুলিশ নিজেই। সরকারদলীয় নেতাকর্মী এমনকি কোনো কোনো এমপিও মামলার বাদী হচ্ছেন।
করোনা সংক্রমণের পর মার্চ মাসে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা হয় ১১টি। এপ্রিলে হয়েছে ১৮টি। মে মাসে প্রথম ১০ দিনে মামলা হয়েছে ১৪টি। জুন মাসে মামলা হয় ২১টির মতো। এসব মামলার এজাহার পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রথম ৪৩টি মামলার ১১টি দায়ের করা হয়েছে করোনাভাইরাস নিয়ে ‘গুজব’ ছড়ানোর অভিযোগে। ৬টি মামলা হয়েছে- মন্ত্রী, এমপি বা স্থানীয় মেয়রকে জড়িয়ে ‘মিথ্যা তথ্য’ ছড়ানোর অভিযোগে। ‘মিথ্যা ও মানহানিকর সংবাদ’ প্রকাশ এবং সেই সংবাদ শেয়ার করার অভিযোগেও মামলা হয়েছে ৫টি। ৩টি মামলা হয়েছে- প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কট‚ক্তি করার অভিযোগে। পুলিশের ভ‚মিকার সমালোচনা করার অভিযোগে মামলা হয়েছে ৪টি।
এসব মামলায় এ যাবত গ্রেফতার করা হয়েছে ১২ সাংবাদিকসহ ৫২ জনকে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার, অ্যাডভোকেট, প্রভাষক, ইমাম, ডাক্তার, ব্যবসায়ী এবং দু’জন ছাত্রও রয়েছেন। মামলা দায়েরের প্রবণতা সম্পর্কে আইনজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ সংসদে পাস হওয়ার আগে থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে ভয়াবহ ধারাগুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল আইনটি হবে নির্বতনমূলক। এখন সেই উদ্বেগই সত্যে পরিণত হলো। যে ধারাগুলো আইনটিতে রয়েছে এবং অপপ্রয়োগ হচ্ছে- সেগুলো নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। এ করোনাকালেও মানুষ এ আইন থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এখন আইনটির সর্বোচ্চ অপপ্রয়োগ চলছে।
মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ’ (এইচআরপিবি) প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, এটি এক অদ্ভুত ব্যাপার। ঘটনার মাধ্যমে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়েও একজনের পক্ষে আরেকজন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা ঠুকে দিচ্ছেন। এটি করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ‘নেক নজরে’ পড়ার জন্য। নানামুখি বিশেষ উদ্দেশ্য থেকে।
অথচ আইনটি উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ হয়েছে। এর দুটি ধারা বাতিলের জন্য রুলও জারি হয়েছে। রুলের শুনানিকালে যদি আদালতে এটি প্রমাণিত হয় যে, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের অপপ্রয়োগ হচ্ছে- তাহলে এখন একজনের বিরুদ্ধে অন্যের হয়ে মামলা দায়েরকারীদের জন্য কিন্তু ভিন্ন ফল বয়ে আনতে পারে।
তিনি বলেন, আইনটি পাস করার সময়ই বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উত্থাপন করা হয় এ মর্মে যে, আইনটির অপপ্রয়োগ হবে। মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হবে। এখন দেখছি দিন যতই যাচ্ছে, ততোই আইনটির অপপ্রয়োগ হচ্ছে। বিশেষ করে করোনা প্রকোপের সময় ডিজিটাল আইনটি প্রয়োগ করা হচ্ছে বেশি। এখন যদি আদালতে প্রমাণ হয় যে, আইনটি মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করছে, তাহলে এখন যেসব মামলা দায়ের হচ্ছে এসবের ভবিষ্যৎ ভালো হবে না।
এদিকে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো উচ্চ আদালতে ‘অবৈধ’ ঘোষিত কিংবা বাতিল হলে এ আইনে দায়েরকৃত মামলাগুলো খারিজ হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট শিশির মনির। তিনি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের ৪টি ধারা চ্যালেঞ্জ করে দায়েরকৃত রিটের আইনজীবী।
মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে ইনকিলাবকে তিনি বলেন, গত ১৯ জানুয়ারি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের ২৫, ২৮, ২৯ এবং ৩১ ধারা চ্যালেঞ্জ করে রিট ফাইল করি। প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি চার সপ্তাহের রুল জারি করেন। এখনও রুলের শুনানি হয়নি। তবে আমরা চূড়ান্ত শুনানির প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। তিনি আরো বলেন, রিটে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের উল্লিখিত চারটি ধারার সাংবিধানিক গ্রহণযোগ্যতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। আমরা বলেছি, এ ধারাগুলো সংবিধানের ৩১ ও ৩৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আদালত ২৫ ও ৩১ ধারা কেন বেআইনি এবং সংবিধান পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না- এই মর্মে রুলজারি করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।