পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চারদলীয় জোট সরকার আমলে জামায়াতের মদদে জঙ্গিদের উত্থান -স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গুঁড়িয়ে দিয়েছে জঙ্গিদের আস্তানা ও প্রশিক্ষণ ক্যাম্প Ñআইজিপি
উমর ফারুক আলহাদী : জঙ্গি দমনে কঠোর অবস্থানে সরকার। ইতোমধ্যে জঙ্গিবিরোধী ইস্যুতে বহুমাত্রিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্বরিত সিদ্ধান্ত ও বহুমাত্রিক গঠনমূলক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কারণেই জঙ্গিদমনে এ সরকার সফল বলে জানিয়েছেন একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা। গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার পর জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ তাদের বিভিন্ন আস্থানা গুঁড়িয়ে দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গিদের নেটওয়ার্কও দুর্বল হয়ে গেছে। তারা বলছেন, গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনার পর জঙ্গিবিরোধী অভিযান জোরদার করা হয়। হানা দেয়া হয় জঙ্গিদের আস্তানায়। ব্লক রেইড দিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গত এক মাসে শীর্ষ জঙ্গিনেতাসহ প্রায় ৩ শতাধিক গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে প্রচুর বিস্ফোরক দ্রব্য ও গোলাবারুদ ও অস্ত্র। গ্রেফতারকৃতদের বেশিরভাগই জেএমবির সদস্য।
জঙ্গি সংগঠন জেএমবির উত্থান ঘটে বিগত চারদলীয় জোট সরকার আমলে। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন সরকারের ক্ষমতার অংশীদার জামায়াতের অর্থায়ন, সহযোগিতা এবং আশ্রয়েই ওই জঙ্গি গোষ্ঠীর বিস্তার ঘটে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, জামায়াতের হাত ধরেই দেশে জেএমবিসহ সকল জঙ্গির উত্থান ঘটে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। জামায়াত-বিএনপি সরকার আমলে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জেএমবি সারা দেশে বোমা হামলার মাধ্যমে যে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল, সেই আতঙ্ক এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন এদেশের মানুষ। জেএমবির ওই ভয়াবহ হামলায় আইনজীবী, বিচারক ও সাধারণ নিরীহ মানুষসহ ৩৩ জন নিহত হন। আহত হয়েছিলেন ৪ শতাধিক। তখন জেএমবি’র বোমা হামলায় অনেকেই সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেন। তাদের অনেকেই দুর্বিষহ যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন। ওই জঙ্গি চক্র আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাব পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে জঙ্গি তৎপরতায় জেএমবির নাম। জেএমবির পাশাপাশি আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, লস্করে তৈয়বা, নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদ (হুজি), আনসার আল ইসলাম, হিজবুত তাহরিরসহ বিভিন্ন নামে জঙ্গি সংগঠন গড়ে উঠলেও এদের পেছনে অর্থ জোগানদাতা হিসাবে জামায়াত ও বিএনপি’র কিছু নেতার নাম তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। চট্টগ্রামে একজন বিএনপি নেতার মেয়েকে ইতোমধ্যে র্যাব গ্রেফতার করেছে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে। এছাড়া চট্টগ্রামে একটি আস্তানায় র্যাব অভিযান চালিয়ে গতবছর জঙ্গি কর্মকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগে শিবিরসহ ৩০ জঙ্গিকে গ্রেফতার করে। ওই আস্তানা থেকে র্যাব প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে।
র্যাব সদর দফতর জানায়, জঙ্গিবিরোধী অভিযানে ১৪টি ব্যাটালিয়ন দিন-রাত দায়িত্ব পালন করছে। গত ৭ মাস ৮ দিনে (গত সোমবার পর্যন্ত) ২৭ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে। তার মধ্যে ২২ জনই জেএমবির সদস্য। এদের অধিকাংশই একসময় জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। সেইসাথে অধিকাংশ জঙ্গিই ওহাবী ও সালাফী মতাদর্শের অনুসারী বলে তদন্তে পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার জঙ্গিবিরোধী অভিযান জোরদার করার পাশাপাশি র্যাব-পুলিশের জন্য অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির নিরাপত্তা সরঞ্জাম এবং অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে। সরকার সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে গঠন করেছে বিশেষ ইউনিট ‘কাউন্টার টেরেরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিপিসি)’। ইতোমধ্যে ওই বিশেষ টিম জঙ্গি দমনে বহু সফলতা অর্জন করেছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, জঙ্গি দমনে সরকার কঠোর অবস্থানে। বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে সফল। তিনি বলেন, এখানে কোনো আইএস নেই। দেশীয় উগ্রপন্থীরা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত হচ্ছে আর এদের পেছনে অর্থ জোগান দিচ্ছে একটি বিশেষ মহল।
মন্ত্রী বলেন, চারদলীয় জোট সরকার আমলে জামায়াতের ছত্রছায়ায় জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটে। তবে বর্তমান সরকার জঙ্গিদের কঠোর হস্তে দমন করছে। তিনি আরো বলেন, আমরা জানতে পেরেছি জঙ্গিরা নিজস্ব অ্যাপস ব্যবহার করেছে। এ ক্ষেত্রে তারা ইমো, ভাইবার, স্কাইপে, হোয়াটসআপের মতো যে অ্যাপসগুলো সচরাচর ব্যবহার করা হয় তা ব্যবহার করেনি। তিনি বলেন, জঙ্গিরা বাংলাদেশে যে তাদের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে সেটাকে সমূলে উৎপাটন করতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি।
মন্ত্রী বলেন, নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে জঙ্গিরা তাদের মধ্যে যোগাযোগ করে। এ জন্য র্যাব-পুলিশকে নতুন নতুন অত্যাধুনিক কৌশল গ্রহণ করে অভিযান জোরদার করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, পুলিশ, র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আধুনিকায়ন করার জন্য আমরা সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছি। তারা বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রও ব্যবহার করছে। প্রয়োজন ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাদের জন্য আরো কী কী প্রযুক্তিগত সুবিধা প্রয়োজন এ বিষয়েও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আরো আধুনিক কী কী ডিভাইস প্রয়োজন সেগুলো আমরা বিবেচনায় রেখেছি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, উগ্রপন্থি জঙ্গি সংগঠনগুলো একের পর এক কৌশল বদলে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে। জঙ্গি দমনে সিম রি-রেজিস্ট্রেশনের পাশাপাশি ইন্টারনেটে সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও নজরদারি বাড়ানো হয়। কিন্তু সম্প্রতি গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি ও শোলাকিয়ায় হামলাকারী জঙ্গিরা সেই নজরদারি এড়াতে সক্ষম হয়। এমন পরিস্থিতিতে জঙ্গি প্রতিরোধে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এদিকে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, জঙ্গি ইস্যুতে কোনো ধরনের ছাড়া নেই। যে কোনো মূল্যে এদের প্রতিহত করা হবে। জঙ্গিবাদ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং আমারা অনেকটা সফল। তিনি বলেন, ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে উগ্রবাদী জঙ্গি গোষ্ঠী মানুষকে বিপথগামী করছে। এদের ব্যাপারে সবাইকে সর্তক থাকতে হবে। বিশেষ করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-অভিভাবক, মসজিদের ইমাম, ওলামা মাশায়েখ মাদ্রাসার শিক্ষকসহ সমাজের সকলকে জঙ্গিবিরোধী সচেতনতা বাড়াতে হবে।
আইজিপি আরো বলেন, চিহ্নিত একটি গোষ্ঠী তাদের লেবাস পরিবর্তন করে নতুন নতুন নামে জঙ্গি কার্যক্রম চালাচ্ছে। জঙ্গিদের অর্থায়নের পেছনেও ওই চক্রটি জড়িত। আমরা ইতোমধ্যে তাদের শনাক্ত করেছি এবং আরো তদন্ত চলছে। তিনি বলেন, জঙ্গিদের মূলোৎপাটনে সরকার বদ্ধপরিকর। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সেভাবেই কাজ করছে। তারা গুঁড়িয়ে দিয়েছে জঙ্গিদের আস্তানা ও প্রশিক্ষণ ক্যাম্প।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গি দমনে সরকার বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এসব কারণে অনেকটা সফলতা এসেছে। জঙ্গিবাদ দমনে জিরো টলারেন্স নীতিতে অবস্থান করছে সরকার। তবে এবার জঙ্গি দমনের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মসজিদের ইমাম, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মাধ্যমে সামাজিক সচেতনা তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। জঙ্গি অর্থায়নের ওপর কঠোর নজরদারির নির্দেশ তো আছেই। কিন্তু কারা জঙ্গি অর্থায়নের জোগান দিচ্ছে, তাদের শনাক্ত ও তালিকা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া যেসব পরিবারের লোকজন নিখোঁজ রয়েছে তাদের নিকটস্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জানাতে বলা হয়েছে।
জঙ্গি অভিযান ও তাদের কর্মকা- সম্পর্কে জানতে চাইলে র্যাবের মিডিয়া ও আইন শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ বলেন, জঙ্গি দমনে র্যাব কঠোর অবস্থানে আছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু জঙ্গি গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই জেএমবির সদস্য।
এদিকে জামায়াতের দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সাথে যোগাযোগের বারবার চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে জামায়াতের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।