Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি চীনের সঙ্গে শক্তিশালী

কূটনৈতিক সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ পিএম

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর সিলেট ভারত সীমান্ত থেকে কমবেশি ৫০ কিলোমিটার দূরে। এপ্রিলে সিলেট বিমানবন্দরের নতুন একটি টার্মিনাল নির্মাণের ২৫ কোটি ডলারের চুক্তির দরপত্রে ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠান হেরে যায় চীনের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে। জুনে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিতব্য পণ্যের ৯৭ শতাংশের ওপর শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা দেয় চীন। তিস্তা নদীর পানিবন্টন চুক্তি নিয়ে ভারতের সঙ্গে এক দশক ধরে চলা দরকষাকষিতে ত্যক্ত বিরক্ত বাংলাদেশ এই মাসেই ওই নদীর পানি ব্যবস্থাপনার জন্য চীনের কাছে ১০০ কোটি ডলার চেয়েছে।

স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভুদ্যয় ঘটে অংশত ভারতের কারণে। ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সাথে লড়াইরত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পক্ষে হস্তক্ষেপ করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠই ছিল। তবে অনেক বাংলাদেশিই ভারতকে অহঙ্কারী মিত্র হিসেবে দেখে। এক বাংলাদেশি সাংবাদিক বলেন, তারা বিশ্বাসই করে না যে আমরা স্বাধীন।

তারা সব কিছুতে হস্তক্ষেপ করে। তারা মনে করে আমাদের আমলারা তাদের জন্য কাজ করে। বর্তমান ভারত সরকারের বিভিন্ন মুসলিম-বিরোধী নীতিও বাংলাদেশে এই মনোভাবকে উস্কে দিয়েছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৯০ শতাংশই মুসলিম।
অন্যদিকে চীন বাংলাদেশে সা¤প্রতিককালে ৭টি ‘মৈত্রী সেতু’ স্থাপন করেছে। ২০১৮ সালে ভারতকে টপকে চীন হয়ে উঠে বাংলাদেশের বৈদেশিক বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় উৎস। দেশটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক আংশিদারও। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে এক রাষ্ট্রীয় সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২৭টি অবকাঠামো প্রকল্পে ২০০০ কোটি ডলারেরও বেশি ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দেন।

বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো অবকাঠামো উন্নয়ন, জ্বালানি ও টেলিকম খাতে ঝেঁকে বসেছে। ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, চীনের পকেট যে শুধু গভীর তা-ই নয়; বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশের তুলনায় চীনের দ্বিধাদ্ব›দ্বও কম। ২০১৩ সালে পদ্মা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মানে বিশ্বব্যাংকের ১২০ কোটি ডলারের ঋণ প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ। ওই প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে বিশ্বব্যাংক সক্রিয় হয়ে ওঠার পরই এই পদক্ষেপ নেয় দেশটি। এরপর সেখানে ঢুকে পড়ে চীন।

আলী রীয়াজ আরও বলেন, গত কয়েক বছরে চীনে পড়াশুনা করতে যাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও বহুগুণ বেড়েছে। মিডিয়াও পক্ষে চলে আসছে। একটি আর্থিক পত্রিকার প্রতিবেদক জানান, ‘আমার পত্রিকার ৭০ শতাংশ সাংবাদিক চীনে গেছেন। তিনি নিজেও ২০১৮ সালে একটি ফেলোশিপের অংশ হিসেবে চীনে ১০ মাস ছিলেন। বাংলাদেশে কোভিড-১৯ আসার পরপরই চীনা ডাক্তারদের একটি দল বাংলাদেশে আসে মহামারি মোকাবিলায় সহায়তা দেয়ার উদ্দেশ্যে।
আকৃষ্টকরণের এই চেষ্টা কাজে দিচ্ছে। ভারতের চেয়েও অনেক কাঠামোবদ্ধভাবে মুসলিমদের হেনস্থা করে চীন সরকার। বাংলাদেশি পণ্যকে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার ক্ষেত্রেও চীন (ভারতের তুলনায়) পিছিয়েই ছিল। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশি মিডিয়ায় চীন খুব কম সমালোচনারই লক্ষ্যবস্তু।
তবে বাংলাদেশ সরকার কিছুটা সতর্ক। চীনের কাছে অত্যাধিক ঋণী হয়ে পড়া নিয়ে খেয়ালী সরকার। এছাড়া ভারত যেন রুষ্ট না হয়, সেই ব্যাপারেও চোখকান খোলা রেখেছে বাংলাদেশ।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মার্চে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা ছিল। অবশ্য করোনাভাইরাস ওই সফরকে ভেস্তে দেয়। কিন্তু এত বড় ও শক্তিশালী প্রতিবেশী থাকার যন্ত্রণাও কম নয়। রীয়াজ বলছিলেন, ‘ভারতের নীতিনির্ধারকগণ ও সংবাদমাধ্যম সার্বক্ষণিক বাংলাদেশকে মনে করিয়ে দেন যে, বাংলাদেশ অনেক ছোট ও দেশটির গুরুত্বও অত বেশি নয়। কিন্তু চীন সেটা করে না।

 



 

Show all comments
  • Ali Hussain ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:৩৬ পিএম says : 0
    Come on, oppose Modi and stand by the Indians Muslims.
    Total Reply(0) Reply
  • রুবেল মিয়া ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:১৭ পিএম says : 0
    ভারতের সঙ্গে যদি সম্পর্ক নাও ভেঙে থাকে তাহলে বাংলার ১৮ কৌটি মানুষের প্রাণের দাবি সম্পর্ক বিচ্ছিহ্ন করা হোক.
    Total Reply(0) Reply
  • Rasidul Islam ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:১৭ পিএম says : 0
    মুনাফিকদের সাথে সম্পর্ক না রাখাই ভালো শুধু নিবার বেলায় আছে দেওয়ার বেলায় নাই
    Total Reply(0) Reply
  • Abrar Fahim ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:১৭ পিএম says : 0
    আমরাও সেটাই চাই।আমাদের অর্থনীতিতে চীনের অবদান সবচেয়ে বেশি ভারতের নয়।সুতরাং ভারতকে বয়কট করা হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Sumon Talukdar ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:১৭ পিএম says : 0
    এরকম একটা খবরের আশায় ছিলাম খবরটি যেন সত্যি এবং প্রতিষ্ঠিত হয়
    Total Reply(0) Reply
  • Prince Hafiz ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:১৮ পিএম says : 0
    ভারত কখনো কারো বন্ধু হতে পারেনা। বিশ্বের মধ্যে এক নাম্বার বেইমান রাষ্ট্র হল ভারত।
    Total Reply(0) Reply
  • Sohel Miah ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:১৮ পিএম says : 0
    বাংলাদেশ এবং চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে ভারত একমাত্র প্রধান শত্রু।ভারতে আগ্রাসন ঠেকাতে বাংলাদেশে চীনের সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের অনুরোধ জানাচ্ছি। বাংলাদেশে চীনের সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের ফলে আন্তর্জাতিক মাঠে বাংলাদেশে চলে যাবে এক অন্যান্য উচ্চতায়।
    Total Reply(0) Reply
  • Habibul Islam ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:১৮ পিএম says : 0
    Alhamdulillah! Duniar sobai Jane varot hocche ekta khas beiman.beimaner Sathe thaka manei khotir somvabona
    Total Reply(0) Reply
  • abul kalam ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৫৮ পিএম says : 0
    ভারতের কারনে ভারত বাংলাদেশে ঘৃনিত
    Total Reply(0) Reply
  • Firoz khan ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:৩৭ পিএম says : 0
    ভারতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা হোক..
    Total Reply(0) Reply
  • Firoz khan ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:৩৮ পিএম says : 0
    ভারতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা হোক..
    Total Reply(0) Reply
  • Gm Anarul Islam Anik ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:৪৯ পিএম says : 0
    দেশের মানুষ না খেয়ে মরে গেলেও ভারতের দরকার নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Sardar Samim Al Hasan ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৯:৫৫ পিএম says : 0
    ১৯৭১সালের ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবষ। আমরা দীর্ঘ ৯ মাস আমাদের যা কিছু ছিল তাই দিয়েই যুদ্ধ করেছি তখন ভারত আমাদের কোনো সহযোগিতা করে নাই। যখন তারা দেখতে পেলো যে বাংগালীরা কারোর সাহায্য ব্যাতীত নিজেরাই বিজয় অর্জন করে ফেলবে এবং এটা একটা নিশ্চিত বিষয় তখন এই ভারতী বজ্জাতেরা নিজেদের নাম কামনোর জন্য, নিজেদের সার্থের জন্য আমাদের মুক্তি যোদ্ধাদের সাথে দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র ১৩ দিন আগে খুব ই যৎসামান্য পরিসরে যোগদান করে যেখানে তাদের কোনো উল্ল্যেখযোগ্য হতাহত ও নাই। আর এতে করে এই বিষয়টা দীবালোকের ন্যায় পরিষ্কার যে এই স্বধীনতার ১০০% ভাগীদার একমাত্র আমরা বাংলাদেশীরাই অন্য কেউ নয়।অন্য কোনো দেশের বলে নয় এমনকি শুরু থেকে শেষ পর্যত, সুপার পাওয়ার আমেরিকা ও আমাদের বিরুদ্ধে ছিলো। আমরা পরোয়া করি নাই, আর তখন তো ভারতীদের পেটেই প্রচন্ড খুদা সুতরাং সে নিজেইতো ছিলো অসহায়। সে যা করেছে নিজের সার্থেই এটা একটা সপ্ষ্ট বিষয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:১৭ পিএম says : 0
    @ Mr. Sardar Samim Al Hasan, আপনার কথা শুনে হাসবো না কাদবো বুঝে উঠতে পারছিনা। আপনি এসব কথা কোথা থেকে পেয়েছেন?? বাংলাদেশের ইতিহাসকে বিকৃতি করার প্রচেষ্টায় রত হচ্ছে পাকিস্তানিরা মানে বাংলাদেশের অপশক্তিরা। আপনার মত লোকদের জন্যেই আজ ভারত বাংলাদেশের এই অবস্থা করে রেখেছে। এখন আপনি কি পাকিদের পক্ষে নাকি লাল পতাকা ভারসেস লাল পতাকার কাজ করছেন??? আমি ’৬৫ সাল থেকেই ছাত্র লীগের সাথে সম্পৃক্ত এবং ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধা। সেই ’৭১ সালে বগুড়া জেলায় আমার নামে হুলিয়া ছিল আমার মা ছোট ভাই ও বোনদের নিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন। আমি সেইসময়ে বগুড়ায় একটা ভাল অবস্থানেই ছিলাম আমি জানি ২৬ মার্চ ’৭১ থেকেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সরকার আমাদেরকে আশ্রয় দিয়ে আমাদের পাশে ছিল। এরপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন সাহেবের সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রাগান্ধির চুক্তি হয় মুক্তিযুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য দেয়ার জন্যে পরবর্তীতে রাশিয়ার সাথেও এই ভারতের মাধ্যমে চুক্তি হয়। সেই হিসাবে প্রচুর অস্ত্র আসে এবং আমরা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ি। ভারতীয় সৈন্যরা আমদেরকে বেসামরিক লোকদেরকে সামরিক প্রশিক্ষন দিয়ে অস্ত্র সহ যুদ্ধে পাঠিয়েছে এবং যখন ডিসেম্বর মাসে সরাসরি যুদ্ধ শুরু হয় তখন ভারতীয় সৈনা আমাদের পেছেনে থাকে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পরেছিল এটা সত্য। কিন্তু যুদ্ধে আমাদের সাথে ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়েছে যদিও সংখ্যায় তারা কম। ১৬ ডিসেম্বর যুদ্ধে পাকিরা কাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল সেটাকি আপনার মনে আছে??? পাকিরা কোনদিন মানে নাই আমরা বাঙালীরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। পাকিরা এখনও বলে ভারত পাকিদেরকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে যুদ্ধ করে বিতারিত করেছে। এরপর যদি আপনি যুদ্ধের বিষয় নিয়ে ভারত সম্পর্কে কটূক্তি করেন তাহলে আপনাকে পাকিদের দালাল ছাড়া আর কিছুই বলা যায়না।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:৫৭ পিএম says : 0
    চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক দিন দিন উন্নতির দিকে যাচ্ছে এটাই স্বাভাবিক। ভারত মুসলিম বিদ্বেষের কারনে বাংলাদেশের সাথে চাইলেও সম্পর্কের উন্নতী করতে পারবেনা এটা মোদী সরকার ভাল ভাবে জানে সাথে সাথে হাসিনা সরকারও অবগত আছে। কাজেই হাসিনা সরকার যতটুকু সম্ভব চীনকেই সমর্থন দিয়ে যাবে এবং চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নত করে ভারতের সাথে একটা ব্যাল্যান্সে আসার চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সম্পর্ক

১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২
১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ