Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ইরাকে জোটের বিমান হামলার দু’বছর অনেক ক্ষেত্রেই ফল হয়েছে ধ্বংসকান্ড

প্রকাশের সময় : ১০ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : দু’বছর আগে ২০১৪ সালের ৮ আগস্ট মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট ইরাকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে প্রথম বিমান হামলা শুরু করে। উত্তর ইরাকে সিনজার পর্বতে আইএসের হাতে অবরুদ্ধ ইয়াজদি যোদ্ধা ও বেসামরিক লোকদের রক্ষার লক্ষ্যে মার্কিন জঙ্গি বিমান এ হামলা চালায়। তার পর থেকে আইএসবিরোধী জোট এ পর্যন্ত ইরাকে ৯ হাজার ৪০০ বার বিমান হামলা চালিয়েছে যার পরিণতিতে ইরাকি সেনাবাহিনী আইএসের কাছে হারানো শহর, নগর, সরবরাহ পথ ও অবকাঠামোর অনেকটাই ফিরে পেয়েছে।
অন্যদিকে সিরিয়ায় বিমান হামলা চালানো হয়েছে ৪ হাজার ৭০০ বার। আইএসবিরোধী বিমান হামলায় প্রতিদিন ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ১৯ লাখ ডলার। আর ১৫ জুলাই ২০১৬ পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে ৮৪০ কোটি ডলার। আইএসবিরোধী যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত হয়নি। তা সত্ত্বেও এ পর্যন্ত তিনজন মার্কিন সৈন্য এ যুদ্ধে নিহত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এ বিমান হামলার ফলে আইএস তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকার ৪০ শতাংশ হারিয়েছে। তবে কথা হচ্ছে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের বিমান হামলা কুর্দি ও ইরাকি বাহিনীর হৃত এলাকা পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করলেও অনেক ক্ষেত্রেই তার ফল হয়েছে নিছক ধ্বংসকা-। খবর এপি ও দি উইক। ২০১৪ সালের আগস্টের গোড়ার দিকে আইএস মাখমুর সেনাঘাঁটি দখল করে। এ বিজয় তাদেরকে ইরাকি কুর্দিস্তানের আঞ্চলিক রাজধানী আরবিলের ১৯ মাইলের মধ্যে নিয়ে আসে। এ পর্যায়ে মার্কিন জঙ্গি বিমানের তিন দিনের হামলার পর আইএসের আরবিল অগ্রযাত্রায় ভাটা পড়ে। কুর্দি পেশমের্গা মাখমুর পুনর্দখল করে। দু’বছর পর আইএসবিরোধী লড়াই নিনেভেহ প্রদেশের দজলা নদী বরাবর পশ্চিমে পৌঁছেছে। মাখমুর এখন আর ফ্রন্টলাইন নয়, এক শান্ত শহর মাত্র, যেখান থেকে যুদ্ধক্ষেত্রে সরবরাহ পাঠানো হয়।
মাখমুরে আইএসের সাথে যুদ্ধ করেছেন এমন একজন পেশমের্গা সৈনিক খায়লানি বলেন, জোট বাহিনীর বিমান হামলা ও ভারী গোলাবর্ষণের সাহায্য না পেলে আমাদের আজ পাহাড়ের ওপরেই থাকতে হতো।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যখন ২০১৪ সালে ইরাকে আইএসের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালানোর অনুমোদন দেন তখন তিনি বলেন, আমি যুক্তরাষ্ট্রকে আরেকটি যুদ্ধে জড়াতে দেবো না। আমেরিকার যোদ্ধা সৈন্যরা ইরাকে ফিরে যাবে না।
শুক্রবার পেন্টাগন ঘোষণা করে যে, মসুল পুনর্দখলের অভিযানে সাহায্য করার জন্য ৪শ’ মার্কিন সৈন্যকে মসুলের দক্ষিণে কুরায়রা বিমান ঘাঁটিতে মোতায়েন করা হবে। ইরাক মিশনের জন্য ওবামা গত মাসে অতিরিক্ত ৫৬০ জন সৈন্য মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছেন, এ সৈন্যরা হবে তার অতিরিক্ত। ইরাকে ইতোমধ্যেই ৩৮০০ মার্কিন সৈন্য মোতায়েন রয়েছে। এসবের বাইরেও ইরাকে অস্থায়ী দায়িত্বে শত শত সৈন্য মোতায়েন রয়েছে সরকারি হিসাবে যাদের উল্লেখ নেই।
এদিকে মসুল পুনর্দখলের প্রস্তুতি যখন চলছে অন্যদিকে দু’বছরের ব্যয়বহুল যুদ্ধে বিজয়ের ক্ষত সেভাবেই রয়ে গেছে। যেমন মসুলের উত্তরে ইয়াজদি অধ্যুষিত সিনজার শহরটি নয় মাস আগে পেশমের্গা পুনর্দখল করলেও তা এখনো ধ্বংসস্তূপই রয়েছে। সিনজার কৌশলগতভাবে মুক্ত, কিন্তু তার অধিবাসীরা এখনো দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন ক্যাম্পে ছড়িয়ে রয়েছে।
পেন্টাগন বলেছে, ইরাকে বিমান হামলায় এ পর্যন্ত ৫৫ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। কিন্তু বিমান হামলা মনিটরকারী গ্রুপ এয়ার ওয়ারস জানায়, বিমান হামলায় কমপক্ষে ১৫৬৮ জন নিহত হয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করেছে যে, পেশমের্গা যোদ্ধারা আইএসের কাছ থেকে পুনর্দখল করা গ্রামগুলোর হাজার হাজার বাড়ি ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করেছে যাতে আরব অধিবাসীরা ফিরে আসতে না পারে।
৩০ বছর বয়স্ক কিন্দি হামিদ মজিদ ২০১৪ সালে আইএসের মসুল দখলের পর স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যান। তারা ভেবেছিলেন, ক’দিন পরই ফিরতে পারবেন। দু’বছর পরও তিনি আরবিলে রয়েছেন। জানেন না কবে মসুলে ফিরতে পারবেন। তিনি বলেন, ইরাকি সৈনারা মসুল যদি পুনর্দখল করেও তা জনগণের বাস করার মতো নিরাপদ আর কখনোই হবে না। আমার মনে হয় আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার ও অজানা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইরাকে জোটের বিমান হামলার দু’বছর অনেক ক্ষেত্রেই ফল হয়েছে ধ্বংসকান্ড
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ