পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মো. আফজাল বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, বাংলা বক্তব্যকালে অনেক সময় রাজনৈতিক প্রসঙ্গ টানা হয়। খতিবরা বাংলায় যে ওয়াজ করেন সেখানে যেন তারা আরবি খুতবা সারমর্মটি বলেন। মসজিদ আল্লাহর ঘর। সেখানে কোরআন-হাদীসের পরিপন্থী অথবা কোন রাজনৈতিক দলের কথাবার্তা যেন মসজিদে তারা না বলেন। এ ব্যাপারে খতিবদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানান ইফা মহাপরিচালক। এজন্য এরই মধ্যে একটি খতিব কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে।
ইফা মহাপরিচালক আরো বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুযায়ী দেশে প্রায় তিন লাখ মসজিদ আছে। সব মসজিদের খতিবদের চিন্তা এবং দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়। সামীম মো. আফজাল বলেন, আমি ৬০ হাজার ওলামাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকি। প্রতিটি ইউনিয়নে আমার আট থেকে ১২ জন ইমাম ও ধর্মশিক্ষক আছেন। তাদের মাধ্যমে আমার একটা নেটওয়ার্ক আছে। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তিনি দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মসজিদগুলো সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখেন বলে জানান।
এদিকে দেশের সব মসজিদের খতিব এবং জুমার খুতবা সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখার জন্য জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। গত বছরের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলেন, মসজিদগুলোকে যেন রাজনৈতিক প্রচারণার কাজে ব্যবহার করা না যায়, সে জন্যই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। ইফা কর্মকর্তাদের মতে, কোন কোন মসজিদে জুমার নামাজের খুতবার সময় বাংলা বক্তব্যে এমন অনেক রাজনৈতিক বিষয়ের অবতারণা করা হয় যা পরোক্ষভাবে জঙ্গি কার্যক্রমকে উস্কে দিতে পারে। এটা বন্ধ করতে এবং খুতবায় আরবিতে দেয়া বক্তব্যের সঙ্গে বাংলায় দেয়া বক্তব্যের মিল নিশ্চিত করতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন উদ্যোগ নিয়েছে। এ বিষয়ে ইমাম ও খতিবদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কথাও ভাবছে সরকার। বিষয়টি নিয়ে বার্তা সংস্থা বিবিসি বাংলাসহ কিছু গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেছেন ইফা মহাপরিচালক।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইমাম খতিব ও ওলামা পরিষদের প্রচার সম্পাদক হাফেজ মাওলানা আবদুল মতিন ইনকিলাবকে বলেন, এ সিদ্ধান্ত কি সরকারের না অতিউৎসাহী কোন কর্মকর্তার তা স্পষ্ট নয়। বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও অহেতুক ইস্যু তৈরিতে ইফা ডিজি সামীম আফজাল বরাবরই খুব পারঙ্গম। এটিও তার উর্বর মস্তিষ্কের ফসল হতে পারে। যা সরকারকে আরো নিন্দিত ও সমালোচিতই করবে। আখেরে কোন লাভ হবে না। আরবি খুতবায় যা থাকে তারই ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ ও কোরআন-হাদীসের ভাবসম্প্রসারণ করা হয় বাংলা বক্তৃতায়। এতে কোন রাজনৈতিক প্রসঙ্গ কোনদিনই ইমাম ও খতিবগণ আনেন না। কারণ, মসজিদে সব দলের লোকেরাই নামাজ পড়তে আসেন। তবে যেসব আয়াত ও হাদীস রাজনৈতিক নীতি আদর্শ সম্পর্কে কথা বলে সেসব কি খতিবরা বলতে পারবেন না? কোরআনের রাজনৈতিক আয়াতগুলো কি নামাজেও পড়া যাবে না? রাজনৈতিক জীবনে অনিয়ম, দুর্নীতি, পাপাচার নিয়ে কি ইমাম-খতিবরা আর কথা বলতে পারবেন না? এ তো কোরআনের বড় একটি অংশ নিষিদ্ধ করারই পাঁয়তারা। ধীরে ধীরে খুতবায় দুর্নীতি, দুঃশাসন, অন্যায়, অবিচার, হারাম জীবিকা, চাঁদাবাজি, মাস্তানি, ব্যভিচার, মাদক, ইভটিজিং, নারী নির্যাতন, সুদ, ঘুষ, টেন্ডারবাজি নিয়ে কথা বলাও কি বন্ধ করে দেয়া হবে? ইসলামিক ফাউন্ডেশন আসলে কি ইসলাম ধর্মের শিক্ষা প্রচারকেই নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে? আমাদের হিসাব মত, দেশের ছোটবড় সাড়ে চারলাখ মসজিদের কোন ইমামই সরকারের নির্দেশনা মানতে গিয়ে মহান আল্লাহর হুকুম অমান্য করবেন না। তারা নির্দ্বিধায় কোরআন ও হাদীসের আলোকে মানুষের জীবনের সকল বিষয়েই আলোকপাত করবেন। এতে যদি কারো গাত্রদাহ হয় তাহলে তারা নিজেদের সংশোধনে এগিয়ে আসবে। কিন্তু কোরআন-হাদীসের বিষয়বস্তু নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রিত করা কারো পক্ষেই সমীচীন হবে না। ভুল-ত্রুটি থাকলে নিজেদের জীবনাচার বদলাতে হবে, কোরআন-হাদীস বদলে দেয়া যাবে না। আমি সরকারকে ব্যাখ্যা দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করতে বলব। ইফা ডিজির মনগড়া পথে হাঁটলে জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে বড় ধরনের নিন্দা ও ঘৃণা কুড়াতে হবে। নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মন থেকে সরকারের জনপ্রিয়তা ধূলায় লুটিয়ে পড়বে। প্রধানমন্ত্রী নিজে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে ভাল করবেন, ক্ষ্যাপাটে কর্মকর্তা ও অতিউৎসাহী আমলাদের পরামর্শে ভুল পথে হাঁটলে তার সরকার ও দলের জনপ্রিয়তা হিমাংকের নীচে চলে যাবে। আমি দেশের ইমাম ও খতিবদের কোরআন ও হাদীসের আলোকে দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে নির্দ্বিধায় সব বক্তব্য দেয়ার অনুরোধ করব। খুতবার সময় তারা আরবি ও বাংলায় একই বিষয়বস্তু নির্ভয়ে বলে থাকেন। আল্লাহর ভয় যেন তাদের অন্তরে প্রবল থাকে। কোন মনুষের ভয়ে যেন তারা ভীত না হন। যদি কেউ নিজে সংশোধন না হয়ে আল্লাহর ঘরের অবাধ বার্তাকে বদলে কিংবা রুখে দিতে চায়, তাহলে ইনশাআল্লাহ এর পাল্টা ব্যবস্থা সর্বশক্তিমান আল্লাহই গ্রহণ করবেন।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ঢাকা মহানগরীর অন্যতম নেতা শায়খুল হাদীস মাওলানা নূরুল আমীন ইনকিলাবকে বলেন, সরকার বলেছে তারা জুমার খুতবা, ওয়াজ-মাহফিলের বয়ান ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করতে চায় না। পুলিশের আইজি একবার কিছু বলে পরে আবার সে কথার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি তার কথা তুলে নিয়েছেন। বর্তমানে ইফা ডিজি আবার নতুন কথা শোনাচ্ছেন। আমরা নানা মুখে নানা কথা শুনে বিভ্রান্ত ও উদ্বিগ্ন। বিষয়টি নিয়ে সরকারের মূল জায়গা থেকে স্পষ্ট বক্তব্য আশা করছি। দেশের আলেম-ওলামা, ইমাম-খতিব ও ধর্মপ্রাণ মানুষের উৎকণ্ঠা দূর করা সরকারেরই কর্তব্য। হেফাজতে ইসলাম এসব বিষয়ে তার বক্তব্য রেখেছে, প্রয়োজনে সোচ্চারও হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।