Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাসপোর্ট অফিসে বেড়েছে হয়রানি

সক্রিয় দালাল চক্র : স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই

খলিলুর রহমান | প্রকাশের সময় : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পাসপোর্টের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হলেও কমেনি হয়রানি। বরং হয়রানির পরিমাণ আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন আবেদন জমা দেয়া ও পাসপোর্ট রিসিভ করার জন্য অফিসগুলোতে মানুষের ভিড় বাড়ছে। তাই কার্যক্রম পরিচালনা করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। প্রচন্ড ভিড়ে পাসপোর্ট অফিসে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধিও। পাসপোর্ট অফিসের দালাল চক্রের সদস্যরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পাসপোর্ট অফিসের বাইরে দালালরা প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু দেখার কেউ নেই। রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অধিদফতর ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এমনটাই দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ২২ মার্চ ই-পাসপোর্ট ও মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) বায়োমেট্রিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ও জরুরি আবেদনকারী ছাড়া নতুন পাসপোর্ট ইস্যু বন্ধ রাখা হয়। এরপর গত ১৯ আগস্ট স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার কথা জানায় বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর। অধিদফতরের পরিচালক (পাসপোর্ট, ভিসা ও পরিদর্শন) মো. সাঈদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে এবং পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ জারিকৃত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক এমআরপি এবং ই-পাসপোর্টের (নতুন ও রি-ইস্যু) কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এ বিষয়ে আগের জারি করা সব আদেশ বাতিল করা হলো। আদেশটি অবিলম্বে কার্যকরের নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর থেকে পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়। করোনাভাইরাস সম্পর্কিত বিভিন্ন ব্যানার ও দিক-নির্দেশনামূলক তথ্য সম্বলিত বিভিন্ন প্লেকার্ড টানানো হয়েছে পাসপোর্ট অধিদফতরে। তবে এসব নির্দেশনা মানতে নারাজ পাসপোর্ট করতে আসা লোকজন।

সরেজমিন আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, অফিসের বাইরে ও ভেতরে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি সম্মলিত পোস্টার টানানো আছে। ওই পোস্টারে পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে আগমনকারীদের উদ্দেশে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অনুগ্রহ করে গেটের বাইরে নির্ধারিত গোল চিহিৃত জায়গায় সারিবদ্ধ ও সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়াতে হবে। অফিসে প্রবেশের পূর্বে দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মীদের নিকট হ্যান্ড থার্মাল স্ক্যানারে শরীরের তাপমাত্রা চেক করতে হবে। গেটের নিকট সংরক্ষিত হাত ধোয়ার বেসিনে ২০ সেকেন্ড আপনার দুই হাত সাবান দিয়ে ধৌত করুন, নির্দিষ্ট কাউন্টারে সারিবদ্ধভাবে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ান, দ্রুত কাজ শেষে করে অফিস প্রাঙ্গণ ত্যাগ করে অন্য সেবা প্রার্থীদের সেবা নিতে সহযোগিতা করুন। অসুস্থ ব্যক্তি অফিসে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকুন ও অনুগ্রহপূর্বক মুখে মাস্ক ছাড়া অফিসে প্রেবেশ করবেন না। নিজে সুরক্ষিত থাকুন, সবাইকে নিরাপদ রাখুন। এমন স্লোগানের ব্যানার টানানো হলেও সেখানে কেউ সুরক্ষিত নয়। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাউকে সুরক্ষার চেষ্টাও করতে দেখা যায়নি। পাসপোর্ট অফিসের বাইরে হাত ধোয়ার কথা ব্যানারে লেখা থাকলেও বাস্তবে তা দেখা যায়নি।

এদিকে, পাসপোর্ট অফিসের ভেতরে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন রুমের দরজা ও দেয়ালে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে পারস্পরিক সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক পরিধানের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এ বিধি কেউই মানছেন না। প্রতিটি রুমের সামনে রয়েছে লম্বা লাইন। এছাড়া রুমে থাকা চেয়ারগুলো পাশাপাশি রাখা হয়েছে। সেখানেও পাসপোর্ট অফিসে আসা লোকজন পাশাপাশি বসতে দেখা গেছে।
পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে আসা নাজমুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পাসপোর্ট সংগ্রহ করেতে এসেছি। সকাল থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। অনেক লম্বা লাইন ছিল। দুপুরের দিকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছি। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা আমিনা খাতুন নামে এক নারী দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সকালে পাসপোর্ট জমা দেয়ার জন্য এসেছি। স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তারপরও আবেদন জমা দিতে পারিনি। সময় শেষ হওয়াতে আগামীকাল আবার আসতে বলা হয়েছে। তাই এখন ফিরে যাচ্ছি।

আগারগাঁও পাসপোর্ট অধিদফতরের তৃতীয় তলায় কর্তব্যরত সেনা সদস্য আমিনুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ দিন পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে কাজের চাপ বেড়েছে। কাজ করতে সবাইকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়াও আগত লোকজন স্বাস্থবিধি মানতেও নারাজ বলে জানান তিনি।
এদিকে, পাসপোর্ট অফিসের বাইরে গিয়ে দেখা গেছে, দালাল চক্রের সদস্যরা ওঁৎ পেতে রয়েছে। পাসপোর্ট অফিসের আসা লোকজনকে বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে। এক পর্যায়ে আবেদনকারী সেজে ওই চক্রের সদস্যদের সাথে কথা হয়। এ সময় রহিম নামের এক দালাল জানান, তাদের মাধ্যমে পাসপোর্ট করানো হলো কোনো হয়রানির শিকার হতে হয় না। তবে তাদের মাধ্যমে পাসপোর্ট জমা দিয়ে নির্ধারিত ফি ছাড়াও আরো ৭ থেকে ১০ হাজারের মত বাড়তি টাকা দিতে হয়। এছাড়াও কোনো তদন্ত ছাড়াই পাসপোর্ট হাতে পেয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেন ওই দালাল।

অন্যদিকে, পাসপোর্ট অফিসের বাইরে কয়েকটি কম্পিউটারের দোকান রয়েছেন। সেই দোকানগুলোতেও গিয়েও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে আবেদনকারীদের। দোকানিরা আবেদনকারীদের কাছে থেকে বাড়তি ৫শ’ টাকা নিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করে দেন। পারভেজ নামের এক দোকানি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, অনেক আবেদনকারী ফরম পূরণ করতে পারে না। তাই তাদের কাছ থেকে ৫শ’ টাকা নিয়ে তাদের সহযোগিতা করা হয়। তবে ভোগান্তির কথা অস্বীকার করেন তিনি।

ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে পাসপোর্টের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এখন কাজের চাপ অনেক বেড়েছে। তবে আবেদনকারী বেশি হওয়াতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাও সম্ভব হচ্ছে না। তবে সাধ্যমত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দালাল চক্রের সদস্যরা সব সময়ই সক্রিয় ছিল। তবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাসপোর্ট

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ