পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জাল জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়েছেন ব্যাংক ঋণ উত্তোলনসহ নানা অপরাধের সাথে জড়িত চক্রের ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। গত শনিবার রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ চক্রের সাথে জড়িত রয়েছেন এনআইডি’র ডাটা এন্ট্রি অপারেটর এবং ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান কিছু অসাধু কর্মকর্তা। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মো. সুমন পারভেজ, মো. মজিদ, সিদ্ধার্থ শংকর সূত্রধর, মো. আনোয়ারুল ইসলাম ও মো. আবদুল্লাহ আল মামুন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, চক্রের অন্যতম প্রধান সুমন পারভেজ (৪০) ও মো. মজিদ (৪২) ২০১৬ সাল থেকে এমন প্রতারণায় জড়িত। নির্বাচন কমিশনের সবুজবাগ এলাকার ডাটা এন্ট্রি অপারেটর সিদ্দার্থ শংকর সূত্রধর (৩২), গুলশান এলাকার ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আনোয়ারুল ইসলাম (২৬) ২০১৬ সাল থেকে যুক্ত হলেও প্রতারণা শুরু করেন গত বছর থেকে। একাধিক ব্যাংকে চাকরি করা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪১) এ জালিয়াতিতে জড়িত দীর্ঘদিন ধরে। গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে দ্বৈত, জাল ও ডুপ্লিকেট ১২টি জাতীয় পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের সহকারী কমিশনার মধুসূদন দাস জানান, তিন উপায়ে জাল এনআইডির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ঋণ উত্তোলনের কাজ করে চক্রটি। প্রথমে তারা ঋণ পেতে আগ্রহীদের সঙ্গে তাদের চাকরি ও ব্যবসা সংক্রান্ত পরিচিতি এবং সমাজের প্রতিষ্ঠিত ক্লাইন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চুক্তি করে। এক্ষেত্রে সহযোগিতা করে ব্যাংকেরই কিছু সেলস এক্সিকিউটিভ। এরপর মিথ্যা তথ্য দিয়ে জাল এনআইডি তৈরি করে। পরবর্তীতে ব্যাংকেরই অসাধু কর্মকর্তাদের সহায়তায় ঋণ পাস করিয়ে নেয়। সিআইবি রিপোর্ট যাদের খারাপ, তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন ব্যাংকেরই কিছু সেলস এক্সিকিউটিভ।
তিনি আরো বলেন, ব্যাংকের লোন নিয়ে কেউ ঋণ খেলাপি হলে তাদের সিআইবি রিপোর্ট খারাপ থাকে। তারা পুনরায় ব্যাংকে লোনের জন্য আবেদন করতে পারেন না। তখন গ্রেফতার চক্রের অন্যতম সদস্য সুমন ও মজিদ লোন পাস করিয়ে দেবে মর্মে প্রথমে জাল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির জন্য প্রত্যেকের নিকট হতে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে লোন পাস হলে মোট লোনের ১০ শতাংশ হারে দিতে হবে মর্মে চুক্তি করেন। চুক্তিতে একমত হলে তারা প্রথমে জাল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। পরে লোন পাস হলে চুক্তি অনুযায়ী লোনের সম্পূর্ণ টাকার ১০ শতাংশ হারে গ্রহণ করেন। জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে দিতেন তাদের অপর দুই সহযোগী সিদ্দার্থ শংকর সূত্রধর ও আনোয়ারুল ইসলাম। তারা প্রত্যেকটি জাল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি বাবদ ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করতেন।
গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের ডিসি রাজীব আল মাসুদ জানান, ই-জোন কোম্পানির মাধ্যমে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যেমে নিয়োগ পান সিদ্দার্থ শংকর সূত্রধর ও আনোয়ারুল ইসলাম। নির্বাচন কমিশনের অধীনে খিলগাঁও-সবুজবাগে সিদ্দার্থ শংকর সূত্রধর এবং গুলশান অফিসে আনোয়ারুল ইসলাম ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে কাজ করার কারণে তারা নির্বাচন কমিশন অফিসের সফটওয়্যার ব্যবহার করে সহজেই জাল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করতেন।
জাল এনআইডি তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানায়, ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের কাছে ইসির সার্ভারের একসেস দেয়া থাকে। এই সুযোগ নিয়ে প্রথমে ঋণ পেতে আগ্রহীদের আগের এনআইডি, বিদ্যুৎ বিল ও জন্মনিবন্ধনের কপির তথ্য দিয়ে সার্ভারে প্রবেশ করেন তারা। তারপর ছবি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিতেন। এরপর নতুন একটি নামে ওই ভুয়া এনআইডি এন্ট্রি করতেন। পরদিন সার্ভারে আপলোড দিতেন তারা। সুমন পারভেজ, মো. মজিদ ও সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন ইতোপূর্বে দ্বৈত, জাল ও ডুপ্লিকেট এনআইডি তৈরি করে গুলশানের ব্র্যাক ব্যাংক শাখা থেকে নয় লাখ ২৫ হাজার টাকা, নিকেতনের সিটি ব্যাংক শাখা থেকে নয় লাখ ৫০ হাজার টাকা লোন উত্তোলন করেন।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, চক্রের অন্যতম হোতা সুমন পারভেজ, মো. মজিদ জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন যে, মিল্টন নামে পলাতক এক ব্যক্তি জাল এনআইডি তৈরি করে নর্থ সাউথ রোডের সাউথ বাংলা ব্যাংক হতে তিন কোটি টাকা, ইয়াছির নামে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি প্রগতি স্মরণি সিটি ব্যাংক শাখা থেকে অফিসার আরিফের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা, সালেহ আহম্মেদ নামে একজন গুলশান ইউসিবি ব্যাংক শাখা হতে ১৫ লাখ টাকা এবং মো. আব্দুল মজিদ নামে আরেকজন জাল এনআইডিতে এনআরবি ব্যাংকের গুলশান শাখা হতে ২০ লাখ টাকা লোন নেন।
সবমিলে এখন পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত জাল এনআইডিতে ব্যাংক ঋণ উত্তোলনের তথ্য পেয়েছে ডিবি পুলিশ।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০-এ গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে বিশদ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হলে আদালতে দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পাশাপাশি জড়িত পলাতক এবং জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নেয়া ব্যক্তিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।