Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১, ০৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

যোগ্য নেতাদের জায়গা দেয়া হবে : মির্জা ফখরুল

প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কমিটি নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক অনভিপ্রেত। একটি রাজনৈতিক দলের কমিটি সেই দলেরই ব্যাপার। এখানে অন্য দলগুলোর প্রতিক্রিয়া বা অন্য কোনো ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। এ ব্যাপারে ধৈর্য ধরতে হবে। সব সময়ই পরবর্তী একটা বিষয় থাকে। কোনো ব্যক্তি বা আমরা কেউ যদি মনে করি, আমি বঞ্চিত হয়েছি, তাহলে উচিত হবে, অপেক্ষা করা পরবর্তী কাউন্সিলের জন্য। ঘোষিত কমিটি পুনর্বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই। তবে তিনি বাদ পড়া যোগ্য নেতাদের বিভিন্ন উপকমিটিতে জায়গা দেওয়া হবে বলে জানান। গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
গত ৬ আগস্ট সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে স্থায়ী কমিটি, উপদেষ্টা কাউন্সিলসহ ৫০২ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণার দুইদিন পর গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় নয়া পল্টনের কার্যালয়ে আসেন বিএনপির মহাসচিব। এ সময়ে আগে থেকেই ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী কার্যালয়ের উপস্থিত ছিলেন। দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন প্রমুখ নেতারা মহাসচিবকে স্বাগত জানান। এরপর নতুন নেতারা মহাসচিবের সঙ্গে তার নিজ কক্ষে কুশল বিনিয়ম করেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি গতকাল সকাল থেকে নেতাকর্মীদের ভিড়ে সরব হয়ে ওঠে। নতুন কমিটির তৃণমূল স্তরের নেতারা এসেছেন, হাসি-খুশিতে কর্মীদের সঙ্গে কোলাকুলি করেছেন। কোনো কেনো কর্মীকে নতুন নেতাদেরকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে দেখা গেছে। আবার দলের কেউ কেউ নতুন কমিটি নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন।
নিজের কক্ষে দুপুরে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন মির্জা ফখরুল। নতুন কমিটির বিষয়ে নানা ক্ষোভ-বিক্ষোভের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত ১৯ মার্চ জাতীয় কাউন্সিলের কাউন্সিলাররা সর্বসম্মতিক্রমে বেগম খালেদা জিয়াকে দলের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনের দায়িত্ব দিয়েছেন। সেই দায়িত্ব নিয়ে তিনি (খালেদা জিয়া) পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেছেন। এই কমিটিকে নিয়ে বিএনপি আগামী তিনবছর রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করবে।
তিনি বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের যখন একটা কমিটি করা হয়, তখন দেখা যাবে সেখানে কিছু সংখ্যক যোগ্য মানুষও পদবঞ্চিত হচ্ছেন। এটা স্বাভাবিক যে, এতো যোগ্য লোকের সংখ্যা থাকে, সবাইকে অ্যাকোমোডেট করা সম্ভব হয় না। সেই দিক থেকে বিএনপিতে স্বাভাবিকভাবে সবাইকে অ্যাকোমোডেট করা সম্ভব হয়নি আমাদের চেয়ারপারসনের পক্ষে। যাদেরকে উনি (খালেদা জিয়া) দায়িত্ব দিয়েছেন কাউন্সিল দ্বারা ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়ে। তিনি মনে করেন, তারা বিএনপির ভবিষ্যত তিন বছরের যে কাজ, সেই কাজগুলো তারা সুচারুরূপে পালন করতে পারবেন।
কমিটি গঠনের পেছনে দলের দুই ব্যক্তি (চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব) জড়িত বলে একটা প্রচারণা রয়েছে- এমন প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, যে কথাটা আপনি বলেছেন, এটা প্রচারণা, অপ্রচার। বিএনপিকে হেয় প্রতিপন্ন করবার জন্যে একটা গোষ্ঠী প্রথম থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আপনি খেয়াল করে দেখবেন যে, এতদিন ধরে চলছে, আপনারা (সাংবাদিকরা) ইদানিংকালে বিএনপির ভুলত্রুটি খুঁজছেন। আপনারা কিন্তু সরকারি দলের ভুলত্রুটি খুঁজছেন না, সেগুলোকে সেভাবে তুলে ধরছেন না।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, যখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ব্যাহত হয়, গণতন্ত্র থাকে না, যখন সরকারি চাপ মিডিয়ার ওপর বেশি করে পড়ে। তখন বাধ্য হয়েই আমাদের মনে এ ধরনের একটা প্রবণতা দেখা যায় যে, বিরোধী দলকে যতটা পারা যায় চাপ দেওয়া। আমরা অতীতেও এ সমস্ত অবস্থা ফেইস করেছি। আমাদের আস্থা আছে, এই কার্যকরী কমিটির মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সব ক্রাইসিসগুলোকে ওভারকাম করতে পারবেন। আমাদের যে লক্ষ্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আমরা তা করতে পারব।
যারা ত্যাগী ও যোগ্য নেতা আছেন, বাদ পড়েছেন, তাদের বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করা হবে কিনা জানতে চেয়ে পাল্টা প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, কেউ বাদ পড়তেই পারেন। সবাইকে একোমোডেট করা সম্ভব নয় তো। এটা হতেই পারে। একটা দলের মধ্যে শত শত, হাজার হাজার যোগ্য লোক আছেন, তাদের সবাইকে তো যুক্ত করা সম্ভব না। যারা বঞ্চিত হয়েছেন, তারা অপেক্ষা করবেন না বিক্ষোভ করবেন- এ বিষয়ে তাদের জন্য কোনো পরামর্শ আপনার আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিক্ষোভ করার তো প্রশ্নই নেই। বিক্ষোভ করে তো কোনো লাভ হবে না। আর ধৈর্য্য তো ধরতেই হবে। কারণ শেষ কথা বলতে তো কিছু নেই। সব সময়ই পরবর্তী একটা বিষয় থাকে। রাজনৈতিক দলগুলোতে পদের জন্য প্রতিযোগিতা সবসময় থাকে। সব রাজনৈতিক দলে আছে। পৃথিবীর সব দেশেই আছে।
পদবঞ্চিতদের বিষয়টি নিয়ে ভাববেন কিনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই মুহূর্তে কোনো প্রশ্নই ওঠে না। কারণ কমিটি ঘোষণা হয়ে গেছে।
‘যারা পদ পাননি, তারা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবেন’ এ রকম কথা শোনা যাচ্ছে- এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, যাদেরকে কাউন্সিল দায়িত্ব দিয়েছে। ম্যাডামের দায়িত্ব দেওয়া মানেই হচ্ছে কাউন্সিল দায়িত্ব দেওয়া। তারা (কমিটি) তাদের দায়িত্ব পালন করবেন।
সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির কমিটি বছরের একটা উপহাস- এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, আমি বলছি যে এটা রাজনৈতিক শিষ্টাচার বিবর্জিত একটা উক্তি তিনি করেছেন। এটা অনভিপ্রেত।
জাতীয় নির্বাহী কমিটির ঘোষণার পর আপনি প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, কমিটি ভাইব্রেন্ট ও ডায়নামিক হয়েছে। গত দুইদিনে কি মনে হয়েছে, নেতাকর্মীরা জেগে উঠেছে। এরকম প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, সেটা আপনারা যেভাবে দেখেন সেভাবে না। আপনারা জেগে উঠতে দেখেন, সেভাবে জেগে উঠতে, কনসুলেটেড করতে হয়, তখনই জেগে ওঠে। পুরো ব্যাপারটা সামগ্রিক অবস্থার ওপর, পারিপার্শ্বিকতার ওপর, দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আছে কিনা, তার ওপর নির্ভর করে। যে দেশে গণতন্ত্র নেই, সেই দেশে জেগে ওঠাটা সহজে হয় না।
এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন-বিএনপির নতুন কমিটির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ-সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আসাদুল করীম শাহিন, নির্বাহী কমিটির সদস্য জামাল শরীফ হীরু, সাইফুল ইসলাম পটু প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যোগ্য নেতাদের জায়গা দেয়া হবে : মির্জা ফখরুল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ