Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব জনবিরোধী ও বেআইনি

তিতাসের প্রস্তাব নিয়ে গণশুনানিতে আলোচকবৃন্দ

প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের উপর আয়োজিত গণশুনানিতে তোপের মুখে পড়েছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ও তিতাসের কর্মকর্তারা। শুনানিতে অংশ নিয়ে আলোচকবৃন্দ বলেছেন, সরকারের পরিকল্পনার অভাবে জ্বালানি খাত এখন বিপর্যস্ত। গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই। তারা বলেন, এ ধরনের প্রস্তাব জনবিরোধী ও বেআইনি।  
তাছাড়া তিতাস গ্যাস কোম্পানি বর্তমানে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। আগামী অর্থবছর কোম্পানি পরিচালনা করতে কোনো বাড়তি অর্থের প্রয়োজন নেই। বরং ২০১৬-১৭ অর্থবছর খরচ বাদ দিয়ে ৩৫৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বাড়তি মুনাফা থাকবে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি হিসাব পর্যালোচনা করে এই তথ্য দিয়েছে। গতকাল (সোমবার) বিইআরসি’তে অনুষ্ঠিত তিতাসের গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের গণশুনানিতে এই প্রতিবেদন উপস্থান করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তিতাসের প্রতি ঘনমিটার গ্যাস পরিচালনায় খরচ পড়ে ৪১ পয়সা করে। কিন্তু এখন গ্রাহকের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ৬২ পয়সা। এতে প্রতি ঘনমিটারে ২৩ পয়সা করে লাভ হচ্ছে। তবে রাজস্ব চাহিদা মেটাতে আরও দুই পয়সা করে প্রয়োজন হবে।
তিতাস গ্যাস কোম্পানি আবাসিক দুই চুলা ৬৫০ থেকে ১২০০ টাকা, এক চুলা ৬০০ থেকে বাড়িয়ে ১১০০ টাকা আর প্রতি ঘনমিটার সাত টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা ৮০ পয়সা করার প্রস্তাব করে।
এছাড়াও শিল্পকারখানার ক্যাপটিভ পাওয়ারে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম আট টাকা ৩৬ পয়সা থেকে ১৯ টাকা ২৬ পয়সা, যানবাহনের সিএনজি ২৭ থেকে ৪৯ দশমিক ৫০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া বিদ্যুতের প্রতি ঘনমিটার দুই টাকা ৮২ পয়সা থেকে চার টাকা ৬০ পয়সা, সার কারখানায় দুই টাকা ৫৮ পয়সা থেকে ৪ টাকা ৪১ পয়সা করার প্রস্তাব দেয় তিতাস।
তিতাসের প্রস্তাবনার উপর গণশুনানি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ আর খান, সদস্য মাকসুদুল হক ও রহমান মুর্শেদ। তিতাসের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মশিউর রহমান, পরিচালক (অর্থ) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ভোক্তাদের পক্ষে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা ড. এম সামসুল আলম, জোনায়েদ সাকিসহ বিভিন্ন পেশা ও সংগঠনের প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, এখন তিতাস লাভ করছে। এই অবস্থায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। কিন্তু তিতাস বলছে, উন্নয়ন কাজের জন্য আয় বাড়ানো প্রয়োজন। দাম না বাড়ালে উন্নয়ন কাজ করা যাবে না।
নুরুল ইসলাম বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানো যেতে পারে। যারা গ্যাস পাচ্ছে না, যারা লাকড়ি দিয়ে রান্না করছে তাদের মাসে গড়ে খরচ হয় এক হাজার টাকা। সে হিসেবে গ্যাসের দাম এক হাজার ২০০ টাকা করা যেতে পারে। ক্যাপটিভ বিদ্যুতের ক্ষেত্রে কো-জেনারেশন করা যেতে পারে। তবে গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে গ্রিডের বিদ্যুৎকে।
শামসুল আলম গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করে বলেন, যে কোম্পানি মুনাফা করছে, সেই কোম্পানির আয় অনুযায়ী গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। এই কোম্পানির গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, সরকারের পরিকল্পনার অভাবে জ্বালানি খাত এখন বিপর্যস্ত। গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই।
আগামী ১০ আগস্ট পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের প্রস্তাব নিয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রস্তাব নিয়ে ১১ আগস্ট, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রস্তাব নিয়ে ১৪ আগস্ট, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের প্রস্তাব নিয়ে ১৬ আগস্ট ও সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির প্রস্তাব নিয়ে ১৭ আগস্ট শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আর গ্যাসের বাল্ক মূল্যহার নিয়ে ১৮ আগস্ট পেট্রোবাংলা, বিজিএফসিএল, এসজিএফএল ও বাপেক্সের আবেদনের ওপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
শুনানিতে শেয়ার বাজারের বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করে বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ালেও বিনিয়োগকারীদেরকে তার কোনও লভ্যংশ দেয়া হচ্ছে না। নামেমাত্র ১৫% লভ্যাংশ তারা পাচ্ছেন। ফলে ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে। অথচ কোম্পানি এখন ডাবলের চেয়েও বেশি মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। এটা অযৌক্তিক ও জনস্বার্থবিরোধী।
শুনানিতে প্রস্তাবের পক্ষে কথা বলেন, বিইআরসি’র কর্মকর্তা মাসুদুল হক ও রাসেল মোর্শেদ, তিতাস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মীর মশিউর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কর্মকর্তারা বিনিয়োগকারীদেরকে ‘তথাকথিত’ বিনিয়োগকারী হিসাবে আখ্যায়িত করলে উপস্থিত বিনিয়োগকারীদের মধ্য থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব জনবিরোধী ও বেআইনি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ