Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ত্রাণের বদলে কিস্তির রশিদ

বন্যাকবলিত এলাকায় এনজিওগুলোর নির্লিপ্ততা

প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : উত্তরবঙ্গের বন্যাকবলিত বেশিরভাগ এলাকায় অসংখ্য বেসরকারি সংগঠন (এনজিও) গড়ে উঠেছে। এসব এলাকার মানুষের মাধ্যমে দেশের প্রতিষ্ঠিত এনজিওর পাশাপাশি গড়ে উঠেছে স্থানীয় বহু এনজিও এবং সমিতি। তবে এসব এনজিও বন্যার্তদের কোনো কাজে আসছে না। উল্টো মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়েছে দাঁড়িয়েছে এনজিওগুলো। ঘর-বাড়ি, ফসলসহ সহায়-সম্বল হারানো মানুষগুলো যখন দিনের খাবারের জন্য ব্যস্ত ঠিক তখনই ঋণের কিস্তির টাকা নিতে দুয়ারে হাজির হচ্ছে এনজিওকর্মীরা। অথচ এলাকার উন্নয়নে এখন বাড়তি ঋণ, সুদ মওকুফ করার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য তথা ত্রাণ নিয়ে হাজির হওয়ার কথা ছিল। এগুলোর পরিবর্তে কিস্তি নিয়ে মরিয়া তারা। স্থানীয় কর্মীরা বলছে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক কিস্তি উঠানো হচ্ছে এছাড়া কিছু করার নেই। আর ত্রাণ বিতরণের কোন সিদ্ধান্তও নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এনজিওগুলো এমন অমানবিক ভূমিকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন দুর্গত মানুষ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার নানা উদ্যোগ থাকলেও প্রধানত ক্ষুদ্রঋণই তাদের বহুল প্রচলিত কর্মসূচি। এই বন্যার সময়ও এই কর্মসূচি চালু আছে দুর্গত এলাকায়। কেবল ঋণ বিতরণ নয়, কিস্তি আদায়ও চালু আছে প্রায় সব এলাকায়। এই বন্যায় কোনো আয় না থাকলেও দুর্গতরা অন্য জায়গা থেকে ধারদেনা করে কিস্তি পরিশোধে বাধ্য হচ্ছেন।
দেশের বন্যাকবলিত ১৬ জেলাতেই কমবেশি এই অবস্থা। দুর্গত এলাকাগুলোর প্রায় সব কটিতেই গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক, আশাসহ বড় এনজিওর পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ের ছোট বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কার্যক্রম রয়েছে। সেবামূলক নানা কর্মকা-ের প্রচারও আছে এসব সংস্থার। এই বন্যার মধ্যেও সেসব প্রচারের পোস্টার, লিফলেট চোখে পড়ে। কিন্তু মানুষ যখন বাড়িঘর, ফসল হারিয়ে বিপদগ্রস্ত, তখন হাত গুটিয়ে বসে আছে সংস্থাগুলো।  
স্বভাবতই দুর্যোগের মধ্যেও হাত গুটিয়ে বসে থাকা নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন এনজিওগুলোর স্থানীয় কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, বন্যার্তদের ত্রাণ দিতে কেন্দ্রীয় কোনো নির্দেশনা বা সিদ্ধান্ত না আসায় কিছু করেননি তারা।
এদিকে গত শনিবার কুড়িগ্রামে ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার নির্লিপ্ততায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। তিনি বলেন, এই অবস্থাতেও বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসছে না এনজিওগুলো। কেউ কেউ এগিয়ে এলেও তাদের মধ্যে আন্তরিকতা নেই।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সহসভাপতি এ এফ মুজতাহিদ বলেন, এনজিওরা ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছেÑএ ধরনের কোনো খবর আমরা জাতীয় গণমাধ্যমে দেখি না। তার মানে তারা কোনো সাহায্য করে না। অথচ তারা সাধারণ মানুষের কল্যাণের কথা বলেই দেশি-বিদেশি ফান্ড আনে। হাজার হাজার এনজিও আসলে কী করছে, তার খোঁজ-খবর সরকারের নেয়া উচিত।
ত্রাণ ও দুর্যোগসচিব শাহ কামাল বলেন, আমরা সরকারিভাবে প্রায় সব বন্যাকবলিত জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর আমি মনে করি সব শ্রেণি-পেশার মানুষ, সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায় থেকে বন্যার্তদের জন্য কাজ করা উচিত। এটা সবার মানবিক দায়িত্ব।







 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ত্রাণের বদলে কিস্তির রশিদ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ