পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছার জীবনের অনেক অজানা তথ্যের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার বলেছেন, এই মহীয়সী নারীর দূরদর্শিতাই বাংলার স্বাধীনতার পথ খুলে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের তৎকালীন অনেক নেতৃবৃন্দের আপত্তি সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর সার্বক্ষণিক এই ছায়াসঙ্গী বেগম মুজিবই তাকে (বঙ্গবন্ধু) আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে পাক সামরিক সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসতে নিষেধ করে বাংলার স্বাধীনতার পথ খুলে দিয়েছিলেন। আর এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণেও আমার মা বাবাকে সহযোগিতা করতেন-বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নারী ও শিশু মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
’৬৯-র গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে আটকাবস্থা থেকে ক্যান্টনমেন্টে ধরে নিয়ে যায় পাক সামরিক সরকার। ৬ মাস পর্যন্ত তার কোন হদিস ছিল না, আমরা জানতেও পারিনি তিনি বেঁচে আছেন কি না। এরপরে কোর্টেই বঙ্গবন্ধুকে প্রথম দেখার সুযোগ হয়। তখন পাকিস্তান সরকার আম্মাকে ভয় দেখান, বঙ্গবন্ধু প্যারোলে মুক্তি না নিলে তিনি বিধবা হবেন। প্রধানমন্ত্রী স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, আম্মা সোজা বলে দিলেন, কোন প্যারোলে মুক্তি হবে না। নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে কোন মুক্তি হবে না।
তিনি বলেন, আমি মায়ের সিদ্ধান্তের কথা কোর্টে যখন বঙ্গবন্ধুকে জানালাম তখন অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকেও দেখেছি তারা বলেছেন, তুমি কেমন মেয়ে? বাবার মুক্তি চাও না? আম্মাকে বলেছে-ভাবি আপনি কিন্তুু বিধবা হবেন। আমার মা তখন কঠিন স্বরেই বলেছেন, প্যারোলে মুক্তি নিলে মামলার আর ৩৪ জন আসামীর কী হবে? বঙ্গবন্ধু প্যারোলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। গণঅভ্যুত্থানে পাকিস্তান সরকার আব্বাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়, উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ ১শ’টি ভাষণের অন্যতম বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নানাজনে নানা পরামর্শ দিচ্ছে। আম্মা বললেন, তোমার যা মনে আসে তাই তুমি বলবে-তুমি রাজনীতি করেছো, কষ্ট সহ্য করেছ, তুমি জান কী বলতে হবে। কারও কথা শোনার দরকার নাই।
নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট কথা-সাহিত্যিক বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর চেয়ারম্যান সেলিনা হোসেন, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রেবেকা মোমেন এমপি এবং জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান মমতাজ বেগম বক্তৃতা করেন। নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে বেগম মুজিবের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্য চিত্রও প্রদর্শন করা হয়।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব-এর ৮৬তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে নানা স্মৃতি তুলে ধরেন বড় মেয়ে শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, জীবনে যত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, তা আমার বাবা (বঙ্গবন্ধু) করেছেন। প্রতিটি কাজ যে তিনি করেছেন, আমার মা কিন্তু ছায়ার মত তাকে সাহায্য করে গেছেন। কখনও অভিযোগ-অনুযোগ তিনি করেননি। যত কষ্টই হোক, বাবাকে কখনই বলেননি যে, তুমি রাজনীতি ছেড়ে দাও বা সংসার কর বা সংসারের খরচ দাও। কোনোদিন জীবনের কোনো প্রয়োজনে বাবাকে কখনও বিরক্ত করেননি। বরং আব্বা যে পদক্ষেপ নিতেন সেটাকেই সমর্থন করতেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্বের কারণে ‘কখনই বাবাকে এক নাগাড়ে দুই বছর কারাগারের বাইরে’ থাকতে দেখেননি বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুর জেলে থাকা অবস্থায় ফজিলাতুন নেছা মুজিবের সংগঠন চালানোর কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশেষ করে ছাত্রলীগকে তিনি নিজের হাতেই গড়ে তুলতেন। ছাত্রলীগকে সবসময় পরামর্শ দেয়া, তাদের যা কিছু দরকার, তিনিই দেখতেন। সংগঠন চালানোর প্রয়োজনে গহনা থেকে শুরু করে ঘরের ফ্রিজ পর্যন্তও ফজিলাতুন নেছা বিক্রি করেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। একটার পর একটা ঘাত-প্রতিঘাত এসেছে, কিন্তু আমার মাকে কখনই আমি ভেঙে পড়তে দেখিনি। একটা মানুষের চরিত্র কতটা দৃঢ় থাকলে যেকোনো অবস্থা মোকাবেলা করার মত ক্ষমতা ধারণ করতে পারে। হা-হুতাশ করার কথা কখনও আমার ময়ের মুখে আমি শুনিনি।
ছয় দফা দেয়ার পর বঙ্গবন্ধুকে প্রথমে কারাগারে ও পরে সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পাঁচ মাস আমরা জানতেও পারিনি তিনি বেঁচে আছেন কি না। সেই সময় আন্দোলন গড়ে তোলা... আমার মা আমাদের নিয়ে ছোট ফুপুর বাসায় যেতেন। ওখানে গিয়ে নিজে পায়ের স্যান্ডেল বদলাতেন, কাপড় বদলাতেন, বোরকা পড়তেন, একটা স্কুটারে করে আমার মামাকে নিয়ে ছাত্র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক, আন্দোলন চালাবে কীভাবে তার পরামর্শ দেয়া, নির্দেশ দেয়া- তিনি নিজে দিতেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা। আন্দোলন সফল করার জন্য তিনি কাজ করতেন। কিন্তু কখনই পত্রিকায় ছবি ওঠা- এসব দিকে তিনি ছিলেন না।
একটা সময় ছয় দফা না আট দফা হবে তা নিয়ে মতবিরোধে অনেক আওয়ামী লীগ নেতাও আট দফার পক্ষে চলে গিয়েছিলেন বলে জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। ছয় দফা থেকে একচুল এদিক ওদিক যাবে না, এইটেই ছিল তার সিদ্ধান্ত- এটা আব্বা বলে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের নেতারা উঠে-পড়ে লাগলেন। আট দফা খুবই ভাল, আট দফা মানতে হবে। তখন তার মায়ের ছয় দফার পক্ষে অবস্থানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মা বলেছিলেন, শুধু এটকুই বুঝি ছয় দফাই হচ্ছে বাংলার মানুষের মুক্তির সনদ, এটা উনি (বঙ্গবন্ধু) বলে গেছেন, এইটেই মানি, এর বাইরে কিছু মানি না। রাজনৈতিকভাবে তিনি যে কত ‘সচেতন’ ছিলেন সেটা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানেও আমার মায়ের সেই দৃঢ়তা।
আবার বঙ্গবন্ধু জেলে থাকার সময় সেখান থেকে দলের জন্য কিভাবে নির্দেশ নিয়ে আসতেন সে স্মৃতিচারণও করেন প্রধানমন্ত্রী। মায়ের স্মরণশক্তি ছিল অসাধারণ। আমরা মাঝে মাঝে বলতাম তুমি তো টেপ রেকর্ডার। আমাদের শিখিয়ে নিয়ে যেতেন কারাগারে গিয়ে কি করতে হবে। একটু হৈ চৈ করা, এর মাঝে বাইরের সমস্ত রিপোর্ট আব্বাকে দেয়া এবং আব্বার নির্দেশটা নিয়ে আসা। এরপর সেটা ছাত্রদের জানানো। সেøাগান থেকে শুরু করে বলতে গেলে সবকিছুই কিন্তু তিনিই (বঙ্গবন্ধু) কারাগার থেকে নির্দেশ দিয়ে দিতেন। সেভাবেই কিন্তু মা ছাত্রলীগকে কাজে লাগাতেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশ স্বাধীন হবে এ বিষয়ে তার মা আগে থেকেই অবগত ছিলেন। যখন পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা আসতেন (৩২ নম্বরের বাড়িতে) আমার মা তখন পর্দা টেনে ভেতরে বসে তাদের সঙ্গে কথা বলতেন। বলতেন আমি পর্দা করি। আর আমাদের বলতেন ওদের সঙ্গে তো আমরা থাকব না, তাহলে ওদের সঙ্গে কেন দেখা করব। কখনও দেখা করতে চাইতেন না।
তিুিন বলেন, আব্বা যখন মন্ত্রী, এমপি, এমএলএ ছিলেন, করাচিতে যেতেন, আমার মা কিন্তু জীবনে একদিনও করাচিতে যাননি। কোনোদিন যেতে চাননি। কারণ উনি জানতেন, একমাত্র উনিই বোধহয় সবথেকে বেশি আগে জানতেন যে, দেশ স্বাধীন হবে। এই যে স্বাধীনতার চেতনায় নিজেকে উদ্বুদ্ধ করা, এটা আমার মায়ের ভেতর তীব্র ছিল এবং একটা বিশ্বাসও ছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।