Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জেলের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

করোনাভাইরাস ও ৬৫ দিনের সমুদ্রে মৎস্য অবরোধ শেষে সাগরে মাছ ধরা শুরু করেছেন জেলেরা। কলাপাড়া ও আনোয়ারা উপক‚লে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো রিপোর্ট-

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা : প্রথমদিকে মাছ না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন জেলেরা কিন্তু বর্তমানে জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ। ছোট, মাঝারি ও বড় সাইজের প্রচুর ইলিশ পেয়ে খুশি জেলে, ফিশিং ট্রলার মালিক ও মৎস্য আড়তদাররা। গভীর সমুদ্র থেকে ফেরত আসা ইলিশ বোঝাই ট্রলার নিয়ে এখন ব্যস্ত হয়ে উঠেছে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, আলীপুর-মহিপুরসহ উপক‚লীয় এলাকার বিভিন্ন মৎস্য বন্দরের আড়তগুলো।
কুয়াকাটা মৎস্য আড়তদার বশির হাওলাদার জানান, অবরোধের পর জেলেরা সাগরে যাচ্ছে আর প্রচুর পরিমাণে ইলিশ নিয়ে ফিরছেন। ৭০০-৮০০ গ্রামের প্রতিমণ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২২ থেকে ২৪ হাজার টাকায়। আর ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের মাছ বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকায়। ৯০০ গ্রামের উপরের প্রতিমণ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা দরে। এভাবে মাছ পাওয়া গেলে মাছের সঙ্গে জড়িতরা অনেক ভালো থাকতে পারবে।
আলীপুর-মহিপুর মৎস্য আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ও লতাচাপলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লা জানান, সাগরে জেলেদের জালে বিভিন্ন সাইজের ইলিশ ধরা পড়ছে। দীর্ঘদিন অবরোধের পর মাছ পাওয়ায় খুশি জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। এক একটি ট্রলার ২০ থেকে ৫০ মণ ইলিশ নিয়ে ফিরে আসছে। ইলিশ পাওয়ায় কুয়াকাটা, আলীপুর ও মহিপুরের আড়তগুলোতে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। মহিপুর আল্লাহ ভরসা আড়দের সত্ত্বাধিকারি মো. তানভীর আহম্মদ লুনা আকন জানান, বরফের অভাবে জেলেরা মাছের ভালো দর পাচ্ছে না। বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী থেকে বরফ আনতে হচ্ছে।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ জানান, অবরোধ শেষে জেলেরা আবার সাগরে মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। মূলত দুটি কারণে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। প্রজনন সুবিধায় যাতে মাছ নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়তে পারে। অপরটি হলো- ছোট মাছকে বড় হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়া। যার জন্য বর্তমানে বড় আকারের ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পড়ছে। এবার অবরোধ ফলপ্রসূ হয়েছে। আগামীতেও এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, সুদিন ফিরেছে চট্টগ্রামের আনোয়ারার জেলেদের। জাল ফেললেই উঠে আসছে রুপালি শস্য ইলিশ। এক সপ্তাহ ধরে আনোয়ারা উপক‚লজুড়ে যেন ইলিশ ধরার উৎসব চলছে। জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় খুশি জেলেরা। চারপাশে রূপালি ইলিশের ছড়াছড়ি। এ সময় কথা বলার ফুরসত নেই কারও। জেলে হেমন্ত জলদাশ কোনো রকমে বললেন, করোনায় বড় দুর্দিন কেটেছে। এখন বেশি বেশি ইলিশ ধরা পড়ায় কিছুটা স্বস্তি মিলেছে।
এ ধরনের মন্তব্য আনোয়ারা উপক‚ল থেকে মাছ ধরতে যাওয়া প্রায় সব জেলেরই। সাগরে জেলেদের জালে এখন ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে রুপালি ইলিশ। গত তিন দিনে সাগর থেকে ফেরা ট্রলার ও জেলেদের নৌকা ছিল ইলিশে ভর্তি। বাজারে দাম ভালো থাকায় খুশিও তারা। তবে দাম এখনো নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে।
উপজেলা মৎস্য অধিদফতর সূত্র জানায়, উপজেলার খুরুস্কুল গোদারপাড় থেকে পারকি সৈকত পর্যন্ত প্রায় ২০টি ঘাটে তালিকাভুক্ত ৭৮৪টি মাছ ধরার নৌযান আছে। এর বাইরেও অর্ধসহস্রাধিক নৌকা দিয়ে সাগর ও শঙ্খের মোহনা থেকে মাছ আহরণ করেন জেলেরা। ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকার পর জুলাইয়ের শেষের দিকে সাগরে মাছ ধরতে যান তারা। সে সময় তাদের জালে তেমন ধরা পড়েনি ইলিশ। তবে ভরা মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে এসে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ।
আড়তদার কামাল সওদাগর বলেন, বড় সাইজের ইলিশের মণ ১৮ হাজার টাকায়, মাঝারি সাইজের ১২ হাজার টাকায় আর ছোট সাইজের ইলিশ ৭ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় চালান করা হচ্ছে। খুচরা বাজারে ইলিশের দাম কমে আসছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রাশিদুল হক বলেন, ৬৫ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ রাখায় এখন ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। জেলে পরিবারগুলোকে সহায়তা দিয়ে জাটকা নিধনে নিরুৎসাহিত করার সুফল মিলছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রুপালি-ইলিশ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ