Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সর্বত্রই প্রশ্ন কী আছে তদন্ত প্রতিবেদনে?

আজ জমা দেয়া হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে

কক্সবাজার ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

দেশ জুড়ে আলোচিত টেকনাফে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকান্ডের ৩৫ দিন পার হয়ে গেল। এই লোমহর্ষক হত্যকান্ডের তদন্ত প্রতিবেদন আজ সোমবার জমা দেয়া হচ্ছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে। কী আছে তদন্ত প্রতিবেদনে? কক্সবাজারের যেন তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য জানার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। সবার মুখে প্রশ্ন প্রকৃত ঘটনা দেশবাসী জানতে পারবে তো? নাকি প্রদীপ কুমার দাশকে সুকৌশলে বাঁচিয়ে দেয়ার চেষ্টা হবে? কারণ প্রদীফ-লিয়াকতকে বন্দি হিসেবে কারাগারে ‘ডিভিশন’ দেয়ার আবেদনে এসপির স্বাক্ষর করায় অনেকের মধ্যে সন্দেহ বেড়ে যায়। কক্সবাজারের মানুষ ও দেশবাসী চায় এই তদন্ত রিপোর্ট জনসম্মুখে প্রকাশ করা হউক। আর নিশ্চিত কার হউক খুনিদের শাস্তি।

এই হত্যা মামলা প্রধান আসামী টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ, ইন্সপেক্টর লিয়াকত ও নন্দ দুলালসহ ১০ জন পুলিশ সদস্য এবং পুলিশের মামলার তিন সাক্ষীসহ ১৩ জন আসামী গ্রেপ্তার হয়েছে। এই জঘন্য ঘটনাটি তদন্তে গঠিত হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের একটি তদন্ত কমিটি। এছাড়াও এই ঘটনায় মেজর সিনহার বোনের করা হত্যা মামলাটি তদন্ত করছেন র‌্যাব-১৫। আসামীরা সবাই কারাগারে রয়েছে।

ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য সব ধরণের কার্যক্রম সম্পন্ন করছে বলে জানা গেছে। চার দফা সময় বৃদ্ধি করে ৩৫ দিনের মাথায় তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার কথা জানান কমিটির প্রধান মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে গেছে। তদন্তে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত সম্মলিত এই প্রতিবেদনটি প্রায় ৮০ পৃষ্ঠা হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরণের ঘটনা আর ঘটে সেজন্য করণীয় সম্পর্কে এই প্রতিবেদনের সাথে ১২ দফার একটি সুপারিশমালাও দেয়া হয়েছে। সেটাও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হবে।
গত ৩১ আগস্ট টেকনাফের বাহারছড়ায় পুলিশের গুলিতে সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় ২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাজাহান আলিকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এতে সদস্য করা হয় কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন এবং সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডারের একজন প্রতিনিধি।

কিন্তু এর পরদিনই (৩ আগস্ট) তদন্ত কমিটি ৪ সদস্যবিশিষ্ট করে পুনর্গঠন করা হয়। এতে কমিটির প্রধান করা হয় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে। আর সদস্য করা হয় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শাজাহান আলি, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. জাকির হোসেন এবং সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডারের প্রতিনিধি লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ সাজ্জাদকে।

পুলিশের চারজন আবার রিমান্ডে : সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার আসামি পুলিশের চার সদস্যকে দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তারা হচ্ছেন- এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আবদুল্লাহ আল মামুন। রেবিবার (৬ সেপ্টেম্বর) জেলা কারাগার থেকে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়েছে র‌্যাব। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের সিনিয়র এএসপি খাইরুল ইসলাম জানান, এই পুলিশ সদস্যদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দ্বিতীয় দফায় ২৪ আগস্ট রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত চারদিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। সেই আলোকে তাদেরকে রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে।
এর আগে পুলিশের অপর তিন সদস্য এই মামলার প্রধান আসামী ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকত ও এএসআই নন্দদুলালকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
তাদের মধ্যে প্রদীপকে চার দফায় ১৫ দিন এবং লিয়াকত ও নন্দদুলাল রক্ষিতকে তিন দফায় ১৪ দিন করে রিমান্ডে নেয়া হয়। লিয়াকত ও নন্দদুলাল ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও প্রদীপ এখনো জবানবন্দী দেননি। তারা সবাই এখন কারাগারে রয়েছেন। সিনহা হত্যা মামলায় এপিবিএন এর তিন সদস্যসহ এপর্যন্ত আটজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান।

এদিকে বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহে মেজর সিনহা হত্যার বিষয়টিও অতীতের অনেক ঘটনার মত ক্রমান্বয়ে নিষ্প্রভ হয়ে যাচ্ছে কি না? এনিয়ে সচেতন মহলের সন্দেহ বাড়ছে। তারা চায় সিনহা হত্যাকান্ড নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হউক। এ নিয়ে ভেতরে বাইরে যে কোন খেলা বন্ধ হউক। প্রকৃত দোষীরা শাস্তি পাক। এই ধরণের জঘন্য ঘটনা আর না ঘটুক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিনহা হত্যা

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
৩০ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ