পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কমিটিতে প্রায় তের ভাগ নারী প্রতিনিধিত্ব
আফজাল বারী : পাহাড়সম বাঁধা ডিঙ্গিয়ে ৪ মাস ১৮দিন পর বিএনপির ঘোষিত কমিটি নিয়ে নানামুখী বিচার-বিশ্লেষণ হচ্ছে। এ বিশ্লেষণ দলের গ-ি পেরিয়ে বিরাজ করছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিএনপির জন্য এখন সবচেয়ে প্রতিকূল পরিবেশে। বিপর্যস্ত এই দলটি তাদের কমিটি দিতে পেরেছে এটাই বড় সফলতা। নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির জন্য বিএনপির যে ভিশন সেটির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে কমিটিতে।
নেতৃত্ব বিকাশে দক্ষতা-ত্যাগ, উচ্চ শিক্ষা, সকল শ্রেণী- পেশার প্রতিনিধির সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে নারী প্রতিনিধিত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। সদ্য ঘোষিত দলের স্থায়ী কমিটি, উপদেষ্টা কাউন্সিল ও জাতীয় নির্বাহী কমিটি মিলে নারীদের সংখ্যা গত কমিটির থেকে ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ বাড়িয়ে দলটি।
বিএনপির কমিটি বিশ্লেষণ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর নূরুল আমিন বেপারী ইনকিলাবকে বলেন, কাল ভেদে মন্দের ভালো কমিটি হয়েছে। তবে বারবার যারা সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুল করেছে, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে সেই নীতিনির্ধারনী ফোরাম আগের মতোই রয়েছে। তবে ঘোষিত নেতৃত্ব দীর্ঘ সময় টেকসই করবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, কমিটিতে তাদের ১১টি অঙ্গ সংগঠনের বাইরেও শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, সাহিত্যিকদের অর্ন্তভুক্ত করে সকল ধর্ম-বর্ণের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। এতে করে দলটির নেতৃত্বের বিস্তৃতি ঘটেছে।
এদিকে দীর্ঘ প্রায় নয় বছর আন্দোলন সংগ্রামে ত্যাগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের যথাযথ মুল্যায়ন, নবীন-প্রবীদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি গঠন করায় দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মীরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে অঞ্চল বা বিভাগকে। অঞ্চল ও আসন সংখ্যার ভিত্তিতে নেতা নির্বাচিত করা হয়েছে। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীর আন্দোলন-সংগ্রামে সফলতার মুখ দেখা যাবে বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা। প্রতিশ্রুতি মোতাবেক নারী, তরুণ, যুবকদের সুযোগ করে দেওয়ায় নিষ্ক্রিয়রা ফের স্বতঃস্ফূর্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
আলাপকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের অন্ততঃ ১৫জন নেতা নতুন কমিটি প্রসঙ্গে জানান, বিগত সময়ের চেয়ে এবার সুবিশাল কমিটি। এতে অতীতের আন্দোলন সংগ্রামে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তাদের ত্যাগের মূল্যায়ন করা হয়েছে। একই সাথে যারা নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সক্রিয় হতে পারেন নি তাদেরকেও বাদ দেয়নি দলের চেয়ারপার্সন। কমিটি প্রকাশের পর দলের অভ্যন্তরে আলোচনা হয় যে, দলীয় প্রধান তার নেতাকর্মীদের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছেন। নইলে যারা শুধু কমিটিই নয় বিএনপির রাজনীতি থেকে ঝরে পড়ার কথা তাদের কেউ কোন না কোন কমিটিতে পুনর্বাসন করেছেন।
কমিটি গঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন এমন একজন নেতা আলাপকালে জানান, কমিটি গঠনের সর্বময় ক্ষতা দেওয়া হয়েছে চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে। কমিটি গঠন প্রক্রিয়া চলাকালে দলের অনেক নেতার নামে সংস্কারপন্থী, ক্ষমতাসীনদের সাথে আতাঁতকারসহ নানান অভিযোগ আসে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে। বিষয়টিকে আমলে না নিয়ে বরং দলীয় প্রধান বলেছেন, তিনারা (তারা) তো বিএনপিই করেন। হয়তো পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে এদিক-সেদিক ছিলো। দল থেকে বা কমিটি থেকে বাদ দিলে তারা কোথায় যাবে? এসব ছোটখাটো বিষয় না ধরে তাদের কমিটিতে জায়গা করে দিন। তখন কাজ করেনি সামনের সময় করবে। শীর্ষ নেতার এমন মনোভাবের পর অভিযুক্ত অনেক নেতারই স্থান হয়েছে কমিটিতে।
এবারের কমিটি গঠনের বেলায় উচ্চ শিক্ষা বিশেষ করে ছাত্র সংসদের সাবেক নেতাদের প্রধান্য দেবার নির্দেশনা ছিলো বিএনপি চেয়ারপার্সনের। যে কারণে অতীতের চেয়ে এবারের কমিটিতে উচ্চ শিক্ষাধারীদের সংখ্যা বেড়েছে। অধিক গুরুত্বপূর্ন পদে উচ্চ শিক্ষিত এবং কম গুরুত্ব পদে অন্যরা।
গত শনিবার দলের স্থায়ী কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদসহ ৫৯২ জনের নির্বাহী কমিটিতে এবার অনেক নতুন মুখ জায়গা পেয়েছেন। গত ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনের পর মোট চার ধাপে এ কমিটি ঘোষণা করা হলো। ঘোষিত নতুন স্থায়ী কমিটিতে ১৭ জন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন ৭৩ জন। নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্য আছেন ৫০২ জন। এর মধ্যে ৩৫ জন ভাইস চেয়ারম্যান, ৭ জন যুগ্ম মহাসচিব, ১০ জন সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে আছেন ১৬১ জন কর্মকর্তা। বাকিরা সদস্য। সদস্যদের মধ্যে ১১৩ জন নতুন মুখ। দুইজনকে বিশেষ সম্পাদক করা হয়েছে।
নতুন কমিটি সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘অত্যন্ত ভাইব্র্যান্ট ও ডায়নামিক কমিটি হয়েছে। আশা করি, এ কমিটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এত বড় কমিটি কেনো সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের যে সামাজিক পরিস্থিতি, এটা একটা কারণ। আর বিগত দিনগুলোতে বিএনপি যে বিকাশ লাভ করেছে, বিশেষ করে রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী নেতা-কর্মীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। ছাত্রদল, যুবদল থেকে যারা আসছেন, তাদের তৈরি করার জন্য নতুন কমিটিতে আনতে হয়েছে। সে জন্য অবয়বটা বড় হয়েছে।
কমিটি ঘোষণার পরপরই দেশের বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিতরণ করেছেন নেতার নিজ নিজ অনুসারিরা।
নারী প্রতিনিধিত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি :
এবার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে নারী প্রতিনিধিত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে বিএনপি। ঘোষিত দলের স্থায়ী কমিটি, উপদেষ্টা কাউন্সিল ও জাতীয় নির্বাহী কমিটি মিলে নারীদের সংখ্যা গত কমিটির থেকে ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ বাড়িয়ে দলটি। ৫০২ সদস্যের যে নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয় তাতে ভাইস চেয়ারম্যান, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও নির্বাহী সদস্য মিলে মোট সংখ্যা ৬৭ জন। অর্থাৎ ১৩ দশমিক ৩৫ ভাগ। তবে স্থায়ী কমিটি, উপদেষ্টা কাউন্সিল ও জাতীয় নির্বাহী কমিটি মিলে নারী প্রতিনিধিত্ব সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ।
গত কমিটি ছিলো ৩৮২ জনের। এর মধ্যে নারী প্রতিনিধিত্ব ছিলো ৪২ জন। স্থায়ী কমিটিসহ এই সংখ্যা ৪৪ জন। অর্থাৎ গত কমিটির নারী প্রতিনিধিত্ব ছিলো শতকরা ১০ শতাংশ। এছাড়া এবার ঘোষিত ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে একজন এবং ৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা কাউন্সিলে ৬জন নারী নেত্রী রয়েছেন।
১৯ মার্চ ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন প্রাঙ্গণে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে সমাপনী বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, “নারীদের রাজনীতিতে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা কমিটিতে নারী নেতৃত্ব বাড়াবো। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা এই সংখ্যা ৩০ ভাগ নিতে যাবো। গণপ্রতিনিধিত্ব আইন-আরপিও অনুযায়ী প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধি রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া একমাত্র নারী নেত্রী। গত কমিটিতে সারোয়ারী রহমান স্থায়ী কমিটিতে থাকলেও এবার তাকে সরিয়ে উপদেষ্টা কাউন্সিলে নেয়া হয়েছে।
৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা কাউন্সিলে সারোয়ারি রহমান, অধ্যাপিকা তাজমেরী ইসলাম, অধ্যাপিকা সাহিদা রফিক, রোজী কবির, তাহসিনা রুশদির লুনা, আফরোজা খান রিতা ৬ জনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
৫০২ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদে রাবেয়া চৌধুরী, সেলিমা রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বিলকিস জাহান শিরিন, শামা ওবায়েদ মনোনয়ন পেয়েছেন। ৫৪টি সম্পাদক পদের মধ্যে মহিলা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে নুর এ আরা সাফা, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক পদে রাশেদা বেগম হীরা, স্বণির্ভর বিষয়ক সম্পাদক পদে শিরিন সুলতানা এবং উপজাতী বিষয়ক সম্পাদক পদে মা মা চিন মনোনীত হয়েছেন। গত কমিটিতে তিনটি সম্পাদকীয় পদে নারীরা নেতৃত্ব পেয়েছিলেন।
এছাড়া এবারের কমিটিতে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফাহিমা মুন্নী, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, বেবী নাজনিনসহ শিক্ষা বিষয়ক পদে হেলেন জেরিন খান, ফরিদা মনি শহিদুল্লাহ, সহ-প্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক অর্পনা রায়, সহ-মহিলা বিষয়ক আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, সহ-ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক নেওয়াজ হালিমা আরলি, সহ-স্থানীয় বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আখতার, সহ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রেহানা আক্তার রানু, সহ-স্বণির্ভর বিষয়ক সম্পাদক নিলুফার চৌধুরী মনি, সহ-তাঁতী বিষয়ক সম্পাদক রাবেয়া সিরাজ, সহ-মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, সহ-নার্সেস ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম স্থান পান।
৩১৩ জন সদস্যের নির্বাহী মধ্যে নারী প্রতিনিধি হচ্ছেন ৪৪ জন। এরা হলেন, রেজিনা ইসলাম, বিলকিস ইসলাম, সাঈদা রহমান জ্যোৎস্না, রওশন আরা ফরিদ, লাভলী রহমান, কাজী হেনা, খালেদা পান্না, শাহিদা আখতার রীতা, নুরজাহান ইয়াসমীন, লায়লা বেগম, রহিমা সিকদার, লিটা বশির, মেহেরুনন্নেসা হক, রাজিয়া আলী, খালেদা ইয়াসমীন, ইয়াসমীন আরা হক, ফেরদৌস ওয়াহিদা, শাহানা আখতার সানু, সাইমুম বেগম, হাসিনা আহমেদ, শা চিং প্রু জেরী, খালেদা রাব্বানী, সাহানা রহমান রানী, চমন আরা, নার্গিস আলী, জেবা খান, নাছিমা আক্তার কল্পনা, ফিরোজা বুলবুল কলি, রিনা পারভিন, আয়েশা সিদ্দিকী মনি, নুর জাহান মাহবুব, পিয়ারা মোস্তফা, ফরিদা ইয়াসমীন, সিমকী ইসলাম, আরিফা জেসমিন, অ্যাডভোকেট মুন্নী, রুখসানা খানম মিতু, সেলিমা রউফ চৌধুরী, এলিজা জামান, সাবেরা আলাউদ্দিন হেনা, রিজিয়া ইসলাম, নিপুন রায় চৌধুরী, রাবেয়া আলী, তাহমিনা খান আওরঙ্গ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।