পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কৃষিজমি, বসতভিটা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসা কেন্দ্র নদীগর্ভে
এম এ বারী, ভোলা থেকে : আর কত গ্রাম নদীতে বিলীন হলে, আর কত কৃষিজমি, বসতভিটা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসা কেন্দ্র নদীগর্ভে বিলীন হলে আর কত মানুষ বাস্তুভিটা হারিয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হলে বন্ধ হবে মেঘনার ভাঙন। নেতারা আসে, ইঞ্জিনিয়ার আসে, সাংবাদিক আসে, ত্রাণ আসে, বস্তাভর্র্তি বালু ফেলা হয়। সবই হয় কেবল বন্ধ হয় না মেঘনার ভাঙন। বর্ষা এলে নদীতে ভাঙন শুরু হলেই নেতারা আসে, সাংবাদিক আসে তড়িঘড়ি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীভাঙন ঠেকাতে উঠে-পড়ে লাগে। ততদিনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় শত শত হেক্টর জমি। বর্ষা চলে যায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্ব শেষ, আবার বর্ষা আসে শুরু হয় নদীভাঙন, তোড়জোড় শুরু হয় ভাঙন রোধের। এভাবে আর কত জমি নদীগর্ভে বিলীন হলে নেওয়া হবে নদীভাঙন রোধে স্থায়ী পদক্ষেপ? উজান নেমে আসা তীব্র ¯্রােত, অমাবস্যার প্রভাবে ভরা কটাল বা তেজ কটাল এর ফলে ভোলা নদী ভাঙন ও জলা বদ্ধ এলাকায় গেলে এধরনের হতাশা ব্যক্ত করে নদী ভাঙন ক্ষতিগ্রস্ত ও পানিবন্দী মানুষ। বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই শুরু হয় মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর ভয়াবহ নদী ভাঙন। নদী ভাঙনের কবলে ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা, রাজাপুর, কাচিয়া, ধনিয়া, শিবপুর, ভেদুরিয়া, ভেলুমিয়া, দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর, সৈয়দপুর, নেয়ামতপুর, মেদুয়া, বোরহানউদ্দীন এর বড়মানিকা, পক্ষীয়া, তজুমদ্দিন এর চাঁদপুর, লালমোহন, লর্ডহার্ডিঞ্জ, চরফ্যশনের নজরুল নগর, চরকুকরি মুকরি, চর পাতিলা, মাদ্রাজ, ঢালচর, মনপুরার দক্ষিন ও উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়ন সহ ভোলার বিভিন্ন এলাকা ভয়াবহ নদী ভাঙ্গনের মুখে হুমকীর সম্মুক্ষিন। নদীভাঙনের কারণে মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে গাজীপুর, রামদাসপুর, মধুপুর, বঙ্গের চর, নাছির মাঝি, হাজীপুর, নেয়ামত পুর, বিজীপুর, মির্জাকালু, সরাজগঞ্জসহ ভোলার বিভিন্ন পুরাতন ঐতিহ্যবাহী এলাকা। নাম মাত্র টিকে আছে কাচিয়া, মদনপুর, মেদুয়া, ভবানীপুর, সৈয়দপুর, মনপুরা হাজীর হাট, ঢালচর সহ বিভিন্ন এলাকা।
গত মে মাসের ২০ তারিখে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে প্রবল জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভোলার বিভিন্ন এলাকার নদীর তীর বেড়িবাঁধ, লঞ্চঘাট, ফেরিঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এপ্রিল মাসের শেষের দিকে নদীতে ¯্রােত বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীভাঙনের কারণে ভোলা-লক্ষ্মীপুর ফেরীঘাটটি ইলিশা থেকে ভেদুরিয়া ঘাটে স্থানান্তরিত হয়। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর পরে ইলিশা রাজাপুর রক্ষার জন্য প্রায় পৌনে তিন লাখ জিও ব্যাগ ফেলা হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। গত ২ আগস্ট থেকে উজান থেকে নেমে আসা তীব্র ¯্রােত ও জোয়ারের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে বেড়িবাঁধ ভেঙে মেঘনার পানি ইলিশা, রাজাপুর এলাকায় প্রবেশ করে সংকট মোকাবেলা পানি উন্নয়নের বোর্ড-এর নির্বাহী প্রকশলী ২ লাখ জিও ব্যাগের প্রয়োজন বলে উল্লেখ করে। নদীভাঙন মোকাবিলায় গত শুক্রবার বিকালে ভোলায় এক আসনের সংসদ সদস্য ও মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আলহাজ্ব তোফায়েল আহাম্মেদ নদীভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে সংকট মোকাবেলায় দ্রুত ব্যবস্থাপনার আশ্বাস দেন। গত ২০১৫ সালের জুলাই মাসের শেষের দিকে মেঘনায় ভয়াবহ ভাঙন শুরু হলে ইলিশা, রাজাপুর এলাকার ফেরিঘাট সহ কয়েক কিলোমিটার এলাকা মেঘনা গর্বে বিলিন হলেও গত শীত মৌসুমে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নীরব ছিল বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ছাত্র মোস্তফা জানান, নদীতে পর্যাপ্ত ড্রেসিং না থাকার কারনে ডুবো চরের সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে নদীর গতিপথের পরিবর্তন হয়ে তীব্র ¯্রােত ভোলা উপকূলের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। যার ফলে মেঘনা ভয়াবহ ভাঙনের রুপ ধারন করেছে। তিনি আরও বলেন, সুস্ক মৌসুমে অবৈধ বালু উত্তোলন নদী ভাঙনের অন্যতম কারণ। গত জুন মাসে নদী ড্রেজিং করার জন্য ১০টি ড্রেজার আনা হলেও কী কারণে তা ফেরত নেওয়া হয়েছে তা অনেকেই জানেন না।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুর রহমান বলেন, জিও ব্যাগ ফেলে কোনো লাভ নেই। প্রয়োজন স্থায়ী সমাধান। নদী ড্রেজিং করে সিসি ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে নদী ভাঙন প্রতিরোধ সম্ভব।
ইলিশা-রাজাপুরের মতো দৌলতখানের সৈয়দপুর, ভবানীপুর, বোরহানউদ্দিনের বড় মানিকা, পক্ষিয়া, তজুমিদ্দনের চাঁদপুরে নদী ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে গেছে। এতে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে বলেন, পত্রিকায় দেখলাম, শুনলাম নেদারল্যান্ডস সরকারের সাথে নদীভাঙন রোধে চুক্তি হয়েছে। স্থানীয়ভাবে কয়েকশ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে মেঘনা ভাঙন রোধে যে পরিমান অর্থ বরাদ্দ হয়েছে তার ৫ ভাগের এক ভাগ যদি এক কালীন যথাযথভাবে ব্যবহার হতো তাহলে ভোলাকে মেঘনা-তেঁতুলিয়ার হাত থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষা করা সম্ভব হতো।
ভাঙনকবলিত এলাকাবাসীর অভিযোগ বর্তমানে চলমান জিও ব্যাগের ভিতরে নি¤œমানের বালু ও মাটি ভরাট হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।