পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হোটেল-রেস্টুরেন্ট তুলে দেয়া হলে অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়বে -রাশেদ খান মেনন
স্টাফ রিপোর্টার : গুলশান, বনানী, বারিধারাসহ আবাসিক এলাকায় হোটেল-রেস্টুরেন্ট উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। তারা জানিয়েছেন, দেশের কথা ভেবে ও উদ্যোক্তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিদ্যমান আইন পরিবর্তন করার আহ্বান জানান। এজন্য এফবিসিসিআইয়ের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
গতকাল এফবিসিসিআই মিলনায়তনে হোটেল রেস্টুরেন্টস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় ব্যবসায়ী নেতারা এ দাবি জানিয়েছেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি, রাখেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালন ড. গোলাম মোয়াজ্জেম, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, স্থপতি মোবাশ্বের আলম ভূইয়া, ঢাকা চেম্বারের প্রেসিডেন্ট হোসেন খালেদ, ব্যাংকারদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, আবাসিক এলাকায় হোটেল রেস্টুরেন্টে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের কথা মন্ত্রী পরিষদে আলোচনা হয়েছে। ওই আলোচনায় ধাপে ধাপে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। তিনি বলেন, দেশে পর্যটকদের থাকার জন্য পর্যাপ্ত রুম নেই। এ কারণে হোটেল রেস্টুরেন্ট তুলে দেয়া হলে অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়বে। এ কারণে তিনি সকলের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
উদ্যোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য এফবিসিআইয়ের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে আইনের পরিবর্তনের মাধ্যমে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের আহবান জানিয়েছেন এফবিসিআই। সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত চলমান উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
স্থপতি মোবাশ্বের আলম ভূইয়া চলমান উচ্ছেদ অভিযানের বিরোধিতা করে বলেন, গত ৪০/৪৫ বছরে গড়ে উঠা ভুলভ্রান্তি পরিবর্তন হওয়া সম্ভব নয়। বিদ্যমান সমস্যা ধাপে ধাপে পরিবর্তন করা সম্ভব। রাজধানীকে আধুনিক আবাসস্থল গড়ে তোলার জন্য বিদ্যমান আইন যুগোপযোগী করতে হবে। তিনি বলেন, রাজউকের আইনের মাধ্যমেই শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগে গড়ে ওঠা আবাসিক এলাকায় হোটেল-রেস্তোরাঁ বৈধ করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেছেন, শুধু গুলশান, বনানী ও বারিধারায় হোটেল-রেস্টুরেন্টে প্রায় সাড়ে ৫শ’ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩শ’ কোটি টাকাই ব্যাংক ঋণ। এ পরিস্থিতিতে হঠাৎ এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলে এসব বিনিয়োগকারী পথে বসে যাবে। ব্যাংকের ঋণ খেলাপি হয়ে পড়বে। কর্মক্ষম শ্রমিক বেকার হয়ে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। তিনি সরকারকে এ বিষয়টি বিবেচনা নিয়ে চলমান উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করার আহ্বান জানান। একই সাথে বেসরকরি বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এমন পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে সরকারের প্রতি আহবান জানান। একই সাথে বিদ্যমান আইন পরিবর্তন করে পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলার জন্য পরামর্শ দেন।
ব্যাংকারদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান মাথা ব্যথা করলে মাথা কেটে ফেলা কোনো সমাধান নয়। তিনি জানান, হোটেল রেস্টুরেন্টে ৫৬টি ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ জড়িত। রাতারাতি এগুলো বন্ধ করে দিলে দেশের ৫৬টি ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ বেড়ে যাবে। বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি সকলের সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান।
ঢাকা চেম্বারের প্রেসিডেন্ট হোসেন খালেদ বলেন, হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিলে টুরিস্টরা কোথায় গিয়ে থাকবে। কারণ, দেশে আগত ৯৮ ভাগ টুরিস্ট আসে ব্যবসার কাজে আসে। এছাড়া এ খাতে শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে। রাতারাতি বন্ধ করে দিলে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের উপদেষ্টা এম এইচ রহমান। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, অভিজাত আবাসিক এলাকায় বাস্তব প্রয়োজনের তাগিদে গড়ে ওঠা হোটেল-রেস্টুরেন্ট উচ্ছেদ পর্যটন শিল্প উন্নয়ন ও বিদেশি ক্রেতা এবং পর্যটকদের আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। অভিজাত এলাকার বাজেট হোটেল ও উন্নত মানের গেস্টহাউসগুলোতে প্রতি রাতে কমপক্ষে তিন হাজার বিদেশি অবস্থান করে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সরকার বৈদেশিক মুদ্রা, মূল্য সংযোজন কর ও কর পাচ্ছে। এ ছাড়া বাণিজ্যিক হারে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল ও অন্যান্য শুল্ক আদায় করছে। সরকারের উচ্ছেদের সিদ্ধান্তে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় ধস নেমেছে। প্রতিষ্ঠানের মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
এম এইচ রহমান বলেন, গুলশানের সব হোটেল গেস্টহাউজ অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট বৈধভাবে ব্যবসা করে। তারা নিয়মিত ট্যাক্স, কর ও সিটি করপোরশনের অনুমতি নিয়েই এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারপরেও এগুলো বন্ধ করলে এদেশের পোশাক শিল্পসহ অনেক ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। থাকার জায়গা না পেলে বিদেশী বায়ারেরা আসবে না। ফলে পোশাক শিল্পে ধস নামবে।
তিনি জানান, বাংলাদেশে সরকারী ব্যবস্থাপনায় মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ রুম ভাড়া দিতে পারে। অথচ এর চাহিদা অনেক বেশি। এগুলো আমরাই দিয়ে থাকি। এখন হোটেল বন্ধ করে দিলে বিদেশী ও দেশী ব্যবসায়ীরা কোথায় থাকবে আর কোথায় থাকবে। সরকারের এ বিষয়টি চিন্তা করা উচিত।
কোনো হোটেল অবৈধ নেই বলে দাবি করে তিনি বলেন, সরকারের জ্ঞাতসারেই এ সকল হোটেল গেস্টহাউজ অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ব্যাবসা চলছে। এর সাথে এক লক্ষ লোক জড়িত। এগুলো উচ্ছেদ করলে এক লক্ষ লোক বেকার হবে। এবং ১০ লক্ষ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া হোটেল ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে লোন দিয়ে হোটেল ব্যবসা করে। এখন বন্ধ করে দিলে তারা কিভাবে এ লোন শোধ করবে এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।