দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজ ছাড়া মানুষ চলতে পারে না। এই সমাজটাকে সুন্দর সুশৃংখল করার জন্য সকলেই দায়বদ্ধ। সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় একটি সমাজ সুন্দর, সাবলীল, মানবিক, কল্যাণকর হতে পারে। একটি মানুষ, একটি পরিবার, একটি সমাজ, একটি দেশ অথবা পুরো পৃথিবী। একটি মানুষ থেকেই তার যাত্রা। একটি মানুষ একটি দুনিয়া। শরীরের যে কোন অংশে ব্যথা হলে সারা শরীর ব্যথা অনুভর করে। চোখ কখনও বলে না, পায়ে ব্যথা এতে আমার কী? আমি নাক ডেকে ঘুমাব। মুখ কখনও বলে না, পেটে ক্ষুধা এতে আমার কী আসে যায়? আমি কেন খেতে যাব? পা, হাত কখনও কি বলেছে, চোখের ঘুম পেয়েছে তো আমার কী হয়েছে? আমরা আমাদের কাজ করব। না পুরো শরীর একটি আরেকটির সাথে জড়িত। একটি ছাড়া আর একটি চলতে পারে না। কারো যদি একটি চোখ না থাকে, তখন পুরো মানুষটিকেই কানা বলা হয়। শুধু চোখকে কানা বলা হয় না। একটি পা যদি ল্যাংড়া হয় পুরো মানুষটিকে ল্যাংড়া বলা হয়। শুধু পা কে ই ল্যাংড়া বলা হয় না।
কেউ একটি ফুল বা ফলের বাগান করবে। অনেকগুলো চারা গাছ তাকে লাগাতে হয়। যত্ম নিতে হয়। শ্রম দিতে হয়। সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য মেধা শ্রম অর্থ ব্যয় করতে হয়। গাছগুলো তর তর করে বড় হতে থাকে। ফুল ফুটে, ফল দেয়। আনন্দে মন ভরে যায়। আবার খালি জায়গা পেলে নতুন চারা লাগায়। ফলবান গাছের দিকে খেয়াল রাখে ঠিকই। কিন্তু নতুন চারার যতœ তাকে বেশি করে নিতে হয়। খেয়াল রাখতে হয়। নতুবা নতুন চারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যেন তেন ভাবে বেড়ে উঠে। তার দ্বারা খুব ফুল, ফলের আশা করা যায় না।
আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরো মানব জাতির শিক্ষক। চারা গাছ থেকে তার সেবা করে বড় করে তুলতেন। যাতে এই শিশু নামক চারা গাছটি একদিন ফুলে ফলে ভরপুর হয়ে নিজের, দ্বীনের, সমাজের উপকারে লাগে। তার আগে যে গর্ভে এই সন্তান জন্ম লাভ করে তাকে আদর্শবান, দানশীল, ক্ষমাশীল, উন্নত চরিত্রের অধিকারী, আল্লাহ তায়ালার জিকির ওয়ালা, ছোট বড় সব ধরনের পাপ থেকে বেঁচে থাকা, কষ্ট সহিষ্ণু ইত্যাদি হতে শিক্ষা দিতেন। এই নিয়ে আমরা অন্য একটি প্রবন্ধে জানব ইনশাআল্লাহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি শিশু জন্মের পর পরই তার কানে আজান দিতেন। আল্লাহ তায়ালার নামের মাধ্যমে তাকে পৃথিবীকে স্বাগত জানাতেন। আল্লাহর বড়ত্ব, শ্রেষ্ঠত্য জানানোর মাধ্যমে তাকে এই পৃথিবীর বুকে অভিবাদনের চেয়ে আর কোন উত্তম বাক্য, উত্তম আহবান কোন জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এমন কারো কাছে কি আছে? না নেই। পৃথিবীর কোন জাতিই এক নবজাতকে এতো সুন্দর করে কল্যাণের দিকে মুক্তির দিকে আহবান করে না।
দ্বিতীয়ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিশুদের তাহনিক করাতেন। আমাদের সমাজে এটি একটি বিলুপ্ত প্রায় সুন্নত, অনেকে আকীকার নাম জানলেও তাহনিকের নাম জানেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে কোন শিশু জন্ম গ্রহণ করার পর শিশুটিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে নিয়ে আসা হত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেজুর মুখে দিয়ে চিবাতেন এই লালা মিশ্রিত চিবানো খেজুর শিশুটির মুখে দিতেন। শিশুটির মুখে এই মিষ্টি খাবার দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্ব প্রথম শিশুটিকে আপ্যায়ন করতেন। এই প্রথম মিষ্টিটি শিশুটির শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খুবই কার্যকর। আমাদের নবজাতক হলে আনন্দে কতজনকেই না মিষ্টিমুখ করাই। কত বন্ধুজন আবদার করে বসে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেই মেহমানকে মিষ্টিমুখ করাতেন তাকে করাই না। বন্ধু স্বজনরাও তার খবর নেন না। এভাবে খুব অসতর্কতায় আমাদের কাছে থেকে একটি সুন্নাত বিদায় নিচ্ছে। তাহনিক ব্যাপারে বেশ কয়েকটি হাদিস আছে। আমরা একটি হাদিস উল্লেখ করছি। হযরত আসমা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর এর জন্মের পর আমি তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কোলে দিলাম। তিনি খোরমা আনিয়ে চিবিয়ে নিলেন। তারপর থুতু মিশ্রিত চিবানো খোরমা তার মুখে দিলেন। এবং খোরমা তার তালুতে ঘষে লাগালেন। অতঃপর বরকতের দোয়া করলেন।
তাহনিকের উপকারিতা আধুনিক বিজ্ঞান এসে প্রমাণ করছে। সদ্য প্রসূত শিশুর সুগার লেভেল কমে যাওয়া, ঠান্ডা আবহাওয়া জনিত কারণে শিশুর শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়া, দুধ খেতে অনীহা, শিশুর শরীরের পেশি ঢিলে হয়ে যাওয়া, বার বার শ্বাস কষ্ট হওয়া, শরীর নীলাভ হয়ে যাওয়া, শরীরের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হওয়া, মানসিক বিকাশ ব্যাহত হওয়া ইত্যাদি। এই সবগুলোতে তাহনিক উপকারী।
তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিশুটির ভাল নাম রাখতেন। আমাদের সমাজে শিশু কী করে ভাল হতে পারে। তার নামটাও তো সুন্দর করে রাখা হয় না। সুন্দর নাম রাখলেও ডাক নাম একটি রাখা হয় উদ্ভট ধরনের জনি, মণি, রনি, সল্টু, বল্টু, পল্টু ইত্যাদি। একটু চিন্তা করে দেখিতো আমাদের জানামত যত আল্লাহ ওয়ালা ছিলেন, কারো নাম কি এ রকম খুঁজে বের করা যাবে? না আমি আপনি এখানে ব্যর্থ হব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন তোমাদের নাম ধরে ডাকা হবে। তাই ভাল নাম রাখ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিরাপত্তার কথা কত সুন্দর করে চিন্তা করতেন। তার জীবনের নিরাপত্তার গ্যারান্টি হিসাবে আকিকা করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, প্রত্যেক নবজাতক তার আকিকায় বন্ধক থাকে। আকিকার মাধ্যমে তার বিপদ আপদ দূর হয়ে যায়।
শিশু শিক্ষার ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ দ্বারা শিক্ষা দিতে বলতেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমার সন্তান যখন কথা বলতে শুরু করে তখন তাকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ শিখিয়ে দাও। এর পর সে কবে মারা যাবে তার পরোয়া করো না। আমরা বাচ্চাকে কত জাতের গান আর শ্লোক শিখাই। তাকে ঘুম পাড়ানোর সময় কত ছড়া পড়ি। আল্লাহ তায়ালার নাম কতজন স্মরণ করি। একটু চিন্তা করে দেখিতো। দুলনায় আসার সাথে সাথে আজান শোনানো, কথা বলতে শিখলে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ শিখানো কি আমরা গ্রহণ করতে পারি না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কোলে শিশু প্রস্রাব করে দিলে মুখ কালো করতেন না, রাগ করতেন না। তাকে যতন আর আদরই করতেন। উম্মে কায়েস বিনতে মিহসান রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি তার ছোট একটি ছেলেকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট আসলেন। শিশুটি খাবার খেত না। তাই তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট আসা হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিশুটিকে কোলে নিলেন। হঠাৎ শিশুটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাপড়ের উপর প্রস্রাব করে দিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পানি আনতে বললেন। পানি আনা হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাপড় না ধুয়ে কাপড়ের উপর কেবল পানি ছিটিয়ে দিলেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিশুদের উপহার দিতেন। কাউকে উপহার দিলে অবশ্যই সে খুশি হয়। আর এই ক্ষেত্রে শিশুরা সবচেয়ে খুশি হয়। তাদের হাত লম্বা হয়। দানশীল হতে শিখে। কৃপণতা দূরিভুত হয়। দেখুন একটি শিশুকে দুটি চকলেট দিলে সে কত খুশি হয়। উপহারের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছোটদের প্রাধান্য দিতেন। আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, ফসল তোলার পর প্রথম খেজুর ছড়াটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দেওয়া হত। তখন তিনি দোয়া করতেন, হে আল্লাহ আমাদের মদিনায় বরকত দিন। আমাদের ফসল, আমাদের মুদ, আমাদের সা এর মধ্যে বরকত দিন। বরকতের উপর বরকত দিয়ে মালামাল করে দিন। দোয়া করে উপস্থিত শিশুদের সবচেয়ে ছোট শিশুটির হাতে খেজুরগুলো দিয়ে দিতেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিশুদের খেলায় প্রতিযোগিতা করাতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক শিশুকে সারিতে দাঁড় করাতেন এবং বলতেন যে আগে আসতে পারবে তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কথা শুনে তারা প্রতিযোগিতায় দৌড় দিত। কেউ এসে তাঁর পিঠে চড়ে যেত। কেউ তাঁর বুকে চড়ে উঠত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের কাউকে চুমু খেতেন, কাউকে জড়িয়ে ধরতেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিশুদের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতেন, দোয়া করতেন, গালে হাত বুলিয়ে আদর দিতেন, তাদের সাথে হাস্যরস করতেন, শিশুদের সাথে খেলা করতেন। তাদেরকে উপহার দিতেন। তিনি শিশুদের চুমু খেতেন। আয়েশা রাঃ বর্ণিত, কিছু বেদুঈন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিকট এসে বলল, আপনারা কি শিশুদের চুমু খান? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। বেদুঈনরা বলল আল্লাহর কসম আমরা কিন্তু তাদের চুমু খাই না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবার বললেন, আল্লাহ যদি তোমাদের অন্তর থেকে দয়া মায়া তুলে নেন, আমি তা ফিরিয়ে দিতে সমর্থ নই।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিশুদের ব্যক্তিত্ব গঠনে খুব যত্মবান ছিলেন, তাদেরকে মর্যাদা দিতেন, তাদের অধিকার সযত্মে আদায় করতেন। বড়দের যেমন শ্রদ্ধা করতেন তেমনি ছোটদের ভালবাসতেন, স্নেহ করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথা কতই না সুন্দর যে আমাদের ছোটদের স্নেহ করবে না বড়দের সম্মান করবে না সে আমাদের দলভুক্ত নয়। সে ইসলামী সমাজের কোন অংশ নয়। এখানে দেখুন আগে স্নেহর কথা বলা হয়েছে। শিশুকে যদি স্নেহ করা হয়। শ্রদ্ধা তার থেকে আপনিতেই উপচে পড়বে। স্নেহ না করে শ্রদ্ধার আশা করাও এক বোকামি। শিশুকে তার মর্যাদায় আত্মবিশ্বাসী করে তুলতেন। সাহল ইবনে সাদ রাঃ থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু পানীয় নিয়ে আসলেন নিজে কিছুটা পান করলেন। বাকিটা অন্যদের দিতে চাইলেন। উপস্থিত লোকদের মধ্যে সবার ডানে একটি ছেলে ছিল। আর বৃদ্ধরা ছিলেন বাম দিকে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুন্নাত হল কোন কিছু দিলে ডান দিক থেকে শুরু করতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছেলেটিকে লক্ষ্য করে বললেন, তুমি কি আমাকে বড়দের আগে দেওয়ার অনুমতি দিবে? ছেলেটি জবাব দিল, না আল্লাহর শপথ হে আল্লাহর রাসুল। আপনার কাছ থেকে আমার পাওনাতে আমি অন্য কাউকে প্রাধান্য দেব না। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছেলেটিকে পানীয়ের পাত্রটি দিলেন। এভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুটির পাওনা অধিকার দিয়ে তাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতেন। শিশুও বুঝে তার পাওনা। তার অধিকার। শিশুর পাওনা যথাযথ না দিলে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলে সে মনমরা হয়ে যায়। ভিতরে ভিতরে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তার থেকে তখন অসম্মান অশ্রদ্ধা প্রকাশ পেতে থাকে।
আজকাল সমাজের চারিদিকে মিথ্যার জয়জয়কার। মিথ্যার আড়ালে প্রতারণা, ঘোষ বাণিজ্য, ভেজালের সয়লাব বয়ে যাচ্ছে। এর কষ্ট আমরা প্রত্যেকেই কম হোক বেশি হোক ভোগ করছি। যে ব্যক্তিটি মিথ্যা প্রতারণা, ঘোষ বাণিজ্য, ভেজালের সয়লাব বয়ে দিচ্ছেন, সেও কিন্তু অন্য জায়গায় এমনটির স্বীকার হচ্ছেন। ছোট কাল থেকেই একজন শিশু দেখে কীভাবে তাকে মিথ্যার ট্রেনিং দেওয়া হয়। আমাদের শিশুটিকে বাঘ, পাগল, ভুতের ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়ানো হয়। কোন কিছু দেওয়ার কথা বলে, তাকে কথা শোনানো হয়। যাকে ছোটকাল থেকে মিথ্যার এত্তো ট্রেনিং দেওয়া হল। বড় হয়ে কীভাবে সত্যবাদী, দেশ প্রেমিক নাগরিক হবে। একটু কি ভেবে দেখেছি। অথচ দেখি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাঃ বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বাড়িতে আসলেন। আমার আম্মা আমাকে ডাকতে গিয়ে বললেন, এদিকে আস তোমাকে এই জিনিসটি দেব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাকে কী দিতে চাচ্ছ। আম্মা জবাব দিলেন, তাকে খেজুর দেব। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে কিছু না দিয়ে এমনিতেই তাকে ডাকার জন্য এ কথাটি বললে তোমার আমল নামায় একটি মিথ্যা লেখা হত।
জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে কোরআন শিখানোর আগে ইমান শিখালেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদের আদব শিক্ষা দিতেন, আনাস ইবনে মালিক রাঃ বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেন হে বৎস তুমি যখন তোমার বাড়িতে যাবে তখন তাদের সালাম দিবে। তাহলে এই সালাম তোমার এবং তাদের জন্য বরকতময় হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদের ইলম শিখাতেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, একদিন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে বসা ছিলাম। তিনি তখন আমাকে বললেন, হে বালক আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দিচ্ছি। আল্লাহর বিধানের (আদেশ নিষেধের) হিফাজত কর, তিনি তোমার হিফাজত করবেন। আল্লাহর বিধান সমূহের হিফাজত কর, তাকে তোমার পাশে পাবে। সচ্ছলতার সময় তাঁর সাথে পরিচিত হও, অসচ্ছলতার সময় তিনি তোমাকে চিনবেন। তোমার কোন প্রয়োজনে কিছু চাইলে কেবল মাত্র আল্লাহ তায়ালার নিকট চাও। সাহায্য কামনা করতে হলে কেবল আল্লাহর কাছেই সাহায্য কামনা কর। আর জেনে রাখ সকল মানুষ যদি একত্র হয়ে তোমার উপকার করতে চায়, তবে আল্লাহ তায়ালা তোমার তাকদীরে যা লিখে রেখেছেন, তা ছাড়া কোন উপকার করতে পারবে না। আর সকল মানুষ যদি একত্র হয়ে তোমার ক্ষতি করতে চায়, তবে আল্লাহ তায়ালা তোমার তাকদীরে যা লিখে রেখেছেন, তা ছাড়া কোন ক্ষতি করতে পারবে না। কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। এবং কাগজগুলো শুকিয়ে গেছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদের পাশ দিয়ে যেতে সালাম দিতেন। তাদের সাথে মিশতেন। সালামের মাধ্যমে তাদের বড়দের সাথে মিশার ইতস্ততার একটি দেয়াল রয়েছে, এটি ভেঙ্গে দিতেন। তাদের কথা আবদার সব কিছুই একজন বন্ধুর মত শুনতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ছেলে সন্তানগন ছোট কালেই মারা যান। তাঁর চার কন্যা ছিল। কন্যাদের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব ভালবাসতেন। তাঁদের নিয়ে খুব খুশি ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কাউকে যদি কন্যা সন্তান দেওয়া হয়। তাদের সাথে যদি সদাচারণ করা হয়। তবে তারা জাহান্নাম ও তার মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে। বলুনতো এর চেয়ে আর খুশির খবর কি হতে পারে।
লেখক : গবেষক, ইসলামী চিন্তাবিদ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।