Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রশ্ন : সদাকাতুল ফিতর আদায়ের গুরুত্ব কি?

| প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

উত্তর : সদাকা অর্থ দান, ফিতর মানে রোজা সমাপন; সদাকাতুল ফিতর অর্থ হলো রোজা শেষে ঈদুল ফিতরের দিনে সকালবেলায় শোকরিয়া ও আনন্দস্বরূপ যে নির্ধারিত সদাকা আদায় করা হয়। এর দ্বারা রোজার ত্রæটিবিচ্যুতি মার্জনা হয়।
একে জাকাতুল ফিতরও বলা হয়। ঈদের দিন সকালবেলায় যিনি নিসাব পরিমাণ সম্পদের (সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা সমমূল্যের ব্যবসাপণ্যের) মালিক থাকবেন, তাঁর নিজের ও পরিবারের ছোট-বড় সবার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা তাঁর প্রতি ওয়াজিব।
সদাকার ফযিলাত সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে নিজেদের ধন-সম্পদগুলো ব্যয় করে তাদের উপমা যেমন একটি শস্য বীজ। যা থেকে উৎপন্ন হয়েছে সাতটি শীষ। প্রত্যেক শীষে রয়েছে শত শস্য। আর আল্লাহ তা‘আলা যার জন্য ইচ্ছে করবেন তাকে আরো বাড়িয়ে দিবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা হচ্ছেন মহান দাতা ও মহাজ্ঞানী।” [সূরা আল-বাকারা : ২৬১]
সদাকাত প্রদানের বহু উপকারিতা রয়েছে। হাদীস শরিফে এসেছে, ‘‘দাতা আল্লাহর কাছে, মানুষের কাছে, জান্নাতেরও কাছে; জাহান্নাম থেকে দূরে। সাধারণ দাতা কৃপণ আবেদ অপেক্ষা আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়।’’ [তিরমিজি শরিফ]
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদাকাতুল ফিতরকে অপরিহার্য করেছেন অর্থহীন, অশালীন কথা ও কাজে রোজার যে ক্ষতি হয় তা পূরণের জন্য এবং নিঃস্ব লোকের আহার জোগানোর জন্য।’’ [সুনানে আবু দাউদ : ১৬১১] অন্য হাদীসে এসেছে, হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যতক্ষণ পর্যন্ত সদাকায়ে ফিতর আদায় করা না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার রোজা জমিন ও আসমানের মাঝখানে ঝুলন্ত থাকে।’’ [কানযুল উম্মাল : ২৪১২৯]
ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদাকাতুল ফিতর আবশ্যক করেছেন। এর পরিমাণ হলো, এক সা যব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার ওপরই এটা আবশ্যক।” [বুখারী : ১৫১২]
প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিম ব্যক্তির ওপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজীব।
‘সামর্থ্যবান’ শব্দের ব্যাখ্যা হলো, প্রয়োজনিতিরিক্ত (ব্যবহৃত, ঋণ ইত্যাদি) যাকাতের নেসাব পরিমাণ সম্পদের (৫২.৫ ভরি রূপা) মালিক হওয়া। তবে যাকাতের ন্যায় এক্ষেত্রে এক বৎসর অতিক্রান্ত হওয়া জরুরি নয়।
সামর্থ্যবান না হলে সদাকাতুল ফিতর ওয়াজীব হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সর্বোত্তম সদাকা সেটাই, যেটা সামর্থ্যবান কেউ আদায় করে।” [বুখারী : ১৩৬০]
অতএব পুরুষ, নারী সবার ওপরই এই সদাকা ওয়াজীব।
নিজের পক্ষ থেকে এবং নিজের অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান বা অবিবাহিত মেয়ের পক্ষ থেকে আদায় করা ওয়াজীব। সন্তানের নামে সম্পদ থাকলে সেখান থেকে আদায় করা যাবে। প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের পক্ষ থেকে আদায় করা ওয়াজীব নয়।
সদকাতুল ফিতর ঈদুল ফিতরের ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওয়াজীব হয়। কাজেই সেদিন ভোরের আগে যে জন্ম নিয়েছে, বা এই পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছে, তাকেও এই সদাকা আদায় করতে হবে।
কেউ যদি সেদিন ভোরের আগে মারা যায়, তার ওপর সদাকা ওয়াজীব হবে না।
ঈদুল ফিতরের দিন সকালে ঈদের নামায পড়তে যাওয়ার আগে সদাকাতুল ফিতর আদায় করা উত্তম। তবে যাকাতের ন্যায় সেই সময়ের আগেও আদায় করা যেতে পারে।
উত্তর দিচ্ছেন : এইচ. এম. মুশফিকুর রহমান



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ