পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
স্টাফ রিপোর্টার : ভোক্তার বহুমাত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নও ভোক্তার অধিকারের অন্তর্ভূক্ত। বিশেষ করে, কোনো পণ্য ভোক্তার জন্য ক্ষতিকর ও মেয়াদ উত্তীর্ণ কিনা, কোনো পণ্য ব্যবহারে ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত কিনাÑইত্যাদি বিষয় পর্যবেক্ষণ করে থাকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তামাক জনস্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ও ভোক্তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় বিধায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নেও এ প্রতিষ্ঠানের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। সে প্রত্যাশা পূরণসহ জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ বাস্তবায়নে তামাক বিরোধী সংগঠনগুলোর পাশে থাকবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
গতকাল টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্স সেল ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের একটি প্রতিনিধি দল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে তাঁর দপ্তরে সাক্ষাৎকালে এ প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর। প্রতিনিধি দল বলেন, সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসারে বাংলাদেশ সরকার সকল তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান বাধ্যতামূলক করেছে এবং প্রতি তিন মাস পর পর আইন অনুসারে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবানী পরিবর্তনের বিধান করেছে। কিন্তু তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে উৎপাদন ও মেয়াদ উত্তীর্নের তারিখ না থাকায় পর্যবেক্ষণে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। গবেষণায় দেখা যায়, একজন ধূমপায়ী বছরে প্রায় ৭ হাজার বার একটি সিগারেটের প্যাকেট দেখে।
সুতরাং ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী ধূমপায়ীদের ধূমপান ত্যাগে এবং অধূমপায়ীদের ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত করে। এ কারণে তামাক কোম্পানিগুলো সুকৌশলে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান হতে বিরত থাকে। সম্প্রতি তামাক বিরোধী সংস্থাগুলোর এক গবেষণায় দেখা যায় ৭৫% সিগারেট কোম্পানি আইন অনুসারে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদান করছে না। এছাড়া অধিকাংশ বিড়ি, গুল, জর্দ্দার কৌটা ও মোড়কে আইন অনুসারে স্বাস্থ্য সতর্কবাণী নেই। এজন্য তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবানী সুনিশ্চিত করতে উৎপাদন ও মেয়াদ উত্তীর্নের তারিখ প্রদান জরুরি। বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর ৪ কোটি ১৩ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার করেন এবং ১ কোটি ১৫ লাখ মানুষ কর্মক্ষেত্রে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। দেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ মানুষ তামাকজনিত রোগে মারা যায়। গত জানুয়ারি ২০১৬ ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন’ শীর্ষক সাউথ এশিয়ান স্পিকার’স সামিট-এ প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েছেন। দেশকে তামাকমুক্ত করতে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের বাস্তবায়ন খুবই জরুরি।
মহাপরিচালক জানান, তামাক নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের আন্তরিক সহযোগিতা থাকবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সারা দেশের সকল অফিসের কর্মকর্তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করবে। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের প্রতিনিধিরা ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) এর আর্টিকেল ৫.৩ অনুযায়ী জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তাগণকে অবহিত করণের কথাও উল্লেখ করেন, যা তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে তামাক কোম্পানীর প্রভাবমুক্ত রাখার বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা তৈরি করবে। টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্স সেলের (টিসিআরসি) উদ্যোগে উক্ত আলোচনায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক ও যুগ্ম সচিব মতিনুল হক, পরিচালক ও উপ-সচিব মনজুর মোরশেদ চৌধুরী, সহকারী পরিচালক ইফতেখারুল আলম রিজভী, এইড ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বকুল, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাষ্টের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান, পরিবেশকর্মী সৈয়দ সাইফুল ইসলাম শোভন, টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্স সেলের (টিসিআরসি) সদস্য সচিব ও ঢাকা ইন্টারন্যানাল ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. বজলুর রহমান, টিসিআরসির সহকারী গবেষক ও প্রকল্প কর্মকর্তা ফারহানা জামান লিজা ও মো. মহিউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।